গল্পটা ছাইয়ের, এমন কী ডিমের কুসুমের : ইশরাত তানিয়া

জীবনে গতি-প্রকৃতির টানাপোড়েনে কখনও ভার হয় শরীরমন। বিশেষত বিষব্যথা ছাড়িয়ে তাপ যখন চড়তে থাকে। কুসুমের এমনই হয় জ্বরের ঘোরে। প্রকারন্তরে যা বেঘোরই। দাউ দাউ তাপ পা থেকে শরীর বেয়ে চাঁদির উপরে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে থাকে।
সমস্ত চরাচরে সেই সময় একটু একটু আলো ফোটে। চাঁদ উদ্যান আবাসিক এলাকার ঘরে শীতের প্রাদুর্ভাব। ঢোকার মুখেই পাতাহীন আমড়াভরা গাছ। এখানে ওখানে আরও দুটা আমড়া গাছ পাতা ঝরিয়ে ফলহীন দাঁড়িয়ে থাকলেও বারোমেসে গাছ এই একটাই। ডালে ডালে আমড়া নিয়ে সে কুয়াশামোড়া আকাশের দিকে তাকিয়ে। গাছের নিচে চটপটির গাড়ি। ফুলছাপ কাপড় দিয়ে ওপর দিকটা মোড়ানো।
পাশেই রঙহীন দোতলা দালানে চব্বিশটা ঘরের একটা ঘরে কুসুমের জ্বর আসে। গায়ের উপর ইঁদুরকাটা লাল পাতলা কম্বল শীতের কুয়াশায় কেমন ভেজা ভেজা। সেই ঠাণ্ডামারা কম্বলের তলে কুসুমের অপরূপ উষ্ণতার দিকে এগিয়ে যায় রুবেল মিয়া। কুসুমের মন আছে তদুপরি সেটা জটিল এবং গতিময়। ঘন ধোঁয়ার ভেতর দিয়েই তার অনুসরণ। সরু-সর্পিল পথ বেয়ে চওড়া রাজপথের ছাই ঠেলে সে বহুদূরের পথ। কোলাহল আরও স্পষ্ট হয়ে গেলে নারী-পুরুষের কান্নার বিলাপ আর্তনাদে পরিণত। বুড়িখালার স্বর ভেসে আসে- আল্লা তুমি কই আছো, আল্লা… রুবেল মিয়া নেমে গেলেও শুয়ে থাকে কুসুম। খাট বরাবর টেবিলের ওপর রাখা প্লাষ্টিকের বালতি, গামলা, আর গুঁড়া মশলাপাতির কৌটা। ব্লেন্ডারটা যত্ন করে মোছে রুবেল মিয়া। বিকাল তিনটায় এক থালা ভাত মুখে গুঁজেই চটপটি বেচতে লালমাটিয়া যাবে। এর আগে কেরোসিন কিনতে হবে। মুছতে মুছতেই বলে- মটর সিদ্দ করা লাগবো। আদা রসুন বেলেন্ডার কইরা রাইখো।
বাঁ কাত থেকে চিত হয় কুসুম। বিরক্তিতে মুখের ভেতরটা তেতো হয়ে যায়। শীতের শুরু থেকেই গ্যাসের থেমে থেমে চলা। কখনও থাকেই না। রাত বারোটায় গ্যাস এলে টিমটিমিয়ে চুলা জ্বলে। মাঝরাতে এতক্ষণ ধরে রান্না করা পোষায় না। ভাত দলা পাকায়। তরকারি আধসেদ্ধ থেকে যায়। তাই ভোরে বারোয়ারি পাকঘরে লাকড়ি জ্বেলে মাটির উনুনে রান্নাবাড়া শেষ করে কুসুম। চটপটির জন্য এক কেজি মটর সেদ্ধ বসায়। রান্নাঘর এক অন্ধকার গুহা। বাতিটার জোর নেই। লাকড়ির ধোঁয়ায় এনার্জি লাইট কালিতে ছেয়ে গেছে। ক্ষয়াটে আলো ঘন আঁধারের সাথে পাল্লা দিয়ে পারে না। বেরোনো পথ না পেয়ে দালানের ভেতর ঘুরপাক খায় ধোঁয়া। রাঁধতে গেলেই চোখ জ্বলে কুসুমের। ধোঁয়ার গন্ধে সারাদিন মাথা ধরে থাকে। লাকড়ি আর কাঠ পুড়িয়ে চটপটির জন্য এক কেজি মটর সেদ্ধ করা রীতিমতো জুলুম। ধোঁয়ায় নাস্তানাবুদ হয়ে চুলার মুখে লাকড়ির যোগান দিতে দিতে হাঁফ ধরে যায় কুসুমের।
চাঁদির উপরে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে থাকা তাপ মাথা থেকে উগড়ে দেয় ধোঁয়া আর ধোঁয়া। জ্বর আর ধোঁয়ার প্রাবল্যে কুসুমের মনের নিয়ন্ত্রণ ছুটে যায়। তখন দূরের অস্পষ্ট কোলাহল অনুসরণ। রক্ত আর মাংস পোড়া গন্ধ উড়ে যায় ছাইয়ের সাথে। দহন অন্তর্দহন আর অনুসরণ এ সবই হয় তাপমাত্রার তারতম্যে। ঘৃণা আর অনিচ্ছায়। দোতলা দালান জুড়ে ধোঁয়ার হালকা গন্ধ। সেই গন্ধ মিশে যায় কোনো এক শীতের ভোরে। কল্যাণপুরে নতুনবাজার বস্তির একচালা টিনের ঘরে মনির শুয়ে। ইঁদুরকাটা নীল পাতলা কম্বল শীতের কুয়াশায় কেমন ভেজা ভেজা। সেই ঠাণ্ডামারা কম্বলের তলে মনির অবশ্য কুসুমের শরীরের আভাস পায় না। কয়েকদিন ধরেই কুসুমের সাথে ঝগড়া। কাল রাতে চুলের মুঠি ধরে টেনে কয়েকটা চড় দিয়েছে মনির- কি মনে করোছ, কিছু বুঝি না? পতিদিন ডিম আসে কোই থেইক্যা? খানকি মাগী। ঘরসংসারে মন নাই। কথায় কথায় চোপা চালানি আইজ বাইর করুম। ডিমের ফুটানি ছুডামু! চোপা এক্কেরে ফাডাইয়্যা ফালামু। তালে বেতালে ডাল-ঘুঁটনীর বাড়ি পড়ে কুসুমের শরীরে। হাঁফানির রোগী দিনমজুর মনিরের শ্বাসটান ওঠে। অধিক উত্তেজনা সহ্য হয় না। রোজ রোজ বউয়ের ডিমের চালান দেয়া তার পক্ষে সম্ভব না অথচ ডিমের এমনই কুদরত যে কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে ফেটানো ডিম গরম তেলে ফুলে উঠলেই বাদশাহি খানার খুশবু ছড়িয়ে পড়ে। নতুনবাজার বস্তির বারোয়ারি রান্নাঘর পেরিয়ে কুসুমের ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাঁতে ভাব মুছে দিয়ে নাকের সামনে ঘুরপাক খায়। কুসুমের মন উতল হয়। পাতে ডিমভাজি আর ডাল হলে তার কিছু লাগে না। শরীরের মধ্যভাগ এতেই খুশিভরপুর!
শীতকালে ঝাল ঝাল হাঁসের ডিমভুনার জন্য কুসুমের মনে হাপিত্যেস। জিভ অসাড়। ডিমের গায়ে আলগাভাবে লেগে থাকা মশলা আর উপরে অনেকটা ধনে পাতার বাসনায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে কুসুম। সাদা ভাতের সাথে এই ডিমভুনার তুল্য কিছু খুঁজে পায় না। সেই না পাওয়ার অক্ষমতায় সদা বেজার হয়ে থাকে মুখ। রোজ পাতে ডিম চাই। ডিম না পেলেই কুসুম হতাশ হয়ে যায়। রাগ আর বিরক্তিতে মুখে থুথু জমে। নিক্ষিপ্ত হয় জানলা লাগোয়া ময়লার স্তুপের আশেপাশে আর মনে ধরে গার্লস স্কুলের সামনে চটপটিওয়ালাকে। দেখলেই কেঁপে ওঠে কুসুম। দেহমনে ধ্বস নামিয়ে কোমর-বুক দুলে ওঠে অজান্তেই। খোদার কসম! কাচের চুড়ির রিনিরিনিতে রুবেল মিয়ার পরাণপাখি ডানা ঝাপটায়। সামান্য খোঁজ লাগিয়েই সে কুসুমের ডিম কিংবা ডিমের কুসুম সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো জেনে যায়। ডিমের দৈনিক চাহিদার একজন যোগানদার পাওয়া গেলে কুসুমের মনে ধন্ধ জাগে। চটপটিওয়ালা নাকি প্রতিদিন চটপটিওয়ালার দেয়া ডিম- কে বা কী অধিক প্রিয় এই হিসাবের কোনো দিকদিশা করে উঠতে পারে না।
ভোরে কুসুম দুটা ডিম কষায়। লালচে রঙের বেশ বড় পোলট্রির ডিম। কড়াইয়ে তেল ঢেলে সে পেঁয়াজবাটা দেয়। রঙ সোনালি হলে আদা-রসুন বাটা দিয়ে মশলা কষায়। শুকনা মরিচ বাটায় ডিমে রঙ ধরে। অন্যদিন মশলা কষাতে কষাতে গুনগুন করে কুসুম… আলতারাঙা পায়ে আবার নূপুর পরেছে… বোরকা পরা মেয়ে পাগল করেছে… কিন্তু এ মুহূর্তে ঘৃণায় চিড়বিড় করে শরীরটা। রাতের এলোপাথাড়ি চড় থাপ্পড়ে কান টনটন করে কুসুমের। শুয়োরের বাচ্চা… বিড়বিড় করে কুসুম… ঠেঙ্গাইয়া হাড়গোড় ভাইঙ্গা দিছে। বাঁ হাতে কান চেপে ডান হাতে কড়াইয়ে সেদ্ধ ডিম ছাড়ে কুসুম। আগুনের জ্বাল বাড়ায়। কড়াই ছাপিয়ে আগুনের জিভ লকলকিয়ে ওঠে। অন্ধকারে ভাঁটার মতো জ্বলতে থাকে আগুনের চোখ।
পাশের ঘরের রাশিদা চুলার পাড়ে এগিয়ে আসে। কুসুম বলে- হারামজাদি, ন্যাংটা হইয়া ঘুরোছ ক্যান? রাশিদার পরনে সালওয়ার-কামিজ। গায়ে সোয়েটার আর ওড়না কিছু নেই। উত্তরে সে শুধু হাসে। প্যারাশুট নারকেল তেলের বোতল আগুনের পাশে ধরে। তাপে তেল গলে। রাশিদা ফিরে যায়। ডিমের ঝোল গাঢ় হয়ে আসে। গোপনে গরম ভাতের সাথে ডিমভুনা নেমে যায় কুসুমের খাদ্যনালী বেয়ে। মনির তখনও ঘুমে। টাকার ছোটব্যাগ বুকের মধ্যে গুঁজে বোরকা পরে কুসুম। একবারও পেছন না ফিরে বেরিয়ে যায়। গন্তব্য চাঁদ উদ্যান আবাসিক এলাকা।
কিন্তু পুলিশ জানায়- মশার কয়েল থেকে আগুন লেগেছে। ছাই হয়ে গেছে একচালা টিনের ঘরগুলো। ফায়ার সার্ভিস মতে- বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। এক ঘর থেকে আরেক ঘরে অবৈধ সংযোগে আগুন লেগেছে। কিন্তু বস্তির বাসিন্দারা বলে- এই আগুন পরিকল্পিতভাবে ধরানো হয়েছে। মাথায় লাল ফিতা বাঁধা চ্যাংড়া পোলাপানের কাজ। যারা প্রায়ই হকিস্টিক হাতে নিয়ে ঘোরাঘুরি করতো আর বস্তি থেকে সরে যাবার হুমকি দিতো। জমিটা সরকারী হলেও আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় কেউ গুরুত্বই দেয়নি। শুষ্ক উত্তুরে হাওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মিনিটের কাঁটা পাঁচবার ঘুরে আসার আগেই সব শেষ! ধোঁয়া আর সম্মিলিত চিৎকারে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাজারো বস্তিবাসী রাস্তায় নেমে আসে। তারা দৌড়ায় আর দৌড়ায়। নতুনবাজার থেকে কল্যাণপুরের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বিলাপে আর্তনাদে কাশির দমকে দৌড়ের গতি কমে আসে। কালো বাতাস ধাওয়া করলে ফের তাদের পায়ে গতি বাড়ে। এমন কেয়ামত বস্তিবাসী আগে দেখেনি। লাল কমলা হলুদের মিশেলে আগুন কেমন করে কালো রঙ চারদিকে ছড়িয়ে দেয় সেই মীমাংসা তারা খুঁজে পায় না।
ফায়ার সার্ভিসের দশটি ইউনিট এক ঘণ্টা ধরে পানি ছুঁড়ে দিলে আগুনদানবের গজরানি নিভে যায়। রুবেল মিয়াই খবরটা দেয় কুসুমকে। সকালে বেরিয়ে যাওয়া কুসুম চাঁদ উদ্যান থেকে আবার বস্তিতে আসে। পুরো বস্তি যেন বেমালুম আগুনের পেটে ঢুকে গেছে। টিনের ঘর আর কাঠ-বাঁশ-ত্রিপলের ঝুপড়িহীন জায়গাটা অসীম শূন্যে ভাসছে। চারদিকে ছাই উড়ছে। কাদাপানি আর ছাই লেপা কারও মুখ চেনার উপায় নেই। নিজেকেই চিনতে পারে না কুসুম। দক্ষিণ দিকের কোনো একটা ঘর থেকে আগুন লেগেছে। শুনে জান হিম হয়ে যায় কুসুমের। দশটা লাশের মধ্যে ছয়টা লাশ পুড়ে এমনই বিকৃত যে চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। লাশগুলোর দিকে হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকে কুসুম। পাশ থেকে বুড়িখালা ডুকরে ওঠে- আল্লা তুমি কই আছো, আল্লা? ছেড়ি বয়সে আইছিলাম, বুড়ি হইছি। এমুন আগুন দেহি নাই। পোড়া লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। লাশের গন্ধ কুসুমের চোখের পানি শুষে ফুসফুসের ভেতর সমস্তটা দখল করে নেয়। চারদিকে এতো বাতাস তবু শ্বাসরোধ হয়ে আসে কুসুমের।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আসে স্থানীয় সংসদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আর এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার। তাঁরা ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করে আর যা কিছু তাদের বক্তব্য মাইকে শতগুণ জোরালো হয়ে বহু বহুদূর অব্দি মানুষের কান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যতটুকু কুসুমের মাথায় ঢোকে সেটা অনেকটা এ রকম- আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীদের আপাতত চারটি স্কুলে এবং কলেজে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে… তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুসুম চেনে না, দুপুর তিনটায় সেখানে গিয়ে যিনি বসে পড়েন, ঢাকা উত্তরের বামদলীয় এক নেতা। বিকেলে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আসেন বিরোধী দলের প্রাক্তন সভাপতি। সন্ধ্যায় খিচুড়ি খাওয়া শুরু হয়। আরেকদিকে মাইকে এলাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে ডানদলীয় উপনেতা ঘোষণা দেয়- কারা সারা বছর পাশে থাকে মনে রাখবেন… কারা শুধু আগুন লাগলে আসে চিনে রাখবেন… আমরা পাশে থাকল বুঝবেন আর কোনো বিপদ নাই… রাজনৈতিক আলুপোড়া খেতে বিভিন্ন দলের ছত্রচ্ছায়ার সংগঠনের লোকজন এসে ভিড় করে। সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়। নামের তালিকা তৈরি করে। সাদা কাগজে সর্বস্ব খোয়ানো বস্তিবাসীদের নাম ফুটে ওঠে। ভোটের হিসাব বস্তিবাসী বোঝে কিন্তু কিছু বলে না। বিধ্বংসী আগুনে সব হারিয়ে মৌনতায় ওরা ছাই সরায়। হারানো জিনিস খোঁজে। কুসুম ইতস্ততভাবে এদিক সেদিক খুঁজে ফেরে মনিরকে। দশটি পোড়া লাশ নিয়ে পুলিশের গাড়ির চাকা ঘোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের দিকে।
টিভি ক্যামেরার সামনে একজন নারী রিপোর্টার মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে- আগুনে বস্তির শতাধিক ঘর ভস্মীভূত। ধারণা করা হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে দায়ী চুলার আগুন… এটুকু শুনেই কুসুমের আত্মায় হাতির পাড়া পড়ে। নাকে মুখে হু হু করে ধোঁয়া ঢুকে যায় মাথায়। বহুক্ষণ আগে হজম হয়ে যাওয়া ডিমকষা নাড়িভুঁড়ি ঠেলে গলা অব্দি উঠে আসে। ঢোঁক গেলে কুসুম। মুখে টকস্বাদ ছড়িয়ে পড়লে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে খোদাকে স্মরণ করে।
চিন্তার সুতো ছিঁড়ে অন্যমনস্ক কুসুম পূর্বস্থানে ফিরে আসে। ফুটন্ত পানির ভেতর মটরগুলো দাপিয়ে সাঁতরায়। জ্বর বাড়ে কুসুমের। কেরোসিন নিয়ে ঘরে ফেরে রুবেল মিয়া। গ্যাস নেই তাই সস্তা লাল ফ্লাস্কে দুইকাপ চা আর বনরুটি নিয়ে এসেছে। বনরুটির ভেতর মোরব্বার টুকরোর ঝিলিক। এতো কাছে রুবেল মিয়া। কাপে চা ঢালছে অথচ কুসুম কিছুই দেখতে পায় না। এমন কী লাগোয়া পাতাহীন কিন্তু ফলভরা আমড়া গাছটাও না।
চারপাশে ছাইলেপা মুখের আনাগোনা। হাঁটুতে চিবুক ঠেকিয়ে বসে থাকে কুসুম। অচঞ্চল, স্থির। যেদিকেই চোখ ফেরায় পোড়া জনশূন্য এক বস্তি বিষণ্ণতায় তার দিকে তাকিয়ে।

Facebook Comments

Leave a Reply