মণিদীপা সেন-র কবিতা
ক্ষয়প্রাপ্ত চাঁদখোর ও আমি
এইসব দেখে ক্লান্ত হয়ে আসি। রিমরিমে আঙুল। শিশির শিশির অনুভব। পাড়ার রোয়াকে একছড়া জুঁইয়ের মালা হয়ে আছে ষাটোর্ধ বৃদ্ধারা। নিশ্চুপ লাল থেকে খসে যাচ্ছে স্নেহ।
দিনের আঁচ পড়ে গেছে। ক্ষুধার্তের সামনে ভাত উপুড় করেছে কেউ। তার দৃঢ় উৎসাহে মাধ্যাকর্ষণ নামিয়ে নিচ্ছে মাড়। আজকাল এমনই দ্রুত ফুরিয়ে যাই। নিছক রাস্তা, ছদ্মপায়ে পেরোই। একে অপরকে বলি, ধোঁয়া থাকতে থাকতে মিলিয়ে যাও।
আসলে এ এক বোতাম বোতাম খেলা। অথচ উল্টোদিকের সরলরেখা চিরে দিতে ভুলে গেছ। ছন্নমতি জানালা। বাইরে পরদা। অবাধ উড়লে বুক দেখা যায়। ভেতরে উঠোন। তুলসীমঞ্চ। আগরবাতির আংরা ডগা আর নির্ভীক অ্যালভিওলাই; যার শেষ বাতাসটুকু শঙ্খমুখ খুঁজেছিল। পায়নি
যার নাম দিতে পারি না, সেটুকু ছুঁয়ে…
ক.
তবুও আলোচনা খুঁজি। গভীরে গিয়ে সমস্ত সিলেবাস ঝালিয়ে নিতেই হয়ত। বালিকাগজ মানুষ, স্বাগত! তুমি আমার সকল মরচেদের মুক্তি দাও। নবীন চামড়ায় গোলাপি ফুটুক। সেইটুকু ছুঁয়ে
আমাদের গল্পগুলো ফিরে আসুক।
আমার রাতের সন্তানেরা মরে গেছে। এই লাইনের পরে একটা ‘ হয়ত ‘ বুনে দিতে ইচ্ছে হয়। সবকিছুর বুনিয়াদই এই ‘হয়ত’- নয় কী? ‘হয়ত’ই এক প্রবল সম্ভাবনা। চোখ বুজলে এখন, রাতের সেইসব সন্তান আসার সুযোগ পায় না আর। অভেদ্য ঘুম স্পার্টানদের কঠিন ঢাল যেন। তা পেরিয়ে আমার ছাই বাতাসেরা, পাথরের বাড়িরা, জলরঙের জঙ্গলেরা আসতে পারেনা। মৃত্যুর আগে তুমি যা দেখেছিলে শেষবার, হয়ত সিলিঙের কোনো সূক্ষ্ম চির, আকাশের নিভে যাওয়া অথবা মাটির গায়ের থেঁতলানো ফুল- তা তোমায় পরজন্মে অনুসরণ করবেই। এই ভাবনাই আমায় নিয়ে চলে। মৃত্যুর আগে আমিও যা দেখেছি, তা আমায় ছেড়ে যাবে না, রাতের সেইসব সন্তান ফিরবেই। এ লাইনের পরে আমার সব ‘হয়ত’দের মুছে দিতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে মশারির মত ঘুম তৈরি করতে। যার ফাঁক দিয়ে আমার ইউরোপীয় প্রাচীন প্রাসাদ, ভরাট নীল শাড়ি, জরাজীর্ণ পরিব্রাজক, কামুক বাঘিনী, কালো আলতার কাটা পা, একচোখা ভিখারিনী, সাইকোডেলিক ফলসারা ঢুকে পরুক। ঘুম ভেঙে আমার হাত পা শক্ত হয়ে যাক। চোখ, জলে ভরে উঠুক!
খ.
একি গাঢ় জলসা! ভোরের দ্রিমদ্রিম আলো, জলের ওপর পরত ফ্যালে। ভারি সর ভীষণ, ছিঁড়ে লুটিয়ে যায় চাপ চাপ কমলা, আকাশের গায়ে। কাঁটা পেরিয়ে নদীর ধারে কোমর রেখে দাঁড়াই। জল বাড়ে। পাড় খায়।
বাতাসে ঝির লেগেছে। যেখানে শিরা শুরু, ধমনী বিষ নিতে এসেছিল প্রথম, সেখানে তো ফিরতেই হবে। চাও, না চাও। মাইলের পর মাইল দম ছুট, আসবেই। সব হাওয়া কম লাগলে, অক্ষরের কাছে আসতেই হবে, একবার, বুক ভরতে।
তোমার সেশন শেষ হয়নি। বারবার যেখানে ঘাঁটছো, ঠিক সেখান থেকেই আবার শুরু। কতবার রিপিট, রিপিট, রিপিট; তুমি ভুলে যাও প্রতিবার। এভাবেই ভাবো নতুনতর। আদলে এক ঘটনারা আড়ালে হাসে!