রাদ আহমদ-এর কবিতা
ডিনার ওয়াগন
আমরা সাদা ফুল কাপেতে চা খাব
তার সাথে জন-গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে কথা বলব, ধরো
ফেমিনিজম, নারীর স্বাধীনতার নানা পর্যায় বা ধাপ
বলব ঐ উপন্যাস ভালো লেগেছে কেননা ওর ভিতরে নানা চরিত্র
একটু পরে পরেই খালি সিগারেট ধরায় খরগোসের লম্বা কানের কথা
কেন যে মনে পড়তেছিল সবকিছু তো ঠিক-ই ছিল লম্বা সাদা
গ্লাসগুলাকে টেবিলে জুরে দেখ কেমন
উচ্ছন্ন ভঙ্গিমায়
সোজা দাঁড়ানো – দাঁতাল সাপে বর্ষাকালে কাকে কাটল এই কথাটা
চন্দ্রালোয় জমাট বাঁধা গুমরে থাকা কুড়ে ঘরের ছাউনি কাঁধে নিয়ে নিয়ে
বলব ধরো, এই যে ক্রমাগত নগর এগিয়ে যেতে থাকলে পরে আর কখনও
ভৌগলিক সীমানা ধরে নগর চিহ্নিত হবে না। নগর হবে
অর্থনীতি ক্ষেত্রে যাঁরা অল্প গুটি কয়েকজনা মানুষ ধরো যেমন জেমস
বণ্ড হয়েছে – মারাত্মক তীব্রতায় তারা তরুণ জেমস
কড়ি ক্রেডিটে ইলেকট্রনের আলোকচ্ছটা
যেই হোটেলে সাদা কভারে বিছানা ঢাকা, উষ্ণ সাদা তোয়ালে সেই পুরা ঘরটাই
নগর সেই তাকেই বলা যেতে পারে সে নতুন ধারা শহর সে-ই
পুরনো সিটি স্টেটের গায়ে লতিয়ে ওঠা রাষ্ট্র যার
সীমানা ধরে ধরে কেবল বেয়ে উঠেছে বিষ হয়েছে আর
হেসেছে আর পশ্চিমেতে ঢলে পড়েছে রূপকথার সাদা কমলা
লাল সূর্য আমি তখন পাকা কাঠের মজবুত ও ভিক্টোরিয়া
কালের বাঁকা নকশা আঁকা ডিনার ওয়াগন ক্রয় করার প্রস্ততিতে
সিরামিকের জন্য যাচ্ছি ধরো হাতিরপুল
কী সুন্দর কম্পিউটারে
কী সুন্দর কম্পিউটারে অল্পস্বল্প আলো জ্বেলে রাখে ওরা চড়ুইয়ের ঝাঁক
ভোরের বেলায় বাচ্চু, তুমি চলে যাও আমি বাচ্চু না বরঞ্চ
আরও সত্যিকারের এফিমেরাল আমি
নিজে নিজে বাচ্চু
তুমি ভৌতিক দিগন্ত-প্রান্ত থেকে চামড়া এসে লাগা হাড়
যা থেকে উদ্ভূত অদ্ভুত শোকের থেকে
অস্পষ্ট আনন্দ থেকে ঔৎসুক্যের স্পন্দন থেকে
তাকিয়ে আছেন যিনি দেয়ালের ঘড়িটার থেকে
ওড়াউড়ি-রত পাখিদের কিচির মিচির ডাক এসে জরো ভোরবেলা
পাখিদের এই ডাকটাকে ডেকে নিয়ে বলতে চাই আমার আসলে
কিছু নাই যা দিয়ে বসার ঘরের কাচের টেবিলে সাজানো
বাচ্চু তুমি বাচ্চু তুই চলে গেলে একা পুরা বাগানের মালিক আমি যে কিনা
দানবের মতো বসেছিল জানালার অলীক সুস্থির পাশটাতে
পুরনো কাগজে ছাপা বইয়ের বাগান থেকে
ফুল-চোরা শিশুরা প্রত্যেকে একটা একটা লাল ফোঁটা যেন এখনও আসলে সকালে কয়টা যে ঠিক
বেজেছে ও জ্বলজ্বলে কম্পিউটারে বাতি হয়ে গেছে এই কিচির মিচির কালে
আনন্দে সকালে দাঁড়ানো একা কংকাল খালি
.
.
[আলাদাভাবে ঋণ স্বীকার লাগে না, কারণ এতটাই পরিচিত সূত্র, তাও বলে রাখা উচিৎ, ‘বাচ্চু তুমি বাচ্চু তুই’ বাক্যাংশটি কবি শামসুর রাহমানের “দুঃসময়ে মুখোমুখি” কবিতা থেকে চয়িত । “বাচ্চু তুমি, বাচ্চু তুই, চলে যাও চলে যা সেখানে / ছেচল্লিশ মাহুতটুলির খোলা ছাদে। …”]
Posted in: February 2021, POETRY