রগদারি… : সিন্ধু সোম

আখেরে কথা হল কেন লিখব? ভোরের কম্বল তার ওম পেতে বসেছে যতদূর…তার চুঁইয়ে আসা কুঁড়েমিতে ভিজে যায় বাসা…হয়তো চড়ুইয়ের ছিল…ঘুলঘুলির ফ্যাকাশে বিবর্ণ মুখ দেখে আরও স্থবিরতা জড়িয়ে ধরে…ভারি ভারি লবজ ব্যবহার করে ফেলছি…ভারি লবজের পশ্চাতে লাঠি নিয়ে অর্কদাকে দৌড়তে দেখেছি বার কয়েক স্বপ্নে…কিন্তু এই টুপটুপালি শীত…আগে বাঁচি নাই…ভোরবেলা দরজা খুলি অতি সন্তর্পণে…শব্দ বাঁচিয়ে…সামনের ঘরে পম্পা হয়তো তখনই মালটাল খেয়ে উদ্দাম যৌনতা সেরে ঘুমিয়েছে…ওর বরটাকে খুব একটা পাত্তা দেই না…পম্পা আমার দরজার সামনে দিয়ে যাবার সময় যায় গান গাইতে গাইতে…যেন এক অবশিষ্ট বোধ সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছে…এক্ষেত্রে গান আর অর্গাজম শেষে হিসিটুকুর এসেন্স ক্রমে এক হতে থাকে…এর পরে উঠোন ঝাড় দিতে দিতে আমায় দেখবে আড়চোখে…তাকে কিছু বলতে ভয় করে…দুচোখের মাঝখানে চাঁদকাটা বাঁকা টিপ আঁকা…ঐ খানটুকুতে সব কুয়াশা জমাট বেঁধে কলাপাতা ভিজে আসে…ফোঁটা পড়ে টুপ…ফোঁটা পড়ে টাপ…পম্পার দৃষ্টির নাগাল শেষ হয় যেখানে সেখানে রাস্তা…রাস্তার শরীর ভিজে ভোরের আদলে দুটি ছাতারে পম্পার মন কাড়ে…আমি দরজায় উঁকি দেই…দেখি রাস্তার শেষে একমাত্র বেলগাছের নিচে আমার প্রেমিকা দাঁড়িয়ে আছে…আর মোহিত হয়ে তাকিয়ে আছে পম্পা…যেন পলক ফিরালে ভেঙে পড়বে ভোর…লাল সুতো অশ্বত্থ গাছ আর রাজবংশী হিসাবে পাওয়া মঙ্গলীয় গড়ন, সেই সব ভেঙে নিতে প্রবল অনিচ্ছা নিয়েও আমার পলক পড়ে…মনে হয়, ভোরবেলা পম্পা আদৌ কি উঠেছিল?

১৮ই জানুয়ারি

দালাল ভাম বুড়া ভাম…শুনে শুনে কান থেকে উৎকৃষ্ট দধিকর্মা চেটে খেয়ে নিলে কাকা…অবেলায় একখান দাড়িই না হয় পেকেছিল…তা বলে এত ছোঁকর ছোঁকর…শালা মাকে শুধাইলে মা তক বলে, গতরে কি এবার বিশল্যকরণী উইঠবেক? এসব ছেড়ে এসেছি মাস তিনেক হতে চলল…এখন সারারাতে ঘুম ভাঙে তিন চারবার…উঠতে আলস্যি লাগে…কখনও ঘুম ডাকে…কখনও পেট…এই দুস্তর টানাপোড়েনের মধ্যে আমি চমকে উঠি চালের আওয়াজে…সে আওয়াজ চলে বেড়ায় শরীর জুড়ে…ইরেকশান হয়…পেটের সমস্যায় ব্লো জবের স্বপ্ন দেখে সমস্ত বাবুরা…এসব ব্যক্তিগত গদ্য…ওয়ালে লিখে লাভ নাই…কাজ করতে করতে পাশের বাড়ির মেয়েটির গলায় আঙুল পড়ে…আঙুল নিজেকে ঘষে…বাড়ির চারপাশে কেঁদে বেড়ায় একটা হুলো…সারারাত…তারপরে থেমে যায় ভামে ও বেড়ালে…অতিরিক্ত স্যাঁতা রাত্রি দিন হয়ে আসে…ভোরের দরজা খুলি অতি সন্তর্পণে…আমার ডানপাশে রাজবংশী প্রতিবেশী…যদি ঘুমে ব্যাঘাত হয় চেঁচিয়ে লাট করে দেবে…পম্পার দেমাক খুব…বাড়িওয়ালা বলে…সমস্ত দরজায় ঝুলোঝুলি করে আতপ চালের গন্ধ…আমার গত রাতের বিছানা মনে পড়ে…একা একটা বিছানায় শহর শুয়ে আছে…নিস্তরঙ্গ…ন্যাংটো…

২০শে জানুয়ারি

কথা হচ্ছে, রাতের বিছানায় আজকাল একা লাগে কেন এত? উৎকণ্ঠায় পায়ের আওয়াজ শুনি…ধুপুর ধাপুর…নয়া ক্লান্তির রেশ…চোদিতার যতটা গতি পা আঁকড়ে ধরে…ঠিক তাই…চাকরি নাই…বাকরি নাই…যেই পোঁছে বলি কাঠবেকার…চা খেতে খেতে অধ্যাপকেদের হাসি ঠোঁট চলকে পড়ে…আমি রাজবংশীর গন্ধ খুঁজতে দরজাটা একটু সরাই…নিকষ হিম জালিকাটা বারান্দা পেরিয়ে এদিকে দৌড়ে আসে…চোখে মুখে নাকে…মাঝরাতে একা একটা বেনসন ধরাই…বিছানায় ফিরতে ভয় করে…এখানে, বারান্দায় আমার রাজত্ব…দু একটা ইঁদুরের গু পা দিয়ে সরিয়ে দেই…দামি ধোঁয়ার আড়ালে ড্রাইভারের রাজবংশী বউ—এই ফেটিশ ঢাকা পড়ে…ঘুম চটে খাক…পাশের বাড়ির জ্বেলে রাখা একটা কম পাওয়ারের আলো এসে বসে থাকে কুয়োতলায়, হিম মাখে গা কচলে…বুঝি এইবার জল ঢালল…অতর্কিতে বাইরে নয়, ভিতরের চামড়ায় শীতবোধ হয়…রাজত্ব ত্যাগ করে বিছানার বনবাসে নেমে আসি ফের…মনে হয়, এই দীর্ঘ চরাচর…পাশবালিশের থেকে আদতে নরম কোনো বুক, তার উপর যদি ধোঁয়া বেয়ে জোৎস্নার ভূত নেমে আসত! পম্পার গুনগুন আওয়াজ শোনা যায়…সত্যিই? মনে হল ভুল শুনলাম বুঝি! আবার পায়ের শব্দ! দৌড়ে বারান্দায় আসি…ঘর থেকে বারান্দায় আসার দরজাটা বিশ্রী খিস্তি করে…কই! কেউ নাই…চটজলদিতে কোটটা চাপানো হয় নাই…কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় ফিরি…প্রতিটা বিছানার মাঝখানটা কি এমনই ফাঁপা? এত খিদে? জন্মের খিদে চ্যাটচেটে হয়ে লেগে যেতে থাকে আমার অস্তিত্বের চারপাশে…একে একে কারো কারো নাম উচ্চারণ করি নিঃশব্দে…যদি কেউ এসে শোয়…এই তবে রাজত্বহীনতা? বিপ্লব ফাঁকি দিয়ে কোথায় লুকাল! এ সবের শেষে পদধ্বনির ওপারে কেউ নাই…এসবের শেষে সেই পদধ্বনি সীমার ওপারে…আখেরে কথা হল কেন লিখব…বরং আঙুলে নিজ শিকড় জড়িয়ে ধরে শুই… শহর থেকে দূরে…আমার থেকে দূরে…শুধু বালি বরাবর…যেখানে প্রত্যেকটা মুহূর্ত নিছক ক্ষয়াটে, অস্থায়ী…যেখানে প্রত্যেকটা মুহূর্ত নিছক দেহহীন যৌনতায় ভোগে…নিছক নিছকই…

নির্বিষে জানুয়ারি

Facebook Comments

Posted in: January 2021, PROSE

Tagged as: ,

Leave a Reply