অপ্রকাশিত কবি

[বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি, বহু প্রতিভাশালী কবিই অপ্রকাশিত অপ্রচারিত থাকেন – কখনও বা তাঁদের ভাষা আঙ্গিক শৈলীর বিশেষত্বের কারণে, কখনও জনসংযোগ করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ব’লে, আবার কখনও হয়ত কেবলমাত্র তাঁর ভৌগোলিক অবস্থান বা পরিবেশের কারণে। এমন কত কারণই ঘুরে বেড়ায়। একজন প্রকৃত কবির কাজ লুকিয়ে থাকে অপ্রকাশের আড়ালে।

“অপ্রকাশিত কবি” – অপরজন পত্রিকার একটি প্রয়াস, এমন কবিদের কাজকে সামনে আনার, যাঁরা ব্যপকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত নন। যাঁদের লেখা হয় এর আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, অথবা কেবলমাত্র দু’ একটি পত্রিকাতেই প্রকাশ পেয়েছে। অথচ যাঁরা লেখার মাধ্যমে আমাদের দেখাতে পারেন ভবিষ্যত বাংলা কবিতার বাঁক।

বিভাগ সম্পাদনা করছেন, রাহেবুল।]

জিয়াভাই

জন্ম: ২৩/১০/১৯৯৫

জন্মস্থান: আলিপুরদুয়ার জেলার দেওগাঁও গ্রাম

কবিতা লেখার উদ্দেশ্য-বিধেয়: কবিতায় জীবনের শূন্যগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টায়।

প্রথম প্রকাশ: ‘ইবলিশ’ পত্রিকায়

জিয়াভাইয়ের প্রকৃত নাম জিয়ারুল। ও নিজেকে জিয়াভাই বলতে ভালোবাসে। ওর বান্ধবরা ওকে ও নামেই ডাকে। জিয়াভাইয়ের প্রথম কবিতা বেরয় ‘ইবলিশ’ পত্রিকায়, লেখাটার নাম ছিল ‘কিছু না’। একটা মজাদার আর দুরন্ত কবিতা। সেই থেকে খুব বেশি লেখেনি জিয়া। ইবলিশ ব্যতীত মাত্রই দু’একটি পত্রিকায় ওর লেখা প্রকাশিত, ব্লগ হোক আর ছাপা পত্রিকা।

ওর লেখায় কী আছে সেটা বলতে পারার চেয়ে বোধয় কী নেই সেটা বলা সহজ। লেখায় একটা ম্যাজিক আছে, ম্যাজিক আছে ভাবে আর ভাষায়। ভাষা ব্যবহারে নিজস্বতা আছে, নিজস্বতা আছে ভাববস্তুতেও যেটা কিছুটা ওকে স্বতন্ত্র করছে। একই সঙ্গে পাঠকের কাছে সেই স্বতন্ত্রতাটা আকর্ষণীয়। আবার অসংলগ্নও। অসংলগ্ন অনেকভাবেই। পড়া যাক ওর বেশ কিছু কবিতা, ‘ডামাডোল সিরিজ’।

জিয়াভাই-এর কবিতা

ডামাডোল সিরিজ

১/

তোর বাবদ বদলানোর আর কিছু…

জার্নিতে অজান্তেই ডুব দেওয়া।

মাঝবয়সীপনায় শান দেওয়াটা অচ্ছুৎ প্রেমিকা গড়ায়।

২/

কত বেহিসেবি সাদা পাকা চুলে কপালটাই মৌলানো হচ্ছে বারবার

রৌদ্রটা পালিয়ে বেরাচ্ছে, আর সময় হয়েছে নিউটনের বাড়ি ফেরা

ফ্যাকাসে মুখটার আড়ালে—আমিও সাহেব হয়ে যাই বিকেলের কাছে।

৩/

সোনা

ঘুমের ভিতর মাথাটা কেমন চিনচিন করে…

যে সময়টা সবই বর্জনের আওয়াজ ওঠে…

৪/

বহুধা ঘুম তৃষ্ণা জড়ানোয়

পুরোনো ছন্দে ফেরা…

সব বিরোধ সচল

৫/

সোনা

তোর সূর্যাস্তের পর

কয়েককাল পেরিয়ে আস্তানার পথে…।

অতীত বলতে কিছু…?

অশরীরি খেলে নিস্তাররূপী।

পিছুবার কল্পনায় ব্যস্ত হতে হতে আরও

‘ফিরে দেখা-৯০’

৬/

ওহে:-

হয়তো এভাবেও ছাড়তে চাইনি। খামোখাই পা মেলায়ে, হাত বাড়িয়ে দিলাম।

মামু:-

তোর মুচকি হাসিতে কী যে বুঝলাম?

শ্বশুর:-

হাসি হাসি তো সাইকোল ভালে চালায়ছে…

১:-বয়সটা আর একটু বাড়ুক।

২:-আবাল না আপাল?

ইস…এত টেনশনের দরকারই ছিল না কষতে জানলে। ব্যাটারা চাইছেটা কী। শর্তসাপেক্ষে তো দু’জনাই বেস্ট হওয়ার কথা ছিল না, মাঝের গর্তে যে পিছলাইব সেটা ক্যাম্নে কইমু। আর একটু শোধন করে বরং ঝলকানি রক্ষে করি…।

৭/

বাড়িয়ে তুলছে শেয়ানের ইতিকথা।

পাম্প-বালিশের শব্দ ফুরলে, ক্রমশ ঘুমের আঁচড়।

ভয় লাগে পিঁপড়ের লাইনে জাগবার…

এখানে বিলাসিতার সিন নেই।

ভাইব্রেট শুধু জল সমাধান।

দিব্যি: যব তক হ্যায় জাঁ…

৮/

যদিওবা নিশ্চিত ঘুম না, স্বাদ। আর একটু পরেও হয়তো চিরকাল।

মাঝ রাতে কাঁথা ওলটাতেই, প্রেয়সীর সেক্স-নারাজ।

ঠাণ্ডাতে লুঙ্গিটা পরতে ভুলেই গেছি…

কত্ত পুরানো ধান্দা জোড়া লাগাতে খাঁটি কদম। হাওয়া বদল।

বৈশ্য হতে দিবে…?

৯/

ওহে,

সংসার বলতে কী বোঝ…? এবারে কি দাঁড়িপাল্লায় মাপবে নাকি। হিসেবের বাইরে থেকেও বারে বারে আপন করে ভাবাটাই বরং শ্রেয় ভাবনা…। আর বাদ বাকি যদি তুমি কিছু একটা নিয়ে থাকো তাহলে তো কোনো কথাই নেই। তবে হ্যাঁ অন্তত নিজের হাসিলটা কুড়িয়ে নেওয়া অনেক ভালো। ভাগ্যিস এভাবে হয়তো আর কিছু গড়াতে চাই না…। আর এ ব্যাপারে যে আপন অস্তিত্ব সমন্ধে ভাবা হয় বা হয়ে থাকে, বা মাঝে ও মধ্যে আলোচনাও হয়, তা কিন্তু টের পেলাম সবে। কিন্তু না আমার কিন্তু এ ব্যাপারে অনেকটা এগোনোর অনেক দরকার। সবই এভাবে জিনগতভাবে এগোনো ভালো না, নিজে তো, খুঁটির জোরই আলাদা। তো সব শেষে দোহাই দিয়ে অনেক ব্যর্থ চেষ্টা চালাও বোকামির নামান্তর। যাক যদি ভাগ্যে ও কোনোদিন ফুল্কে ওঠে। তবে তো চমৎকারিও হয়ে যায়…। আর এভাবেও মাঝে ও মধ্যে ভাবি সব হিসেবই…।

Facebook Comments

Leave a Reply