ভোটে যখন আসন শূন্য : জানে আলম

পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে বাম এবং জাতীয় কংগ্রেস কোনও আসনই জিতেনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা হ’ল প্রথম বাম-কংগ্রেস-মুক্ত, সংসদীয় রাজনীতির একমাত্র স্বীকৃত বিরোধী শক্তি, বিজেপি।
করোনা আতিমারী, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের প্রেক্ষিতে নির্বাচনের ফলাফলের প্রাথমিক স্তরের সমীক্ষা এবং এর প্রতিবেদনটি তিন পর্যায়ে আলোচনা করা যেতে পারে: প্রথমত, বাংলায় বিরোধী শক্তি হিসাবে বিজেপির উত্থান। দ্বিতীয়ত, বিধানসভায় বিলুপ্ত শতাব্দীর দুটি পুরানো দল – বাম এবং কংগ্রেস। তৃতীয়, তৃণমূলের বিশাল বিজয় বিজেপি ফোবিয়ায়।

প্রথমত, বাংলায় বিরোধী শক্তি হিসাবে বিজেপির উত্থান: যদিও বিজেপি ২রা মে নির্বাচন হেরেছে কিন্তু বিরোধী কণ্ঠে তারাই নিষণ্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে খালটি ইতিমধ্যে কাটা হয়েছিল, এখন কুমিরটি সবেমাত্র এসেছে। অন্য কথায়, হিংস্র বিজেপির ক্রমবিকাশের খাদ্য জুটেছে ঘাসের বনের আড়ালে। দেদার রাজ্যের আরএসএস স্কুলগুলির সরকারী স্বীকৃতি পেয়েছে। এবং ক্ষমতাসীন দল তার ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করে বিজেপির সাথে হিন্দুত্ব প্রতিযোগিতায় নামছে। বলেই বিজেপির ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়ে উঠেছে এছাড়া লোকসভায় ১৮ টি আসন থাকায় তাদের মনোভাব ছিল রাজ্য তারই পাবে। তাদের স্লোগান ছিল উনিশটি হাফ একুশে সাফ। প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যের ৭০ শতাংশ হিন্দুদের জোট গঠনে প্রতিদিন কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছেন, এবং নির্বাচন কমিশন পকেটে থাকলেও সরকার গঠন করতে পারেনি তো কি হয়েছে। বিরোধী শক্তি হিসেবে সরকারের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে।
অন্যদিকে, ২০১১ সালে মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি নিজেকে সংখ্যালঘু মুসলমানদের মশীহা হিসাবে উপস্থাপন করতে মুসলিম ধর্মীয় সমাবেশে হিজাব পরে আসছেন, বলেছেন ‘ইনশাল্লাহ’ এবং ‘মাশাল্লাহ’। যদিও এতে মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান নয়, ইমাম ভাতা চালু করেছেন। বিজেপি এর বিরোধিতা করতে প্রস্তুত। যদিও ওয়াকফের কাছ থেকে ইমাম ভাতা আদায় করা হচ্ছে। ওয়াকফের অর্থ, যা একচেটিয়াভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের সম্পদ, যার বেশিরভাগ অর্থ হ’ল ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ হাজী মোহাম্মদ মহসিনের অর্থ। হিন্দু সমাজে প্রচারের আলোকে ইমাম ভাতা, হিজাব, ইনশাল্লাহ ‘এবং’ মাশাল্লাহ ‘-র মতো সস্তায় রাজনীতি নিয়ে এসে বিজেপি তাকে’ মমতাজ বেগম ‘হিসাবে পরিণত করেছে, সংখ্যালঘু তোষণকারী তকমা দিয়েছে।
ফলস্বরূপ, আরএসএস বিজেপি সহজেই পশ্চিমবঙ্গে একটি বড় ধর্মীয় মেরুকরণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বাম কংগ্রেসের গোঁড়া হিন্দুরা মমতার এই লোক দেখানো মুসলিম-বান্ধব মুসলমানদের কপাল ভাঁজ ফেলার জন্য বিজেপির দিকে ধারাবাহিক লাফিয়ে উঠেছে। ফলস্বরূপ, বিজেপির ভোট ব্যাংক বেড়েছে। সমীক্ষা অনুসারে, মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে অমুসলিমরা বাম কংগ্রেসের দিকে আঙুল দেখিয়ে বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছে। এ কারণেই বিরোধী সাগরে পদ্ম ফুল ফোটানো সহজ হয়ে উঠেছে। যেখানে জয় শ্রীরাম যত, সেখানে তত হিন্দুত্ব ভোট হয়েছে, আর কেনই বা হবে না? গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রশাসনের রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিজেপি জল খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় । বামপন্থীদের দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসনকালে এই রাজ্যে বিজেপি এবং আরএসএসের তেমন ডাক আসেনি। যদিও এই নির্বাচনে বাংলায় বর্ণ ও ধর্মের মেরুকরণ সে রকম ঘটেনি, তবুও বিজেপি অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে ইঁদুর দৌড়ে লাথি মেরেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে ‘২০১৬ সালে বাম কংগ্রেসের ৬৭ টি এবং বিজেপির ৩ ছিল, এবার বিজেপির ৭৭ টি আছে এবং তাদের শূন্য রয়েছে’। গণতন্ত্রের কি গ্যাঁড়াকল!
গণতন্ত্র কী তা কেউ বুঝুক আর নাইবা বুঝুক, নবীন থেকে প্রবীণ সকলের ভোট নিয়ে মাতামাতির অন্ত নেই। ভোট হলো গণতন্ত্রের উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে বাংলার রাজনীতিতে বিজেপি জুজু যাঁতাকলে গুঞ্জন উঠছে ঘাস ফুলে। অন্যদিকে, আর সব জোট-বিজোটের অঙ্ক যেন আমড়ার আঁঠি। একদা জোঁকের মতো বাম-কংগ্রেসের রক্ত চুষার পরে, দুটি দল অনিবার্যভাবে বিধানসভায় উঠে এসেছিল। কালের অমোঘ নিয়মে আজ তারা বিধান সভায় তাল ঠুকছে, অহি-নকুল দুটি ফুল, দুটি লড়াই, দু’পক্ষ। একদিকে মমতা বাঙালি বাঙালি হয়ে অন্যদিকে, দিলীপ শুভেন্দু এবং এসএস গুজরাটি। এটা ডেভিড এবং গোলিয়তের মধ্যে লড়াইয়ের মতো।
লড়াইয়ের ময়দানে উল্লাসিত সমর্থকদের স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’ পাল্টা জবাব ‘খেলা হবে’। ভাঙ্গা পায়ে একটা গোল বিজেপিকে, একটা গোল বিজেপিকে বলতে বলতে কখন যেন সেঞ্চুরিটা দ্বিগুণ হয়ে গেল কেউ টেরই পেল না। রাজ্যে বিপুল সংখ্যক উইকেট নিয়ে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এটি তাঁর হ্যাট্রিক! তৃতীয় মুকুট!

দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের বিশাল জয়জয়কার।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিল। একটা দাঙ্গাবাজ পার্টি তারা প্রকাশে হুমকি দিচ্ছে অনবরত। মানুষ একটু ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তারা ক্ষমতায় আসত। আর ক্ষমতায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে এটি বিপর্যয় হত।
শুধু তাই নয়, অনেক নিচু জাতের হিন্দুরাও বিপদের মুক্ত হয়েছে। অনেক শান্তিপ্রিয় হিন্দু আছে যারা ঝামেলা পছন্দ করেন না। এক সঙ্গে থাকতে পছন্দ করে। কোন দল এসে সমাজে ঝামেলা করুক তারাও এতে ভয় পায়। যার নব্বই শতাংশ শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মক্ষেত্র যুক্ত তারের তো ভয় হওয়ারই কথা। এমন অনেক সংখ্যাগুরু আছেন যারা মুসলিম অঞ্চলে চাকরি ব্যবসা করছে। ধর্মীয় কোন অস্থিরতা তৈরি হলে তারাও সমস্যায় পড়বে বেশি। কর্মের ক্ষেত্রে জাহান্নাম তৈরি হোক কেউ চায় না। হিন্দু-মুসলিম সাধারণ মানুষ তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাদের দুটি বিকল্প ছিল, ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরাচার। তাদের কাছে ফ্যাসিবাদ একটি অস্তিত্বের প্রশ্ন ছিল। স্বৈরশাসন তাদের জন্য বৈষম্যের প্রশ্ন ছিল। তারা তুলনামূলক ভাবে কম ক্ষতিকারক স্বৈরাচার সরকার বেছে নিয়েছে। তাদের কাছে এর চেয়ে ভাল বিকল্প ছিল না। মুসলমানরা সরকারী চাকরিতে মাত্র ২%, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য কম। তাদের হারানো কিছু নেই। শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান নিরাপত্তা তথা যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে গিয়ে ঘাস ফুলকে আরো প্রস্ফুটিত করেছে।
সবাই কমবেশি মমতাকে খুব ভালোবাসে। মমতা ব্যক্তিগতভাবে হিন্দু হলেও তাঁর অন্যান্য ধর্মের প্রতি বিশেষ সহানুভূতি রয়েছে। ইমাম মোয়াজ্জেম তাদের ভাতা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। কোনও সরকারই মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করেনি। তবে তিনি মুসলমানদের উপর অত্যাচার করেন না। আমরা এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছি যেখানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এখন যে অন্যায় অত্যাচার শুরু হয়েছিল তা ভারতে আগে হয়নি। কথা বলার স্বাধীনতা, খাদ্য গ্রহণের স্বাধীনতা ধর্মীয় স্বাধীনতা, কর্ম স্বাধীনতা এখন প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন। মাংস খাওয়ার অপরাধে যারা মানুষ হত্যা করে তারা ক্ষমতায় আসার পরে কি হবে শত্রু বা বন্ধু? বিজেপি রাজ্যে দলিতদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। তারা ক্ষমতায় আসলে কি হবে? রসগোল্লা খাওয়াবে? নাকি চুমু? শম্ভুলালের মতো জানোয়ারদের যারা আশ্রয় দেয়, যারা ক্যামেরার সামনে জীবিত ব্যক্তিকে মারধর করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে এবং বলে জয় শ্রীরাম। তাদের মতো সন্ত্রাস কারা সৃষ্টি করে? ভারতীয় জনতা পার্টি হিন্দু ধর্মের একটি অংশকে সন্ত্রাসীদের বদ্ধমূল করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ধর্মের অশিক্ষিত লোকদের সন্ত্রাস সৃষ্টি কারা করছে? কারা তারাদের মিস গাইড করছে?
মূলত অশিক্ষিত অসহায় মানুষগুলি তাদের ফাঁদে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি সেই অশিক্ষিত মানুষকে শিক্ষিত করতে পারি তবে সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল সেই প্রান্তিক অসহায় ছেলে মেয়েদের স্কুলে মুখী করতে পেরেছে। কন্যা শ্রী থেকে শুরু করে শিশুদের জুতা, ব্যাগ, পোশাক, সাইকেল, সংখ্যালঘু বৃত্তি দিয়ে নারীকে শিক্ষিত করা, যুব সমাজকে শিক্ষিত করা, হিন্দুদের শিক্ষিত করা, মুসলমানদের শিক্ষিত করা, শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর নতুন প্রকল্পগুলির মধ্যে যে কেউ শিক্ষিত হলে সন্ত্রাস মুক্ত থাকবে এবং সহিংসতা হবে হ্রাস। শুধু তাই নয় মমতার ইস্তাহার ও অঙ্গীকার ইতিবাচক প্রচারের মধ্যদিয়ে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
এক শ্রেণীর মানুষ যখন রুটি-রুজির লড়াই জীবন- জীবিকার লড়াই করছে তখন জাত-ধর্মের লড়াইতে মার খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। ব্যাংকের টাকা লুট হচ্ছে, জিনিষের দাম বাড়ছে – এই সবকিছু গোমূত্রে ধোয়া যায়না – এটা নির্বাচনে বিজেপিকে বুঝিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষ। মেরুকরণের রাজনীতি কত ক্ষতিকর সেটা দেশের মানুষ বুঝেছে। হিন্দু-মুসলমান মারপিটে ব্যস্ত থাকুক, আর সেই ফাঁকে লুঠ চালাবে শাসকদল – এই কেরামতি ধরা পড়ে গেছে। সব বেচে দাও – এই নীতি জোর ধাক্কা খেলো এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু রাজ্যের যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের কি হবে? বিভিন্ন রাজ্যে মানুষ চাকরি হারা হচ্ছে এখানে যদিও চাকরি চলে যায়। কাদের যাবে ? যারা চাকরিতে ২% তাদের না যারা সংখ্যা গুরু? সেই উত্তর কি ভোটের ফলাফলে পাওয়া গেল না?
কোন একটা দলের কিছু রাজনৈতিক গুণ্ডা দের প্রকাশ্য কিছু হুমকি উষ্কানীমূলক কথা যেমন ২ তারিখের পর মেরে ঠাণ্ডা করে দেব। ২ রা মে ঘর থেকে টেনে টেনে বের করে মারবো, পুলিশকে দিয়ে জুতো চাটাবো, বেগম হারবে, ফুফা হারবে, পাকিস্তান পাঠিয়ে দেব, বদল হবে, বদলাও হবে, ২রা মে থেকে যোগী আদিত্যনাথের মতো সোজা করবো, পাড়ায় পাড়ায় শীতলকুচি হবে। বাংলায় চতুর্থ দফার নির্বাচনের সময়, বাংলার জনগণ দেখেছেন কীভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী শীতলকুচিতে চার বাঙালিকে গুলি করেছিল। বিজেপি এই ঘটনায় সামান্যতম সহানুভূতি দেখায়নি। বিপরীতে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি হুমকি রাজনীতি করেছেন। তিনি বাঙালি শিল্পীদের ‘রগড়ে’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। শীতলকুচি প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের অমৃত বক্তব্য, ‘বাড়াবাড়ি করলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’ শীতল কুচির ঘটনার পরের দফা নির্বাচনে এর জবাব তারা পেয়েছে।
অধিকাংশ মানুষের মুখে এখন একটায় কথা। তারা বলছে বিজেপির ভয়ে ভীত হয়ে মুসলিম সম্প্রদায় এক জোট হয়ে মমতাকে সমর্থন করছে। কথাটা খুব একটা ফেলনার নয়। নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রুখতে মুসলিমরাই মহাজোট বেঁধে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে । তারা শান্তি চাই । সাধারণ মুসলিম জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য যতটা সুসংহত অপচেষ্টা চালানো হয়েছে তার চেয়ে বেশি তাদের বোঝানো হয়েছে। কখনো ‘নো এনআরসি মুভমেন্ট’ কখনো ‘নো ভোট টু বিজেপি’ আওয়াজ তুলে ফ্যাসিষ্ট বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলার সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ কলম ধরে, নাটক লেখে, গান তৈরি করে। সেই সব গান, নাটক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তোলে ঐক্যবদ্ধ প্রচার চালিয়েছে। এদের কিছুটা হলেও বোধ তৈরি হয়েছে। এরা অসামান্য প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। দেশকে বাঁচাতে বাংলাকে বাঁচাতে বিজেপিকে আটকাতে বাম-জোট ছেড়ে তৃণমূলকে জিতিয়েছে মানুষ। বাংলাকে জিতিয়েছে। তাই তৃনমূলের এই জয় বাঙালি বিদ্বেষী বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলার গণ রায়। এ রায় এক ঐতিহাসিক রায়।
একুশের নির্বাচন এবং এর ফলাফলগুলি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সম্প্রদায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করছে। আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, ভাষা-লিঙ্গ ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি জাতি-উপজাতিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং আদর্শিক পরিবর্তনগত দৃষ্টিভঙ্গি তবে সর্বোপরি দৃষ্টিটি হলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুর জোট! এই বছরের ইভিএম-এ ঘাস ফুলের পাপড়ি বৃদ্ধির পিছনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জোট একটি অন্যতম ফ্যাক্টর। এই ফ্যাক্টর বহু সমাজকর্মী, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনুমান ও হিসেব ওলট পালট করে দিয়েছে।
তবে একথা অস্বীকার করার কিছু নেই যে, নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রুখতে মুসলিমরাই মহাজোট বেঁধে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে এমনটি যেমন মহা সত্য, তেমনি সচেতন শিক্ষিত অমুসলিমদের ভূমিকাও কোন অংশে কম ছিল না। আরো অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে বাংলার বেশিরভাগ মানুষ ব্যালট বাক্সে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন। যেখানে বিশেষত সাধারণ মুসলিম জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য সুসংহত অপচেষ্টা চলেছে হাটে বাজারে। তা সত্ত্বেও তারা হারিয়ে না গিয়ে অসামান্য প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে আপাতত সাফল্য অর্জন করেছেন।
তৃতীয়ত, দেশের প্রাচীনতম দুটি রাজনৈতিক দল কংগ্রেস এবং সিপিএম, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত সাইন বোর্ড হয়ে গেল। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এই দুটি দল পালা করে বাংলার মসনদে আসীন হয়েছে। আজ তারা উভয়েই শূন্য হাতে দিশেহারা। ঘেসো ঝড়ে বিজেপি হেরে গেলেও বিধান সভায় হারিয়ে গেল বাম কংগ্রেস। বিধানসভার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলা এই অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী থাকবে।
অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো এবারের বিধানসভা ভোট। ভোটে জিতেছে মা-মাটি-মানুষের দল তৃনমূল কংগ্রেস। আসলে, জিতেছে মমতা। সবার চোখে ভেল্কি দিয়ে ২১৫ এর বেশি আসনে জয়। এই জয়লাভের বীজ রোপিত হয়ে ছিল রাজ্যে পালা বদলকে কেন্দ্র করে সেদিন যেদিন মমতার কংগ্রেস ত্যাগ করে।
তখন ১৯৯৮ সাল, ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আওয়াজ তোলে ‘হয় এবার না হয় নেভার!’ কিন্তু তারপরও বাম ক্ষমতায় ছিল দশ বছর। উল্লেখ ২০১১ সালে কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে মমতা ২০০৬ এ ২৩৫ টি আসন পাওয়া বামের অহংকার চূর্ণ করে দেয় সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম ইস্যু তুলে।
গত কয়েক বছরে অনেক জল গড়ে গেছে, বদলে গেছে বাংলার রাজনীতি। এখন কেউ কাউকে আর মান্যতা দেয় না। মাত্র পাঁচ বছর পরে, বাম কংগ্রেস মিলে মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৬ বিধান সভা জোট করে কিন্তু ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। তখন থেকেই রক্তশূন্যতা শুরু হয় তাদের। এই ক্ষতগুলি সারানোর মলম হিসাবে বাম জোট এখন আব্বাসের সাথে হাত মিলিয়েছে। ক্ষত সারানো তো দুরস্ত বরং ভোটে আসন শূন্য হয়ে ক্ষতের রক্ত ক্ষরণ ত্বরান্বিত হয়ে রক্তশূন্য হয়ে পড়লো মহাজোটের দোসর কংগ্রেস এবং সিপিএম।
এই শূন্যতার কারণ কি? তা চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে অনেক গুলি কারণ দেখানো যাবে। রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের অভিমত, আব্বাস সিদ্দিকীর সাথে মিত্র হওয়াটাই সবচেয়ে বড় কারণ। আব্বাসের সঙ্গে যদি তারা জোট গঠন না করতো, তবে সম্ভবত তারা শূন্য হত না। জোট করে বামেদের যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ছিল সেটা তারা জলাঞ্জলি দিয়েছে। তাদের নিজস্ব কোন পাওয়ার ছিল না। তারা খুব ভাল করেই জানত যে, তারা সরকার গঠন করতে পারবে না। তারা চেয়েছিল মমতার পতন নিশ্চিত করতে। তারা জানতো যে, বিজেপি এলে মানুষ মারবে। দল আবার রাজনৈতিক জমি পাবে বাংলা জুড়ে। এই আহাম্মকরা বুঝতে পারছে না যে, এই সুপ্ত বাসনা সমগ্র দেশকে জঙ্গলের আগুনের মতো পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে। যা বাংলার মানুষ অন্তত বুঝতে পেরেছে। আর, বুঝতে পেরেছে বলেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিজেপিকে আটকাতে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
যদিও সাচার কমিটির রিপোর্টের পর থেকেই, মুসলমানরা বাম বিমুখী হতে শুরু করেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। একসময়, মুসলিম সম্প্রদায় গরুর মাংস, সিনেমা হল, এবং লালঝাণ্ডা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। কিন্তু এখন, লাল মুছে ফেলার জন্য তারা সবুজ রঙে রঞ্জিত। আসলে বাংলার বোকা মুসলমানদের কোনও বিকল্প নেই, নেই তাদের চয়েস। ভারতবর্ষে মুসলমানরা এককভাবে জিরো। তাদের আগামীর দিনগুলো খুবই কঠিন। বিজেপি এলে তারা কি করতে পারে। তা বুঝতে পারছে না বাংলার কিছু মানুষ। বুদ্ধিজীবী হিন্দুরা জেনেছে এবং বিজেপিকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই উদারতা কতদিন থাকবে? এটা প্রশ্ন থেকেই যায়। ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা যারা এবার মমতাকে ভোট দিয়েছে ভবিষ্যতে তাদের বিজেপিতে যোগদানের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।বামফ্রন্টের মধ্যে যারা মানসিকভাবে মুসলিম বিরোধী, সংঘী মানসিকতার লোক তারা কিন্তু জনসমক্ষে প্রগতিশীল ব্যাজ বজায় রাখতে সরাসরি বিজেপিতে যাবেন না। এমনকি বিজেপির পক্ষেও ভোট দিতে তাদের লাল হাত কাঁপবে। তবে আব্বাস সিদ্দিকীর সাথে কংগ্রেস-বামফ্রন্টের নির্বাচনী চুক্তি তারা কোন পরিস্থিতিতে মানলেন, সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন।
ভারতীয় মুসলমানরা বিজেপি-বিরোধী, মোদী বিরোধী হতে পারে তবে কখনও হিন্দু বিরোধী হতে পারে না এবং হতে পারে না দেশদ্রোহী এটা চ্যালেঞ্জ! বাংলার কোনও ধর্মীয় প্রতিনিধি প্রয়োজন হয় না, বা কোনও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন হয় না। বাঙালি আশা করে বাঙালিরাই বাংলার প্রতিনিধিত্ব করবেন। অন্যদিকে, বিজেপির মতো বামপন্থীদের একটি অংশ চায় না ধর্মীয় সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি, উপজাতি, ওবিসি, ভাষাগত সংখ্যালঘু, লিঙ্গ গত সংখ্যালঘুদের কণ্ঠ উঠে আসুক। তাদের আর্থ-সামাজিক বিকাশ ঘটুক, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক। বিশেষ করে তারা চায় না মুসলিম দের অধিকার প্রশ্নটি উঠে আসুক। আব্বাস সিদ্দিকী মাঝে মাঝে তাঁর রাজনৈতিক কণ্ঠে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।
আবার মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ লোকের ধারণা, পীররা ভাল মানুষ নন। তাদের উপার্জিত অর্থ হ’ল মানুষকে ধোঁকা বানিয়ে। সমাজে তাদের কোন অবদান নেই।
মানুষ আব্বাস সিদ্দিকীকে মেনে নেয়নি। ভোটের ফলাফলে বিষয়টি সবার কাছে স্পট। তবে এক শ্রেণীর অল্পশিক্ষিত মুসলিম প্রাথমিক ভাবে আব্বাসকে চাইছিল এবং তার সঙ্গে কাজও করছিল। সেই সঙ্গে কিছু অসচেতন মুসলিম যুবকদের মধ্য উন্মাদনা ছিল আইএসএফ ও মিমের প্রতি। পরবর্তীতে তারা বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে ফিরে এসেছে। আসলে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আন্তরিকভাবে চেয়েছিল ফ্যাসিবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপিকে থামাতে। আপাতত: সফল হলেও তারা কিন্তু মহা আনন্দে নেয়।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে টিএমসির উপরি পাওনা গনি এবং অধীর গড়ের মিষ্টিফল। ২০১১ ও ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েও যা অধরা ছিল মালদা-মুর্শিদাবাদ। বামফ্রন্টের ভরা বাজারেও যাঁরা কংগ্রেসর প্রতি তাদের সমর্থন ধারা অটুট রেখে ছিল, সেই প্রজন্ম এখন কালের নিয়মে হারিয়ে গেছে। এমনকি দিনাজপুরের মতো গড় বাম কংগ্রেসর হাত থেকে হারিয়ে গেল। যদিও ২০১৯ লোক সভায় ভোটে মালদার আমও জোটেনি মমতার পাতে। অপরদিকে, মুর্শিদাবাদে ভাগীরথীর পাড় ভঙ্গার মতো অধীরের গড় ধ্বংসে পড়লো। নিজেরাই বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে মুর্শিদাবাদের জনতার রায়কে মানুষের ধর্মযুদ্ধ হিসেবে তুলে ধরে ফের সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ তাঁর খাস তালুক বহরমপুরে পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়েছে। অন্যদিকে, আইএসএফ ও বামেদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্য জুড়ে ছিল। সেই তথৈবচ জোট নিয়ে ভোট হলো, সিট শেয়ারিং হলো, আবার চলে গেল। যৌথ কোন আন্দোলন নেই। যদি তারা যৌথ আন্দোলন করতেন, তবে নিশ্চিতভাবেই কয়েকটি সিট পেতেন। আবার, কংগ্রেসের প্রচারে রাহুল সোনিয়াদের মতো কেন্দ্রের কোন হেভিওয়েট নেতৃবৃন্দের দেখা মেলেনি। মিলবেই বা কি করে যেখানে কেরলে ওরা বাম বিরোধী আর বাংলায় জোট! শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি এটা কখনোই মেনে নেয়নি।
এবারের বিধানসভা নির্বাচন প্রচারে বিজেপির অন্যতম ইস্যু ছিল রাজনৈতিক হিংসা। শুভেন্দু অধিকারী, সায়ন্তন বসু, দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের মুখের ভাষা, উদ্ধত বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে ভিতরে ভিতরে পশ্চিমবাংলার জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ( স্ত্রী-পুরুষ) জনগণ একতাবদ্ধ হয়েছেন। সেই সময় মহাজোট বিজেপির বিরুদ্ধে যত না বলেছে তার চেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছে তৃণমূলের। এটা মুসলিমরা ভালো চোখে দেখেনি। সংযুক্ত মোর্চা দাবী তুলেছিল দুর্নীতি, বেকারত্ব, সাম্প্রদায়িকতা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রুখতে তৃণমূল বিজেপি দুজনকেই এক সরিতে রাখতে। এটা মুসলিমদের কাছে খুব গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি কারণ সুজন চক্রবর্তীর মতো বর্ষীয়ান নেতার কাছে প্রশ্ন তোলা হয় তৃণমূল আর বিজেপিকে কি চোখে দেখছেন? তিনি বলেন, দুটিই তাদের কাছে সমান। সমান কি করে হতে পারে ? ব্যাখ্যা টা করেন নি। তরমুজ আর তলোয়ার কি সমান ? বিজেপি তো ফ্যাসিস্ট আর তৃণমূল কংগ্রেস তো নয়। বিজেপির নীতি আদর্শ পুরোটাই ভারতের সংবিধান বিরোধী। তারা পুরো সিস্টেমটা চেঞ্জ করে দিতে চাই। এটা তো মুসলিম কাছে বিপদ জনক। আবার, সূর্যকান্ত মিশ্র তো বলেই ফেলেছিলেন, সিট পেলে তারা মমতাকে সমর্থন করবে না। আপনাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বলিহারি কমরেড। আবার কখনো কখনো শোনা গেছে আগে রাম পরে বাম। বামের এই রামফ্রণ্ট নীতি মানুষকে ভাবিয়েছে, তৃণমূল না এলে বিজেপি কে ঠেকানো যাবে না। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে একই ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি থেকে বাঁচতে তৃণমূলকে উজাড় করে ভোট দিয়েছে সবাই। তৃণমূল না করলেও শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঠেকিয়ে রাখার জন্য তৃণমূলকে সমর্থন করেছে অধিকাংশ বাংলার মানুষ। এই একচেটিয়া জয় কি শুধুই তৃণমূল কংগ্রেসের? না, বরং এই জয়টা অনেকাংশেই বাঙালি জাতিসত্তার।
পুরানো বাম যারা ছিল তারা অনেকই বিজেপি তে গেছে। তারা ক্ষমতার মোহে গেছে। তারা কিন্তু প্রকৃত বাম ছিল না। নতুন দের মধ্যে অশোক ঘোষের ছেলে বিজেপিতে গেছেন এবং জিতেছেন। আসলে, প্রকৃত বাম কি তা বামপন্থীরা বোঝাতে পারেন নি। বামেদের অটুট আদর্শ যেটা এক সময় ছিল, এখন নেই। এখন তারা যা করছে তা ভোটে জেতার জন্য। কিন্তু বাম পন্থা একটা সংগ্রামের নাম। ভোটে জেতা নয়। সম্প্রতি তারা ক্ষমতার জন্য ভোটের যুদ্ধ করছে। ভোট কেন্দ্রিক সংগ্রাম হয়ে গেছে। যখন তারা ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিল, তখন মানুষ এদের টিকিয়ে রেখেছিল। আর এখন যখন টিকে থাকার জন্য উঠেপড়ে লাগলো তখন মানুষ তাদের ছুড়ে ফেলে দিলো। তখনই এরা জোটের কথা ভাবতে শুরু করলো। কিন্তু ধৈর্য্য ধরলে লাভ হত। সংগ্রাম করতে হত। ন্যায়ের পক্ষে চলতে হত। ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করলেই মানুষকে পাশে পাওয়া যায়। ন্যায়ের কথা কেবল মুখে বললে হবে না। তার জন্য চাই যোগ্য নেতৃত্ব। এবার যদিও বৃদ্ধতন্ত্রের খোলস ছেড়ে ঐশী, মীনাক্ষীর মতো এক ঝাঁক নতুন স্বচ্ছ মুখ এসেছে। তারা লাগাতার প্রচারও করেছে। ওরা নিঃসন্দেহে ভালো। তবে ওদের উঠে আসতে সময় লাগবে। ওরাই হয়তো একদিন দেশ শাসন করবে।

[লেখক – প্রধান শিক্ষক, নূর জাহানারা স্মৃতি হাই মাদ্রাসা, মুর্শিদাবাদ।]

Facebook Comments

Leave a Reply