অর্ক মন্ডল-র কবিতা
১।
একটা সন্ধিক্ষণ।
একটা অল্প আলোর আবঝা সময়।
এই অল্প আলোয়
আমি পাশের মানুষটাকে
ঠাওর করতে পারছি কিন্তু
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না।
পাশের মানুষটাও আমাকে
ঠাওর করতে পারছে কিন্তু
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না।
একটা সন্ধিক্ষণ।
একটা আবঝা সময়।
এই অল্প আলোর চৌহদ্দির ঠিক
বাইরে থেকেই শুরু হয়েছে সেই রাস্তাটা,
যে রাস্তায় কাল বহু মানুষ হাঁটছিল।
যে রাস্তায় আজ বহু মানুষ বসে আছে।
কিন্তু পাশাপাশি আমরা দুজন
দুজনকে ঠিক চিনতে পারছি না।
আমরা কি পরস্পর মিলতে পারব?
একটা সন্ধিক্ষণ।
একটা আবঝা সময়।
এটা বিহানবেলা? না সায়ংকাল?
২।
এই অপার ইউনিভার্সে দুর্নীতি কোথাও থাকে না, থাকে শুধু মানুষেরই খুব পাশাপাশি। তবু
দুর্নীতি সঠিক মানুষ নয়, জানি। তবে
দুর্নীতি মানুষকে গ্রাস করে।
মানুষ গ্রস্ত হলে, পরস্পর চোরাচোখে চায়।
অথবা ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকে
পরস্পরের দিকে। কিংবা, নকল ঝর্ণার মত
এই নিয়ে হাসাহাসি করে।
তবু এই শেষ কথা নয়।
আসল কথাটা হল মাথায় ও কলেবরে
দুর্নীতি মানুষকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
মানুষকে ডিঙিয়ে সে আকাশবর্তী।
দুর্নীতির আবিল ছায়ায়
শিশুরা ছুটছে।
বালিকার বিনুনি দুলছে।
দুর্নীতির আবিল ছায়ার নিচে
মানুষের স্বাস্থ্য
মানুষের খাদ্য
মানুষের শিক্ষা
মানুষের শ্রম
মানুষের বাস
মানুষের শ্বাস
মানুষের ঘুম
মানুষের স্বপ্ন
মানুষের প্রাণ
সমস্ত সমস্ত সব..
ভূপৃষ্ঠ ছেড়ে দূর মহাকাশে
ভেসে যাচ্ছে দুর্নীতির টুংটাং।
৩।
ওগো পাগল সংসারী,
নীরবে তোমার কথা শুনতে শুনতে
ঝুলে পড়েছিলাম এক শূণ্য হ্যাঙ্গারে!
এখন হাওয়ার ছুরি এদিকে-ওদিকে..
ভোমরার মতো আসে-যায়, ট্যাক্সি ও জনতা।
আমি অন্যমনস্ক চোখে দেখি
তোমার নিরন্তর বকবক
পৃথিবীর প্লাস্টিক ফুঁড়ে
দুপুর সূর্যের দিকে ভেসে চলে।
কীরকম ছায়া-ছায়া নামে।
একটা মৃগেল মাছ
স্নায়ুপুকুরের জলে ঘাই তুলে
নিচে নেমে গেলো।
ছোট ছোট তরঙ্গে ফুলে উঠছে
ধূসর ময়দানের পেট।
কিন্তু তুমি অতিবিশ্বাসী।
তোমার সাংসারিক থিওরিসকল,
গ্রহদের জায়গা বদলে দিতে পারে;
মনের মিস্ট্রি-সেল্ফে রেখে আসে
জীবনের রঙিন মোড়ক।
অতি উৎসাহে তুমি
হাত ধরে টান দাও
হ্যাপেনিং নিউমার্কেটে-
“চলো,চলো!”
আমি বিরক্ত চোখে দেখলাম,
সমস্ত গলি-ঘুঁচি,
তুমি হাতের রেখার মত
জেনে বসে আছো।
Facebook Comments
Posted in: January 2021, POETRY