সম্পাদকীয়

সারাদিন শিকার সেরে ফেরার পথে নগ্ন ডায়নাকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে অ্যাক্টিওন। ওভিডের ‘মেটামর্ফসিস’ এর এই দৃশ্য বার বার ফিরে এসেছে বিভিন্ন শৈল্পিক মাধ্যমে। রেনেসাঁ যুগে, টিশিয়ানের ছবিতে, কখনও হাঙ্গেরিয়ান কবি জর্জ সাইরটজের কবিতায়। এমন উদাহরণ বিরল নয়। ইলিয়াড, ওডিসি, মহাভারত থেকে শুরু করে সিনেমার পর্দায় কিটস বা গিংন্সবার্গ ছড়িয়ে রয়েছে সময় এবং ভৌগলিক বিস্তারের মধ্যে ।

একজন শিল্পীর কাজের হয়ত শ্রেষ্ঠ সার্থকতা তখনই, যখন অন্যান্য মাধ্যমে কাজ করা শিল্পীরা নিজেদের মাধ্যমের মাপকাঠি দিয়ে তার কাজের সাথে সংযোগ তৈরি করেন। বিনিময় হয়। একটা মেন্টাল ডায়েলগ তৈরি হচ্ছে ধরা যাক একজন কবি এবং তার সামনে দেওয়াল জোরা ৫০০ বছর আগের কোনও ছবির কারিগরের সাথে। অথবা সচেতন ‘কোলাবরেশন’ – যে শব্দটার সংজ্ঞা লকডাউন পরবর্তী পৃথিবীতে বদলে গেছে। যেহেতু ত্বকের আধারে শিল্পীরা একসাথে আসতে পারছেন না, তাই টেকনলজি সহায়। আমাদের দেশে গত বছরের দীর্ঘ এবং অপরিকল্পিত লকডাউন আমাদের দেখিয়েছে এক ভয়ংকর দৃশ্য। সরকার সমস্ত দায় ঝেড়ে ফেলেছে আর দেশ জুড়ে বেঁচে থাকার লড়াই । আশার কথা একটাই, লকডাউন এবং অতিমারি আজও আমাদের শেখাচ্ছে মানুষ কি অক্লান্ত ভাবে মানুষের পাশে থাকে। শুধুমাত্র মানুষের উদ্যোগে, শিল্পীদের বদান্যতায় পৌঁছে যাচ্ছে সাহায্য।

শুধু শারীরিক নয়, এই মানসিক দূরত্বের সময় আমরা চেয়েছিলাম শিল্পীরা কাছাকাছি আসুক। তাই এই উদ্যোগ – যুগলবন্দী। আলাদা আলাদা মাধ্যমে কাজ করা শিল্পীরা একজোট হয়েছেন। সৃষ্টি হয়েছে কবিতা থেকে ছবি বা ছবি থেকে কবিতা। শিল্পীদের তো একজোট হতেই হয়- বিপ্লবে, ভালোবাসায় বা অতিমারিতে। এটাই এই সময়ের দাবী।

অপরজন

এপ্রিল, ২০২১

Facebook Comments

Leave a Reply