নীলাদ্রি দেব-র কবিতা
শূন্য, শ্মশান, জেব্রাক্রসিং
এক.
আদি ও অনন্ত, খানা ও খন্দ সহ
যাবতীয় পথ বেঁকে যায় শ্মশানের দিকে
দূরের গাছগুলো নীল থেকে ধূসর
অসমাপ্ত অক্ষরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে
মাঝে যে স্টপেজ, যে সরাইখানা
তার নিভে আসা আলোয়
মুখের গড়ন দেখে নয় কেউ
কেউ হাসে
পথ, উপপথ, শাখাপথ চৌপথিতে মেশে
আগুন! আগুন জ্বলে ওঠে সমস্ত চতুর্ভুজে
দুই.
কোনো গাঢ় নীলফুল থেকে রস বেরিয়ে আসে
ছড়িয়ে যায় গ্লাসের দেহ বেয়ে
কি অন্ধকার স্পর্শ করছে তোমাকে!
ঠোঁটের ভাঁজ থেকে উথলে উঠছে ফেলে আসা সত্য
আদৌ কি সত্য বলে কিছু হয়, কুয়াশা…
তীব্র অস্বস্তির ভেতর মশারির ফুটো
অর্ধপাচ্য সংলাপ ছেকে তুলে রাখছি বিরতি
আর হাসির পরে হাসপাতাল আঁকছেন
ঈশ্বরের হাতকাটা ছায়া
তিন.
অবসর ভাঙছে
জানালার কাঁচে যতটা বাষ্প লেগে আছে
ততটাই বারুদ
কেউ দেখছে, দেখছে না
অথচ চরাচর জুড়ে শুধু ধুলো ওড়ে
কাকতাড়ুয়ার প্রেত অবসন্ন বিকেলে হামুখে
দেখে নেয় কালের খণ্ড, খণ্ডের দেহাতীত পাপ
হাই তুলে যে নাবিক হাপিত্যেশ করে
তার চোখের সামনেই উবে যায় শ্বাসবায়ু
হঠাৎই শ্লোকের শেষে শুরু হয় স্লোগান
চার.
প্রাণপাখি বড় লেন্সের সামনে আঁতকে ওঠে
শিকারীর দল গোপনে শিবির গড়ে তোলে
ঝোলানো বন্দুক থেকে খসে যাচ্ছে পরাগ
অস্ত থেকে উঠে বসা… মাত্র কয়েক হাত দূর
মৃত্যু একটি মুখরোচক চানাচুর
কিন্তু বৈধ পরিচয়পত্রের অভাবে
শেষ চুমুক আটকে আছে পোড়া কফিনের পাশে
পাঁচ.
অশ্লীল উত্তেজনা ছেড়ে
চলো এবার শ্মশানের কাছে যাই
নির্জন নদীকোলে কোথায় পথ হারিয়ে ফেলেছে বক
আমাদের শেষ আশ্রয়ের পাশে পলি, তুলসীর চারা
তবু সন্ধের আগে আজানের স্বর শোনা যায়
অদ্ভুত আবেশ এক
উত্তেজনা ঘিরে ধরে বুক, ধুক পুক
শিবিরের পাশে শীত এসে বসে
স্যালাইন খুলে হেঁটে যাই… শীততাপ নিয়ন্ত্রিত
আজন্ম ভেবেছি যাঁকে মৌলিক ঈশ্বর
তাঁর কোলে মাথা রাখি
দু’পাশে ভেঙে যায় অবৈধ চোরাস্রোত
উঠে আসি ছাই মেখে
আত্মার স্পর্শের পাশে নাভি গেঁথে রাখে শোক
Facebook Comments
Posted in: January 2021, POETRY