শান্তনু সাহা-র কবিতা

রাত্রি বিষয়ক যেটুকু আমি জানি

এক.

শব্দের ভারে নুয়ে পড়া স্তবকের মতো নয়, একটু
উঠে এসো দক্ষিণের বারান্দায়। এই ফ্ল্যাটবাড়ির আগে
আমি জানতামই না শীতকাল এতোই কৃপণ, যে
রোদ ফিরি করতে তারও দিক ভুল হয়। নাকি
ইচ্ছে করেই নিজেকে সীমিত রাখে, নাগালের
বাইরে রাখে?
কুলুঙ্গীর প্রদীপ থেকেও ছোটবেলার সব অন্ধকার
ক্রমে দূর থেকে দূরে চলে যেতে আমরা কতই দেখেছি।
আলিবাবা থেকে সেই সিন্দবাদের গল্পে কখনও
পলক পড়েনি। আজ দুপুরের বারান্দা জুড়ে
গাছের পাতার আঁধার সামান্য শীতভাব বুলোয়
ফুলহাতা জামায়। সরে বসি। তুমিও এসো।
বিকেল গড়াবার আগেই রাত্রির প্রস্তুতি সেরে রাখি।
দ্রুত উঠে এসো। আগত রাত্রির ওম
একটা চাদরের রোম কূপে খুব সযত্নে রাখি।

দুই.

স্বপ্নেরা কথা বলুক; আমরা
আমাদের রাত্রিগুলো ভাগ করে নেবো।
যেভাবে সুগন্ধী লেবুর একফোঁটা
জলের সঙ্গে মেশা, তুমি নিও;
বাকি রাত্রির বেহিসাবী খাতা,
জমা থাক স্মৃতির ভাঁড়ারে।
দিনগুলোও একইরকম। শুধু
বিকেলগুলো দলবেঁধে
তুমি আর আমি সূর্যাস্ত দেখতে যাব।

অবিশ্রাম বৃষ্টি পড়ছে। রাইকিশোরী,
তুমি বাড়ির বাইরে বেরোওনি তো?

তিন.

আজ সংক্রামিত হোক নিঃস্ব শরীর। যাবতীয় মায়া
আমি ত্যাগ করে যাব দেখো। তোমাকে যদিও
এই ভুলে যাওয়ার আগে সাহসী চুম্বন দেবো
তীব্র ওই ঠোঁটে। যেটুকু অজুহাত ছিলো
বুক পকেটে রেখে অবিশ্রাম হেঁটে যাব দিগন্তের দিকে।

এই তো ছুঁইয়ে দিচ্ছি আমার ক্ষয়ে যাওয়া হাত।
তোমার উদার নাভির পাশে সামান্য থামছি।
তারপর চলাচল শুরু হলে শোনো , কোনো
ভয় রেখো না ওই বালিয়াড়ি জুড়ে।
ধূর্ত জীবাণুরা দুর থেকে দেখুক, রাত্রি নামুক – ধীরে
খুব ধীরে…

চার.

এই তো অরণ্যের ভিতর গিয়ে শ্বাস নিচ্ছি আজ। খুব ধূলো লেগেছিলো শরীর জুড়ে। শুনেছি ওখানে ঝর্না আছে আর আছে তার বুক ভরা জল। বিবাগী জল। যার মায়াময় স্নেহ জানে কতটা হাত বাড়ালে আমি ছুঁয়ে ফেলব তোমার আপদনখশির। ওখানে ডুবে খুলে রাখছি আমার নিভৃত সব পোষাক, অন্তর্বাস । ধুয়ে যাক আমার বুক, নাভি আর আপাত পাহারা। দিনের ঊর্ণাজাল ছিল বাতাসে ছড়ানো। তারই রোমশ ছাপ ছিল বুকের গভীরে। মুছে যাক।
আমি অরণ্যের ভিতর এই নির্জন হলাম। আদিম হলাম স্নিগ্ধ প্রাচীন এর মতো। এভাবেই হয়। নইলে ওই স্তনবৃন্ত তুমি বলো কীভাবে ছোঁব। আমার ঠোঁটের খুব কাছে তুমি ঝুঁকে। তুমি বসন্তের ইভ। ঝুঁকে আছো তোমার সর্বস্ব নিয়ে। যেভাবে থাকলে রাত অমরত্ব পায়, তোমার শরীরের নীচে আমি আভূমি ছড়ানো। আর দূরে তাকিয়ে দেখছি দিগন্ত মাখছে ঘন মাটি আর মেঘ, গোটা শরীরে মাখছে বুনো সোঁদা সোঁদা স্বেদ।

Facebook Comments

Posted in: February 2021, POETRY

Tagged as: , ,

Leave a Reply