শুভেচ্ছা বার্তা ও দূরত্ব : ঋদ্ধি রিত

শুভেচ্ছা বার্তা

পুষ্পক চাকরি ছেড়েছে মাস ছয়েক হলো। এখন লেখাকেই সময় দেবে বলে ঠিক করেছে। চাকরী ও লেখা এক সাথে চালানো যে বেশ শক্ত তা ইতিমধ্যেই তার বোধগম্য হয়েছে। পুষ্পকের বারবার মনে হত সে, তার লেখার সাথে দ্বিচারিতা করছে। এবছরের বইমেলায় তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে দু’দিন হলো। তারপর শেষ দু’দিনের মত আজও সে বইমেলা চত্বরে এসেছে। অন্যান্য স্টলে কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা হবার পর, তার বই প্রকাশনীর স্টলের কাছে পৌঁছলো। স্টলের বাইরে অন্য স্টলের এক বন্ধুর সাথে কথা বলছে, তাকে দেখেই কাউন্টারে বসা কৌশিক হঠাৎ চিৎকার করে বললেন, “এই তো পুষ্পক, এদিকে এসো, তোমাকে খুঁজছেন একজন”।

“হ্যাঁ, আসছি”, বন্ধুকে আপাতত বিদায় জানিয়ে পুষ্পক স্টলের গেটের দিকে এগলো।

স্টলে ঢুকতেই কৌশিক এক মহিলাকে ডাকলেন, “শুনছেন, ইনি পুষ্পক”।

পুষ্পক ঝট করে কৌশিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে জিঞ্জেস করলো, “কাটতি কেমন গো কৌশিক দা?”

কৌশিক মাথা নিচু করে বিল লেখার মাঝেই বলল, “নতুন হিসাবে বেশ ভালোই তো, তিন দিনে বিশ কপি”।

পুস্পক মাথা তুলে দেখে বছর বত্রিশের এক যুবতি, চোখে চশমা, হাতে অন্যান্য বইয়ের সাথে তার কবিতার বইটাও। সামনে এসে বলল, “আচ্ছা আপনি লেখক পরিচিতি ইউস করেন নি কেন?”

এরকম আচমকা প্রশ্নে খানিক থতমতই খেয়ে গেলো। কিছুটা সামলে নিয়ে বললো, “লেখকের পরিচিতি তো তার লেখায়, কবির পরিচিতি তার কবিতায়। আলাদা দরকার লাগে কিছু?”

এক মুহূর্ত ভেবে যুবতীর বক্তব্য “আপনার অন্যান্য বইয়ের নাম অন্তত…”।

পুষ্পক হাল্কা হেসে বললো “এটাই আমার প্রথম বই। আপনার পরিচয়টা?”

“আমি ঋতমা। ঋতমা সেন”। এতক্ষনে একটু হাসির ঝলক দেখা গেল তার মুখে। “বেশ কয়েকটা আপনার লেখা পড়লাম, বেশ অন্য রকম। ভালো লাগলো”।

“ধন্যবাদ…” বেশ আনন্দ ধরা পড়ল পুষ্পকের গলায়।

এবার এমন এক ঘটনা ঘটলো, যা পুষ্পকের কাছে অপ্রত্যাশিত। ঋতমা তারই বইয়ের প্রথম পাতা খুলে দিয়ে বললো, “নিন, নামটা তো জানলেন, এবার লিখে দিন। শুধু নাম লিখলে হবে না কিন্তু”।

সবারই মনের মধ্যে এ সখ থাকে, সে অটোগ্রাফ দেবে। দুদিন আগেই বই প্রকাশের সময় তার দুই খুবই কাছের লোক, রাজর্ষি’দা আর সমরেশ আওয়াজও দিয়ে বলেছিলো, “অটোগ্রাফ প্র্যাকটিস করেছিস তো?”, “মহিলা ফ্যানরা চাইবে তো” ইত্যাদি ধরনের। তখন সবই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো পুষ্পক। তার কাছে কেউ অটোগ্রাফ চাইবে সে কথা তার মাথাতেও আসেনি। শেষে মনের মধ্যের উৎফুল্লতা ও কিঞ্চিৎ ভয় নিয়েই সে অটোগ্রাফটা দেয়, “আলোর পথেই স্বপ্ন হাঁটুক, স্বপ্ন ইচ্ছে মোড়া… ঋতমাকে শুভেচ্ছা সহ পুস্পক”

প্রথম কেউ অটোগ্রাফ নিয়েছে পুষ্পকের, তাই তারও একটু ভদ্রতা দেখানো উচিৎ, এই ভেবে সে ঋতমাকে বললো, “চা খাবেন?”

“খেতেই পারি…” জানালো ঋতমা।

তারা দুজন চা স্টলের দিকে হাঁটা লাগলো। চায়ের স্টল মেলার মাঝামাঝি। আর এই বইয়ের স্টলটা পূর্ব দিকের গেটের কাছে। মেলার মাঝখানে শুধু চা নয়। আরও অনেক খাবার স্টল আছে। একটু এগোনোর পর পুষ্পক বললো, “আমরা বোধহয় মেলার বাইরেও যেতে পারতাম”।

ঋতমার আবার সটান প্রশ্ন, “কেন, চা খাবেন না?”

“বাইরেও তো চা আছে। ওখানে সিগারেট খাওয়া যেত। এখন তো মেলা নো স্মোকিং …” শান্ত ভাবে জানালো পুষ্পক।

“ওহ! সেটাতো আগে বলবেন। যাক, এখন যখন এদিকে এগিয়েই এসেছি তখন এখান থেকেই চা খাওয়া যাক, পরে নাহয় আবার বাইরে গিয়ে সিগারেট খেয়ে নেবেন” হেসে বলল ঋতমা।

“বেশ, তাই চলুন”। আরও খানিক এগোনোর পর পুষ্পক প্রশ্ন করলো, “আপনি কোথায় থাকেন?”

উত্তর এলো “হাওড়া”।

আবার প্রশ্ন “হাওড়ার কোথায়?”

ঋতমা হাঁটতে হাঁটতে জানালো, “আমি মন্দিরতলা এলাকায় থাকি। আপনি?”

কথার উত্তর না দিয়ে পুষ্পক আবার প্রশ্ন করলো, “মন্দিরতলার কোথায় থাকেন আপনি?”

ঋতমা জানায়, “বি কে পালস্ স্কুলের কাছে। আপনি চেনেন?”

পুষ্পক এবার চমকে দিয়ে জিঞ্জেস করে, “আপনার কি ১৮, বাজেশিবপুর রোড?”

ঋতমা অবাক, “হ্যাঁ। আপনি কি করে জানলেন!”

পুষ্পক উত্তর দিলো, “আমি বি কে পালেরই ছাত্র। শিবতলায় থাকি, আমার ৯৫, বাজেশিবপুর রোড। ভোটার লিস্টে দেখেছি আপনার নামটা। ওখানে তো একটাই সেন বাড়ি”।

ঋতমা চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে, “মানে? আপনি বাড়িতে বসে ভোটার লিষ্ট চেক করেন?”

পুষ্পক হেসে বলে, “না, ঐ ভোটের আগে দিয়ে যায়। স্লিপে নাম লিখতে হবে বলে। আর এইতো দু’মাস আগেই ভোট গেছে। তাই মনে আছে। চা না কফি?”

দু’জনেই এসে দাড়িয়েছে চা কফির স্টলের সামনে। ঋতমা এক মুহুর্ত ভেবে জানালো, “কফি”।

কফি খেতে খেতে দুজনে লিটিল ম্যাগের স্টল গুলোর দিকে এগোলো। সেখানে বেশ খানিকক্ষণ কাটানোর পর ঋতমা বললো, “আপনি থাকুন, আমি এবার বাড়ির দিকে এগোই”।

“যদি বাড়ির দিকেই যান, আর দশ মিনিট সময় দেন, তবে একসাথেই ফিরতে পারি”। পুষ্পকের কথার উত্তরে ঘার নেড়ে সম্মতি দেয় ঋতমা। স্টলে দেখা করে বাইরে বেরিয়ে বাসের দিকে এগোনোর সময় সিগারেট ধরায় পুষ্পক।

“আপনি রোজই আসছেন?” ঋতমা জানতে চায়। পুষ্পক জানায় রোজই সে আসে। কিন্তু আগামীকাল তার নাটক দেখতে যাওয়া। তাই হয়ত সে আসবে না। ঋতমা বেশ উৎসাহের সাথে প্রশ্ন করে “কোন নাটক?”

পুষ্পক জানায় তিতুমীর। ঋতমা মাথা নেড়ে আক্ষেপের সাথে বলে, “ইসস। আমার আর এই নাটকটা দেখা হবে না”।

পুষ্পক সিগারেটের ধোঁয়াকে মুখের ভেতরে প্রবেশ করানোর সাথেই প্রশ্ন করে, “কেন?”

“হয় আমার সময় হয়ে ওঠে না। নয়তো হাউসফুল। যেমন আগামীকাল হাউসফুল” ঠোঁট উলটে জানায় ঋতমা।

“টিকিট পেলে যাবেন?” জানতে চায় পুষ্পক।

ঋতমা দক্ষিণ ভারতীয়দের মতো ঘাড় নেড়ে বলে, “হ্যাঁ… কিন্তু না”।

“হ্যাঁ… কিন্তু না, মানে?” ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন করে পুষ্পক।

“পেলে নিশ্চই যাবো। কিন্তু পাবেন না। আমি খোঁজ নিয়েই বলছি। টিকিট শেষ” জানালো ঋতমা।

“কাল বিকেল ৫টায় চলে আসুন। টিকিটের দায়িত্ব আমার। না পেলে আমার সিটে বসে আপনি দেখবেন” হাসতে হাসতে বলল পুষ্পক।

“আর আপনি কি অ্যাকাডেমির বাইরে বসে বাদামভাজা খাবেন?” হাসির ছলেই প্রশ্ন ছোঁড়ে ঋতমা।

“তাই খাবো। আমি ৫টা শোই দেখেছি। একটা না হয় বাইরেই কাটালাম বাদাম ভাজা চিবোতে চিবোতে, হা…হা…হা…”, হাসিটা পরক্ষণেই সামলে পুষ্পক বললো, “চলুন বাস এসে গেছে”।

বাসে আসার সময় এখনকার লেখা ও লেখক সংক্রান্ত কথা হয় তাদের মধ্যে। ঋতমার নেওয়া বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে দেখা যায় পুষ্পকের প্রিয় লেখক সাদিক হোসেনর বই, হারুর মহাভারত। পুষ্পক বলল, “হারুর মহাভারত! আসলে, সাদিক হোসেনের মহাভারত। যাতে মিশে আছে আমার, আপনার, পুণের লং মার্চ বা দিল্লীর ঠাণ্ডায় বসে থাকা কৃষকদের মহাভারত। যা মূলত ভাতের কথা বলে। বলে ক্ষুধা, অন্ন ও অভাবের কথা। খাদ্যসূচকে ভারত যখন অনেক নীচে এই লেখা তখন ভারতের কথা বলে”। একটু থেমে আবার সে বলে, “ভাত, ক্ষিদে, পেটের জ্বালা ও তা দূর করার তীব্র প্রচেষ্টা এইসব খুঁজে পাই বইটির ছত্রে ছত্রে। অসাধারণ বই”।

ঋতমা জানায়, “হ্যাঁ। চোখ বুলিয়ে মনে হোল। খুব তাড়াতাড়ি বইটা শেষ করবো আশা করছি”।

পুষ্পক জানতে চায়, “সাদিক দার অন্য লেখা পত্র পড়েছেন?”

“না, এর আগে পড়া হয়ে ওঠেনি…” ঋতমার সংক্ষিপ্ত উত্তর।

পুষ্পক বলতে শুরু করে, “সম্মোহন, রিফিউজি ক্যাম্প, গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময়- এ বই গুলো পড়তে পারেন। অসাধারণ সব গল্প সংকলন। আমার খুব, খুব পছন্দের লেখক। এ সময়ের মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে উঠছে সাদিক দা”। আরো কিছু একথা-সেকথার মাঝে পুষ্পক জানতে চায়, “আপনি কি করেন?”

ঋতমা জানায় সে একটি পাবলিশিং সংস্থার অনলাইন এডিটর। মূলত রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বই তাদের পাবলিকেশন হাউস থেকে প্রকাশিত হয়। পাবলিশিং হাউসের নাম বলতেই পুষ্পক তা চিনতে পারে। এবার একটু অনুযোগের স্বরেই সে বলে, “দাম গুলো বড্ড বেশী। যাদের জন্য ঐ সমস্ত বই তাদের কাছে পৌঁছন সম্ভব হয় কি?”

ঋতমা জানায়, “কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে কাগজের দাম বাড়াচ্ছে ও ট্যাক্স চাপাচ্ছে, তাতে খুব সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি বইয়ের প্রিন্ট, কাগজের মান দেখুন ‘এইট্টি জি এস এম’। তার সাথে বাঁধাই…”।

পুষ্পক প্রায় স্বগতোক্তি করে, “তাও ঠিক, অস্বীকারই বা করি কী করে। কিন্তু ভুখা মানুষ কী আর বই ধরে!”

পরের দিন ঋতমা সকালে উঠে আগের দিন নেওয়া পুষ্পকের নম্বরে ফোন করে টিকিটের খোঁজ নেয়। সত্যি জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে কিনা? পুষ্পক তাকে একই ভাবে জানায়, টিকিটের চিন্তা না করে, বিকেল ৫টায় অ্যাকাডেমিতে গিয়ে ফোন করতে। ঋতমা সেই মতো বিকালে পৌঁছয়, দেখে টিকিট কাউন্টারেই পুষ্পক বসে আছে। ঋতমাকে দেখে হাত দিখিয়ে দাঁড়াতে বলে সে। মিনিট তিনেক পর পুষ্পক এসে ঋতমার হাতে ‘সি-রো’-র টিকিট দিলে ঋতমা বলে, “মিথ্যে কথা বললেন কেন?”

পুষ্পক অবাক হয়ে বলে, “কি মিথ্যে বললাম?”

ঋতমা হাসতে হাসতে বলে, “পাঁচটা শো শুধু কেন বললেন? পঞ্চাশটা রিহার্সালও তো দেখেছেন। সেটা বললেন না তো। যান, আপনি বাদাম ভাজাই খান বসে, হা…হা…হা…”।

শো শেষে ঋতমা তার এডিট করা একটা বই পুষ্পকের হাতে তুলে দেয়। তাতে লেখা, “Dear Pushpak, We should win our wish & dreams, Comrade lets march together… Ritoma”

দূরত্ব

আজ বেশ দেরি হয়ে গেছে, লিফট থেকে বেরিয়েই ঘড়িটা জানাচ্ছে ১১টা ৪৮। মোবাইল অনুযায়ী ক্যাব আস্তে এখনো মিনিট তিনেক। ছিপছিপে, বছর আঠাশের তিলোত্তমা অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো। আকাশে ধোঁয়ার তাল ছেড়ে সে ভাবে বারো মিনিট পর রবিবার, এটাই যা, অন্তত ছুটির দিন। রোজ যে ভাবে দেরি হচ্ছে তাতে সংসারে সময় দেওয়াটাও একদম হয়ে উঠছেনা তার। অনুপমের সাথেও আজকাল মাঝেমধ্যেই অশান্তি। সময়ের কী এতটা অভাব! এসব ভাবার মধ্যেই ক্যাব চলে এসেছে।
এই কর্পোরেট দুনিয়ায় টিকতে গেলে মানুষের নিজেস্ব সময় প্রায় থাকে না বললেই চলে। সকালে ১১টার মধ্যে অফিসে ঢুকতে হয়। মাস দুয়েক আগে প্রমশনের পর তিলোত্তমা এখন তার কম্পানির ইস্টার্নজোনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোয়ালিটি ম্যানেজার। গতকাল ও আজ আই.এস.ও-র অডিটররা এসেছিলো, অডিটে। তাই অডিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারও বেরনো সম্ভব ছিলো না।
তিলোত্তমা যখন বাড়ি পোঁছল, ঘড়িতে তখন ১২টা ২০। ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুম পেরিয়ে যাবার সময় একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো টেবিলে খাবার রাখা, মিনতি দি যে ভাবে রান্না করে রেখে গেছে সে ভাবেই সব আছে। বেড রুমে যাবার পথে চোখে পরল মাঝের স্টাডি রুমে অনুপম, টেবিলে বসে সে লিখছে। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় ঘরে যা আলো। টেবিলে স্পষ্ট অ্যাসট্রে প্রায় উবচে পড়ছে। তিলোত্তমা দরজায় দাঁড়িয়ে জিঞ্জেস করে, “খাওনি কেন এখনো? জানতো আমার অডিট চলছে, দেরি হবে। খেয়ে নেবে তো। আচ্ছা আমি এখুনি ফ্রেস হয়ে আসছি”।
তিলোত্তমা তাড়াতাড়ি বাইরের পোশাক চেঞ্জ করে, হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখে তখনও অনুপম একই স্থানে বসে আছে। তবে এখন সে লিখছে না। কলম টেবিলে, চেয়ারে গা এলিয়ে সে একটা সিগারেট ধরিয়ে খোলা জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। সাত তলার ওপরের ফ্ল্যাটের এই জানলা থেকে আকাশ টা ভারি পরিষ্কার। কোন বাধা নেই। সামনে রাস্তা পেরলেই মাঠ থাকায় দিগন্ত যেন এখানে সুদূর বিস্তৃত। তিলোত্তমা টেবিলে গিয়ে খাবার বাড়তে বাড়তে আবার হাঁক দ্যায়, “এসো, খাবার বারছি”।
অনুপমের কোন দেখা নেই। তিলোত্তমা এবার টেবিল থেকে উঠে স্টাডি রুমে গিয়ে অনুপমের পাসে গিয়ে দাঁড়ায়ে বলে, “অনুপম, খাবে না? চলো”।
তিলোত্তমার দিকে না তাকিয়েই অনুপম বললো, “না। ঘন্টা খানেক আগে খিদে এসেছিলো, এখন চলে গেছে। আজ আর আসবেনা, তাও বলে গেছে”।
“কি হয়েছে তোমার?” তিলোত্তমা প্রশ্ন করে।
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অনুপম বলে, “আমার আবার কী হবে! আমার জীবনে কিছুই তো আর হয় না, না একটা ঠিক করে প্রেম, না একটা ঠিকঠাক ভালোবাসা, না একটা ঠিক করে লেখা, না লেখাটার ঠিক করে অডিট করা”।
জানলার বাইরের আকাশের চাঁদের ওপর পেঁজা মেঘ জমা হয়ে সেই আলোটাকে খানিক চেপে দিয়েছে। তিলোত্তমা চুপ করে কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলো। তার দুচোখে জলের ধারা। টেবিল ল্যাম্পের অল্প আলো আর সিগারেটের ধোঁয়া যেন দুজনের মধ্যে একটা আস্তরণ সৃষ্টি করলো।
অনুপমের লেখাটাও ধেবড়ে গেছে জল পরে।

Facebook Comments

Leave a Reply