শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়-এর কবিতা
দোসর
একটা খেলা চলছে ভাঙ্গা আয়নায়
আমি তোমাকে ডাকছি খুব মৃদুস্বরে
মোমবাতি কয়েক ছত্র পুড়িয়ে দিয়েছে
হাতে পাতা ফুল আর তার ছিঁড়ে নেওয়া
তার সহজ অথবা সহজিয়া
না বলার স্থিরচিত্র জাপটে
ক্রমশ প্রতিশ্রুতি স্বর
পান্ডুলিপির গর্ভপাত
ফাটা গোড়ালির চৌচিরে মায়া আস্থা
কবিতার যে শব্দ চান্দ্রমাস ডাকে
তার চারণ, চষা খেত আর বাগানের ফ্লুরোসেন্ট
পাহাড়ি গান, ঘুম মনাস্ট্রি
পাখির আদলে সহজপাঠ্য
যে পথ পাশে পাশে হাঁটছি
যে প্রতিপক্ষ সর্বস্বান্ত বিরূপাক্ষ
ট্রপিকাল নিমেষ এসে গ্রীবাকে বলে অবান্তর
পুরু ঠোঁট, ঘাতক শূন্য অনুরাগ
ভাগ করে খাওয়া, পাথরকুচি ও বাতাসে রেকাবি
যেভাবে নদী হও, যেভাবে ঘুরতে যাওয়া।
শ্লীলতা হতে চুইয়ে নামা চিলেকোঠা
গিটার আর মোমদানির স্মৃতি-চিহ্ন-যতি
শ্বাসমূলে নতুন দরজা ও হাসিমুখ
যেন ভয় এলে একটি অধরা জঙ্গল
কক্ষচ্যুত ডিসেম্বর, ভালোবাসার শীতেরা
উড়ে যাওয়া চাঁদ আজ হামেশাই কপালে
কথার কাল্পনিক ও শ্বাপদের নির্যাস
চাইছি শুধু মাথাভর্তি স্তূপাকার
ডুবে যাওয়ার আতশবাজি,
কবিতার মত নাম রাখছি পিচ ফল
আর মাছেদের আর্দ্রতা চিহ্ন বেয়ে
খুব শরীরী, অকস্মাৎ পায়ের স্থির
ঘুরে তাকাই বছর দশেক- যে পথ চলা
আভরণ খুলে সেখানে আকাশ হচ্ছি
দৃশ্যের ভেতর ডিসেম্বর ও প্রবাহিত কাঁচপোকা
দরজা খুলে রাখছি, জানালার সৈকত
বিভক্ত নাছোড় কেন্দ্র ও ঘরানার বিভোর
ডাকছি, পরক্ষণ আঁকড়ে সনাতন যে মতো
বৃত্তের স্মৃতি টপকে হাতে হাত রাখা
ঈষৎ নামে ডাকি, দোসর ও ভিক্ষুক আঙুল
আজান
ভোরের সুর যুদ্ধের আলেখ্য দোলায়
নতুন ভাষার খোঁজে নীরবতা ঢালি
বেলা-অবেলার জন্মান্তর ও রকমফের
এক মরুস্থলি বয়ে যায় কফি কাপে
শ্মশানের ভাঁজে পাঁজর খুঁজে পায় হলকা-
ভোরের হাঁপরে চোরা চোখ; মন কেমন
নতুন এই গন্ধ, পাখির চুমুকে ফনিমনসা
হযরত কেবল চিহ্ন রেখে যায় নিঃশ্বাসে
ইন্দ্রজাল বেলা শেষে হয়ে যায় পাখির পালক
ভোররাত তখনও দূরের বনবীথিকে ডাকছে কর্কশ
পড়ন্ত বেলার চিলেকোঠা চোখে শিউরে নামায়
পাপের সুর, আজান বাজে ঘুমঘোরে
আল্লাহতালা ভোররাতের রতি সংগতে
উড়ালপুল দিয়ে ধিকিধিকি নেমে আসে স্রোত
আঁজলায় রক্ত ছোঁয়া আঙ্গুলের পাঁজর
ডেড স্পেস থেকে শুকিয়ে নামা অন্তরঙ্গতা
সারা শরীর জুড়ে আঁকা আঁশটে কঙ্কাল
লেপ্টে যায় জালে, দেহতল, তৈলাক্ত
আতর রঙা ভোর শূন্য নিবিড় জিভের আঁচড়ে
চৌকাঠ হয়তো নৌকার পাটাতনে, পায়ে পা
সতর্ক ভাঁজ পরিত্যক্ত কুশল বিনিময়ে
দিনলিপিতে জড়িয়ে যাওয়া একরাশ ধূসর
বিন্দুর অন্তরালে সুতো গুটিয়ে মাঝ আকাশ
মেয়েটা নদী হয়ে গেল পাহাড়ের বুকে
রাতের কুহকে আজান গাথা ফুলকে ফোটায়
মুহূর্ত প্রেম পাথুরে করিকাঠ ও তন্দ্রাচ্ছন্ন
অভিশপ্ত শীত নেমে আসে শিরায়
দুচোখের তন্দ্রায় সর সর শব্দে আইভরি নামে
কালো এক রাত নামে যেন আফ্রিদিতি
ওভারল্যাপ হয়ে যায় মুখাবয়ব, গুড়ো শীত
প্রদীপটা জ্বলে উঠোনের কুলুঙ্গিতে, সোনালী
আর শব্দ ছিঁড়ে আঙ্গুলের নীহারিকা-
তীব্র মৃত্যু ইনশাআল্লাহ আজানের সুরে
ধিকিধিকি প্রহর গোনা সহজপাঠ্য
স্মৃত
পাহাড়ের কোলে খেয়াল জমানো অলংকার
গালিচায় ছেঁড়া বাচ্চা বাধা চোখের কোণ
নদীর পাশে পাখির পালক আর বেহেশতের খেলা
ঝুপ করে নেমে আসা আক্রোশ মিশ্রিত সন্ধ্যা
পাহাড়ের ডাকনামে বিশাল আকার রাত দুপুর
নিরবচ্ছিন্ন উঁচু মেঘ বোতামের আস্তাকুঁড়ে
নাইট শটে দূরে বসে থাকা তাঁবুঘর ও লন্ঠন
শ্যামাসঙ্গীত বাজছে ইঁটভাটার রাত্রিতে
একটা ভোজবাজির আদি ভূমিতে যেন অক্ষমতা
নরম হাওয়ায় ঘুড়ির আপোস স্মৃতিচিহ্নের প্রদীপ
সুয়োরানী আর দুয়োরানী সমুদ্র রেখায়, মুখে ডানা
পা বেয়ে নামা স্পাইরাল ঝুমুর কুয়াশায় উদিত সুয়োরানীর শরীরের ভাঁজে বৃষ্টি নামে ঝমাঝম
সুয়োরানী স্বপ্নহীন নগ্ন হয় চিরুনির ইন্তেকামে
এক ধাক্কায় নক্ষত্র ঠিকরে যায়, লাল আকাশ
ক্রুসেড আর অক্ষরেখা জল হয়ে গড়িয়ে নামে
সমাধানের খণ্ডচিত্র ইতস্তত নামতা পড়ছে
পায়ে পায়ে সন্ধ্যা নামে গ্রামের দৈনিকে
তিরতিরে আগুন ততক্ষণ ফানুসের মাঝ আকাশ
দুয়োরানী নদীতীরে হাঁটতে বের হয় যেন পয়গম্বর
মুখের রাংতায় নিশিডাক ফুটিয়ে তোলে
ভাঁজে ভাঁজে নিরাপদ রোদ নামিয়ে আনে
চিৎকারের মুখে গমগম করে ওঠে চারুজল
ব্যাপৃত দুপুর আখ্যানের শব্দহীন সোজা রেখা
রেখারা গন্ধমাখে আর টুকরো হয়ে যায়
রাতের ওপর দাউ দাউ বিছিয়ে দেওয়া পর্দা
বাতাসের পরিত্যক্ত ভয় আর পোড়া দাগ
পাহাড়ের আগামী, টুকরো মাপা বহতা শিখায়
শীতের ওয়ারড্রব, ঝাপসা ঠোঁট সমুজ্জ্বল
আকাশের গায়ে লেপ্টে থাকা ফ্লাইওভার
জ্যোৎস্না আঁকড়ে দুয়োরানীর গ্যাজলা ওঠা হাঁটু
মুখের হলফ হতে চুঁইয়ে নামা পানের রস
বৃষ্টির পশলা! পরিচয়হীন বাতাসের দৌড়
ফিরে আসছে দরজার কাছাকাছি মামুলি সে
ভাগীদার একলাই দৌড়ে সহযাত্রী বনে যাচ্ছে
ঘুরপাক খাচ্ছে বৃষ্টির জানালা, তাঁবু প্রাসাদ
সুয়োরানী আর দুয়োরানী চিঠি লিখছে আগুন জমিয়ে
বিষাক্ত নভতল আবার এসে চেপে বসে জঙ্ঘায়
সুয়োরানী মাভৈঃ মন্ত্রে কুঁচকে হাঁটে নিরন্তর
সুয়োরানীর শাড়ির ভাঁজে প্রতীক্ষার মফস্বল।
Posted in: January 2021, POETRY