যখন সবাই ছিল সংখ্যালঘু অথবা বাথরুমের জানলা থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে : নীলাব্জ চক্রবর্তী

যখন সবাই ছিল সংখ্যালঘু অথবা বাথরুমের জানলা থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে

ঊনবিংশতম পর্ব

৩৪

একটা হ্যাপি পিল। কোথাও জমাট বাঁধছে ‘পূর্বনির্ধারিত’ শব্দটা। এই সরলতা, প্রকৃত প্রস্তাবে, ভীষণভাবেই দ্বান্দ্বিক। ফেনার ভেতর ফেনা। ক্ষয়। সন্ধ্যা। লজিস্টিক মেনেই হুঁ থেকে হাঁ থেকে ভাঙা চাঁদ আসে। অপেক্ষা অর্থাৎ একটা মুখ। সংবরণ। কচি কলাপাতা আর বাদামী। ভালবাসতে বাসতে একেকটা সাদাকালো কবিতা। আমি তোমার নাম। রঙ করছি। এইসব পোশাকী নগ্নতা। একেকটা দিন কাঠের তো একেকটা কাঁচের। উচ্চারণগুলো ভেজা ভেজা হয়ে আছে অথচ। ধারালো কাগজ। বোঁটাগুলো আঙুলে ফুটে যাচ্ছে। যেভাবে ধাতু একটি ব্যবহার হয়ে ওঠে। মূর্ত একটা আদর। কোথাও তার সরস্বতীচিহ্ন। দূরত্ব একটা স্পর্শ আসলে। অ্যাক্সেস বলতে বুঝতে চাইছি একটা ঘন কন্ট্রোল ভল্যুম। প্রশ্রয়। এই কাঙালতা। স্মৃতি বলতে রহস্যের মতো একটা ছায়ার অর্ধেক রেখে দেওয়া আছে। একটা সংখ্যা…

# * # * #

একজন লাল টেলিফোন
রাস্তা
পার হবে হবে
একজন দেওয়াল লিখন
চোখে
যতদূর ভারী হয়ে একটা দিন
আসছেন
তাকে ফোকাস বলে ডাকতে
জলের মতো পরপর মুখোশভাবনা
একটা নিরক্ষীয় অবস্থান
কাগজকলের পাশে
শান্ত
খুলে রাখা বিরল স্নায়ুদেশ
দেখছে
কম্যুনিকেশন নামে পাথরের একটা ফাঁকা বাক্স…

= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =

স্বল্পমূল্যে কবিতায় হেলমেট পরানো হয়ে থাকে

এখানে আসুন

আপনার কবিতায় হেলমেট পরিয়ে যান

কবিতাকে সংঘর্ষ ও রক্তক্ষরণ থেকে রক্ষা করুন

(যদি সেটাই আপনার একমাত্র বা মুখ্য অভিপ্রায় হয়ে থাকে)

= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =

— এসব কিছুই থাকবে না রে… জানিস নদে, বড়জোর কয়েকটা কবিতা থেকে যাবে শুধু হয়তো… বা, তাও নয়…

— হ্যালো হ্যালো, আনন্দবাজার পত্রিকা অফিস? একটা ইনফরমেশনের জন্য একটু ফোন করলাম… হ্যাঁ, বলছি, এই উক্তিটা কে কোন প্রসঙ্গে করেছিলেন একটু জানাবেন কাইণ্ডলি? “ওরা নিরামিষ আন্দোলন করছিল, আমরা গুলি চালিয়ে আন্দোলনটাকে আমিষ করে দিলাম…”, না না ইয়ার্কি করছি না, সিরিয়াসলি, প্লিজ একটু বলুন না, একটা লেখায় কাজে লাগবে… হ্যালো হ্যালো… শুনতে পাচ্ছেন?

— ওই কথাটা মনে রাখতে হবে কিন্তু, জাস্টিস ডিলেয়েড ইজ জাস্টিস ডিনায়েড…

— সেবার রথ আর ঈদ একসাথে পড়েছিল… মনে আছে?

— হোলি কব হ্যয়, কব হ্যয় হোলি? হা হা…

— শুনুন না, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলি, ইংরিজি আর বাংলা ভাষাটা আলাদা। প্লিজ রাগ করবেন না। তাদের প্রকরণও আলাদা। ইংরিজি ‘ic’ সাফিক্স আর বাংলা তৎসম শব্দের ‘ষ্ণিক’ প্রত্যয় কখনো এক নয়। সে কারণে, ইংরিজিতে ‘সিন’ থেকে ‘সিনিক’ আর ‘বেস’ থেকে ‘বেসিক’ হলেও, আমাদের কিন্তু ‘বিজ্ঞান’ থেকে ‘বৈজ্ঞানিক’ আর ‘ইতিহাস’ থেকে ‘ঐতিহাসিক’ হয়। ‘লিঙ্গিক’ কেন লিখবেন আপনি ? ‘লৈঙ্গিক’ লেখা ঠিক। না?

— আর বোলো না! অনেক দোকানেই বাপুজী কেকের নকল পাওয়া যায় আজকাল। হুবহু এক দেখতে, শেপ, সাইজ, ওপরের কাগজটা… শুধু বাপুজীর বদলে বাবুজী বা পাপুজী লেখা… চট করে বুঝতেই পারবে না ভাল করে না দেখলে… কে জানে, হয়তো অনেকদিন ধরেই চলছে এই কেকগুলো… আমি অবশ্য বরাবরই বাপুজী লেখাটা দেখার পরেই নিই…

— কোথাও পড়েছিলাম, সোর্স ভুলে গেছি, কথাটা মনে আছে… কোনও জিনিসের সংজ্ঞা আদৌ জিনিসটাকে সংজ্ঞায়িত করে না, বরং সংজ্ঞাকারীকেই সংজ্ঞায়িত করে… ভাল না কথাটা?

— দেখা হবে না?

— আমার জ্বরের ভেতর লতা মঙ্গেশকরের সাথে তারাপদ রায়ের দেখা হয়ে যায় জানো? এই যে ঝিমঝিম শুয়ে থাকা মাথা ভার ব্যথা ব্যথা করছে গা-হাত-পা ভেতর ভেতর পোড়া পোড়া সারাদিন, তার মধ্যে ভ্যানোপ্রসাদ যখন আমার জাতীয় সঙ্গীত ‘তোমাকে শোনাতে এ গান যে গেয়ে যাই…’ গাইতে গাইতে ঘরে ঢোকে, অনিবার্যভাবেই তারাপদ রায়ের এই লাইনটা মনে পড়ে… ‘তুমি বুঝে ফেলেছো জ্বর হলে সবটাই খারাপ লাগে না।’… এই আর কি… মনে পড়ে নয়ের দশক… তিনতলার ছোট্ট ঘরটায় কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি, লুপে বাজছে এই গানটা, মানে বেজেই চলেছে আর কী… ঠাকুমা হয়তো ছাদে এসেছে পাম্প চালিয়ে… ট্যাঙ্ক ভ’রে গিয়ে জল ওভারফ্লো করলেই পাম্প বন্ধ করে দেবে… এইসব… জ্বর-জ্বর… ওই গানটা…

— প্রতিদিন পরীক্ষা দিতে হয়। প্রতিদিন। ভাবতে পারো?

— ভাল আছ তুমি? ভোট দিতে যাবে তো নিশ্চয়ই এবারও? তোমার কোন কেন্দ্র? কবে ভোট?

— মদ খাওনা কেন বাল? কী হয় খেলে?

— তাহলে বোঝাও আমায় এখন… সময় কাকে বলে…

— দেখুন একটা কথা বলি। ‘রুবি কখন আসবে’ সন্দীপনের একটি অত্যন্ত জরুরী উপন্যাস আমার কাছে। প্রোটাগনিস্ট বিল্বমঙ্গল চক্রবর্তী-র বিখ্যাত এক লেখকবন্ধুর চরিত্রটির নাম শচীন সর্বাধিকারী ওই উপন্যাসে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে ছাপার অক্ষরে দু-চার পাতা বাংলা পড়েছেন, এমন যে কেউই সম্ভবতঃ চিনতে পারবেন চরিত্রটিকে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তো, আপনি সুনীল থেকে শচীনে পৌঁছানোর এই ব্যাপারটা খেয়াল করলেন নিশ্চয়ই। ডি ওয়াই ডি এক্স। মানে, সময়ের সাপেক্ষে গাভাসকার কে ডেরিভেটিভ করে তেণ্ডুলকার বানাবার সন্দীপনীয় ব্যাপারটা ধরে ফেললেন তো?

= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =

(আমাদের দাবী)

অবিলম্বে সমস্ত চটকলে ৯০ : ২০ চালু করতে হবে

P.F., E.S.I.-এর টাকা জমা বন্ধ করা চলবে না
বন্ধ জুটমিল খুলতে হবে
B.C.M.U. প্রবর্তক শাখা

= = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = = =

# * # * #

নীল ডায়েরি — ২০১৭-র এন্ট্রি

অথবা কে জানে, আমি তো আমিই, সবটা কি মনে রাখতে পেরেছি না কি, বা হয়তো সত্যিই পড়িনি এর আগে, এরকম, কখনো ‘মুখের দিকে দেখি’ শহীদুল জহিরের এই উপন্যাসের মতো জটিল, অদ্ভুত ভাষা ও বিন্যাসের আখ্যান এভাবে, ফলে মনে হচ্ছে হয়তো মনে থেকে যাবে অনেকদিন এই চানমিঞা, জুলি, মামুন, খরকোস অথবা কুতুবমিনার অথবা আইবেক, খৈমন, ময়নামিঞা, রাজাকার আব্দুল গনি, মিসেস জোবেদা রহমান, বান্দরবাহিনী; একবার নারিন্দার ভূতের গলিতে যাওয়া লাগবে কখনো ঢাকা গেলে – এরকম মনে হয়, আসলে গল্পের মধ্যে গল্প, একসাথে অনেকরকম সময়, হয়তো তা না, কে জানে আসলে একটাই সময় হয়তো সবটাই, হতেও তো পারে, মধ্যে মধ্যে অ্যাবসার্ডিটি, সম্ভাব্যতা মানে প্রতিসম্ভাব্যতা মানে এভাবে প্রতিমুহূর্তে তছনছ হওয়া একটা গল্পের মানে, তবে, খালি মনে হয় উনি লেখাগুলির নাম দেওয়ার ব্যাপারে হয়তো তাড়াহুড়ো করতেন, বা হয়তো তেমন কিছু না, হয়তো অনেক ভেবেচিন্তেই নামগুলি এরকম রাখতেন কি জানি, হয়তো কয়েকদিন বাদে আমার চল্লিশ হবে বলে এই সময়টা এরকম মনে হচ্ছে, হয়তো চল্লিশ ব্যাপারটা খারাপ না তেমন, শোনা গেছে চল্লিশের পর হয়তো একটু একটু ক’রে বয়স কমে…

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

Facebook Comments

Leave a Reply