যুগলবন্দী :: অদিতি বসুরায় ও মহাদেব নাথ

[শুধু শারীরিক নয়, এই মানসিক দূরত্বের সময় আমরা চেয়েছিলাম শিল্পীরা কাছাকাছি আসুক। তাই এই উদ্যোগ – যুগলবন্দী। আলাদা আলাদা মাধ্যমে কাজ করা শিল্পীরা একজোট হয়েছেন। সৃষ্টি হয়েছে কবিতা থেকে ছবি বা ছবি থেকে কবিতা। এ’ভাবেই এ’ আয়োজনে কবি অদিতি বসুরায় ও শিল্পী মহাদেব নাথ।]


কবি পরিচিতি

অদিতি বসুরায়

পেশায় সাংবাদিক এই কবির লেখালেখি শুরু ২০০৪ থেকে। অদিতির কবি জীবনে নানা পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি প্ৰকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ যেমন ‘সাড়ে তিনটের উড়োজাহাজ’, ‘সব চিঠি প্রকাশিত’। ২০১৬ সালে পান কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার। কবিতার লেখার পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন পত্রিকা সম্পাদনাতেও । লেখালেখি ছাড়াও কবির অন্যতম পছন্দের বিষয় গান ও সিনেমা। পছন্দ তো বটেই তার সঙ্গে এই নিয়ে তাঁর লেখালেখিও রয়েছে। প্রসঙ্গত কবিতার সঙ্গে কবির গদ্যকার হিসেবেও খ্যাতি সুবিদিত।

নেতাজি

অদিতি বসুরায়

তাঁর চশমার কাঁচে ইদানীং বিস্মৃতির বাস্প জমে খুব!
কটক – কোহিমা – কলকাতা একাকার হয়ে যাওয়া স্বপ্নে,
আসেন এক চওড়া পাড়ের সাদাশাড়ি পরা নারী –
যাঁর কপালে ঊষার সূর্যের মতো লাল টিপ – মা, মা বলে ডেকে ওঠেন তিনি।

ঘুম ভাঙা, আবছা স্মৃতিপথ, ভরে ওঠে বন্দুক-বিউগল- এরোড্রাম কত কী!
মনে পড়ে, চাঁদমারি অভ্যাসের দিনে কানে তুলো গোঁজার নিয়ম ছিল তখন –
ঘরে ঘরে শাঁখ বাজতো সন্ধেয় ।
আর লন্ডনের বরফঢাকা পথে , এক ছোট্ট খুকির খেলাধুলো প্রায়ই তাঁর স্বপ্ন,
আলো করে বসে। তার লাল ফারের জামায় সাদা বোতাম –
তার সোনালি চুলে প্রজাপতির ডানা
‘অনীতা’ – বলে মোলায়েম গলায় ডাক এলে সে খুকি ভ্যানিস – !
একই পথে এক তরুণীও যাতায়াত করে।
সিংহলের মতো সে মেয়ের গায়ের রং – দৃড় চিবুক – কমলালেবুর বাগানের
মতো চোখে, সে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে, তাঁর দিকে !
সে, তাঁকে কি যে বলতে চায় – বোধগম্য হয় না নেতাজির।
আজকাল আর অন্য কোনও ভাষা তাঁর শ্রবণকে প্রভাবিত করে না –
তথাপি, এসব দেখাসাক্ষাৎকে ‘স্বপ্ন’ বলে ডাকলে – তা মিথ্যে বলা হবে।
আবার একে যদি ‘মিথ্যে’ বলা হয়, তবে তা সত্যের অপমান –

নেতাজি, শিশুটির খেলার মাঠের প্রান্তে সৈ্ন্যঘাঁটি দেখতে পান। দেখতে পান
ভরে ওঠা অস্ত্রভাণ্ডার। দেখতে পান, মেয়েদের লং মার্চ।
প্রবল শব্দে টুকরো – টুকরো হয়ে যাওয়া বিমানের
আগুন তাঁকে ঘিরে ঘরে বারবার। ঘুম আসে না তাঁর –
আজন্মের সাথী, এই সময় তাঁর পাশে এসে হাত ধরে বসে।
বন্ধুর শরীরময় ক্ষত – অসাম্য – অবিচারের চিহ্ন লক্ষ করে
নেতাজির চোখে জল আসে।

তারপর ২৩শে জানুয়ারির ভোরে, দুজনে স্নান সেরে ঘিয়ের
প্রদীপ জ্বালান। তক্ষুনি, দিকদিগন্ত উড়িয়ে সাইরেন
বুকের মধ্যে ভাটিয়ালি – পুবের আকাশে জয়ধ্বনি
রাইফেলে সেনানিতে ছয়লাপ উঠোন ।

যাবতীয় জন্ম-যুদ্ধ-প্রেম-সন্তান মুছে গিয়ে ফুটে ওঠে
শুধু তাঁর আজীবনের বান্ধবের মুখ ।
– কর্ম ও আশ্বাসে চর্চিত,
সেই বিশ্বস্ত নর্ম-সহচরকে আলিঙ্গন করেন তিনি –
ঋজু, আলোকময় এই বন্ধু-প্রাণটি ভিন্ন, নেতাজির আর কোনও নশ্বর
লোকের কথা মনে পড়ে না বহুকাল –
এই সেই সখা যার আঘাতে, তাঁর রক্তপাত অবশ্যম্ভাবী
এই সেই আবাল্যের সওয়ারী, তাঁর বুকের স্পন্দন যাঁর জন্য
এখনও গঙ্গাতীরে, জেগে ওঠে। দুজনেই জাগ্রত – দুজনেই অনন্তের প্রণম্য ।
মানুষটি সুভাষচন্দ্র বসু। বন্ধুটির নাম ভারতবর্ষ।


শিল্পী পরিচিতি

মহাদেব নাথ

প্রথম দশকের কবি। থাকেন মুর্শিদাবাদের চুনাখালিতে। কবিতার পাশাপাশি ছবি আঁকা মহাদেবের প্যাশন।

বড় ক’রে দেখার জন্য ছবিটিতে ক্লিক করুন

Facebook Comments

Leave a Reply