হেথা নয়, অন্য কোথা, আর কোন্খানে : রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়
হেথা নয়, অন্য কোথা, আর কোন্খানে
মনে হল সৃষ্টি যেন স্বপ্নে চায় কথা কহিবারে,
সুদূরের লাগি…
বাজিল ব্যাকুল বাণী নিখিলের প্রাণে-
হেথা নয়, হেথা নয়, আর কোন্খানে।
চলন-না-মানা পায়ে অচিনের অমোঘ সম্মোহনে “বলাকা”[1]-র এই ব্যাকুল বাণী প্রতিটা যুগেই ডাক পাঠায় আমাদের অন্তরমহলে; চেনা পৃথিবীর বাঁধন পেরিয়ে এক অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন বেজে ওঠে কবির অক্ষরমহলে শিল্পীর রংমহলে। শতবছরের সীমানা পেরিয়ে বাংলার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “বলাকা”-র গতির ছন্দ রূপ পেল মার্কিন চিত্রশিল্পী সুসান বী-এর ক্যানভাসে─ Anywhere, out of the World [2], যদিও শিল্পীর সূত্র ঊনবিংশ শতকের ফরাসী কবি চার্লস বোদলেয়ারের সেই কবিতা ‘N’importe où hors du monde’ (Anywhere, out of the World)─ “Finally, my soul explodes and cries out wisely: “Anywhere!” anywhere! as long as it is out of this world!”[3], যার মূল সুত্রধর থমাস হুডের কবিতা “The Bridge of Sighs”[4]─
Mad from life’s history,
Glad to death’s mystery,
Swift to be hurl’d—
Anywhere, anywhere
Out of the world!
প্রচল থেকে দূরে অন্য কোথা অন্য কোনোখানে এমনই এক নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সুদূর পঞ্চদশ শতাব্দীর নির্যাতিত আইরিশ মানবতাবাদী দার্শনিক থমাস মোর এবং রচনা করেছিলেন তাঁর সেই ব্যাঙ্গাত্মক কল্পকাহিনী Utopia[5]. একবিংশ শতকেও অন্য পৃথিবীর স্বপ্ন হাতছানি দেয় চিত্রশিল্পী সুসান বী-কে; ঘড়ছাড়া করে প্যাটাক্যুয়রিক্যাল কবি চার্লস বার্নস্টাইনকে; কবিতার প্রচলিত বিধিবদ্ধ স্বীকৃত গঠনের বিপরীতে উৎসারিত এক নতুন চলনের মন্ত্র নিয়ে দ্বীপান্তরিত কবি বসত করেন “In Utopia”[6], হাতে তাঁর এডগার অ্যালান পো-এর “The Poetic Principle”[7], নির্মাণ করেন “The Pataquerical Imagination”, যেখানে নিরন্তর বিপ্লবের মন্ত্রে উচ্চারিত হয়─ “Wee wee wee all the way homeless.”[8] মার্কিন কবির অবিরাম চলনের সূত্রে প্রতিধ্বনিত হয় ব্রাজিলের পর্তুগিজ কবি রেজিস বনভিসিনোর “A Nova Utopia”[9], বার্নস্টাইনের ভাষায় যাঁর পরিচয়─ “Regis Bonvicino is to twenty-first century São Paulo what Charles Baudelaire was to nineteenth-century Paris”. [10]
প্রিয় পাঠক, আমার এই আবোলতাবোল বকবকম আপনাকে কি দিশেহারা করল? এ আসলে nonsense এর সেই খেয়াল রস, যেখানে no এক blank space-এর আভাস দেয়, যার অন্তরে মর্মরিত অনন্ত সম্ভাবনার গীত, অন্য এক বাস্তব, নতুন এক বাস্তবতার জগৎ, যেমন ঊনবিংশ শতকের ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডে বসে উচ্চারণ করেছিলেন লুইস ক্যারল─ “I’m not strange, weird, off, nor crazy, my reality is just different from yours”;[11] বিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসিকে সম্ভাবনার মন্ত্রে গেঁথে পাখা মেলতে দিয়েছিলেন লিটারারি ননসেন্সকে। অথবা মনে করা যায় থমাস মোরের ইউটোপিয়ার সেই “speaker of nonsense” রাফেল হিথলডে। এই প্রবন্ধ কোনো চূড়ান্ত গন্তব্যের কথা বলে না, আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ; অধুনান্তিক যুগে বসে উত্তর-অধুনান্তিকতার স্বপ্ন, যাকে বাংলার অধুনান্তিক ভাবনার যুগপুরুষ সমীর রায়চৌধুরী্ “অবাস্তবের বাস্তবতা” বলছেন, যেখানে সম্ভাবনার বীজবপন, যেখানে প্রচলের সীমানাভাঙা নিম সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ঔপন্যাসিক রবীন্দ্র গুহর “the future truth”. এই প্রবন্ধের কোনো পূর্বনির্ধারিত গন্তব্য নেই বরং বলা যায় আমাদের চেনা পৃথিবীর গণ্ডি পেরিয়ে কবি ও চিত্রশিল্পীর অন্তর্লীন মিথস্ক্রিয়ায় নির্মিত ইউটোপিয়ার সুলুক সন্ধান; যেখানে একদিকে যেমন কোল পেতেছে ফরাসি রসায়নবিদ মিশেল ইউগেন শেভেরুলের “negative afterimage”,[12] যার যুগপত বৈপরীত্যে শিল্পী সুসান বী-এর ক্যানভাসে আলো ও রঙের পারস্পরিক প্রভাব এবং বিপরীত রঙের ভেতর সমন্বয়ের খেলা, তেমনি অন্যদিকে জার্মান লেখক ও দার্শনিক থিওডোর অ্যাডর্নোর “negative dialectics” এর মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছে চার্লস বার্নস্টাইন ও রেজিস বনভিসিনোর কাব্যজগতে। বৈপরীত্যের ভাবানুষঙ্গে শিল্পী ও কবির মধ্যে এক সেতুনির্মাণ─ বৈপরীত্যবোধ থেকে পরিপূরকতাবোধে উত্তরণ। বাংলা ভাষায় “নতুন কবিতা”র প্রাণপুরুষ বারীন ঘোষাল বলেছিলেন─ “in the intimacy of painters can only a poet best realize the importance and difference of light, color, texture, exaction, reflection, imaging and composition techniques, from their next of keen in trade, to constrain himself from exaggeration or venting passion”[13]. কবি ও শিল্পীর মধ্যে এই অন্তরঙ্গতাই জন্ম দেয় তাঁদের মধ্যে ধারণামূলক ফিউশন, বার্নস্টাইনের ভাষায় Iconophrasis.[14]
বিংশ শতাব্দীর রুশ ইহুদি শিল্পী মার্ক শ্যাগল তাঁর “Self-Portrait with Seven Fingers” সম্পর্কে বলেছিলেন: আমার নিজের জন্য নিজস্ব বাস্তবতা নির্মাণ করি, আমার ঘর পুনর্নির্মাণ করি[15]। শিল্পী এমন এক স্পেসের স্বপ্ন দেখেছিলেন যা ছিল এক “dream of abroad”, সুসান বী-এর ভাষায় “In my studio, the paintbrush and a bright and layered use of colors and textures serve to carve out a dreamy, psychic space that is my refuge.” প্রশ্ন জাগে শিল্পীর এই “psychic space” কি সেই কাঙ্ক্ষিত ইউটোপিয়া? আবার কাব্যজগতে দেখি কবিতার মাধ্যমে কবি ও পাঠকের মধ্যে চলে এক মিথস্ক্রিয়া, চলে নিরন্তর পারস্পরিক খেলা, যেখানে কাগজের ওপর কবির লেখা বা পাঠকের পঠিত শব্দগুলো কবিতা নয়, বরং সেই শব্দনির্মাণ ও বিনির্মাণের ভেতর উভয়ের অর্জিত অভিজ্ঞতাই কবিতা। একজন কবি প্রতিদিনের চলতিপথের ঘাত অভিঘাত কুড়িয়ে কিছু স্পন্দন, কোনো এক মুহূর্তের অভিজ্ঞতা ক্রিয়া ও বিক্রিয়া মুছে তাঁর সংবেদনার কিছু সংকেত লিখে রাখেন কবিতার অক্ষরে। আর পাঠক সেই নির্মিত কবিতার রিদ্মে অনুরণিত হন, সাধারণের স্বীকৃত অর্থ পেরিয়ে আবিষ্কার করে্ন এক নতুন অর্থ─ যোগাযোগ স্থাপিত হয় কবি ও পাঠকের, রচিত হয় বার্নস্টাইন কথিত “Republics of Reality”[16], গঠিত হয় কবি-কবিতা-পাঠকের কবিতাখেলার এক উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। এই কি তাহলে কবির সেই অন্য কোথা অন্য কোনোখানের ইউটোপিয়া?
২
ইউটোপিয়া কী? ষোড়শ শতকের গোড়ায় থমাস মোর শব্দটি তৈরি করেছিলেন তাঁর Utopia উপন্যাসের নামকরণে। ইউটোপিয়া শব্দটির ধারণামূলক আক্ষরিক অর্থ “no place”. থমাস মোর তাঁর গ্রন্থে ব্যবহার করেছলেন Nusquama শব্দটি, যার অর্থ─ ne (“not”) + usquam (“anywhere”) অর্থাৎ “nowhere”. প্রাচীন গ্রীক শব্দ থেকে উদ্ভব হয় Utopia─ ou(“not”), এবং topos (“place”) আর তার সঙ্গে iā প্রত্যয়যোগে তৈরি Utopia. কিন্তু মোরের শ্লেষালঙ্কারের ছোঁয়ায় ইউটোপিয়া হয়ে উঠল দ্ব্যর্থবোধক শব্দ─ ou-topos(“no place”) আর eu-topos(“good place”)এর সংশ্লেষ। থমাস মোর এই পৃথিবীর বুকে অন্য এক পৃথিবী কল্পনা করেছিলেন যা এই বিশ্বের এক বিকল্প স্থান, সমতা, ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত এক কাল্পনিক স্থান, যেখানে অনুরণিত হয় চার্লস বার্নস্টাইনের “Republics of Reality” –র কাব্যিক ধারণা। তবে বার্নস্টাইন ও মোরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হ’ল─ diversity বা বৈচিত্র্য। কারণ বার্নস্টাইনের ভাষায় “diversity, as it’s now often thematized, is culturally and politically important because it foregrounds the potentially enormous heterogeneity of writers— of who can write and who can make writing that counts” যার অনুরণন বার্টান্ড রাসেলের কণ্ঠে, “diversity is essential to happiness, and in Utopia there is hardly any. This is a defect of all planned social systems.”[17] বার্নস্টাইন তাঁর কবিতা “In Utopia”-য় বলছেন, “In Utopia, I and you is not the same as you and me” অর্থাৎ ইউটোপিয়া হ’ল একটি উৎকৃষ্টতর “no place” যেখানে দেখা পাওয়া যায় সেই ‘other’ সেই ‘অপর’─ অন্য পদ্ধতি, অন্য অভিব্যক্তি, অন্য মূল্যবোধ নিয়ে সমাজের নির্ধারিত নিয়মের বিরুদ্ধে, ভাষার নির্ধারিত আদর্শের বিরুদ্ধে এক ধারাবাহিক দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম। অর্থাৎ বার্নস্টাইনের ইউটোপিয়া ‘other world’-এর ধারণা দেয়, “but that other world is always, anyway, this world; the utopian is just a momentary pattern of disorientation before the real work of reinhabitation begins….to uncover hidden aspects of our everyday world….hidden not in a mystical but in a social and psychoanalytic sense: repressed, forgotten, denied, obliterated” যেমন তিনি লিখছেন তাঁর Pitch of Poetry নামে কাব্যতত্ত্বের গ্রন্থে। অন্যদিকে দেখি ব্রাজিলের কবি রেজিস বনভিসিনোর পর্তুগিজ ভাষায় লেখা কবিতা “A Nova Utopia”, যা হ’ল আমাদের অনড় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাস পেরিয়ে, কবিতার প্রচলিত ফর্ম ভেঙে, সাহিত্য আন্দোলনের অনমনীয় চিন্তাধারার বাইরে বেরোনোর আকাঙ্ক্ষা─ “direct, brutal, violent, and ironic, more than dystopia”, যেখানে আছে নতুনের আবিষ্কার, বৈচিত্র্যের স্বাদ। কারণ বনভিসিনো মনে করেন, “the awareness of the transitory nature of all “movements”….that constituting a new state of things displaces the “scholastic” and emphasizes the need for the permanent invention of an OTHER─ anyone, no one”[18]. বার্নস্টাই্ন ও বনভিসিনোর এই ইউটোপিয়ার কাব্যিক জগৎকে সুসান বী-এর “Anywhere, out of the World”-এর শৈল্পিক জগতের সঙ্গে সংযুক্ত করলে আমরা এমন এক ইউটোপিয়ান স্পেসে হাজির হই যা হ’ল সুসান বী-এর মতে “an exploration of thoughts and emotions in the face of the starkly dystopian tenor of the present times”.
মোর তাঁর কাল্পনিক ইউটোপিয়ায় প্ল্যাটোর Republic-এর পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ করেছিলেন তদানিন্তন ইউরোপীয় রাষ্ট্রব্যবস্থায় সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কিত বিতর্কিত বিষয়টির। ব্যঙ্গাত্মক শ্লেষে তার্কিকের নাম রেখেছিলেন রাফেল হিথলডে। বাইবেলে রাফেল এক দেবদূত; আব্রাহাম ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্য অনুযায়ী মানুষের দুঃখ নিরাময়কারী ঈশ্বর। আর হিথলডে হ’ল আবোলতাবোলের রাজা, ননসেন্স বক্তা। মোরের নৈয়ায়িক যেন বলতে চায় হে ঈশ্বর তোমার ননসেন্স দিয়ে আমাদের উদ্ধার করো! এখন প্রশ্ন হ’ল বার্নস্টাইনের Sophist আর মোরের রাফেল হিথলডে কতটা তুলনীয়? আমি দুজনকেই একই আসনে দেখতে পাই যেখানে প্ল্যাটোনীয় নৈয়ায়িক (Sophist)[19] সত্য যাচাই বা ন্যায়বিচার নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, বরং তাঁর দুর্ভেদ্য ভাষালঙ্কারের সার্থক ব্যবহারের ক্ষমতার খোঁজ করে। দোহাই পাঠক, আমার বক্তব্যটির আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ না করাই ভালো কারণ সমস্ত উক্তির নীচে থাকে এক গোপন বক্রোক্তির (sarcasm) আবরণ আর এই ব্যঙ্গাত্মক শ্লেষ ভাষা-কবিতার কবি বার্নস্টাইনের কাব্যকলার অন্যতম প্রধান কাব্যাস্ত্র। তো এই বার্ন্সটাইনীয় নৈয়ায়িকের আবরণ উন্মোচনের আগে দেখে নিই কীভাবে বার্নস্টাইন প্ল্যাটোর কবিবিহীন প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিজের শ্লোগান তুলেছিলেন─ “You can’t evict an idea”. ২০১১ সালে আমেরিকায় অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া Occupy Wall Street নামে এক প্রতিবাদ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত এই শ্লোগান[20] এখন বিশ্বজোড়া দখল আন্দোলনের প্রতীকী শ্লোগান যেমন বার্নস্টাইন লিখছেন তাঁর প্রবন্ধে[21]: “Demonstrations like OWS are symbolic….which has allowed a resilient mobility through metamorphosis/re-formation, with energized manifestations sprouting up in new places: headless but not heedless, averting central authority in favor of dispersed, localized collectivities”─ রাইজোমেটিক আন্দোলনের এক ল্যাটারাল ভাবনা যার নাম দিয়েছেন “autopoiesis”. আসুন পাঠক, এবারে দু’জন কবি ও শিল্পীর কাব্যদর্শনে খোঁজ করা যাক নৈয়ায়িকের সত্য, ন্যায়বিচার ও ক্ষমতাদখলের দর্শন।
নৈয়ায়িকের সত্য :
বার্নস্টাইন বলছেন, “সত্য কী জানার চেয়ে মিথ্যা কী তা জানতেই আমার বেশি আগ্রহ। কারণ কবিতার কাজ হ’ল সত্যকে সত্য বলা”। সেই সত্যে পৌঁছোতে মিথ্যার আসল চেহারা চিহ্নিতকরণের পথটিকেই তিনি বেছে নিয়েছেন, যা প্রকৃতপক্ষে উপনিষদের জ্ঞানতত্ত্বীয় দর্শন─ নেতি নেতি করে অসত্যের অন্ধকার পেরিয়ে সত্যের গভীরে পৌঁছোনো। এই সত্য জ্ঞানই তো বোধির পথ, যে দর্শনে বার্নস্টাইনের কাব্যতত্ত্বের চলন; যেখানে এ নয় এ নয় ক’রে প্রচলিতের সমস্ত সীমানা পেরিয়ে, জীবনের সমস্ত বন্ধন অস্বীকার ক’রে সত্যতরের খোঁজ। বার্নস্টাইনের ইউটোপিয়ান বাস্তবতার সত্য হ’ল সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সতত দোলাচল যা দ্বন্দ্বের উৎকর্ষ দিয়েই নির্ধারিত। বার্নস্টাইনের এই প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণবাদী বস্তুগত বাস্তবতা লীন হয়ে যায় আত্মগত অনির্ণেয়তায় যা লোকোত্তর সত্তা থেকে বিশ্বময় পরিব্যাপ্তির কথা বলে। বনভিসিনোর কাছে “সত্য সত্যই, তা গ্রীক হিরো আগামেনন বলুক বা কোনো চোরই বলুক”। তাঁর “Poema Negativo” কবিতাটি মখমলের মুখোশের নীচে শহুরে বর্বরতার নিন্দা করে সত্যকে সত্য বলার জন্য; উচ্চারণ করে অস্তিত্বের গতিশীলতাই জীবনের সত্য। শিল্পের দুনিয়ায় দেখি লিনেনের ওপর সুসান বী ব্যাখ্যাতীত বৌদ্ধিক কোলাজে নির্মাণ করছেন এক ঋণাত্মক বাস্তবতা, যা অভিজ্ঞতার পরিসরের বাইরে থাকা অন্ধকার ও সেই মুহূর্তের যন্ত্রণার বাস্তব অনুভবের প্রতিফলন। যার প্রতিধ্বনি শোনা যায় নব্য-বাস্তববাদী বনভিসিনোর “অসম্ভব চিত্র” কবিতায়─ এ হ’ল বর্তমান সময়ের নির্মম সাক্ষ্য; ব্রাজিল মহানগরের অসম্ভব চিত্রগুলো বিযুক্তির সূত্রে গেঁথে তুলে খোঁজ করেছেন প্রকৃত সত্য। বনভিসিনোর ইউটোপিয়া সমাজের বিকৃতি ও ধ্বংস থেকে উদ্ভূত হতাশার সত্য প্রতিক্রিয়া জানায়, আর্থ-সামাজিক পরিবেশে মানবিক মূল্যবোধকে প্রশ্ন করে, তৈরি করে এমন এক বাস্তবতা যা কল্পনীয় অথচ অবর্ণনীয় সত্য। প্রযুক্তির হাত ধরে মানুষ আজ ক্ষমতার শিখরে উঠেছে আর সেই ক্ষমতার মাদকতায় সে প্রকৃতির ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চায়। এই অহঙ্কারী কর্তৃত্বের ফলেই কল্যাণময়ী প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে─ এই সত্যদর্শন সুসান বী-এর ক্যানভাসে। ইতিহাসের সর্বনাশা বিপর্যয়কারী ঘটনাবলী, বর্তমানের রাজনৈতিক প্রবণতাগুলোর সঙ্গে আপন অভিজ্ঞতার বিমূর্ত রূপায়ণ তাঁর চিত্রকর্মে।
নৈয়ায়িকের ন্যায়বিচার :
প্রাচীনকাল থেকেই ন্যায়বিচার ও নৈতিকতাকে একই সারিতে বসানো হয়েছে। কিন্তু বার্নস্টাইনের ন্যায়বিচার সর্বদাই নৈতিকতার বিপরীতে─ “নান্দনিকের সাধনায় নন্দনতত্ত্বের ন্যায়বিচার হ’ল নৈতিকতার প্রতিরোধ, যেখানে নন্দনতত্ব বলতে বোঝায় বিপরীতমুখী তথ্যসমূহের একটি অস্থায়ী ও ঝলকিত অঞ্চল, যেখানে সম্ভাবনা, প্রতিফলন, তীব্র সংবেদনা ও জল্পনা”, যাকে কবি বলছেন প্যাটাক্যুয়রিক্যাল─ অ্যালফ্রেড জেরির প্যাটাফিজিক্সের ধারণায় এক অদ্ভুত অনুসন্ধান, বিমূর্ততায় নির্মিত এক ব্যতিক্রমের বিজ্ঞান, কারণ সক্রিয় প্রতিচ্ছবি মনের বিষয়, মানসিক এই পদ্ধতিই মননশীলতা, যেখানে “নান্দনিক ন্যায়বিচার তখনই ঘটে যখন স্বজ্ঞাত পচ্ছন্দগুলো যৌক্তিক নীতিগুলোকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায়” এবং এভাবেই “নান্দনিক ন্যায়বিচার এক অন্য পার্থিব চোখে দেখতে পায় তার পরিবার, জাতি, সম্প্রদায় ও যুক্তিবাদ” যেমন বার্নস্টাইন বলছেন তাঁর প্রকাশিতব্য Topsy-Turvy[22] কাব্যগ্রন্থে। বার্নস্টাইনের নন্দনতত্ব প্যাটাক্যুয়রিক্যাল আদর্শ নির্ণায়ক (প্যাটাক্যুয়রোনরম্যাটিভ) নান্দনিকতা দিয়ে অ্যাভাঁ-গার্দের হেগেলীয় গোঁড়ামীর পুনর্নবীকরণের জন্য ন্যায়বিচারের আহ্বান জানায়, যেখানে খেলা করে মরালিটি ও এথিক্সের বার্ন্সটাইনীয় বৈপরীত্যের ভাবনা─ “মরালিটি বলে তুমি কী চিন্তা করবে, কী চিন্তা করা ঠিক; এথিক্স প্রশ্ন করে সঠিক ভাবার কারণ”। নেগেশনের এই সমালোচক সত্তা প্রতিধ্বনিত হয় বনভিসিনোর Estado Crítico[23](Critical State)নামকবিতায়─ “ঋণাত্মক কবিতা সেই, যেখানে কোনও বই বিক্রি ছাড়াই/ তোমাকে অতিরিক্ত মূল্য দিতে হয়/ সে এক সমালোচক যন্ত্রের মাধ্যমে শ্বাস নেয়/ সে তার স্বজাতীয় ভিত্তির অপব্যবহার করে/ দিনেরবেলা সমস্ত বিড়ালই ধূসর/… ঋণাত্মক কবিতা তাল মেলায় অস্পষ্টতার সঙ্গে”। বনভিসিনোর ঋণাত্মক কবিতা কাব্যিক নৈতিকতার প্রচলিত নৈতিক নিয়ম অস্বীকার করে; সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখতে চায় বাস্তব পরিস্থিতি; পেরিয়ে যেতে চায় প্রচলিত সামাজিক নৈতিকতা, রাজনৈতিক ভাবপ্রবণতা, ঐতিহাসিক অভিনবত্ব ও ভাবাদর্শগত ধারণা। সুসান বী এর সাম্প্রতিক বই Off-World Fairy Tales কর্তৃপক্ষহীন এক সামাজিক স্পেসের কথা বলে, যেখানে অনুভূত হয় তাঁর প্রতিরোধের বোধ। একটি চিত্রের অর্থনির্ণয়ের প্রচলিত নিয়ম অস্বীকার করেন শিল্পী, বরং সমস্ত নিয়ম ভেঙে, প্রতিষ্ঠিত নন্দনতত্ত্বের সীমানা পেরিয়ে নতুন অর্থ সংযোজনের কথা বলে্ন। মীরা শোরের সঙ্গে সহ-সম্পাদিত তাঁর ম্যাগাজিন M/E/A/N/I/N/G -এর মূলেও ছিল এই ধারণার ভিত। তাঁর সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক কুফলগুলোর বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার দাবি করে তাঁর পেইন্টিং “Demonology”, যার সম্পর্কে বলছেন─ “The demons are not as fierce and disturbing in my painting, at least compared to how they are usually portrayed. This doesn’t mean demons aren’t capable of evil: they are an imagination of evil doings.”[24]
নৈয়ায়িকের ক্ষমতা :
নৈয়ায়িক বার্নস্টাইন তাঁর ইউটোপিয়ার গণতান্ত্রিক সামাজিক স্পেসে একজন সর্বজনীন বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা গ্রহণ করেন, যেখানে কবিতা তার সমালোচনামূলক জবানির মাধ্যমে নাগরিকদের সর্বজনীন সংকটগুলোর প্রতিক্রিয়া জানায়; “খোঁজ করে আমাদের বিচ্ছিন্নতার গভীর শিকড়গুলো, সন্ধান দেয় বিকল্প পথের; শুধুমাত্র ভাবনার কথা বলে না, বরং কাল্পনিক বিকল্পের সন্ধান, যা প্রকৃতপক্ষে প্রতিরোধের খোঁজ করে”। অন্য ভাষায় বলা যায় “নিয়ন্ত্রণের ব্যাকরণ ও হুকুমের বিন্যাস” ভেঙে দিয়ে বার্নস্টাইনের কাব্যিক কর্তৃত্ব তাঁর ভাষার ক্ষমতা বা তীব্রতা দিয়ে জনসাধারণের জবানি নিয়ন্ত্রণ করে; “চ্যালেঞ্জ জানায় প্রভাবশালী সামাজিক মূল্যবোধকে, যোগাযোগের প্রচলিত আচারআচরণগুলোকে”; যা তাঁর প্রজাতন্ত্রের সম্ভাব্য নাগরিকদের অর্থাৎ সেই পাঠকদের উদ্বুদ্ধ করে কবিতার অন্তহীন ছন্দে রিদমে ও ক্রিয়াশীলতায়। বার্নস্টাইনের ইউটোপিয়া কবি ও পাঠকের গোষ্ঠীকল্পনার এক উপলব্ধ ধারণা, যেখানে সংবিধান রচনা করার ক্ষমতা কোনো কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের হাতে নেই, বরং কবি ও পাঠক উভয়ের ভাষার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে প্রণয়ন করা হয় নতুন সংবিধান, যেখানে “repression of aesthetic ideology under the banner of convention, accessibility, compromise, refinement, or humanist literary values”-এর বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয় লড়াই করার মন্ত্র। কবি ও পাঠকের এই স্বাধীনতার ক্ষমতাই তৈরি করে এক “democratic social space”-এর মডেল, যেখানে এক ভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক ক্ষমতা অনুভূত হয়, যাকে বার্নস্টাইন বলছেন “exchange economy”─ যে বিনিময় প্রথায় কবির নির্মিত বাস্তবতা পুনর্গঠিত ও উপলব্ধ হয় পাঠকের মতবিনিময় ও পঠনের মাধ্যমে। এই কাব্যবাজারে গ্রাহক পাঠকের অভিজ্ঞতা কখনই উপার্জনযোগ্য হতে পারে না। পাঠক যদি নিস্ক্রিয় না হয়ে পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ চিন্তাভাবনা, ফর্ম বা কবিতার আদর্শ অতিক্রম করে সক্রিয় প্রতিক্রিয়া জানান, তখন কবি ও পাঠকের মধ্যে রচিত হয় এক অভ্যন্তরীণ সংযোগ। আবার অন্যদিকে দেখি বনভিসিনো একজন সংকেত প্রতিবেদক হিসাবে এক নির্মাণবাদী কবি হিসেবে কবিতার পুননির্মাণমূলক ক্ষমতা ব্যবহার ক’রে তাঁর নতুন ইউটোপিয়ার নাগরিকদের বশ করছেন, যেখানে দেখি তাঁর “A Nova Utopia” কবিতায় একজন শব্দতাত্ত্বিক CArne DAta VERmem[25]-এর নতুন শব্দার্থ আবিষ্কার করছেন। Cadaver শব্দের লাতিন উৎস নির্মিত হয়েছিল cadere শব্দের ক্রিয়ামূল থেকে, যার ভাবার্থ ‘যুদ্ধে পতন এবং মৃত্যু’ অর্থাৎ অন্য ভাষায় বলা যায়, যে কোনো যুদ্ধে কেবলমাত্র যোদ্ধারাই বৈধ নিশানা, সাধারণ নাগরিকরা নয়। কিন্তু আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র গণধ্বংসের প্রতিভূ। ফলত এই যোদ্ধাবিহীন যুদ্ধে জমে উঠছে অসামরিক নাগরিকদের লাশ, যার বিরুদ্ধে গর্জে উঠছে তাঁর কবিতা। বনভিসিনোর নতুন ইউটোপিয়া হাকিম বে-এর সেই অস্থায়ী স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (TAZ)[26] যেখানে তাঁর নতুন ইউটোপিয়া “যোদ্ধাবিহীন যুদ্ধের বিরুদ্ধে/ সামিল হয় কবর-খুঁড়িয়েদের ধর্মঘটে, অসম্ভব বিদায় ও মৃতদেহ ভস্মীকরণে”। নিউ ইয়র্কের A.I.R. গ্যালারী সুসান বী-এর চিত্র প্রদর্শনীর ওয়েবপেজে লিখছে, “For Susan Bee, the painting speaks to the artist’s sense of entrapment within the fragmentation and alienation of our current moment, with only a giant paintbrush as a tool of defense”. এই আত্মরক্ষামূলক ক্ষমতাই সুসান বী-এর শিল্পাস্ত্র।
৩
বার্নস্টাইনের ইউটোপিয়া অ্যাডর্নোর “negative dialectics”-এর ধারণায় উপলব্ধ এক ধরণের ঋণাত্মক দ্বান্দ্বিকতা– সেই ধারণা যেখানে “structure of contradiction, in a twofold sense….contradiction in the concept, not merely between concepts”, এবং “the contradictory character of reality: model: antagonistic society”[27], যার ভেতর প্রতিধ্বনিত হয় বিকল্প অ্যারিস্টটলীয় ধারণার বার্নস্টাইনীয় Attack─ “syllogistic rationality of expository writing, poetics is situational, shifts with the winds, courts contradiction, feeds on inconsistency.”[28] বাস্তবতা সম্পূর্ণরূপেই বিশ্বের নির্দিষ্ট কোনো বস্তু বা ঘটনার পর্যবেক্ষকের বোধের ওপর নির্ভর করে, আর আমাদের চিন্তাভাবনা ও যুক্তির ওপর নির্ভর ক’রে একটি ঘটনার বিভিন্ন ধারণামূলক মডেল থাকতে পারে, যেমন বার্নস্টাইন তাঁর Near/Miss কাব্যগ্রন্থে বলছেন, “সমস্ত কবিতাই ধারণামূলক, তবে কিছু কবিতা অন্যের চেয়ে বেশি ধারণামূলক”। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যে মডেল বেশি গ্রহণযোগ্য সেটাই ব্যবহারযোগ্য। বার্নস্টাইনের ভাষায়─ “Conceptually and philosophically, poems are models for other kinds of social organization, other phenomenologies of perception, other perceptions of consciousness”. এই ‘অপর’ ভাবনার প্রতিধ্বনি বনভিসিনোর “Nothing”[29] কবিতায়─ “Nothing yet of the other/ similar yet to the same/ minimum yet the other/ himself not yet another/ of the same dead another/ insulated in his body”. সময়ের মাত্রা পেরিয়ে, ভাষার মাত্রা ছাড়িয়ে আমাদের প্রস্তাবিত ভাবনাগুলোকে নেগেট ক’রে এক ভিন্ন ধারণামূলক মডেল তৈরি করে বনভিসিনোর নতুন ইউটোপিয়া─ “replete with philosophically searing perceptions and socially conscious lament. Not yet elegy, Bonvicino’s unrelenting acknowledgments center on the parasitic relation between those mangled by society and those doin’ the manglin’”[30], বনভিসিনোর বই Beyond the Wall সম্পর্কে লিখছেন বার্নস্টাইন। কত যুগ আগে রোমান কবি হোরেস তাঁর “Ars Poetica” (The Art of Poetry) কবিতায় উচ্চারণ করেছিলেন “Ut pictura poesis” (as is painting so is poetry)। এই বিখ্যাত পঙ্ক্তির প্রতিধ্বনি করে বলা যায় সুসান বী তাঁর Off-World Fairy Tales –এ এক “fantastic world” এর ধারণামূলক মডেল তৈরি করেছেন, যেখানে দেখি মার্কিন লেখক জোহানা ড্রুকারের চোদ্দটি রূপকথার গল্পের সঙ্গে সুসান বী-এর পেইন্টিঙের অসাধারণ কোলাবরেশন। এ কোনো সাধারণ সমন্বয় নয়, বরং ড্রুকারের প্রচলিত ঘরানার সীমানা পেরোনো গল্পের সঙ্গে সুসান বী-এর দুরন্ত কল্পনার কোহেরেন্স─ শিল্পী তাঁর উজ্জ্বল রঙতুলি দিয়ে এঁকেছেন অন্য এক পৃথিবীর গল্প যা এই বর্তমান সভ্যতার যান্ত্রিক বাস্তবতা অতিক্রম করার স্বাধীনতা দেয়। এ যেন শিল্পী ও গল্পকারের এক অভূতপূর্ব ভ্রমণকাহিনী যার ভেতর অনুভূত হয় আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব─ মনস্তাত্ত্বিক সময়সীমা প্রসারণ করতে আমাদের কাল্পনিক ভ্রমণকে ত্বরান্বিত করে আলোর গতিতে, যেখানে প্রতিফলিত হয় চিরকালীন শিশুর চিরবসন্তের মনস্তত্ত্ব─ “with princesses, adventures, monsters, boys, and wishes—into encounters with the wildly imagined “off-world”[31]─ পেইন্টিঙের নির্বাক অন্তরাত্মা কথা কয়ে ওঠে শব্দের ঝলকে, বার্নস্টাইনের সেই Iconophrasis─ রঙের সঙ্গে শব্দের অন্তরধ্বনির ফিউশনে শিল্পী গড়ে তোলেন এই ডিসটোপিয়ান সময়ের চিত্রাবলী, যেখানে শিল্পী, মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্কের বিরোধভাবনা পেরিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখান, বেঁচে থাকার গল্প বলেন।
অনুবাদ পর্ব
এই পর্বে রইল চার্লস বার্নস্টাইনের কবিতা “In Utopia” এবং রেজিস বনভিসিনোর কবিতা “A Nova Utopia” –র অনুবাদ। আর শিল্পী সুসান বী-এর পেইন্টিং “Under Water” নিয়ে কিছু আলাপন।
জলতলে (Under Water): সুসান বী
চিত্রশিল্পী সুসান বী-এর আঁকা ছবি “জলতলে”। ছবিটির রঙ, প্যাটার্ন ও গঠনবিন্যাস এবং তাদের মধ্যের সম্পর্কগুলো প্রাণবন্ত ও প্লবমান, প্রতিটি বিন্দুতে অনুভূত হয় প্রাণের স্পন্দন। ছবির বিষয়─ আমাদের সময়ের খণ্ডিত ও বিচ্ছিন্ন বিশৃঙ্খলার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার অনুভব। নারী চরিত্রটি একা একটি দ্বীপে বসে অনুধ্যানে মগ্ন। ওপরে ভেসে আছে সর্বদর্শী এক চোখ। একটি নৌকোর চলাচল ও এক সামুদ্রিক পাখির উড়ে যাওয়া। তিরবিদ্ধ মেঘ ও বিপন্ন সমুদ্র। হয়তো তীক্ষ্ণ ত্রিকোণ তরঙ্গ অথবা হাঙ্গরের পাখনা।
সুসান বী-এর ছবি আমাদের এই সময়ের পুরোদস্তুর ডিসটোপিয়ান অবস্থার অন্বেষণে তাঁর আপন চিন্তাভাবনা ও আবেগের প্রতিফলন। তাঁর ছবিতে যেমন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি তীব্র হতাশার প্রতিক্রিয়া, তেমনি গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর গভীর সংকট ও গ্লোবাল ইকোসিস্টেমের ব্যাহত সামঞ্জস্যতা প্রতিফলিত। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজগতের প্রতি মানুষের অসচেতনতা আজকের পৃথিবীতে যে দুঃস্বপ্নের সৃষ্টি করেছে তারই অশনিসংকেত সুসানের “জলতলে” ছবির কোলাজে।
দীর্ঘদিনের বিবর্তন ও মহাপ্রাকৃতিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যে প্রকৃতি ভূপৃষ্ঠকে মানুষের জীবনধারণের উপযোগী করে তুলেছিল, সেই প্রকৃতিকেই আজ মানুষ তার নির্বোধ অহঙ্কারে তিলে তিলে নষ্ট করেছে। বুদ্ধিতে শান দেওয়া মানুষের বড় দেমাক। তাই সে প্রকৃতিকে জয় করতে চেয়েছে, স্থাপন করতে চেয়েছে কর্তৃত্ব। কিন্তু প্রকৃতিকে জয় করা যায় না। কর্তৃকারকের দম্ভ দিয়ে প্রকৃতির কল্যাণকর ভারসাম্য রক্ষা করা যায় না। এই সত্য আজ চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত। এই সত্যই আজ আমাদের দাঁড় করিয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামক সভ্যতার সংকট মুহূর্তে। পরিবেশ সচেতন শিল্পী উপলব্ধি করেন কর্তৃত্ব নয়, চাই ভালোবাসা। প্রকৃতির রসদ দিয়েই তিলে তিলে প্রকৃতিকে আবিষ্কার করেন। আগামী দিনের উত্তপ্ত পৃথিবীর নতুন পরিবেশে হয়তো আসবে নতুন উদ্ভিদ, নতুন প্রাণীজগৎ, যারা প্রকৃতির হাতে হাত রেখে বেঁচে থাকার মন্ত্র খুঁজে নেবে। মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্ককে বিরোধভাবনা থেকে মৈত্রীভাবনায় চালিত করে শিল্পীর তুলি। এই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির বৈচিত্র্যের মধ্যে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে গাঢ়তর হয় শিল্পীর ভবিষ্য সম্ভাবনার রঙ। আপন অভিজ্ঞতার বিমূর্ত রূপায়নের আকাঙ্ক্ষায় সুসানের পেইন্টিং খোঁজ করে সেই ভাবনা “how we coexist with evil. We never escape it. The devils are our companions”
সুসান বী-এর ছবির জগতে শিল্পী ও কবিদের মেলবন্ধন। কবিতার ভিস্যুয়াল উপাদান ও বহুমাত্রিক স্বর নতুন মাত্রায় প্রতিফলিত হয়েছে ভিস্যুয়াল আর্টের অঙ্গনে। চিত্রশিল্পী মনে করেন এরিকা হান্ট, মেই-মাই বার্সেনব্রাগি, চার্লস বার্নস্টাইন, সুসান হোয়ের মতো বন্ধু ও সহকর্মী কবিদের শব্দনির্মিত ভাষার সঙ্গে আছে তাঁর রঙনির্মিত চিত্রভাষার পারস্পরিক সহাবস্থান। কবি ও চিত্রশিল্পীর এই সহাবস্থান একদিকে যেমন কবিকে চিত্রকরের ব্যবহৃত আলো, রঙ, রিফ্লেকশন ও তাদের কম্পোজিশনের কৌশলগুলোর গুরুত্ব ও পার্থক্যকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে, তেমনি কবির শব্দময় কবিতার নৈঃশব্দ্য চিত্রশিল্পীকে শোনায় অন্য এক পৃথিবীর গান।
সুসান বী-এর ছবিতে উজ্জ্বল তেলরঙ ও তার টেক্সচারের আকর্ষণ, যেখানে ক্রেয়ন, বালি, প্যালেটের ছুরি বা এনামেলের ব্যবহার, যা গঠনবিন্যাসে নিয়ে আসে গতির আনন্দ। নিজের স্টুডিওতে বহুস্তরীয় রঙ ও টেক্সচারের ব্যবহারে সুসান বী তুলির টানে তাঁর ক্যানভাসে ক্রমশ গড়ে তোলেন এক স্বপ্নময় কাল্পনিক স্পেস, গড়ে তোলেন শিল্পীর নিজস্ব আশ্রয়স্থল।
———
ইউটোপিয়ায় (“In Utopia”): চার্লস বার্নস্টাইন
চার্লস বার্নস্টাইনের “In Utopia” প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে Occupy Wall Street (OWS) নামে কবিতা অ্যান্থোলজিতে, স্টিফেন বয়ার ও মেরিনোভিচ ফিলিপের তত্ত্বাবধানে, যেখানে অংশগ্রহণ করেছিলেন OWS–এর জনসাধারণ। নিউইয়র্ক শহরের বাণিজ্যকেন্দ্র ম্যানহাটনের একটি বিখ্যাত সড়কের নাম ওয়াল স্ট্রিট, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভরকেন্দ্র বলা যায়। এইখানে জুকোটি পার্কে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম শুরু হয়েছিল অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে Occupy Wall Street নামে এক প্রতিবাদ আন্দোলন। সামিল হয়েছিল অধিকারবঞ্চিত সাধারণ মানুষ। এখান থেকেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে, যা বর্তমানে দখল আন্দোলন নামে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলন, যেখানে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরোধিতা এবং সারা বিশ্বজুড়ে স্বৈরাচারের প্রতিবাদ ও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি ধ্বনিত হচ্ছে। জুকোটি পার্কের এই আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন বহু অর্থনীতিবিদ, কবি, শিল্পী, চলচিত্র নির্মাতা ইত্যাদি বুদ্ধিজীবীর দল। এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১১ সালে বার্নস্টাইন লিখেছিলেন এই কবিতাটি, যা পরে সংকলিত হয় ২০১৮ সালে বার্ন্সটাইনের Near/Miss কাব্যগ্রন্থে।
ইউটোপিয়ায় (In Utopia)
ইউটোপিয়ায় তারা কোনও বেনিয়ম পায়নি এবং প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের “অপরাধপ্রবণতা বিশুদ্ধ ও সাধারণ”, ঠিক তাঁর মতো রাজনীতিবিদদের জন্যই সংরক্ষিত। ইউটোপিয়ার ভেতর বাঁদর শুয়ে থাকে গণ্ডারের সাথে আর ভূতেরা ভূতেদের ঘরে হানা দেয়, যাতে অন্যেরা নিজেদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে। ইউটোপিয়ায় আপনি লড়াইতে হেরে যান, এমনকি যুদ্ধগুলোতেও গোহারান হার, তবু তা নিয়ে আপনার মাথাব্যথা নেই। ইউটোপিয়ায় কেউ কাউকে কিছু বলে না কিন্তু আপনাকে আমার এটা বলা প্রয়োজন। ইউটোপিয়ায় পরিকল্পনাগুলো অলঙ্কার আর প্রত্যাশাগুলো খেয়ালের ভেতর বিলীন হয়ে যায়। ইউটোপিয়ার ভেতর এইখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ পিভট আছে। ইউটোপিয়ায় প্রেম যেখানে সওয়ার হয়, তার চাকায় থাকে আকাঙ্ক্ষা। ইউটোপিয়ায় শব্দেরা গান গায় আর গায়ক শোনে। ইউটোপিয়ায় দুই এক্কে দুই হয় না। ইউটোপিয়ার ভেতর আমি তুমি কখনও তুমি আমির মতো নয়। ইউটোপিয়ায় আমরা ওয়াল স্ট্রিট দখল করি না, আমরাই ওয়াল স্ট্রিট। ইউটোপিয়ার ভেতর যা কিছু কঠিন তা জমাট বাঁধে, যা কিছু গলিত তা তরল হয়, যা কিছু হাওয়া তা হারিয়ে যায় শেষ বিকালের কুয়াশায়।
———-
নতুন ইউটোপিয়া (“A Nova Utopia”): রেজিস বনভিসিনো
রেজিস বনভিসিনোর “A Nova Utopia” প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে তাঁর Beyond the Wall কাব্যগ্রন্থে। এই কবিতাটি পর্তুগিজ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন মেক্সিকোর সমালোচক, লেখক ও অনুবাদক ওডিলে সিস্নেরোজ (Odile Cisneros)। বনভিসিনোর নব্য-বাস্তববাদ এই নতুন ইউটোপিয়ার সূত্র। অভিজ্ঞতার পরিসরের বাইরে থাকা এক অন্ধকার বাস্তব যাকে বলা যায় সময়সাক্ষী এক negative reality.
নতুন ইউটোপিয়া (A Nova Utopia)
নতুন ইউটোপিয়া এক কালো প্রজাপতি, মাতালগন্ধী অন্যমনা চোখ। নতুন ইউটোপিয়া প্রাণীদের নির্মম সংরক্ষণের পক্ষে। নতুন ইউটোপিয়া সর্ববর্গীয় ও অংশগ্রহণমূলক। নতুন ইউটোপিয়া অতৃপ্তির সুরেলা কোরাস, এক দশাসই প্রাক্তন গরিলা, এক সরকারী মস্তান। নতুন ইউটোপিয়ায় অন্তর্নিহিত তথ্য সহজলভ্য। এ এক প্রাক্তন কুষ্ঠরোগী। নতুন ইউটোপিয়া আমাদের স্বমেহনের মূর্তিটি বাতিল করে। নতুন ইউটোপিয়া যৌনকর্মীদের অধিকারের জন্য লড়াই করে। নতুন ইউটোপিয়া পরিমিত বস্তুবাদী আদর্শ অনুসরণ করে। নতুন ইউটোপিয়া নিরুপায়ে মরে। সে শুল্কমুক্ত পণ্য ও আর্থিক ডেটক্স দুটোই বিক্রি করে। নতুন ইউটোপিয়া আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। নতুন ইউটোপিয়া কর্পোরেট স্থায়িত্বের প্রশংসা করে। নতুন ইউটোপিয়া জানে যে আপনি একজন আরবী ও মুসলমান হতে পারেন, আরবী হয়েও মুসলমান না হতে পারেন, কিংবা মুসলমান হয়েও আরবী না হতে পারেন। আপনি সাদা না হয়েও কালো হতে পারেন, কালো না হয়েও সাদা হতে পারেন। নতুন ইউটোপিয়া হ’ল চিরকাল সযত্নে লালিত লে মন্ডের বাকস্বাধীনতা। নতুন ইউটোপিয়া অন্যের জ্ঞান, প্রগতি ও সংস্কারের বিরোধিতা দূর করে। নতুন ইউটোপিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের উপযোগী অবিশ্বাস্য তথ্য বাতিল করে। কেবলমাত্র অনিবার্যতাবশতই নতুন ইউটোপিয়া কিছুটা শিয়া হয়ে ওঠে কিংবা আবু গারিব যাদুঘর পরিদর্শনকারী মার্কিন পর্যটক হয়ে ওঠে। নতুন ইউটোপিয়ার প্রতীক ও স্লোগান আছে। দরিদ্রপাড়াগুলোতে হত্যার নিন্দা জানিয়ে আবেদনপত্র প্রচার করে, গ্র্যাফিত্তি রক্ষা করে ও চলন অব্যাহত রাখে। নতুন ইউটোপিয়া হ’ল অভাগাদের নিঃশর্ত মর্যাদা। দুর্নীতিবাজ নেতাদের নিন্দা করে। এ এক প্রাক্তন জালিয়াৎ। নিজস্ব অভিধান ব্যবহার করে। ঝাঁপ দেবার আগে দেখে নেয়। কথা নয়, কর্মের আহ্বান জানায়। নতুন ইউটোপিয়া এক প্রাক্তন অঙ্গচ্ছেদনকারী। উড়ানের উন্মুক্ত ডানা। প্রাকৃতিক সতেজতার শোরুম। অন্ধকার মেঘাবৃত এক নিয়ন্ত্রণাধীন আকাশ। কলঘরে রাখা বইয়ের আলমারি। হোর্হে লুইস বোর্হেসের বিধবা, যিনি তাঁর সৃজনশীল প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন। নতুন ইউটোপিয়া হ’ল প্রাক্তন মাকুম্বাভক্ত, প্রাক্তন মাতাল ও অকর্মণ্য এক্সু। সাদাচামড়ায় মোড়া এক কালো আত্মা। নতুন ইউটোপিয়া এক দেশজ অগ্রদূত যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রতিদিন রাজনীতি করে। নতুন ইউটোপিয়া পেরেকগাঁথা এক প্রাক্তন রূপবিশারদ। এ এক নপুংসক গুপ্তচর যে রাউটারে কিছু সূর্য ধরে। এক প্রাক্তন বর্বর। এক প্রাক্তন লম্পট। প্রাক্তন প্রতারক। লেসবিয়ান। প্রাক্তন অন্ত্যজ মানুষ। অসংখ্য পুরষ্কারপ্রাপ্ত কবিদের আশ্রয়স্থল। সময়ের সাথে তাল মেলানো একটি কবিতা।
———-
কবি ও শিল্পী পরিচিতি:
সুসান বী :
মার্কিন চিত্রশিল্পী। বাস নিউইয়র্কের ব্রুকলিন শহরে। তিনি আর্টসে বার্নার্ড কলেজ থেকে ব্যাচেলার ডিগ্রি এবং হান্টার কলেজ থেকে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন। নিউইয়র্কের A.I.R. গ্যালারীতে[32] তাঁর চিত্রকলার নটি একক শো হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত শিল্পকলার বই ষোলটি, যার অন্তর্গত হয়েছে সুসান হোয়ে, চার্লস বার্নস্টাইন, রেজিস বনভিসিনো, জেরোম ম্যাকগান, রাসেল লেভিৎস্কি ও জেরোম রোদেনবার্গের মতো কবিদের সঙ্গে কোলাবরেশন। ১৯৮৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি M/E/A/N/I/N/G পত্রিকার সহসম্পাদনা করেন। ২০১৪ সালে ফাইন আর্টসে Guggenheim Fellowship লাভ করেন। তাঁর সাম্প্রতিক বই Off-World Fairy Tales প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে জোহানা ড্রুকারের সঙ্গে।
রেজিস বনভিসিনো :[33]
ব্রাজিলের পর্তুগিজ কবি, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক। আইনবিদ্যায় স্নাতক। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ১১টি। সাম্প্রতিক গ্রন্থ: Beyond the Wall যেখানে কবির পর্তুগিজ ভাষার কবিতার পাশাপাশি আছে তার ইংরেজি অনুবাদ। বনভিসিনোর গ্রন্থ যেমন বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে, তেমনি তিনিও পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন কবির কবিতা, যাদের মধ্যে আছেন আর্জেন্টিনার কবি অলিভেরিও গিরোন্দো, ফরাসি কবি জুল লাফার্গ, মার্কিন কবি রবার্ট ক্রিলি ও চার্লস বার্নস্টাইন। সম্পাদনা করেছেন কবিতা অ্যান্থোলজি Nothing the Sun Could Not Explain (Los Angeles, Sun & Moon Press, 1997)। বার্নস্টাইনের সঙ্গে সহসম্পাদনা করেন Sibila: A Poetry & Culture Review অনলাইন ম্যাগাজিন।
চার্লস বার্নস্টাইন :[35]
মার্কিন কবি, প্রাবন্ধিক, কাব্যিক তত্ত্ববিদ। বাস নিউইয়র্কের ব্রুকলিন শহরে। হার্ভাড কলেজে শিক্ষাপ্রাপ্ত বার্নস্টাইন বাফেলো স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের সানি ডিস্টিংগুয়িস্ট অধ্যাপক, পেনিসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও তুলনামূলক সাহিত্যে ডোনাল্ড টি রেগন অধ্যাপক এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস এন্ড সায়েন্সের ফেলো। তিনি ইলেকট্রনিক পোয়েট্রি সেন্টার ও পেনসাউন্ড এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৮ সালে ভাষাকবিতার কবি ব্রুস অ্যান্ড্রুসের সঙ্গে প্রথম প্রকাশ করেন L=A=N=G=U=A=G=E পত্রিকা। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ চল্লিশটি। ২০১৮ সালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক কবিতার বই Near/Miss ২০১৯ সালে Bollingen পুরস্কারপ্রাপ্ত।
_______________________________________________________
[1] Bolaka (A Flight of Swans) by Rabindranath Tagore; A collection of poetry on the theme of dynamic consciousness, first published in 1916.
[2] Anywhere Out of the World: New Paintings by Susan Bee, 2017-2020─ an Art Exihibition by Susan Bee in A.I.R. September 12—October 11, 2020. Source: https://www.airgallery.org /exhibitions/susan-bee-anywhere-out-of-the-world
[3] The poem “N’importe où hors du monde” by Charles Baudelaire, originally published in 1867, and included as number 48 in Petits poèmes en prose by Charles Baudelaire, 1869.
[4] Poem “The Bridge of Sighs” by Thomas Hood, published in 1844, source: Arthur Quiller-Couch, ed. 1919. The Oxford Book of English Verse: 1250–1900
[5] Utopia by Thomas More, an English lawyer, social philosopher, author, statesman, and noted Renaissance humanist. His best known and most controversial book Utopia, a frame narrative written in Latin, under the title De optimo reipublicae statu deque nova insula Utopia (“On the Best State of a Commonwealth and on the New Island of Utopia”).
[6] Bernstein Charles. 2018. Near/Miss. Chicago: University of Chicago Press.
[7] “The Poetic Principle” an essay by Edgar Allan Poe, published posthumously in 1850.
[8] Bernstein Charles. 2016. Pitch of Poetry. Chicago: University of Chicago Press.
[9] Regis Bonvicino, ‘Beyond the Wall: Selected Poems’. Source: https://jacket2.org/ commentary/ bonvicino-beyond-wall
[10] Regis Bonvicino, ‘Beyond the Wall: Selected Poems’. Source: https://jacket2.org/ commentary/ bonvicino-beyond-wall
[11] Lewis Carroll, Alice’s Adventures in Wonderland & Through the Looking-Glass
[12] The Principles of Harmony and Contrast of Colors by Michel Eugène Chevreul, the French chemist, published in 1854
[13] Barin Ghosal. 2003. Guineapig: A Documentary Film. Translated by the poet himself. Jamshedpur, India: Kaurab
[14] Iconophrastic, coined by Charles Bernstein, to go with ekphrastic, to refer to the making an image in response to a poem as he writes in his book Pitch of Poetry.
[15] Letter of Marc Chagall to Pavel Davidovitch Ettering, 2 April, 1920, the Russian years 1906 – 1922, editor Christoph Vitali, exhibition catalogue, Schirn Kunsthalle Frankfurt, 1991
[16] Republics of Reality by Charles Bernstein, Los Angeles, Sun & Moon Press, 2000
[17] History of Western Philosophy And Its Connection with Political and Social Circumstances from the Earliest Times to the Present Day by Bertrand Russell, published by Simon and Schuster, inc. Rockefeller center, New York.
[18] The Displacement of the “Scholastic”: New Brazilian Poetry of Invention by Regis Bonvicino, boundary2, vol.26, No.1, 99 Poets/1999: An International Poetics Symposium(Spring,1999),
[19] Bernstein, Charles. 1987. The Sophist. Los Angeles: Sun & Moon Press.
[20] Bernstein’s slogan “You can’t evict an idea” is now used as slogan in Occupy Philly movement.
[21] “You Can’t Evict an Idea: The Poetics of Occupy Wall Street,” published in Jacket2. Source:https://jacket2.org/commentary/you-can%E2%80%99t-evict-idea-poetics-occupy-wall-street
[22] Bernstein’s Poem “Poetic Citizenship and Negative Dialectics” in upcoming poetry collection Topsy-Tvrvy by University of Chicago Press, Chicago and London
[23] Estado Crítico by Régis Bonvicino (Editora Hedra, 2013)
[24] In Conversation: Susan Bee with Phong H. Bui. Source: https://brooklynrail.org /2020/04/art/SUSAN-BEE-with-Phong-H-Bui
[25] Poem “The New Utopia (12)” by Regis Bonvicino, published in the magazine Macau, 24th June, 2020, source: https://hojemacau.com.mo/2020/06/24/a-nova-utopia-12/
[26] TAZ: The Temporary Autonomous Zone, Ontological Anarchy, Poetic Terrorism by the anarchist writer and poet Hakim Bey (Peter Lamborn Wilson), published in 1991 by Autonomedia.
[27] Lectures on Negative Dialectics: Fragments of a lecture course 1965/1966 by Theodor W. Adorno, Edited by Rolf Tiedemann, Translated by Rodney Livingstone, English edition in 2008, Polity Press, Cambridge, UK.
[28] Charles Bernstein, 2011. Attack of the Difficult Poems: Essays and Inventions. Chicago, University of Chicago Press.
[29] Outros Poemas by Regis Bonvicino, 1993. Source: http://regisbonvicino.com.br/novo/outros-poemas/
[30] Regis Bonvicino, Beyond the Wall: Selected Poems, Source: https://jacket2.org/ commentary/bonvicino-beyond-wall
[31] Off-World Fairy Tales by Susan Bee & Johanna Drucker, Litmus Press, 2020,. Source: https://litmuspress.org/product/off-world-fairy-tales/
[32] https://www.airgallery.org/artists/susan-bee
[33] Website of Regis Bonvicino: http://www.regisbonvicino.com.br/cat.asp?c=2
[34] Website of Sibila magazine: http://sibila.com.br/english
[35] Author Website for Bernstein: http://writing.upenn.edu/epc/authors/bernstein/
Posted in: February 2021, TRANSLATION
1 thought on “হেথা নয়, অন্য কোথা, আর কোন্খানে : রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়” Leave a comment ›