শূন্যতা কাটাতে : মৃন্ময় সেনগুপ্ত

২ মে নির্বাচনী ফল বের হওয়ার পর বিজেপি’র এক রাজ্য নেতা, মিডিয়ায় তারাই একমাত্র বিরোধী শক্তি বলে উচ্ছ্বাসপ্রকাশ করেছিলেন। নিছকই দলের কর্মীদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তাঁর এই মন্তব্য নয়। নিজেরা ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও, বামেরা শূন্য হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি বিজেপিই হয়েছে। ত্রিপুরায় ভোটেজেতার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মতাদর্শগত জয়ের কথা বলেছিলেন। সেবার ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপি’র তাবড় তাবড় নেতারা কম সভা করেন নি। তখনও অভিযোগ উঠেছিল যে, গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা রাজকার্য ফেলে ত্রিপুরার ক্ষমতা দখলে ব্যস্ত। বাংলায় ক্ষমতা দখলের ইচ্ছেপূরণ না হলেও বিজেপি’র স্বপ্নপূরণ হয়েছে। অবশ্য বাংলার বিধানসভা কোনোদিন বামশূন্য হতে পারে তা বোধহয় কেউই স্বপ্নেও ভাবেন নি। শূন্য তো দূরের কথা, বাংলার সংসদীয় রাজনীতিতে কোনোদিন বামেরা তৃতীয় পক্ষ হয়ে যাবে সেটাও কি কয়েক বছর আগে ভাবা যেত? ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তা স্বপ্নের অতীত ছিল। রাজনীতির এত দ্রুত পটপরিবর্তন গবেষণার বিষয় হতে পারে। যদিওএইপটপরিবর্তন হয়েছে সংসদীয় রাজনীতিতে। তার বাইরেও রাজনীতি আছে। বামেরা অন্তত সে কথা প্রথম থেকেই বলে এসেছেন। কার্যক্ষেত্রে কে কতখানি বিশ্বাস করেন তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, মুখে অন্তত এখনও বলেন।
কথা ছিল সংসদের বাইরের লড়াইকে শক্তিশালী করতে ভেতরের লড়াইকে সবল করতে হবে। সোজা কথায় বললে, ভোট রাজনীতিতে সাফল্য পেতে হবে। সরকার গড়ে তুলতে না পারলেও, কম সে কম প্রতিনিধি বাড়াতে হবে। ব্যবস্থাকে ভেতর থেকে ভেঙ্গে দেওয়ার কাজ। কাজটা যে ঠিকমতো হয় নি তা আজ প্রায় ষাট বছর পর (প্রথম সাধারণ নির্বাচন ১৯৫২ সাল ধরে) বুঝতে অসুবিধে হয় না। বরং রাষ্ট্রব্যবস্থাই বামেদের অনেকখানি গিলে নিয়েছে। নির্বাচনী সাফল্যের ধারাবাহিকতায়এই রাজ্যের অনেক বাম রাজনৈতিক কর্মীই সেসব ভুলতে বসেছিলেন। ভোট রাজনীতির সাফল্য, ক্ষমতার আস্বাদ বামেদের নিয়মতান্ত্রিক করে দিয়েছে। নিয়ম মেনে চলতে হবে, আইন, সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। আর সেই ফাঁকেই আমাদের আইন, সংবিধানের নানা ফাঁক ফোকরকে ব্যবহার করে আজ এমন এক শক্তি ক্ষমতা পেয়েছে যারা, এই সংবিধান মানে না। তারা তা বীরদর্পে জানাতে লজ্জাও পায় না। ভোট ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে হয়ত তাদের সাময়িকভাবে রুখে দেওয়া যাবে। কিন্তু তাদের মতাদর্শের বিষ সমাজে আরও শিকড় ছড়াবে।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সেই বিষ তাড়াতে এমন অনেকেই প্রচারকরেছিলেন যাদের ভোট ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নেই। অনেকেই একসময়ে এই ব্যবস্থাকে বয়কট করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁদের এবারে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা ছাড়া উপায়ও ছিল না। অন্ততপক্ষে বিজেপিকে ভোটে পরাস্ত না করতে পারলে বিপদটা যে ঘাড়ের ওপর হুড়মুড় করে এসে পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ ছিল না। কিন্তু দিনের শেষে সেই রাষ্ট্রব্যবস্থাই জিতল। যে ব্যবস্থা ক্রমশ গণতন্ত্রের মুখোশ খসিয়ে তার স্বৈরাচারী রূপ দেখাতে মরিয়া।
ভোট ব্যবস্থা ক্রমশ আরও বেশি বেশি করে কর্পোরেট নির্ভর হয়ে চলেছে। নির্বাচনী বন্ড থেকে শুরু করে নানা পথে কোটি কোটি টাকা দিয়ে প্রচারের জৌলুস, মিডিয়া থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বে ভোট ব্যবস্থা তার গণতান্ত্রিক চরিত্রটাকেই হারাতে বসেছে। ব্যবস্থা বদলের লক্ষ্যে এই ভোট ব্যবস্থাকে ব্যবহার করতে গেলে অসম লড়াই লড়তে হয়। তারজন্য যে মতাদর্শের দৃঢ়তা দরকার, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সরাসরি প্রশ্ন করারস্পর্ধা দরকার তা কি বামেদের আছে? অথচ এবারের লড়াইটা কিন্তু বামেদেরই লড়াই ছিল। বামেরা সেই লড়াই লড়ার আগেই হেরে বসে রইল।সাধারণ মানুষ তো বটেই, বামপন্থীদেরও অনেকেই বিজেপিকে পরাজিত করতে তৃণমূলকে, আবার অনেকে তৃণমূলকে পরাজিত করতে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। নিজেদের প্রার্থীদের ভোট দেওয়াকে তাঁরা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেছেন। তার কারণ নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আগামীদিনেও হবে। তারইসঙ্গে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা। যা অনেকক্ষেত্রে কাদা ছোঁড়াছুড়ির নোংরামিতে অবনত হচ্ছে।
রাজনীতির কেন্দ্রে রয়েছে সাধারণ মানুষ। যদিও আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে মানুষের মত জানাবার অধিকার সীমিত। ভোট দেওয়া ছাড়া নীতির প্রশ্নে মত জানানোর কোনো সুযোগই কার্যত নেই। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি তাই মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না। বামপন্থীদের এসব অজানাও নয়। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই বামেরা একসময়ে রাজ্যে জনভিত্তি গড়ে তুলেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে জাগ্রত হয়েছিল অধিকারবোধ। বামফ্রন্ট সরকারই একসময়ে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গণতন্ত্র বিস্তারের আয়োজন করেছিল। গ্রাম সংসদ সভায় সাধারণ মানুষের যেমন পঞ্চায়েতের কাজকর্মের অনেক তথ্য জানার অধিকার রয়েছে, তেমনই তাদের মত জানানো ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বন্দোবস্ত রয়েছে। পঞ্চায়েতের কাজে সাধারণ মানুষের
সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। বাস্তবে সেসবই রয়ে গিয়েছিল আইনি কেতাবে। বাম পরিচালিত প্রায় সব পঞ্চায়েতেই সেই আইন যথাযথভাবে মানা হয়নি। খাতায় কলমে গ্রামসংসদ হয়েছে। কিন্তু মানুষের মতপ্রকাশের সুযোগ বা তাদের মতকে মর্যাদা দেওয়ার কোনো উদ্যোগই ছিল না। থাকলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের এক অন্যরকম অনুশীলন হত। গ্রামে আজ বামেদের এই দুরবস্থা হত না। সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেই, আইনি অধিকার নিয়ে মানুষের কাছে প্রচারও করা হয়নি। তাই আজ শাসক দল যখন অনিয়ম করে তখন মানুষকে তা নিয়ে সোচ্চার হতে বলা যায় না। ভোটে জোটের ছলাকলায় সাফল্যই যেন একমাত্র লক্ষ্য। পরাজয়ের পরেও চর্চা চলে তাকেই কেন্দ্র করে। মানুষ, তার বেঁচে থাকার লড়াই এসব বাম রাজনীতিতেও অনেকটাই ব্রাত্য হয়ে যায়। ব্রাত্য হয় বলেই সরকারি অনুদানের প্রকল্প, অধিকারগুলি নিয়ে বামেরা সরব না হয়ে বরং সেসব নিয়ে ব্যঙ্গ করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের মনের কাছে পৌঁছে যায় সেইসব ভোট সর্বস্ব দল যারা আসলে মানুষের শত্রু। নানা এজেন্সি নিয়োগ করে, অসরকারি সংস্থাগুলিকে (এন জি ও) কাজে লাগিয়ে তারা মানুষের সমস্যার হদিশ পেয়ে যায়। আর সাময়িক উপশমের ব্যবস্থা করে ভোটে সফলও হয়।
রেশনে বিনামূল্যের চাল দেওয়াকে ভিক্ষা বলে বামেদের অনেকেই ব্যঙ্গ করেন। কিন্তু সেটাই যে কোটি কোটি মানুষের কাছে বেঁচেবর্তে থাকার জন্য অনেকখানি সেই বোধ তাঁদের নেই। সামান্য পরিমাণ চাল ও গমও যে গরিব মানুষের কাছে অনেক গত বছরে লকডাউনেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বহু মানুষের নগদ পয়সা হাতে না থাকলেও অন্তত আহার জুটেছিল। একে ভিক্ষা বলে ব্যঙ্গ করার মধ্যবিত্ত উন্নাসিকতা বাম রাজনীতি নয়। তাহলে কি দুহাত তুলে সরকারের প্রশংসা করা কাজ? অনেককে আবার সেটাও করতে দেখা যাচ্ছে। সেটাও কম বিপদের নয়। মাথায় ভোটকে কেন্দ্র করে যাবতীয় চিন্তা ঘুরপাক করলে এমনটাই হয়। ‘ফিকে’ বাম থেকে ‘অতি’ বাম তখন সেই মাপকাঠিতেই সব বিচার করে। অথচ, চোদ্দটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশনের মাধ্যমে কম দামে বন্টনের দাবি বামেদের বহু পুরনো দাবি। এখন সেসব আমরা ভুলতে বসেছি। চোদ্দটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কী কী তাও বলতে পারব না। পুঁজিবাদী শিবিরের প্রচারে বামেদের অনেকেও এসব দাবিকে বস্তাপচা ভাবতে শুরু করেছে। প্রত্যেক নাগরিককে পেটভরা পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। এটা নাগরিকদের ভিক্ষা নয়, অধিকার। সেসব দাবিদাওয়া নিয়ে সভা,মিছিল কম হয় না। ধর্মঘটের নানা দাবির সঙ্গে একে জুড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু সেসব বড় বেশি যান্ত্রিক, আন্তরিক নয়। আন্তরিক নয় বলেই দুয়ারে সরকার নামে ভোটের আগে চমক দিয়ে শাসক বাজিমাত করতে পারে। কতজন ডিজিটাল রেশন কার্ড না পাওয়ায় রেশন পাচ্ছেন না, কতজন প্রকৃত গরিব আর কে এস ওয়াই ২ কার্ড থাকায় কম পরিমাণ চাল/গম পাচ্ছেন সেই তথ্য অনেক বাম নেতার কাছেই নেই। দুঃখের হলেও সত্যি, কত রকমের ডিজিটাল রেশন কার্ড আছে, কোনটা কেন্দ্রের, কোনটা রাজ্যের সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা কতজন বাম নেতার রয়েছে? কেন্দ্রীয়ভাবে সকলের জন্য রেশন চাই বা ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য চাই এই স্লোগান দিলেই কাজ শেষ হয় না। বাস্তব অবস্থা সম্পর্কেও খবরাখবর রাখতে হয়।
স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে চাষের খরচের দেড়গুণ ফসলের দামের দাবি তোলা হয়। স্বামীনাথন কমিশন খরচের হিসেবে কোনগুলিকে ধরা হবে তাও স্পষ্ট করে দিয়েছে। কৃষক সংগঠনগুলির কতজন কর্মী তা জানেন? তাঁদের সেবিষয়ে জানানোর দায়িত্ব কার? সরকার বা শাসক দলের নিশ্চয়ই নয়। বাম কৃষক সংগঠনগুলির। কোনো মরশুমের ফসলের দাম নির্ধারণে কত খরচ হয়েছে তা নিয়ে কি সঠিক সমীক্ষা হয়? সেই খরচের হিসেব করে দেড়্গুণ দাম অনুসারে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কারা নির্ধারণ করবে? সেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কিনে রেশনের মাধ্যমে সরকার কেন ভর্তুকিতে তা বিক্রি করবে না? তাহলে কৃষকের মতো গরিব ক্রেতাও উপকৃত হবে। রেশন ব্যবস্থা সমস্যার অনেকখানিসমাধান করতে পারবে। সুনির্দিষ্ট্য সেই দাবি তুলতে নিচুতলায় যে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন, তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন সেই কাজ কিন্তু বামেরা করে না। দাবি নিয়ে কিছু জাঠা, মিছিল,ডেপুটেশন আর জেলা সদর বা কলকাতায় জমায়েত করলেই মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়?
অতিমারির সুযোগে শ্রমিক-কর্মচারীদের অবস্থা নতুন করে বলবার দরকার নেই। ‘পরিযায়ী’ শ্রমিকদের নিয়ে এখন বহু আলোচনা। কিন্তু এদের জন্য যে আইন ছিল তা বাস্তবায়নের দাবিতে ট্রেড ইউনিয়নগুলি এতদিন বিশেষ সরব ছিল না। পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে কোনো তথ্য তাদের হাতে নেই। সেই নোট বাতিলের সময় থেকে তাঁদের কাজ হারানোর শুরু। অনেকেই কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ আবার অন্য কাজে গেছেন,কেউ বা গ্রামেই রয়েছেন। গত বছর যারা বাড়ি ফিরলেন, তাঁদের কতজন আবার কাজে ফিরেছেন, কতজন গ্রামেই আছেন, এখন কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহের কর্মসূচি কোনো ট্রেড ইউনিয়নেরই নেই। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের নিয়ে ভাবনা চিন্তা তো পরের কথা, এক বছরে অতিমারির অজুহাতে কতজন শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের এখন জীবিকা কী তা নিয়ে কোনো ভাবনা চিন্তার প্রয়োজনও অনুভূত হয় না। রাজনৈতিক দলগুলির মতো ট্রেড ইউনিয়নগুলির কাছেও শ্রমিকরা শুধুই ভোটার। অনেক শ্রমিক মিছিলে ঝান্ডা নিয়ে হাঁটলেও ভোট বামেদের দেন না বলে নেতাদের আফশোসও কম নেই। তাই তো ভিন রাজ্যের শ্রমিক কারখানা বন্ধ হওয়ায় দেশে চলে গেলে অনেক বামপন্থী স্বস্তি পান। কারণ তাঁদের ভোট বিরোধী পক্ষে যাবে। বাম ট্রেড ইউনিয়নগুলি ভোট করতে আর সরকারি বা আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার কমিটিতে ঢুকতে, সভায় যোগ দিতেই ব্যস্ত। প্রাতিষ্ঠানিকতার গ্রাসে বাম চরিত্র থেকে অনেকটাই বিচ্যুত।
একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে বামেদের প্রচার কম হয় না। কিন্তু এই প্রকল্পের আইনি অধিকার নিয়ে চর্চা বিশেষ হয় না। এটা যে আইনি অধিকার, কী কী অধিকার আবেদনকারীর রয়েছে, কাজ না দিলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নিয়ম কী তা সাধারণ মানুষ তো বটেই অনেক বাম কর্মীরই জানা নেই। জানানোর পরিকল্পনা বাম এজেন্ডায় স্থান পায় না। সাধারণ মানুষ তাই দুর্নীতি হচ্ছে জেনেও প্রতিবাদ করেন না। পাছে যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে সেটাও যদি কেড়ে নেয়। আর ভোট না পেয়ে বাম নেতারা আফশোস করেন মানুষ প্রতিবাদ করতে নাকি ভুলে গেছে। একবারেও এসম্পর্কে তাঁদের দায়িত্বের কথা ভাবেন না।
এসবই উদাহরণ মাত্র। এমন অনেক বিষয়েই বামেরা নিজেদের কাজ ঠিকমতো করে নি। কিছু স্মারকলিপি, জেলা সদর বা কলকাতায় জমায়েত, সেখানে লোক নিয়ে যাওয়া এসবেই নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাই বেড়েছে। মিটিং, মিছিল সবই হয়েছে নিয়ম মেনে, নির্ঘন্ট অনুযায়ী। কিন্তু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই আজ নানা নামের এন জি ও আসরে হাজির। তারাই সরকারের কাছে দাবি জানাবে, আবার প্রয়োজনে আপসও করবে। অরাজনীতির রাজনীতি ব্যবস্থা বদলের লড়াইকে দুর্বল করবে। আত্মসমালোচনা, আত্মবিশ্লেষণের স্পর্ধা থাকা চাই। অপরকে দোষ দিয়ে, মানুষের বিচারবোধ নিয়ে কটাক্ষ করার বদলে বামেদের নিজেদের কাজের বিচার করতে হবে। ভোট নয়, মানুষকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করলেই এই শূন্যতা কাটানো যাবে।

[লেখক – একজন রাজনৈতিক কর্মী।]

Facebook Comments

Leave a Reply