অমিতাভ প্রহরাজ-এর দীর্ঘকবিতা

একা কী?

কাঠের তীব্র ক্ষমতা হিমচ্ছন্ন বুকে আছে
অগাধ আবহাওয়ায় দুলছে না, খালি ক্ষুন্ন হয়েছে
তার কিছু দুর ছমছমে বন্ধুর চোখ নিয়ে
আমি আছি তাকে দেখানোর কলি যেন
ছন্নছাড়া উলের ফুলডোর ফুটেছে ঘন হয়ে

দেওয়ালের নিজের ঘরে আমি থাকি
ছাদের নিজের ঘরে আমি ঢুকে ভীষণ দাঁড়াই
মেঝের নিজের ঘরে আমি পা দিই নগ্নে নরম
পোষাক, অল্প আসবাব, ছোটো কোনে ভূতের সিনেমা জমাট করে বানানো এক টিভি
সর্বত্র প্রচণ্ড উত্তেজ, সতেজ গোলাপ কেটে
সর্বত্র ভীষণ লালাকে ডাকছে বুকফাটা কান্নায় সন্দেহাতীত
স্মৃতি থেকে দুধের গন্ধদাগ
ঘর কেটে ফেলে দিচ্ছে কোথায়
আমি দু এক অটোর শব্দ দানা যায় রাত্রিকান্তারে
পর্দা সমেত ছতলার বারান্দাটি খুলে এনে জড়িয়ে ধরেছি খুব

নিজের ভেতর দিয়ে নিজেরই আরো দানা যায় এই ল্যাম্পের
নিজের ঘরে আমি ঢুকেছি যখন দেখি থ্রিলারের ভেতর দিয়ে
কি দ্রুত হেঁটে আসছে যুবক যেন একদিন দারুণ শেষ হবে
চয়নিকা আসবে তাহার, নেমে আসবে দীর্ঘ বিঃশ্বাসে…

ঘরের বাড়িতে আমি একদিন নিশ্চয়ই যাবো
বলো,করো করো থরোথর করা কোনো করুণ নি:শ্বাসে
একদিন গোপনীয়তার বুক ফেটে দেখা যাবে প্রশান্ত উড়েছেন ওনার জোনাকী

আগে ও পিছে স্তিমিত সবরমতী
ভ্রমণে গিয়ে তো আমি এক আশ্চর্য কূয়োর সাক্ষাৎ পেয়েছি
হলুদ পাথরকুচি ও সঙ্গে আবছা কাঁটার ঝোপ
পাশে উটের চোয়াল নড়ছে, দূরে অল্প ময়ূর কন্টক কন্টক
জাতীয় আওয়াজে কেকাকী জানায় পাশের কেকাগ্র ময়ূরী

ধুলো ছিলো ঢিমে বাতাসের রঙ, রোদে ছিলো
ঘষে যাওয়া ভিম ভিম সাবানের ঘ্রাণ
এমন মল্লিকা যাতে অনায়াসে ভিগি ভিগি জন্মে যেতে পারে
এক এক পায়ের ছাপের আগে……
স্তিমিত সমুদ্রের দিকে যাওয়া ধীরস্বাদ নদী
যেখানে ধীবর ঘটে না, ঘটে চড়া রোদ, আর মাটি
আহত ফাটল নিজের পায়ের কাঁধে তুলে হেঁটে
দেখি এক আশ্চর্য কূয়োর পাশে ঝুপো ঝুপো কাঁটা
ধূসর ছাতার লাফিয়ে উঠেছে আমিও চমকে মায়া হয়ে গেছি হঠাৎ রোদের

কেউ জানেনা রোদের ভেতর গাঢ় নীল আছে, আমিও না
চমকে হয়েছি মায়া স্তিমিত নদীর, ভ্রুহীনা মাটির
ঠিক বুকে ছিলো এক আশ্চর্য কূয়ো
এরই মধ্যে নাকি হঠাৎ একদিন আমি পড়ে যাবো
আমার নীচুতে কিছু থাকবে না কূয়োটির প্রণম্য পা দুখানি ছাড়া

আমি ভুল বুকে ছিলাম বোধহয়,
যখন অনেক চুড়ির এক
ভিন্ন ভাষাময়ী বৃদ্ধা খনখনিয়ে এমনই অভিশাপ দিয়েছে আমাকে
কেকাগ্র মইয়ূর ছিলো, উটের চোয়াল কাঁটাকে দমনে দুলছিলো

কাঠের তীব্র ক্ষমতা আধখাওয়াবার বর্ষার
অগাধ আবহাওয়ায় দুলছে না, খালি ক্ষুন্ন হয়েছে
তার কিছু দুর স্যাঁতস্যাঁতে বন্ধুর চোখ নিয়ে
আমি আছি তাকে দেখানোর কলি যেন
ছন্নছাড়া ছাতা ঘন হয়ে ফুটেছে

এই যে এসেছে দিন আমি খুব বুঝি ভয়ে বয়ে যাই
এই যে এসেছে সন্ধ্যা
কেন সে অযথা তোমার হিমের কথা বলে
এই যে এসেছে একটু রাতের হওয়া
কেন কেন বলে তোমার স্নেহের শীতল তলায়
দাঁড়াতে কেন বলে, কেন নাহাওয়ায় বসে থাকা আলোর কথা বলে
অযথা কেন জানায় আমাকে বিশাল শীতের ওজন বইতে পারেনা বাতাস
সে যে নাশিদা খাতুনের মতো বড়ো রুগ্ন ও ভীরু তাই নাশিদা খাতুনের পানিগুলি
বাতাসের জামা পরে শীতের ওজনের নীচে স্থির থেকে স্থানু হয়ে আছে
বড্ড অযথা আমার, বড্ড অথৈ আমি ভুলে যেতে গিয়ে
বারবার তোমাকে ভোলার কথা ভুলে যাই আর কি ভুলে গেছি আমি

সে কথা বিশাল স্নেহের বৃদ্ধার কথা বলে কেন
চলেছে নদীতে নদীর জল একা একা, চলেছে মানুষের ভেতর দিয়ে আগের মানুষ আরো একা
আমি দূর থেকে দূরে থাকি, থাকবোই ভেবেছি বিছানায়
বহুদূরে থাকি কখনো কি ছিলো স্নেহল মহুল কোনো কোল ছিলো কি
কখনো, কেন বারবার বলে ভুলে গেছি কি ছিলো ভোলার কথা
আর্তনাদ নেই কেন বারবার নিঃশব্দ জানাচ্ছে আমাকে
হে অপূর্ণ করুণ চীৎকার আমার
আমাকে ডাকো কেন ওগো
অসম্ভব ভেঙে ওঠা চীৎকার
আমাকে করুণ করো, করো বললাম তো ভীষণ করুণ করে

কেন ডাকো খালি শুধুশুধু
হে ভূতের বাড়িগো আমার তুমি কার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছো
কেউ আসবে না কোনোদিন, কোনোদিন, ভেতরে তুমিও আসবে না, কেউ
হে ভূতের বাড়িগো আমি যে কি ভীষণ কাঁপি এই স্থির করে ফেলা মানুষের দেশে

[এই লেখায় অরূপরতন ঘোষের লেখার কিছু বাক্য দুমড়ে মুচড়ে ব্যবহার করা আছে কয়েক জায়গায়]

Facebook Comments

Leave a Reply