জাকারিয়া প্রীণন-র কবিতা
লরি
চলো কাঠের লরি নিয়ে পাহাড়ে যাই
ধামাইল নাচের দুপুরে
প্রেম করি আর চুমু খাই কালো পাথরে।
আমাদের চারপাশে আলোর গিরগিটি বসে আছে।
তাই সমস্ত বিভ্রমে
প্রাণের স্পন্দন পেয়ে ওড়ে আসে যে সকল পাখি;
নুরের আলপিনে আটকানো তাদের ডানা।
আহা পাথর পাখি!
প্রিয় শেফালি ফুল আমার
দেখ, নিম ডালে এক জোড়া কবুতর—
কেমন মিলন ভঙ্গিতে উড়ে যাচ্ছে ছাতিমের ডালে।
শব্দ
বাতাসে বাতাসে ছাতিমের ফুল
তোমার উড়নার মতো ফুটে আছে ইব্রাহীমপুরে
তার ছায়ায় পৃথিবী নিরন্ন হয়—
তবু মানুষের ভালো লাগে সঙ্গম।
যখন পাতা ভাঙার শব্দ
গড়িয়ে নামছে পথের ধুলোয়—
সেদ্ধ ভাতে মন ডুবিয়ে
আমারা বসে আছি ফেরিঘাট দুপুরে।
সিন্দুক
গাছের ছায়া পড়লে
লোকেরা চলে যায় প্রস্তানের দিকে
চলে যেতে হয় বলে বারবার মুছে ফেলি নাম।
পরিচিত সময়ের বাহিরে পুড়ে যায় ঘাসের শরীর—
তবু পৃথীবির সাতটি পথ বাজি ধরেছি তাসের ঘরে।
জানি; সমুদ্রবিস্তারে ক্লান্ত সব ঈগলের মতো—
জীবন এমনই এক মায়াবী বেলুন;
যে আমার সন্তানের হাতে
খেলতে খেলতে লুকিয়ে যাবে মাটির সিন্দুকে।
ক্ষুধা
ছেলেরা দৌড়ে গেল ধানমাঠে
যেন ভাতে শিংমাছের সালুন দিয়ে মায়েরা ডেকেছে ওখানে।
প্রায়, ক্ষুধার মতো নীরব অন্ধকার এসে
জ্বালিয়ে যায় আমাদের গ্রাম—
সমস্ত মানুষের।
এখানে হাতের তালু থেকে ঝরে গেছে
আমদের বয়সবৃক্ষ পাতারা।
এখন ইব্রাহীমপুরে দীর্ঘ রেখার মতো শীত
ফুটো করেদেয় মানুষের জীবন।
খমক
ফলবৃক্ষের নিচে শুয়ে থাকেন মা—
সে আমার প্রথম
গোলাপের কথা মনে পড়লো।
তারা কী দারুণ আলাপ করছিল খমকের নিচে।
যেন বহুদিন পর বন্দর ছেড়ে যাওয়া জাহাজে
আত্মিয় কোনো—
বিদায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছে একা।
জলের উপর তার মুখ দেখা যায়।
এখন ঢেউয়ের তিরতিরে তার ছবি মাছের আকার নিয়ে ঘুরে।