প্রেম-অপ্রেমের গল্প : দেবাদৃতা বসু, অর্ক চট্টোপাধ্যায়
“প্রেম করা যায় না, প্রেম হয়ে যায়”- আমার একজন বন্ধু বলে।”
দেবাদৃতা বসু
পাহাড়ের গা প্যাঁচানো রাস্তা। প্রত্যেকটা বাঁক দৃশ্যের চমক। যতটা নতুন, ঠিক ততটাই একঘেয়ে। এই জায়গাটার নাম আসাম। হ্যাঁ। আসাম। যেখানে এন আর সি করা হয়েছে। এবং যেখানে এন আর সি করা নিয়ে চলছে বহু বহু ডিবেট। “আসামের ব্যাপারটা কিন্তু আলাদা” । সেই আসামের প্রত্যন্ত এক গ্রাম। টুরিস্ট বলে এখানে কিছু নেই। শুধু একটা পাহাড়ি উপত্যকা, যা দেখতে হলে দিসপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে অনেকটা চড়াই পেরতে হয়।
– “প্রেম করা যায় না, প্রেম হয়ে যায়”- আমার বন্ধু যিশু সবসময় বলে।
– ধুর ওটা আসলে শাহরুখ খানের লাইন।
– সে যারই হোক। করা আর হওয়ার মধ্যে পার্থক্য কী? না হয়ে গেলে করব কী ক’রে?
– তখন হয়ে গেছিল বলে এখন যে আর হচ্ছে না এমন তো নয়, বা তখন করা যায়নি বলে এখন করা যাচ্ছে না এমনও না। সবার মত বসে বসে আমি এখন ‘হওয়া’ আর ‘করার’ মধ্যেকার ফাইন লাইন খুঁজতে পারছি না।
– আমার তো ফাইন লাইন খুঁজতেই মজা লাগে। প্রেম বললেই যে সব স্টিরিওটাইপ এবং পরিণতিগুলো প্রথমেই মাথায় আসে, এই ফাইন লাইনগুলো সেগুলো ভেঙে দেয়। আসলে আমার মনে হয়, ‘হওয়া’ ব্যপারটা একতরফা, আর করতে হলে দুজন, বা তার বেশি মানুষের পার্টিসিপেশান লাগে।
এই পাহাড়ের গা বরাবর টুরিস্টের হাঁটাচলা হয় না । কখনও বা একলা বাইকার হঠাৎ দেখা যেতে পারে। এরকম সানসেটের মুহূর্তের নিঃসঙ্গ কাপলের হেঁটে যাওয়া এবং আলোচনার বিষয় দুইই এই জায়গায় বিরল। কিন্তু বেমানান নয়। পাহাড়ের গায়ে এক একটা পরিবার দেখা যায়। নর্থ ইস্ট, তাও আবার প্রত্যন্ত গ্রাম। তবু যেন মানুষের মতই অবয়ব। এরা কি এখন এন আর সি জানে? কন্সেন্ট বোঝে? জমিতে থাবা বসানোর বিপক্ষে গড়ে ওঠা কন্সেন্ট? প্রতিবাদ? আন্দোলন? কিন্তু এরা সঞ্চয় বোঝে, প্রেম বোঝে, হয়ত অধিকারবোধও।
– একটা জিনিস মিস করছি পাহাড়ে এসে
– কী?
– তার
– তার?
– হ্যাঁ। শহরের মাথার ওপর ছড়িয়ে থাকা, জড়িয়ে থাকা তার। তারের জঙ্গল। শহরগুলোকে কেমন আগলে রাখে এরা। আবার দম বন্ধ করে দেয়।
– আমার এক বন্ধু আছে নবেন্দু। একসময় খুব ভালো গল্প লিখত। একবার ওর একটা গল্পের কন্সেপ্ট মাথায় এসেছিল এইসব ঝুলন্ত তার দেখে। একটা লোক প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার পথে তার দেখতে দেখতে তারের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এমন অধিকারবোধ জন্মে যায়, যে পাড়ায় ইলিক্ট্রিক লাইন কেটে গেলে যখন একটা লোক মই বেয়ে তার সারাতে ওঠে, সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। ভয়ানক অভিমান হতে থাকে। এতটাই তার অবসেশন।
– অধিকারবোধ জিনিসটা কিন্তু মজার। ভালোবাসার মোড়কে কি সহজেই কন্ট্রোল করে ফেলা যায় মানুষকে।
– আমার হয় না।
– আমারও। ১০/১২ বছর আগে হলে হয়ত হত। এখন হয় না।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে হোম স্টে-টার কাছাকাছি চলে আসে। ১০/১২ বছরে প্রথম যারা বেড়াতে যায় তারা সাধারণত একাকীত্ব খুঁজতেই চায়। কিন্তু হোম স্টে তে ফিরে ওরা দুজন আড্ডার সঙ্গী খুঁজতে থাকে। এখানকার লোকাল ভাষা জানা নেই। এতটা পথ গাড়ি চালিয়ে যে ড্রাইভার তাদের নিয়ে এসেছে, তার সাথে হিন্দিতে অল্প কথা হয়েছে। বিকেল পরে গেলে জমিয়ে ঠাণ্ডা পড়ে। তাই দুজনে গায়ে জ্যাকেট চাদর পরে বনফায়ারের কাছে গিয়ে বসে। পাহাড়ি টুরিস্ট স্পটেই ৮ টার পর এমনিই ভিড় কমে যায়। আর এখানে তো আসেপাশে মানুষ নেই কোনও। ওরা দূরে ড্রাইভারকে দেখতে পেয়ে ডেকে নেয় আড্ডাতে।
– ভাবি, আপ কফি পিয়েঙ্গে?
– আমি ভাবি নই, আমাদের বিয়ে হয়নি।
– কব হোগা সাদি?
– নেহি হোগা। বিয়ে করে কি হয়? কাউকে ভালোবাসতে গেলে কি বিয়ে করতেই হয়? অথবা একসাথে থাকতেই হয়?
– এক ছাদের নিচে না হলেও আমরা কিন্তু এক চাঁদের নিচেই থাকি। মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাতে পারলে কে কোথায় আছি সেটা আর ম্যাটার করে না।
ড্রাইভারটির নাম রমেশ। বয়শ ৩০ শের মধ্যে। বিহারে বাড়ি। গাড়ি চালায়। আগে কলকাতায় গাড়ি চালাত। এখন নর্থ ইস্টে চালায়। ইদানিং এই সব জায়গাতেও হিন্দিভাষী বিহারীদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তবুও এখনও বিহারে এন আর সি হয়নি। হলে কি কি হতে পারে, সেই আলোচনার জায়গা এই গল্পের পরিসরে নেই। আপাতত বনফায়ারে আগুন কমে আসছে। নতুন কাঠ দিতে হবে। সেই বিয়ে-শাদি থেকে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, সে আলোচনা এন আর সি হয়ে, জিনিসের দাম বাড়া, আসন্ন ইলেকশন পেরিয়ে আবার প্রেমে ফিরেছে। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে মানুষের কাছেই দাঁড়াতে হয়, প্রেমেই ফিরতে হয় হয়ত। সব প্রেম একরকম হয় না, কিছু হয়ে যায়, কিছু করতে হয়, কোথাও অধিকার থাকে, কোথাও থাকে না, কাছে থেকেও হয়, দুরের থেকেও, একজনের সাথে বা একাধিক। যা অনেক বছর আগে হয়নি, বহুবছর পর অনায়াসে হয়ে যেতে পারে।
– তোমার প্রেম নেই?
– হা ভাবি, আছে।
– কোথায়? বিয়ে করেছ?
– না, ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে।
– তোমার সাথে হয়নি?
– না, আমার সাথে হয়নি। অন্যলোকের সাথে, কিন্তু ও তো আমাকেই ভালোবাসে। আমি সেটা জানি।
– কি করে বুঝলে? তোমাকে বলেছে?
– না না। কি করে বলবে। ৩/৪ বছর তো কথা হয়না। দেখেছি দুর থেকে। যখন গ্রামে যাই।
– তাহলে কি করে বুঝলে?
– ওর বাবার একটা জমি আছে। ওর নামে। ওর ভাইদের দেয়নি। কিন্তু সে জমির কথা ভাবি কেউ জানে না। ওর ভাইরা জানে না, বড় তো নয়ই। শুধু আমাকে বলেছে যে ওর জমি আছে। আমাকে ভালোবাসে বলেই না শুধু আমাকে বলেছে। ওর বরকেও কখনও বলেনি।
বনফায়ারে আগুন নিভে গেছে। শুধু কিছু পুড়ে থাকা কাঠ আর মানুষের ফেলে যাওয়া নিশ্বাস। যেমন একটা আন্দোলনের শেষে তার রেশের সাথে কিছু টুকরো স্লোগানের ইকো, ফ্ল্যাগ, ব্যানার পরে থাকে রাস্তায়। প্রেমও থাকে। বিভিন্ন রঙে, ভাষায়, আকারে, ইঙ্গিতে। শুধু খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা থেকে যায়।
———————————-
পেয়ার নহি হোতা
অর্ক চট্টোপাধ্যায়
“পেয়ার কিয়া নহি জাতা, হো জাতা হ্যায়”—এরম একটা গান ছিল।
নব্বইয়ের দশক টাইম ল্যাগের দশক। তাই নাইনটিজ কিডস মাত্রেই ৭০ বা বড়জোর ৮০র দশকের সিনেমা টিভিতে দেখে বড় হয়েছে। এখন যেমন সবাই কারেন্ট কন্টেন্ট দেখে টিভি বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তা তখনকার দিনে ভাবাই যেত না। যতদূর মনে পড়ছে ওটা মধ্য-আশির ফিল্মি গান। অনিল কাপুর আর পদ্মিনী কোলাপুরি ছিল।
আর ছিল মিঠুনদার ‘পেয়ার ঝুকতা নহি’–৯০এর আরেক প্রেম স্লোগান, আবারো ৮০র টাইম ক্যাপসুল থেকে আসা ইটির মত! স্কুলের এক বন্ধু সৈকত বলত, ‘সৈকত কভি ঝুকতা নহি’। সে ছিল সলমন খানের ফ্যান। বিশাল চেহারা ছিল। জিমে যেত। বাইক চালাত। একদিন হাইওয়েতে ঐ বাইকই স্কিড করলো। সৈকত ঝুঁকল, আর উঠল না। এক বছরের মেয়ে ছিল ওর। মেয়েটির মা ওকে নিয়ে চলে গেল। সৈকতের মা রয়ে গেলেন ওদের পেল্লাই বাড়ির এককোণে। মিঠুন ততদিনে সিনেমা থেকে বিদায় নিয়েছেন।
প্রেম মানে কি সঙ্গকামনা? কার সঙ্গ? সেটা কি বড় কথা নাকি যে কোন কারুর সঙ্গ হলেই চলে? মানুষ কি একা থাকতে পারে না বলেই প্রেম করে? সঙ্গ কি চাইলেই মেলে নাকি! আজকালকার কেজো দুনিয়ায় কাজ সঙ্গ নয়, নিঃসঙ্গতাই বেশি তৈরি করে। প্রেম যে কোন কারুর সঙ্গ চাওয়া নাকি কোন বিশেষ একজনের সঙ্গ চাওয়া তা আজ পর্যন্ত নিশ্চিতকরে বুঝতে পারেনি বলেই নবেন্দুর বন্ধুরা ওকে অ্যান্টি-রোম্যান্টিক বলতো। সত্যিই কি সে প্রেমে অবিশ্বাসী? নাকি সে নিজেকেই বিশ্বাস করে উঠতে পারে না! আমি না থাকলে তুমি বা সে কেউই থাকবে না। নো প্রেম, ওনলি নৈঃশব্দ্য!
কতদিন হয়ে গেছে বন্ধুদের ফোন করা হয়না। মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় গিয়ে দেখে নেয় কে কি করছে। পোস্ট করে না, মেসেজও না। কেউ বুঝতেও পারেনা ও নজর রাখছে সবার ওপর। ছবিতে দেখা যায় সবাই কত ভালো আছে, তরক্কি করছে, কিন্তু কেন জানি না নবেন্দুর মনে হয়, কেউ ভালো নেই। সবাই কেমন একা হয়ে গেছে। কেউ ফোন করলে ধরে না নবেন্দু। কি আর কথা বলবে! সবাই প্রেম করছে, কেউ সংসার, কেউ পরকীয়া, কেউ ওপেন ম্যরেজ! নবেন্দু কোনটাই করছে না। অথচ একসময় এসবের অনেক কিছুই তো করেছে!
নবেন্দু জানত, মর্ষকাম আর ধর্ষকাম এক নয়। ওর প্রেম কি মর্ষকামী ছিল? ও কি নিজেকে একা করে যন্ত্রণা দিতে ভালবাসত? আহা ওটাও তো এক ধরণের ভালোবাসা নাকি? পুরোনো প্রেমের কথা মনে পড়লে গাঁজার টানে ওর মাথায় খেলে যেত বিচিত্র সব ছবি, কেন বুঝতে পারত না! রাজস্থানে মুসলিম লেবারকে চাপাতি দিয়ে খুন করে ভিডিও করেছিল লোকটা। মানুষ কুপিয়ে তারপর লাভ জিহাদ নিয়ে হেট স্পিচ দিয়েছিল লাইভ ভিডিওতে। সে ভিডিও যাকে বলে ইন্টারনেট ভেঙে দিয়েছিল। লাল শার্ট সাদা প্যান্ট পরা লোকটার নাম ছিল শম্ভুলাল। সেই ভিডিও যাতে বেশি হিংসা না ছড়াতে পারে জয়পুরের আশেপাশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। যখনই অতীতের প্রেমময় মুহূর্তগুলোর কথা ভাবার চেষ্টা করতো, শম্ভুলালের ভিডিও কেন ভেসে উঠত চোখের সামনে?
সে ছিল আরেকজন। নিজের নাম দিয়েছিল লাভ চারজার বাবা। নিজেই ছবি বানাত, গান গাইত, অভিনয় করত। তারপর জানা গেল নিজের আশ্রমে টানেল বানিয়ে মহিলা আশ্রমিকদের ধর্ষণ করে বেড়াত সেই রাম-রহিমের নাম নেওয়া বাবা। প্রেম বাবার জেল হল আর নবেন্দুর প্রেম বিষয়ক আগ্রহও তলানিতে এসে ঠেকল। এমন নয় যে তার বাবাদের ব্যাপারে কোন আগ্রহ ছিল, অথচ ভালোবাসার কথা ভাবতে বসলেই বেখাপ্পাভাবে এইসব লাভ টানেলের ছবি ভেসে উঠত নবেন্দুর মনে। যেন বিরাট একটা সুড়ঙ্গ ধরে সে নিজেও বুকে হেঁটে এগোচ্ছে অচেনা আলোর খোঁজে।
এই ছবিগুলোর সঙ্গে তাও প্রেমের একটা সম্পর্ক ছিল কিন্তু যেদিন ভালোবাসার স্মৃতিপথে কৃষক মিছিলের ছবি ঢুকে পড়ল, নবেন্দু বুঝতে সময় ব্যাটাই আসল নাটের গুরু। তার সমসময়ই যেন তাকে প্রেম করতে দিচ্ছে না! ভালোবাসার বাতাবরণ না তার মগজে আছে, আর না চারপাশের সমাজে দেখতে পাচ্ছে। কে যেন লিখেছিল, ‘সুসময়ে ভালোবাসা হবে’। দুঃসময় এতই ঘনিয়েছে যে ভালোবাসার কোন নামগন্ধের জো নেই! তারপর শাহিনবাগে এন-আর-সি-বিরোধী অবস্থান, আমেরিকায় ব্ল্যাক-লাইভস ম্যাটার আন্দোলন আর সবার শেষে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লী সীমান্তে কৃষক সমাবেশ—এসব দেখতে দেখতে নবেন্দু আস্তে আস্তে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারল। তারের জটগুলো খুলে নতুন জট তৈরি করতে লাগল।
অনিচ্ছাকৃত সমাজচিত্র যদি নবেন্দুকে প্রেম করা থেকে আটকাতে পারে তবে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা যারা যেখানে উঠে দাঁড়াচ্ছে তাদের কথা ভেবে কি ভালোবাসার বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা সম্ভব? এই প্রশ্নটা ক্রমে নিরীক্ষা আর তারপর সিদ্ধান্তে পরিণত হল। নবেন্দু ভালোবাসার সাহস সঞ্চয় করতে লাগলো শাহিনবাগের বিদ্রোহিণীদের দেখে। সিঙ্ঘু বর্ডারে অবস্থানরত এবং ট্রাক্টর মিছিলে অংশ নেওয়া কৃষকদের কথা শুনে ভালোবাসার চিন্তা ফিরে আসতে লাগলো তার মনে।
কিন্তু এতো হল ভালোবাসা নামক ধারণাকে ভালোবাসা! প্রেমের জন্য মানুষ তো একটা চাই? মানুষ না হলেও নিদেনপক্ষে কোন প্রাণী! কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, অন্তত একটা কাঠবিড়ালি? নিরন্তর একাকীত্বের ভিতর ভালোবাসার সঙ্গী পাওয়া তো আর সহজ কথা নয়। গাঁজার ধোঁয়া ভালোবাসার স্মৃতিকে ফিরিয়ে দিল ঠিকই কিন্তু চিন্তাচিত্র-নিয়ন্ত্রণ করেও ভবিষ্যতের প্রেম গুমশুদাই রয়ে গেল।
রাতে ঘুমোনোর সময় নবেন্দু রাভিশ কুমারের নিউজ কাভারেজ দেখতে দেখতে চোখ বুজতো। দেশে যে স্বল্পসংখ্যক প্রকৃত সাংবাদিক রয়েছে রাভিশ তাদের অন্যতম। তার সাহসী সত্যভাষণ নবেন্দুকে ঘুমোতে সাহায্য করত। যে স্বর ঘুমোতে সাহায্য করে তারই নাম তো ভালোবাসা! নবেন্দুর মনে পড়ত মোবাইল ফোনের যৌবনে রাত জাগা লম্বা ফ্রি-কল। ফ্রি টক টাইমের অডিও-প্রেম থেকে ফ্রি ডাটা প্যাকের ভিডিও-প্রেম। প্রেম করার লোক না থাকায় নবেন্দুর আর কল থেকে ডাটায় ট্রান্সিজশন হয়নি।
শীতের মিঠেকড়া রোদের এক সকালে কফি নিয়ে বারান্দায় বসেছিল নবেন্দু। কাল রাত্তিরের ইমেইলে ওর ছুটির আর্জি মঞ্জুর হয়েছে। সাতদিন অফিস নেই। মেইল আসার পরই ফ্লাইট বুক করেছে। দিল্লী যাবে কৃষক সমাবেশে যোগ দিতে! ও জানে সবাই বলবে এটা নেহাতই বুর্জোয়া টোকেন প্রতিবাদ। হয়ত তাই!
কিন্তু নবেন্দু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তার জীবনে একটা বদল দরকার, একটা খোঁজ চাই নতুন করে। ছুটি সাতদিনের কিন্তু ইচ্ছে করলে থেকে যাবে নবেন্দু। ইচ্ছে হলে আর ফিরবে না। ইচ্ছে হলে চাকরি ছেড়ে দেবে। ওর বিশ্বাস এই যাত্রায়, ওর এমন কারুর সঙ্গে ঠিক দেখা হয়ে যাবে যার সঙ্গে সুসময়ে ভালোবাসা হতে পারবে। কফিতে চুমুক দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় নবেন্দু।
পেয়ার নহি হোতা কিউকে সিরফ পেয়ার হি তো রহতা হ্যায়!
Posted in: February 2021 - Cover Story, STORY