জ্যোতির্ময় শীল-র কবিতা

কালশিটে

ক্ষীণ সাদা কুণ্ডলীকৃত ধোঁয়াতে
তার আধপোড়া শরীরের গন্ধ বিঁধে।
ঘাসের পোড়া অংশ জুড়ে
তার গাত্রবরণ সমীকরণ।
বিস্তীর্ণ কুয়াশার আধো আলোয়
ছিঁড়ে যাওয়া যোনি যেন কোনো ছিন্নমূল হয়ে
আকুতি করে পা আঁকড়ে ধরে।
দুব্বোঘাসের শাণিত অগ্রের মত,
পোড়া রক্তের কালশিটে দাগে তীক্ষ্ণ আর্তনাদ লেগে।

তীব্র খিদের উল্লাস
নগন্য পরিপ্রেক্ষিতে
উইপোকার আদলে উপবিষ্টতায় সেঁধিয়ে।

দ্বেষের মজ্জার অন্তর্জালের বহুস্তরীয় বিন্যাসে যখন বিষের জারণ ছোটে
টুকরো টুকরো গৈরিক মাটি রিপুদোষে হাতরাশ হয়ে ওঠে।

পুনশ্চ

শরীরে পেরোচ্ছে শীত
দাবদাহে আগলে রাখা পলি খসে পড়ে বর্ষার মহানন্দায়।
কুণ্ডলী পাকায় ঘুড়ির নাটাইএর মতো।
মাঞ্জায় ঘূর্ণাবর্ত বোনে,
চকিতে স্ফুলিঙ্গ চলে বিরহ গহীন খাক।

অ-স্থিতিস্থাপক এক বিন্দুতে
নিস্তেজ ত্রাতা হয়ে
শিকড়ে ফেরা।
নিছক অবহেলায় পায়ের তলার বরাদ্দ পলি সরে যায়,
ঘেরাটোপে খড়কুটো দিয়ে বানানো বরফের ঘর,
ধীরে ধীরে স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে।

তবু হাজারো বারণ না শুনে
আধখানা কাব্যি লিখে চলে গেল সে।

কাকের স্বরলিপি

কাকের স্বরলিপি ভেঙ্গে দেখলে
নিয়মাবর্তিয়ায় সে সমচ্চারিত ধ্বনি
অনুনাসিক স্বরে আওড়ানো হাহুতাশের মতো
সন্ধ্যার কালো বর্ণময় ঋণে আবর্তিত হয়।

আদিম নির্লিপ্ত কর্কশতা
যেন মধ্যযুগের বর্বরতার ধারাবিবরণী থেকে
আগামির স্বরূপ চেনায়।
তার জরাভারগ্রস্থ নশ্বরতা
আনকোরা দ্যোতক তরঙ্গে মিশে অহরহ,
নিষাদ কিনারে বহু পার্বণ পেরিয়ে,
বাউল হয়ে ওঠে।

উঠে গেছে অবরোধ

ছোঁয়াচে আবেগের জলে
মিছিলকে ভেঙে বিলি করো লিফলেটে।
অজান্তে বসন্তের শেষ ঘনিয়ে আসে।
শার্সি ধুয়ে বিচ্ছুরণ নিয়ে নীরবে পাক খায়।
তবু তা ঝোঁকের পরিপ্রেক্ষিতে নগন্য।
আয়োজনের গভীর সারমেয়তায়
ঘেরাটোপে আটকে আছে জামার ভিতরে।

তারপর কখন জানি উঠে গেছে অবরোধ।
বিহ্বল চৌহদ্দি।
স্তরে স্তরে জমে থাকা রুক্ষতা নিয়ে ভাঙচুর আর ছত্রভঙ্গ মিছিলের মত নিরাকার।
অভিমুখে সেতুর অনুরণন।
মোমবাতি লুটোপুটি কাদায়।

তবু, খিদে পিপাসাতে
ধুঁকতে ধুঁকতে
বিঁধে থেকো ভিজে আলসেমিতে।
কখন জানি শিহরণে বিপ্লব দরজাতে কড়া নাড়ে।

Facebook Comments

Posted in: April 2021, POETRY

Tagged as: , ,

Leave a Reply