মহাকাশ, মহাবিশ্ব : শংকর লাহিড়ী

শংকর লাহিড়ী[বিস্ময় আর খোঁজ মানুষের এই দুটো গুণই ক্রমবিকাশ ঘটিয়েছে মানব সভ্যতার। নিজের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড ও তারই মাঝে নিজের আপাত অবস্থানকে চিনে নিতে চেয়েছে সে চিরকাল। ধীরে ধীরে আমরা জানতে পেরেছি আমাদের পৃথিবীকে, তারপর পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশ, মহাবিশ্ব। কত অজানা খবর, কত আবিষ্কার ঘটে চলেছে দিনের পর দিন। সেই সমস্ত কথা নিয়েই এবার কলম ধরলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, চিত্র-পরিচালক ও প্রকৌশলী শংকর লাহিড়ী। কসমোলজি নিয়ে তাঁর গভীর আগ্রহ ও জ্ঞানের কথা অনেকেই জানেন। যে দক্ষ শৈল্পিক ভঙ্গিতে তিনি এই সমস্ত জটিল তত্ত্ব ও আবিষ্কারের কথা লেখেন তার সাথে ইতিমধ্যেই অনেক পাঠক পরিচিত। শুরু হলো অপরজনের নতুন ধারাবাহিক বিভাগ – “মহাকাশ মহাবিশ্ব”।]

আমারই তরঙ্গ অবয়ব :

‘সৃষ্টি-ঘুম-বীজগণিত, ও নিবিড় কুয়াশা আমার / আমারই তরঙ্গ অবয়ব’… (বই: বন্ধু রুমাল)।

মহাকাশ নিয়ে কতকাল বিস্মিত হয়ে আছি, অনেকের মতো আমিও। যখন বেশ ছোট ছিলাম, কিশোর বয়সে, দমদমের সেই ছোট্ট লাল বাড়িতে। একদিন পাড়ায় বেশ উত্তেজনা, রাশিয়া নাকি মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছে। ১৯৬১ সালের এপ্রিল মাসে, সেদিন বুঝি ‘ভস্তক’ নামের এক মহাকাশযান পৃথিবীর চারদিকে কক্ষপথে পাক দিয়ে ফিরেছে। তার নভশ্চরের নাম ইয়ুরি গ্যাগারিন, সোভিয়েট এয়ার ফোর্সের পাইলট, বিশ্বের প্রথম মহাকাশচারী। সন্ধ্যেবেলায় খোলা জানালায় আমরা সবাই কান পেতে আছি, পাশের বাড়ির রেডিওতে তখন ফুল ভল্যুম। রেডিও মস্কো। প্রভূত হইচইয়ের মাঝে শোনা যাচ্ছে উত্তাল জনতার গ্যা—গা—রি—ন, গ্যা—গা—রি—ন, ধ্বনি। এত বছর পেরিয়ে, আজও সেই শব্দ আমার কানে বেজে চলেছে।

মনে পড়ছে, আমার মায়ের প্রিয় বিষয় ছিল ভূগোল। মায়ের কাছেই আমি ম্যাপ দেখা শিখেছি। নদী, পাহাড়, উপত্যকা, মালভূমি, বৃষ্টিবন, জলপ্রপাত, গর্জনশীল চল্লিশা, সাভানা, তুন্দ্রা, আর্কটিক মেরু, অরোরা বোরিয়োলিস, উইন্টার সলিসটিস, আহ্নিক গতি। কাকে বলে বিষুব রেখা, দ্রাঘিমা রেখা, গর্জনশীল চল্লিশা। কীভাবে হয় ঋতু পরিবর্তন, চন্দ্রগ্রহণ। আকাশে কখন আসে হ্যালির ধুমকেতু।

ক্রমে বড় হয়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা শেষ করে আমি জামসেদপুরে কর্মজীবনে টাটাস্টীলে। ততদিনে আমার আগ্রহ জন্মেছে ধুমকেতুতে। কাজি নজরুলের ধুমকেতু, সুকান্তের ধুমকেতু। আর একদিন রাতের আকাশে, কি আশ্চর্য উজ্জ্বল সেই বিশাল ধুমকেতু, যার নাম হেল বপ, যাকে আমি কয়েক মাস ধরে টাইম ম্যাগাজিনের পাতায় ট্র্যাক করে এসেছি, আজ সে আমারই মাথার ওপরে, রাত আটটায়! তখন আমার নিজস্ব টেলিস্কোপ হয়েছে। শীতের রাতে নির্মেঘ আকাশের নীচে সোয়েটার, মাফলার। স্কাইম্যাপ হাতে নিয়ে সারা আকাশ তন্নতন্ন, ঘর্মাক্ত। জামসেদপুরে কোনও প্ল্যানেটরিয়াম ছিল না। স্কুলজীবনে দুবার গেছিলাম কলকাতার বিড়লা প্ল্যানেটরিয়ামে। বিস্ময়কর সেই স্মৃতি। আর এখন তো আমার মতো অনেকের ল্যাপটপেই আছে একটা পুরো প্ল্যানেটরিয়াম।

আমি প্রথম সমুদ্র দেখেছিলাম, দীঘায়। তারপর পুরী, পারাদীপ, ভাইজ্যাগ, কোভালাম, মন্দারমনি, গোয়া, জুহু। আকাশ থেকে দেখা নর্থ সী, আটলান্টিক মহাসাগর। -সমুদ্র আমাকে বিশালের সাথে পরিচয় করিয়েছিল। প্রথমবার ছায়াপথ দেখেছিলাম ওড়িশায়, মাঝ রাতে ‘জে কে রোড’ স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে। স্টেশনে তখন লোডশেডিং, মাথার ওপরে নিকষ কালো অন্ধকার। সেই নীলাভ কৃষ্ণ আকাশের এপার থেকে ওপার অব্দি ছড়ানো কুয়াশামাখা এক উজ্জ্বল ওড়না। আমাকে সে নির্বাক করেছিল। এই তবে আকাশগঙ্গা? এই সেই বার্ড স্পাইরাল গ্যালাক্সি, আমরা যার বাসিন্দা, যার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তের দূরত্ব এক লক্ষ আলোকবর্ষেরও বেশি, যাতে আছে প্রায় কুড়ি-পঁচিশ হাজার কোটি নক্ষত্র, -আমি ভাবলাম। এই বিশালতা আমাকে বিহ্বল করে তোলে। আর মহাবিশ্বে আছে এরকম কোটি কোটি গ্যালাক্সি, নীহারিকা, নক্ষত্রমন্ডলী। নেবুলা, পালসার, কৃষ্ণগহ্বর। সৃষ্টির শুরুতে, আজ থেকে প্রায় তেরোশো আশি কোটি বছর আগে, যখন এসব কিছুই ছিলো না, তখন তাহলে কী ছিল? কীভাবে ছিল? কেমন করে হোল এতসব? এর উত্তর স্থান কাল বিশেষে এক এক রকম।

ধর্মপ্রচারক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, কবি, শিল্পী, সুফি— কারো সাথে কারোর কথা মেলে না। ওই যে মহাশূন্যে ভাসমান বিশাল ব্রহ্মান্ড, তার কত কুঠুরী আর কয়টা দরজা, কেউ জানে না। লালন গেয়েছেন- ‘বেঁধেছে এমন ঘর শূন্যের ওপর পোস্তা করে, ধন্য ধন্য বলি তারে’। আর মায়ের কাছে শিশু যখন শুধোয়- ‘এলেম আমি কোথা থেকে?’ কবি তখন বলছেন—’ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে’। হিন্দুশাস্ত্রে ব্রহ্মপুরাণে আছে, ঋষি লোমহর্ষণ বর্ণনা দিচ্ছেন– সৃষ্টির শুরুতে স্বয়ম্ভূ ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন জল। তারপর তাতে বীর্য নিক্ষেপ করলে তা সুবর্ণ ডিমে পরিণত হয়। সেখানেই জন্ম হয় দেবতা ব্রহ্মার, যিনি সেই ডিমের মধ্যে এক বছর অবস্থান করার পরে তাকে দুভাগে ভাগ করে সৃষ্টি করেন স্বর্গ ও পৃথিবী। এবং দুভাগেই যুক্ত করেন আকাশ। ক্রমে সৃষ্টি হয় দশদিক। সৃষ্টি হয়– কাল, মন, বাক্য, কাম, ক্রোধ ইত্যাদি। এই বিবরণ আমাকে বিস্মিত ও বিভ্রান্ত করেছিল। তবু পুরাণকারের এইসব কল্পনাকে আমি স্যালুট জানিয়েছি।

পুরাণের কাল কাটিয়ে উঠে, গ্রীক দার্শনিকদেরও প্রভাবমুক্ত হয়ে, আজ আমরা বিজ্ঞানীদের মুখ চেয়ে বসে আছি, সৃষ্টিরহস্যের সত্যি কথাগুলো জানবো বলে। এবং পুরাণের সেই সুবর্ণ ডিমটিকে আজ আমি সত্যই দ্বিখন্ডিত দেখতে পাচ্ছি। স্বর্গ মর্ত্য নয়। -এর একভাগে আছে শক্তি, অপরভাগে পদার্থ। কিভাবে শক্তি রূপান্তরিত হয় পদার্থে। ক্লাসিকাল ফিজিক্স বনাম কোয়ান্টাম মেকানিক্স। নিউটন বনাম শ্রেডিঙ্গার, পল ডিরাক, আইনস্টাইন, এনরিকো ফার্মি। জাগতিক মহাবিশ্বের বিশালতার বিপরীতে আছে পদার্থকে ভাঙতে ভাঙতে অণু, পরমাণু। আরো ভাঙলে ইলেকট্রন, প্রোটন। তার পরেও যদি আরো আরো, তবে কী আছে তার মূলে?

এই যে দৃশ্যজগত, বিশ্বপ্রকৃতি, ঘরবাড়ি, অরণ্য, নদী, জনমানুষ—একি সত্যিই এমনটাই, যেমন তাকে দেখছি? নাকি এসবই মায়া, স্থুলবুদ্ধি, জগত ভ্রান্ত? -বিজ্ঞানীরাও নিরুত্তর। তাঁরা দরজা বন্ধ করে গভীর গবেষণায় ব্যস্ত। কেউ অপেক্ষায় আছেন গবেষণাগারে আরও শক্তিশালী নতুন নতুন মেশিনের। বিলিয়ন ডলারের সেইসব প্রজেক্টে আছে লার্জার হেড্রন কোলাইডার, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ; আরও অনেক গণনা আর পরীক্ষা যে বাকি আছে।

*
উপনিষদে লেখা আছে আত্মানুসন্ধানের কথা। প্রশ্ন আছে– এলেম আমি কোথা থেকে, কী উদ্দেশ্যে ? আর বিজ্ঞানীদের কাছে আমাদের প্রশ্ন—এই বিশ্ব সৃষ্টির মূল উপাদান কী কী ? কীভাবে তৈরী হয়ে উঠেছে জড় ও অজড় জগতের সব কিছু ? আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আমরা বিজ্ঞান বিশেষ বুঝি না, তবু আমাদের জানবার আকাঙ্ক্ষা ও অধিকার তো আছে। আমরা তো এতকাল জেনে এসেছি, এই বিশ্বের সবকিছু তৈরী হয়েছে মাত্র ১১৮-টা পদার্থ দিয়ে। জল মাটি পাথর, রক্ত মাংস, ফুল পাখি বাতাস, তামা পেতল, মেঘ বিদ্যুৎ, বাঁশি বেহালা, ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাস, তানপুরা তিমিমাছ—সব কিছু।

এই ১১৮-টা মৌলিক পদার্থের একটা লিস্ট আছে, যাকে বলা হয় ‘পিরিয়ডিক টেবিল’ (নীচে ছবিতে), যা স্কুলে পড়ানো হয়। এর আছে ৭-টা সারি বা পিরিয়ড, আর ১৮-টা গ্রুপ। এই লিস্টের বেশিটাই হচ্ছে ধাতু। -যেমন লোহা, তামা, সোনা, রূপো, নিকেল, টাংস্টেন, প্লাটিনাম ইত্যাদি। আর যা কিছু ধাতু নয়, এমন ২২টা। -যেমন হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন, সালফার, ক্লোরিন, ফসফরাস…।

চায়ের কাপে আমরা যে চিনি মেশাই, সেটা একটা যৌগ বস্তু, যার প্রত্যেক মলিকিউল বা অণুতে আছে তিনটে মৌলিক পদার্থ, অনেক সংখ্যায়। যেমন ১২টা কার্বন, ২২টা হাইড্রোজেন এবং ১১টা অক্সিজেন ; চিনির অণুকে তাই বিজ্ঞানীরা C12H22O11 লেখেন। এখন কোভিড-১৯ এর জন্যে যে ‘রেমডেসিভির’ নামে ওষুধের কথা বলা হচ্ছে, C27H35N6O8P হচ্ছে তার অণু।

এই টেবিলের শুরুতেই ১নং-এ আছে হাইড্রোজেন (H), ২নং-এ আছে হিলিয়াম (He), ৬নং-এ কার্বন (C), ৮নং-এ অক্সিজেন (O), ২৬নং-এ লোহা (Fe) ইত্যাদি। এইসব মৌলিক পদার্থকে ভাঙলে দেখা যায়, তাদের অণুর কেন্দ্রে রয়েছে নিউক্লিয়াস, যাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে কয়েকটা ইলেকট্রন। এবং সেই নিউক্লিউয়াসে রয়েছে দু’ধরণের কণা—নিউট্রন ও প্রোটন। -এই অব্দি আমরা স্কুলেও পড়েছি যে, সমস্ত পদার্থের গঠনের মূলে আছে নানান সংখ্যার ইলেকট্রন, নিউট্রন ও প্রোটন। তবে এখন নতুন করে জানা গেছে আরও অনেক কিছু। জানা গেছে যে, ওইসব অণুর মধ্যের কণাগুলোও আর তত মৌলিক নয়, তাদেরও ভেঙে দেখা গেছে, যতদূর ভাঙা যায়। এভাবেই আবিস্কৃত হয়েছে নতুন এক পিরিয়ডিক টেবিল, যেখানে রয়েছে সেইসব মৌলিক কণা, যা দিয়ে বিশ্বব্রহ্মান্ডের সবকিছু গঠিত হয়েছে– জড়, অজড়, সব।

কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই বিখ্যাত বাড়িটা, যেখানে এই বিশ্বজগতের মূল ১২০-টা পদার্থের অনেকগুলোই আবিস্কৃত হয়েছিল, যেখানে এককালে বক্তৃতা দিয়েছেন মাইকেল ফ্যারাডের মতো নামীদামী বিশ্বখ্যাত অনেক বিজ্ঞানী, আজ অব্দি ১৭০-টা নোবেল প্রাইজ আয়ত্ত করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিছুদিন আগে তারই একটা বড় প্রেক্ষাগৃহে ভাষণ দিচ্ছিলেন এক তরুণ ছটফটে বিজ্ঞানী—ডেভিড টং–তিনি কণা পদার্থবিদ (পার্টিকল ফিজিসিস্ট)। জানা গেল, আমরা যারা ষাটের দশকে স্কুলে বিজ্ঞান পড়েছি, তার অনেকটাই ভুল, বদলে গেছে অনেক হিসেব, অনেক ধারণা। তবুও সত্তর-আশি-নব্বইয়ের দশকেও ছাত্রদের পড়ানো হয়েছে সেসবই। ভুলই শেখানো হয়েছে, পরে কখনো তাদের নতুন করে জানানো হবে এই ভরসায়।

এই জগত তাহলে কী দিয়ে তৈরী? –শ্রোতারা জানতে চাইলেন। ডেভিড বললেন— জানা গেছে যে, নিউট্রন আর প্রোটনও মৌলিক নয়। তাদের ভাঙলে পাওয়া যায় আরেকটা কণা, যার নাম কোয়ার্ক। এই কোয়ার্কও হয় দুরকমের, আপ কোয়ার্ক আর ডাউন কোয়ার্ক। তাহলে কি এই দু’রকমের কোয়ার্ক আর ইলেকট্রন—এই তিনটে কণা দিয়েই এই বিশ্বের সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে? ডেভিড কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, বললেন—এবার তবে আমাকে সত্যিটা বলতেই হবে। আমাদের জানা এখনও শেষ হয়নি, প্রতিদিন নতুন নতুন আবিস্কার হচ্ছে গবেষণাগারে।

[ ছবি : কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই হলঘরে কণা পদার্থবিদ ডেভিড টং বক্তৃতা দিচ্ছেন, যে ঘরে কত নোবেলজয়ী পা রেখেছেন আগে।]
এরকমই এক বিশাল গবেষণাগার আছে জেনিভা শহরের প্রান্তে, যার নাম সার্ন (CERN)। মাটির গভীরে ২৭ কিলোমিটার রিং-এর মতো গোলাকার টানেলের ভেতরে আছে অসংখ্য শক্তিশালী হিমশীতল চুম্বক (-২৭১ ডিগ্রি তাপমাত্রা), তাদের সাহায্যে প্রচন্ড গতিতে দুদিক থেকে ছুটে আসা প্রোটন কণিকাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ করানো হয়। সেই প্রচন্ড ধাক্কায় কখনও সৃষ্টি হতে পারে নতুন কোনও মৌলিক কণা। এভাবেই সন্ধান পাওয়া গিয়েছে হিগস-বোসন কণার। প্রচুর খরচ ও ধৈর্য্য সাপেক্ষ এই সব গবেষণা। তাহলে আজ অব্দি কী কী জানা যাচ্ছে, যা দিয়ে গঠিত হয়েছে সমগ্র জগত? এই চারটে কণিকাই কি সব? ডেভিড বললেন, একটু হয়তো জটিল লাগবে, তবে খুলেই বলি। এবং খুব সংক্ষেপে।

*
এই ব্রহ্মান্ডে আমরা সব্বাই, সমস্ত মানুষ, পশু, উদ্ভিদ, হাওয়া, জল, পাথর, ঘরবাড়ি, যুদ্ধজাহাজ, যা কিছু, সবাই ভেসে আছি এক অদৃশ্য তরঙ্গসাগরে, যা সর্বত্র বিরাজমান, মহাকাশ আর গ্রহতারাদের জগত জুড়ে, সর্বত্র। এরাই সেই মৌলিক বা ফান্ডামেন্টাল বিল্ডিং ব্লকস, যা দিয়ে সমগ্র দুনিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এদের বলা হয় কোয়ান্টাম ফিল্ডস। যত তারা খসে পড়ে আকাশে, যত জল নদীতে বয়ে যায়, এবিশ্বে যত কুসুম ঝরে পড়ে, আর যত কুসুম ফোটে, সবই বুঝি এই বিপুল তরঙ্গের নিয়ত ছোটাছুটি আর লুটোপুটির ফল। তরঙ্গ মিলায়ে যায়, তরঙ্গ উঠে।

এরা সর্বত্র বিরাজমান বলে আমরা এর মাধ্যমে ব্রহ্মান্ডের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নানাভাবে যোগাযোগ করতে পারি। এরই মধ্য দিয়ে সৃষ্ট ও বাহিত হয় নানারকম মহাজাগতিক কণা, নানা বিকিরণ, এবং আলোর রশ্মিও। তবে এরা কেউ সরল অবারিত শক্তিপ্রবাহ নয়। খুব খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে, শক্তি যেন খুব ছোট ছোট প্যাকেটে দ্রুত চলাচল করছে, তাতেই মনে হচ্ছে অবিরাম অবারিত স্রোতে চলেছে বুঝি। (সিনেমায় যেমন শত শত স্থিরচিত্রকে দ্রুত চলে যেতে দেখলে মনে হয় তারা বুঝি নিরন্তর গতিশীল। এই অতি ক্ষুদ্র প্যাকেটগুলোকে বলা হয় ‘কোয়ান্টা’, যার থেকে কোয়ান্টাম কথাটা এসেছে। এইগুলোই কণা বলে প্রতিভাত হয়। আলোকরশ্মিও এমন কোয়ান্টা হয়ে ছুটে চলে, যাকে বলা হয় ফোটন কণা। [ আশির দশকে লেখা আমার ‘শরীরী কবিতা’ বইয়ে একটা লাইন আছে—‘ফোটনের এক কণা, যা কখনও সম্পূর্ণ ফোটে না’।]

আমাদের এই শরীরকে তাই ভেঙে ভেঙে দেখলে, আমরা আসলে কিছু তরঙ্গমাত্র। নানা রকমের তরঙ্গ, যাদের সঞ্চালনে, কয়েক রকম field বা বলের অভিঘাতে সৃষ্টি হয় কয়েক রকমের কণা। যদি গবেষণাগারে একটা বড় কাচের জারের ভেতর থেকে কোনও বিশেষ উপায়ে সমস্ত পদার্থকে, ধুলো, হাওয়া, সমস্ত অণু-পরমাণু ও সব মৌলিক কণাদেরও বের করে ফেলা যায়, ভেতরে যখন কিচ্ছু থাকবে না, একদম শূন্য, তখনও তার মধ্যে খেলা করবে অদৃশ্য সেইসব ‘ফিল্ড’, যেন এক সর্বব্যাপী তরলতরঙ্গ, যা স্পন্দিত, আলোড়িত হতে থাকবে।

এই ‘ফিল্ড’ কিন্তু মাঠ, ময়দান, বা শস্যখেতের মতো নয়। এই তরঙ্গও কিন্তু দৃশ্যতঃ সাগরজলের উথালপাথাল ঢেউ নয়, তেমন হলে তো দেখাই যেত। এটা একটা অদৃশ্য মাধ্যম, যার বিভিন্ন অংশে যেন প্রতিভাত হচ্ছে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর এক বাইনারি অবস্থা, অথবা তথ্য। এক এক সময় বিভিন্ন মান, বা সংখ্যা যেন গড়ে উঠছে। যেন কাছে একটা ৬, পাশে ৩০০, একটু ওপরে যেন ৫, পেছনে যেন ২৪। এবং মুহূর্তেই তাদের সবার মান পরিবর্তিত হচ্ছে, নানা কার্যকারণে। এই সবটা নিয়ে যেন এক বিশ্বব্যাপী তরঙ্গের ওঠানামা, অবিরাম। তরঙ্গায়িত এক সর্বব্যাপী ‘তথ্য’-সমুদ্র ! বিজ্ঞানীরা কল্পনা করেছেন, এই তথ্য বা বিট্‌স (Bits) বুঝি সেই প্রকৃত মৌলিক, যা দিয়ে কোয়ান্টাম স্তর থেকে গড়ে উঠেছে সমগ্র ব্রহ্মান্ড ও বস্তুজগত। (নীচে সেই সর্বব্যাপী তরঙ্গায়িত কোয়ান্টাম ফিল্ডের কম্পিউটার চিত্র)। বিষয়টি যথেষ্ট জটিল, তবে এইটুকু বোঝাও তো অনেকটা।

এইরকম অদৃশ্য তরঙ্গসাগর বা ফিল্ডকে আমরা চিনি, অনুভব করতে পারি। টের পাই তাদের অস্তিত্বকে, তাদের নিজস্ব অদৃশ্য বলের মাধ্যমে। যেমন মাইকেল ফ্যারাডে আবিস্কৃত বিদ্যুত-চুম্বক বল। আর আছে অভিকর্ষ বল। (যদিও আইনস্টাইনের মতে অভিকর্ষ আসলে পৃথক কোনও বল নয় ; ওরকমটা অনুভূত হয় সময়-চাদরের বক্রতা সৃষ্ট হয় বলেই।) এছাড়াও আছে তেজি এবং দুর্বল (স্ট্রং অ্যান্ড উইক) নিউক্লিয়ার বল। –এই মোট চারটে ফিল্ড ছাড়াও আছে আরও একটা ফিল্ড, যার নাম হিগস ফিল্ড, বিজ্ঞানী পিটার হিগসের নামে। এই হিগস ফিল্ডের জন্যই, বা তার আবেশে, কণার দেহে ভর বা (mass) পরিমাণের উপলব্ধি হয় এবং জন্ম হয় মৌলিক পদার্থের।

ভরযুক্ত এই পদার্থগুলোর নাম ইলেকট্রন, মিউয়ন, টাউ, এবং নিউট্রিনো। এই নিউট্রিনোর আছে তিনটে ফ্লেভার। এছাড়া আছে ছয় রকমের কোয়ার্ক—আপ, ডাউন, টপ, বটম, চার্ম আর স্ট্রেঞ্জ। এই নিয়ে মোট বারোটা। এরা সবাই শক্তিশালী চার্জড, মহাজাগতিক কণা। এদের মিলিতভাবে বলা হয় ‘Fermion’ ফার্মিঅন। এদের সবার spin আছে। এরা ঘুরন্ত, যেমন পৃথিবী ঘুরছে। কিন্তু এদের সবার ভর নেই, যেমন নিউট্রিনো। তারা যে কোনও পদার্থের মধ্য দিয়ে, গাছপালা মাটি পাথর, কংক্রিটের দেওয়ালের মধ্য দিয়েও প্রচন্ড গতিতে অবিরাম চলাচল করতে পারে, সমস্ত ব্রহ্মান্ড জুড়ে। –এই শেষ লাইনটা পড়তে পাঠক আপনার যতটুকু সময় লাগলো, তার মধ্যেই অন্তত কয়েক হাজার কোটি নিউট্রিনো কণা আপনার শরীরের নাক-কান-চোখ-মুখ-পাঁজর ভেদ করে চলে গেছে। এখনও যাচ্ছে, আপনি টেরও পাচ্ছেন না, কারণ এদের কোনও ইলেক্ট্রিক চার্জ নেই।

এছাড়াও আছে পাঁচটা কোয়ান্টাম ফিল্ডের ফোর্স, বা বলজনিত আরও পাঁচটা কণা—হিগস, ডব্লিউ বোসন, যী বোসন, গ্লুঅন এবং আলোর কণা—ফোটন। এই নিয়ে বারো আর পাঁচে, মোট সতেরোটা কণা। এদের সবাইকে নিয়ে তৈরী হয়েছে আজকের নব্য পিরিয়ডিক টেবিল– Standard Model of Elementary Particles (নীচে ছবি)।

আমরা সবাই এভাবে ব্রহ্মান্ড জুড়ে সর্বত্র বিরাজমান পাঁচ রকমের ফিল্ড জনিত বল, আর তাদের পারস্পরিক আবেশে উৎপন্ন মৌলিক কণাদের দিয়ে নির্মিত জড় ও জীবন্ত যা কিছু। কণা বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন একটা সমীরকণসুত্র লিখতে পেরেছেন, যা দিয়ে নাকি বিশ্বের সমস্ত উথালপাথালকে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু এখনও তো অনেক কিছুই জানার বাকি।

ফিল্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘হিগস ফিল্ড’। সমস্ত কণাই আলোর গতিতে ছুটে চলে। কিন্তু যেই তারা হিগস-ফিল্ডের মধ্য দিয়ে যেতে হিগস বোসন কণাদের (তারা যেন উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের শীর্ষবিন্দুগুলো) সংস্পর্শে আসে, অমনি তাদের শরীরে ভরের সঞ্চার হয়, সৃষ্টি হয় পদার্থের, এবং তাদের গতি অনেক কমে আসে। জীবজগতের আমরা যে আলোর গতিতে ছুটে যেতে পারিনা, তার কারণ এই হিগস ফিল্ডের মধ্যে পড়ে গিয়ে, বোসন-এর স্পর্শে, আমাদের পদার্থের সমস্ত উপাদানে ভরের সঞ্চার হয়েছে, গতি হয়েছে মন্থর।

এই সেই বোসন, যাকে ঈশ্বর কণাও বলা হয়। কারণ এদের স্পর্শেই সৃষ্টি হয়েছে ব্রহ্মান্ডের সমস্ত পদার্থ। স্টিফেন হকিং সতর্ক করেছিলেন যে, কখনও যদি হিগস ফিল্ডের এই বোসন কণার শক্তি ভীষণ রকম (কয়েকশো কোটি গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট) বৃদ্ধি পায়, তবে সমগ্র বস্তুবিশ্ব—সকল গ্রহ নক্ষত্র নীহারিকা মন্ডলি– তাদের পদার্থ গুণ হারিয়ে নিমেষে ধ্বংস হয়ে যাবে। বস্তুবিশ্ব মুহূর্তে ভরহীন হয়ে বিলীন হবে অতিতপ্ত তরঙ্গবিশ্বে, সৃষ্টির আদিতে যেমন।

*
ডেভিডের বক্তৃতা শেষ হলে আমি চুপ করে রইলাম অনেকক্ষণ। একটা নতুন জানালা খুলে গেল যেন। এক নতুন আলোর উদ্ভাস। যদিও ব্রহ্মান্ড জুড়ে আলোর চেয়ে অন্ধকারের ব্যাপ্তিই অনেক বেশি। অন্ধকার পদার্থ (ডার্ক ম্যাটার), আর অন্ধকার শক্তি (ডার্ক এনার্জী) !

এই ব্রহ্মান্ডকে ক্রমশঃ স্ফীতকায় করে চলেছে যে অজানা এক শক্তি, যার হদিস আমরা এখনও পাইনি, যা সমগ্র শক্তির প্রায় সত্তর ভাগ, তাকেই বলা হয় ডার্ক এনার্জী। এই এনার্জীই ব্রহ্মান্ডকে অবিরাম সম্প্রসারিত করে চলেছে। তাকে জানতে নিরলস গবেষণায় ব্যস্ত আছেন বিজ্ঞানীরা।

এছাড়াও আছে প্রায় পঁচিশ ভাগ ডার্ক ম্যাটার। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তারা নাকি ‘ডার্কিনো’ (Darkino) নামের কণা দ্বারা গঠিত। তাদের কোনও টেলিস্কোপেই দেখা যায়না, কোনও আলোই পারেনা তাদের আলোকিত করতে। কিন্তু অংক কষে বোঝা যায় যে নিশ্চয় আছে। নানা কক্ষপথে তারাই পরিচালিত করছে সমস্ত গ্রহ নক্ষত্র নীহারিকাদের।

আর বাকি মাত্র পাঁচ ভাগ (৫%) হচ্ছে যাবতীয় জৈব অজৈব ও জড় পদার্থ, যা দিয়ে গঠিত হয়েছে সমগ্র দৃশ্য জগত, অর্থাৎ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের যা কিছু আমরা দেখতে পাই ; জল, বাতাস, আগুন, পাথর, মাটি, উদ্ভিদ, সমগ্র জীবজগত, গ্রহ তারা নীহারিকা গ্যালাক্সি, যা কিছু। অর্থাৎ, যা কিছু হিগস-বোসনের স্পর্শ লেগে সৃষ্ট হয়েছে। তারা সবাই মিলে সমগ্র ব্রহ্মান্ডের ৫% মাত্র (নীচে ছবি)।

*
আমি এবার দুপ্রান্তকে বাঁকিয়ে নিয়ে তাদের মেলাতে চাইলাম। এক প্রান্তে আছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাদের অদৃশ্য কোয়ান্টাম ফিল্ডের তরঙ্গ জগত্‍, আর অন্য প্রান্তে কোটি কোটি আলোকবর্ষ ব্যাপী যে দৃশ্য জগত্‍। সেই জগতের সম্পূর্ণ সৃষ্টি-স্থিতি-লয়কে ধারণ করে রেখেছে ওই সর্বব্যাপ্ত তরঙ্গসাগর।

এই কি তবে ব্রহ্মজ্ঞানের প্রথম ভাগ ? আমি ভাবি। কারণ, এখনও তো অনেক কিছু জানা বাকি রয়ে গেছে। সবটা কি মানুষের কাছে ধরা দেবে কখনও? কেউ জানে না। ব্রহ্মান্ডের কোটি কোটি নীহারিকা, নক্ষত্রপুঞ্জের যে বিশালতা, যার সীমানা অবিরাম স্ফীত হতে হতে এখন প্রায় নহাজার কোটি আলোকবর্ষ অব্দি বিস্তৃত, তার চেয়েও অনেক বেশি রহস্যময় হচ্ছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, এক সেন্টিমিটারের হাজার হাজার কোটি ভাগের এক ভাগ মাপের কণাদের নিয়ে যে সর্বব্যাপী কোয়ান্টাম ফিল্ডের অদৃশ্য ও রোমাঞ্চকর তরঙ্গ জগত। আমাদের জন্ম মৃত্যু আসলে ওই সব নানান তরঙ্গ-চাদরের মেলামেশায় মাঝে মাঝে ঝলসে ওঠা বিচিত্র কণাদের রহস্যময় সমাহার, এবং সহসা ভরযুক্ত হয়ে উঠে পদার্থরূপে তাদেরই রচিত অপূর্ব সব বিন্যাস, যা নিয়ত পরিবর্তনশীল।

এই ব্রহ্মাণ্ডে তাই আমরা যে যেখানেই থাকি— হিন্দু, ইহুদি, খ্রিশ্চান, মুসলমান, পশু, পতঙ্গ, উদ্ভিদ, পাথর, মাটি, জল, বাতাস— কেউ বিচ্ছিন্ন নয়, সকলেই সতত যুক্ত হয়ে আছি ; আমাদের যুক্ত করে রেখেছে ওইসব তরঙ্গায়িত কোয়ান্টাম ফিল্ডস।

আমাদের শরীরের রক্ত-অস্থি-মজ্জায় বা, গাড়ি বাড়ি ইঁট কাঠ পাথরে উদ্ভিদে, যত পদার্থ আছে, যত জল আছে গঙ্গা যমুনায়, যত বল্গাহরিণ, পেঙ্গুইন আর তুষার আছে মেরু প্রদেশে, তা সবই ওই হিগস ফিল্ডের ‘হিগস-বোসন’ কণার কল্যাণে সৃষ্ট হওয়া ইলেকট্রন, নিউট্রিনো, কোয়ার্ক ইত্যাদি কণা, যাদের দ্বারা তৈরী হয়েছে বিভিন্ন পদার্থের অণু ; যেমন কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, আয়রন ইত্যাদি। এদের নিয়েই তৈরী হয়েছে কত যৌগিক প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, হরমোন, এঞ্জাইম ইত্যাদি, যা আমাদের সহস্র রকম দেহকোষকে নির্মাণ করেছে।

অর্থাৎ, আমাদের সমস্ত সংসারের একেবারে মূলে রয়েছে গোত্রপরিচয়হীন, জাতপাতহীন, বর্ণবিদ্বেষহীন এক বিপুল সর্বব্যাপী তরঙ্গসাগর। এই তরঙ্গসাগরেই আমাদের জন্ম হয়, বৃদ্ধি হয়। ক্রমে ক্রমে শরীরের ক্ষয় হয়, কণাদেরও সুবিন্যাস ভেঙে যায় একদিন। তখন আমরা নিজের সামগ্রিক পরিচয় হারিয়ে ফেলি, কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যরূপে থেকে যাই তো সেখানেই। মৃত্যুহীন এই অনন্তের মাঝে তরঙ্গ হয়ে থেকে যাই, হারিয়ে যাই না কখনও।

‘সময়-চাদরের এক প্রান্ত থেকে দোলা এসে লাগে
শরীরী তরঙ্গ এক ;
                    এত সে মাংসল স্থূল জৈবগন্ধী
তীব্র এত টান,
এত তীব্র কম্পিত চাদর
                   আলোর সকল কণা শুষে নেয়,
সহসা আলোর কণা সকল আঁধার হয়ে নামে।
ডাকি আমি : কোথায় বন্ধু তুমি কোনদিকে বান্ধবী আমার ?
             কোথায় বন্ধু তুমি কোনদিকে বান্ধবী আমার…
অর্জুন গাছের নীচে মহাকাশ, স্রোত ও গহ্বর।’
                                            (বই : বন্ধু রুমাল, কৌরব প্রকাশনী )  

এই অনন্ত জগত তো তাহলে পদার্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে নির্মিত হয়ে আছে, যার মাত্র ৫% আমরা দেখতে পেয়েছি, জানতে পেরেছি। বাকিটা ডার্ক, অন্ধকার। কিন্তু এই বিশ্বসংসারে কীভাবে যুক্ত হল চেতনা, সৃষ্টি হল প্রাণ ও চৈতন্য? কোয়ান্টাম ফিল্ডসের সর্বব্যাপ্ত তরঙ্গসাগরে, কী সুত্রে এসে যুক্ত হয়েছে কনশাসনেস? হায়, এখনও তার উত্তর পাওয়া যায়নি। শুনেছি, ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলতেন তাঁর শিষ্যদের—‘তোদের চৈতন্য হোক’।

কিন্তু কীভাবে ? কীভাবে চৈতন্য এসে যুক্ত হল জীবদেহে ? তবে কি হিগস বোসন ফিল্ডের মতোই আছে আরও এক ফিল্ড, যার স্পর্শে জড়ের মধ্যে ক্রমে তথ্য-প্রাণ-চেতনা সঞ্চারিত হয় ? -একান্তে আমি ভাবি। কিন্তু কাকে বলি এই কথা ? কাকে বলি ? রজার পেনরোজ যদি পাশের বাড়িতে থাকতেন ! জানতে চাইতাম, কোয়ান্টাম কনশাসনেস নিয়ে তাঁর নিজস্ব (Orch-OR) তত্ত্বের কথা।

[ক্রমশঃ]

Facebook Comments

Leave a Reply