বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়-র কবিতা
(১)
কড়াইতে পালং শাক দিতেই কেমন
সবুজের ভারি ভরকম এক ভূকম্প উঠলো
আবার নুনের মুখে ফস ক’রে জল ছেড়ে দিলো
মিষ্টি দিতেই হলো পায়ে পায়ে বেড়ালছানাটি
খুন্তির গায়ে গায়ে ছাড়েই না – কড়াই ছাড়ে না
সেইদিন স্মৃতিদিদি ওরকম ফোঁস ক’রে উঠে
হঠাৎ চোখের জলে দুকূল ভাসিয়ে ফেলেছিলো
হেঁশেলের ওইপাশে তার ভাইবউ ডাক দিলো
বাবার হাতের দুটো শিরা ফোলা বাজারের ব্যাগে
ও মেসোমশাই! ব’লে তুমি আর হাঁপাতে হাঁপাতে
ব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলে আসো না গেটের সামনেতে
স্থলপদ্মের গাছ হারিয়েছে বাগানের ম্যাপ
সুদূরে কিশোর ছিলে, আজ বড় সুদূর হয়েছো
সেইবার শোনা গেছে খেয়ে ন্যাপকিনে মুখ মোছো
আমি তবু ভৃঙ্গরাজ অশ্বগন্ধা কালমেঘের দেশে
একটা রেসিপি চাই তেলচিটে প্রদীপের কাছে
কড়াইতে পালং যেমন
মাখম হয়েছে
শেষ খেপে আদা মশলার
অপেক্ষায় আছে
(২)
এইবার আয় তোরে কামিখ্যের ভেড়া ক’রে রাখি
হাতের চিরুনি দিই তোর যত বসন্তের রোমে
ত্বকের প্রান্তিক যারা, যারা কভু পায় নাই চুমো
তাদের বার্তা যাক শিরশিরে স্নায়ুর কবলে
সমস্ত উৎকণ্ঠ হোক, সে সমগ্র উঠুক রোঁয়ায়
পাঁচটি লালের চুড়োওলা পুং-কেশরের রাজা
গলা ফোলা থরোথরো লাল ঝুঁটো মোরগ আমার
একবার আয় তোরে সবিস্তারে বিছাই খামারে
চালাই নতুন কেনা তোর বুকে ঘাসের রোলার
ঢেঁকির ভিতর কুটি ছাড়ায়ে দিই অবাধ্য খোলস
জলেতে ফেনায়ে দিয়ে মদ করে জমাই রেকাবে
বসন্তের শ্লথগতি কচ্ছপ ধীরে ধীরে যাক
বিকেলের লাল সিগ্ন্যাল দেখে চড়ি তার প’রে
নিজের সমস্ত দিয়ে প্রস্তুত করি সেই আঠা
যা তোকে আটকে রাখে কছুয়ার নক্সাদার পিঠে
কুশের ঘাসের পরে পেতে দিয়ে বিছানা তুয়ার
চিৎ হয়ে দেখি যত আলপিন তারাদের গাথা
কামার্ত যে কালপুরুষ উজ্জ্বল আকাশের গায়ে
মেরোপের পাণিপ্রার্থী, ঢেউএর উপর হাঁটতে পারা
ওরিয়ন, কবে যেন মেরোপকে কাছে পেতে গিয়ে
অন্ধ হয়ে পড়ে থাকে, কৃত্তিকারা অদূরেই জাগে
প্রেমের ও অপ্রেমের ব্যক্তিগত নিভৃত স্মৃতিতে
(৩)
আমার পাখি আটকে গেছে
বিশাল হাওয়ায়,
তোমার ছড়ানো তারে, পাল দেওয়া পাখি
হোমওয়র্কের শেষে, স্লেট রঙা আকাশের দেশে
একটু খেলতে গিয়ে ওরে সে আমার
পাখি আটকে গেছে
পাখি আটকে গেছে রে আমার
ঘুমের চৌহদ্দী জুড়ে নিঝুমের দারোয়ান ঝিমোয় পাথারে
আজ ডানা খুলে দেবে কে আমায়?
কে আমায়? যেতে দেবে? পিলু রাগ আকাশে ছড়িয়ে
তোমার তারের কাছে গেছে সে জড়িয়ে – ও আমার
পাখি আটকে গেছে
দাও তবে সে প্রশ্রয়
যদি খুলে দিতে গিয়ে কিছু আরো কাটা যায় – যা তোমার মাংসের মতন
তবু দাও, যদি বুকে ঝটপট খুঁজে থাকো, তবু দাও খুলে
গিঁটে গিঁট বেঁধে যায়, এ জটিল মানুষেরই সুতো, পাখা দুটো
কিচ্ছু না ব’লে, কোন কৃতজ্ঞতার –
উত্তর খালি রেখে বারান্দায় থাকো রে আমার
ডানায় আকাশ মেখে দূরে গেলে দিকশূন্য দূরে
বাতায়নই মনে হবে ঘর
রে আমার
পাখি আটকে গেছে
Posted in: January 2021 - Cover Story, POETRY