রেজিস বনভিসিনো : দেয়াল পেরিয়ে নতুন বাস্তবের খোঁজ – রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়
রেজিস বনভিসিনো [১] : ব্রাজিলের পর্তুগিজ ভাষার অন্যতম প্রধান নির্মাণবাদী (constructivist) কবি, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক। সেই লাতিন অমেরিকা যার magic realism ভারতীয় সাহিত্যে জাদু বাস্তবতার তরঙ্গ তোলে। সেই লাতিন আমেরিকার অন্তর্গত বহুসংস্কৃতির সম্মেলনে গড়ে ওঠা মহানগর সাও পাওলোর বাসিন্দা বনভিসিনো─ তাঁর নতুন কাব্যগ্রন্থ Beyond the Wall [২]-এ ব্রাজিলের তীব্র বাস্তবতার কথা লিখছেন─ “Under the veneer of its vivacity, Brazil is violent, a vile viper playing a violet viola”; বলছেন এক নতুন ইউটোপিয়ার (A Nova Utopia) কথা যেখানে “You can be Black without being White, White without being Black.” ইউরোপীয় পরাবাস্তবতার (surrealism) উল্টোপিঠে বনভিসিনোর এই নব্য-বাস্তববাদ (neorealism) বাস্তবকে দেখার এক বহুমাত্রিক প্রসেস─ জীবন ও অস্তিত্ত্বের সঙ্গে বস্তুগত জগতের ডায়নামিক অলৌকিক সম্পর্কগুলোর মুহূর্তের সচেতনতা─ দিক নির্দেশ করে সেই বাস্তবের অবাস্তবতা।
বনভিসিনো তাঁর কবিতায় ব্রাজিলের অবস্থান নির্ণয় করছেন─ “Brazil is located on the southern tears of the Americas” উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ভৌগলিক বিভাজনের ধারণায় ব্যবহৃত Tears শব্দটির ভিন্ন অর্থে ব্যবহার, যার ভেতর আত্মগোপন করে আছে বনভিসিনোর Poema Negativo–র ঋণাত্মক উচ্চারণ। ঋ ক্রিয়ামূলের বংশজাত এই ‘ঋণাত্মক’ অস্তিত্বের গতিশীলতার কথা বলে─ এই গতিশীলতাই সত্য। সাধারণ মানুষের ধারণার ব্রাজিল কবির চেতনালোয় হয়ে উঠেছে আমেরিকার অশ্রু, ব্রাজিলের সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার সম্পর্কের ইঙ্গিত। কারণ কবি মনে করেন কবিতা “breathes through a critical apparatus.” এই “critical apparatus” বনভিসিনোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ কবির ভাবনা “Art cannot exist without a critical spirit”[৩] কবির এই “critical spirit”-এরই প্রকাশ ২০১৩ সালে প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থের Estado Crítico [৪] (Critical State) নামকবিতায়─
It’s the sarcophagus of a piranha-wench
It’s a near-sighted Tarzan
Scanning a blue sky
It’s Silêncio Nightclub
এ যেন জীবনকে দেখা আলোকবিজ্ঞানের সেই critical angle থেকে, যেখানে চিন্তা ও চেতনার বিভিন্ন মাধ্যমের স্তর পেরোবার সময় ব্রাজিলের সামাজিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও আদর্শগত প্রেক্ষাপটে কবির দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি অতিক্রম করে যায় আপতিত কোণের লিমিট; ফলত কবির চেতনালোর প্রতিসরণের পরিবর্তে ঘটে যায় পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন। আর আমরা পাই ব্রাজিলের নতুন সংজ্ঞা “Definition of Brazil” [৫]
তো সেই ব্রাজিল, লাতিন আমেরিকার দেশ, যার সরকারি ভাষা পর্তুগিজ হলেও বনভিসিনোর pluralism একচেটিয়া সংস্কৃতি-একত্রিকরণ অস্বীকার ক’রে এবং বিশ্বের বিদ্যমান বৈচিত্র্য স্বীকার ক’রে মানুষের সামগ্রিক সাম্যের ধারণায় উচ্চারণ করে “Brazil speaks Lebanese, Portuguese, Japanese, Guarnaríse, Tupiese, Inglese… Brazil was colonized by Indians who turned the Portuguese into natives”─ যেখানে বেজে উঠছে বনভিসিনোর রাজনৈতিক শ্লেষ, কবিতার আয়রনি, অস্বচ্ছতা ও মৌলিক সহজপাঠ্যতার ভেতর দোদুল্যমান এক অস্তিত্ব। ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগাল থেকে আগত পর্তুগিজ অভিযাত্রী ব্রাজিলে তৈরি করেছিল পর্তুগিজ উপনিবেশ যার সময়সীমা প্রায় তিনশো বছর। ব্রাজিলে বসবাসকারী প্রস্তর যুগের আদিবাসী তুপি, গুয়ারানি ইত্যাদি বিভিন্ন গোত্রের ও ভিন্ন ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর দেশীয় মানুষ যারা কেবল ব্রাজিল নয়, ছড়িয়ে আছে আমেরিকার সর্বত্র, তারাই Indian [৬] নামে পরিচিত, যা indigenous এর সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পর্তুগিজ ভাষায় Terra do Brasil (land of Brazil) থেকে ছোট করে ব্রাজিল নামে ডাকা হয়। ব্রাজিলের বিখ্যাত দেশজ গাছ Brazilwood থেকে উৎপন্ন লাল রঞ্জন একসময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। পর্তুগিজ ভাষায় একে বলে pau-brasil যার বুৎপত্তিগত উৎস পর্তুগিজ brasa (ember)─ এই জ্বলন্ত কয়লার মতোই লাল বনভিসিনোর শব্দগুচ্ছ, যাকে ব্যবহার করেছেন ব্রাজিলের সংজ্ঞা নির্ণয়ে─ “The official religion of Brazil is not just samba but macumba and umbanda, tarantella and churrasco/ Candomblé is the Brazil wood of world philosophy” যেখানে উচ্চারিত হয়েছে ব্রাজিলের মৌলিক দর্শন : syncretism─ বিভিন্ন দার্শনিক ও ধর্মীয় মতবাদকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস। মাকুম্বা, উম্বান্ডা, ক্যান্ডোম্ব্লে ব্রাজিলের বিভিন্ন আদিবাসীদের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সাম্বা, তারেন্টেলা ও চুরাস্কো নৃত্য তাদের ঐতিহ্য। ক্যান্ডোম্ব্লে ধর্মবিশ্বাসের শিকড়ে আছে হিসপ্যানিক, আফ্রিকার দাস সম্প্রদায় ও ব্রাজিলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর ধর্ম, সমাজ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও সংস্কারের মেলবন্ধন, যা গড়ে ওঠে প্রধানত আমেরিকার দাসপ্রথার প্রেক্ষাপটে, যখন ব্রাজিল ও আফ্রিকার দাসদের জোর করে ক্যাথলিক ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। বনভিসিনো সেই ক্যান্ডোম্ব্লে দর্শনের কথা বলছেন যা দাসত্ব, শোষণ, নির্যাতন ও বঞ্চনার প্রতিবাদে তৈরি করেছিল এক সমান্তরাল বিশ্ব, যেখানে বিকশিত তাদের নিজস্ব ভূমিজ সংস্কৃতি ও বিশ্বাস। আভাস দিয়েছেন সেই পিন্দোরামা (Pindorama) শব্দটির─ “Brazil is a land of palms and psalms”─ আদিবাসী গুয়ারানি ভাষায় ব্রাজিলের নাম পিন্দোরামা, যার অর্থ ‘তাল গাছের ভূমি’। আধুনিকতার এলিটিস্ট সংস্কৃতি ও ভেদমূলক বিচারের বিপরীতে বর্তমানের উত্তরাধুনিক অভেদ সন্ধান। বনভিসিনোর কবিতা বর্তমান মুহূর্তের, বাস্তবের গীতলতা, সেই বাস্তব যেখানে আমাদের বাস তার সমস্ত ভালো-মন্দ নিয়ে, তার সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে, তার প্রেম-অপ্রেম, সুখ, দুঃখ, আনন্দ ও ভালোবাসা নিয়ে যার প্রতিধ্বনি শুনি তাঁর কবিতা “Definition of Brazil”-এর শেষ পঙ্ক্তিতে─ “On Ipanema beach, at the very moment when dusk turns to night, you can hear Orpheus singing for Eurydice; he sings an elegy called “Brazil”
বনভিসিনোর কাব্যগ্রন্থ Beyond the Wall –এর কমেন্টারিতে মার্কিন কবি চার্লস বার্ন্সটাইন বলছেন─”Bonvicino is to twenty-first century São Paulo what Charles Baudelaire was to nineteenth-century Paris: the poet as flaneur wandering through the cultural detritus of our time with mordant gaze and dark wit.” [৭] বনভিসিনোর Imagery বা চিত্রকল্প কেবল রূপকে বর্ণনা করে না, বরং তা আবেগসংপৃক্ত গূঢ়তর ব্যঞ্জনায় উত্তীর্ণ হয়ে যায়, চিত্র হয়ে ওঠে চিত্রকল্প যেমন এলিয়েট বলেছিলেন বোদলেয়ার সম্পর্কে তাঁর প্রবন্ধে, “It is not merely in the use of imagery of common life, not merely in the use of imagery of the sordid life of a great metropolis, but in the elevation of such imagery to the first intensity— presenting it as it is, and yet making it represent something much more than itself” [৮] বনভিসিনোর চিত্রকল্প স্বীকার করে চিত্রের অস্তিত্ব আর তারই সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণে গড়ে ওঠে ভাষা্র এক নতুন অবস্থান। এই কাব্যগ্রন্থের “Image Impossible” কবিতাটি সেই চিহ্ন বহন করছে─ কবির গাড়ি আটকে রাস্তার সিগন্যালে। সাও পাওলো মহানগরের প্রেক্ষাপটে ফুটপাতে এক ভিখিরির সংসার─ চোখের দর্শনজাত ক্যামেরায় তৈরি একটি ক্ষণিক মুহূর্ত─ ফরাসি ফিল্মদুনিয়ায় ব্যবহৃত সেই caméra-stylo-র ধারণা, যাকে ক্যামেরা পেন বলেছিলেন ফরাসি চিত্র পরিচালক আলেকজান্ডার অ্যাস্ত্রুক─ যেখানে সিনেমা যেন তার আলোর খেলা দিয়ে লিখে রাখে অডিও-ভিস্যুয়াল ভাষার একটি রূপ। তেমনি বনভিসিনো তাঁর চেতনার সম্প্রসারণে মিতবাক উচ্চারণে মনক্যামেরায় গৃহীত মুহূর্তের দৃশ্যটিকে এঁকে রাখেন অনন্তের ক্যানভাসে। অভিজ্ঞতার পরিসরের বাইরে থাকা অন্ধকার─ ওই মুহূর্তের যন্ত্রণাকর বাস্তব অনুভব সময়সাক্ষী এক negetive reality─ বনভিসিনোর যতিহীন, বিষয়হীন, আবেগহীন ব্যবহারে শুধুমাত্র কিছু সংকেতের মাধ্যমে নির্মিত হয়ে ওঠে এক অসম্ভব কল্পচিত্র─ বনভিসিনোর এই নির্মাণবাদ সম্পর্কে ব্রাজিলের সাহিত্যতত্ত্বের অধ্যাপক অ্যালসির পেকোরা(Antonio Alcir Bernárdez Pécora) বলছেন─ “Régis develops the idea that all visible misery is reconstructed in our minds like a script of a monstrous reality show, which poems barely hint the existence.” [৯] “Image Impossible” যেন সেই রুশী চিত্রপরিচালক ও তত্ত্ববিদ সের্গেই আইজেনস্টাইনের “intellectual montage” যেখানে contrast আর juxtaposition; যার অবস্থান আইনস্টাইনের space-time ধারণায়, সিনেমা জগতের “fourth dimesion” যেখানে মিউজিক্যাল ওভারটোনের ‘I hear’ এবং ভিস্যুয়াল ওভারটোনের ‘I see’ লীন হয়ে যায় intellectual মন্তাজের নতুন সূত্র ‘I feel’-এ। তাই দেখি “Image Impossible”-এ দুটো পাশাপাশি “Impossible’ ইমেজের ভেতর সংঘর্ষ অনুভূত হয়। দুটি পরস্পর সংলগ্ন দৃশ্যে রচিত অর্থ এক দ্বান্দ্বিক ক্রি্যায় উন্মোচন করে নতুন একটি তৃতীয় অর্থ। এই দুয়ের সমন্বয়ে বিযুক্তির সূত্রে আসল ভাবটিকে প্রতিষ্ঠিত করে।
বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লবের পর অ্যাভাঁ-গার্দীয় ভাস্কর ও ফটোগ্রাফার আলেকজান্ডার রোডচেঙ্কো এবং চিত্রশিল্পী ও স্থপতি ভ্লাদিমির তাতলিনের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল নির্মাণবাদী আন্দোলন─ আধুনিক শিল্পনগর ও নাগরিক জীবনের বুর্জোয়া জীবনচর্চা, যন্ত্রনাক্লিষ্ট ও ক্লান্তিকর অস্তিত্বের প্রেক্ষাপটে এক কাব্যশৈলীর নতুন দিগদর্শন─ যার মূলে ছিল আধুনিক জীবনের অভিজ্ঞতা, তার গতিশীলতা, সময় ও পরিসরের বিভ্রান্তিগুলো, দ্বন্দ্বগুলোর উন্মোচনের আকাঙ্ক্ষা─ এক নতুন কাব্যিক পদ্ধতির সন্ধান─ নতুন প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নতুনতর সমাজব্যবস্থা, আধুনিক সমস্যার সমাধানের ভিন্নতর পথের খোঁজ। বনভিসিনোর নির্মাণবাদী কবিতা বিস্তৃত কল্পনায় প্রসারিত চেতনায় এক সম্ভাবনাময় চিত্র, উপলব্ধির multidimension─ পোস্টমর্ডানিজমের সূত্র, যে ভাবকল্পের উৎস হিসপ্যানিক─ সেই ফেদেরিকো দ্য ওনিস, নিকারাগুয়ার স্পেনীয় কবি যিনি লাতিন আমেরিকার জীবনাদর্শন নিয়ে গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে স্থানীয় কবিতামহলে প্রথম শনাক্ত করেছিলেন পোস্টমর্ডান ভাবকল্প─ প্রতিষ্ঠানের আধিপত্যের বিরুদ্ধে, প্রচলিতের ঘাটতিগুলো নববিধানের উন্মেষ দিয়ে পূরণ করার উদ্দেশ্যে। পোস্টমর্ডানিজম্ কোনো অ্যান্টি-মর্ডানিজম্ নয়, বরং বলা যায় মর্ডানিজমের ঊর্ধ্বসীমা লঙ্ঘন করার ইতিবাচক প্রবণতা, যেখানে কেন্দ্র ভেঙে বেরিয়ে যাবার, ক্ষমতার দম্ভ ভেঙে ফেলার ঝোঁক। পঞ্চাশের দশকের মার্কিন সাহিত্যতাত্ত্বিক ইহাব হাসান যাকে বলেছিলেন, “The change in Modernism may be called Postmodernism” [১০] এই পরিবর্তনই প্রগতির মূল কথা। পৃথিবী এগিয়ে চলে, এগিয়ে চলে সময়ের ডায়মেনশন, ভাষার ডায়মেনশন। এভাবেই প্রতিটা যুগে প্রতিটা দেশে কবিতার ইতিহাস এগিয়ে চলার কথা বলে।
বনভিসিনোর সাহিত্যযাত্রার প্রেক্ষাপটে ছিল ব্রাজিলের কংক্রিটজ্ম আন্দোলন। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলার প্রেক্ষাপটে জমে উঠল মানুষের অবিশ্বাস, নৈরাশ্য ও ক্ষোভ, তীব্র হয়ে উঠল সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, তখন ব্রাজিলের সাহিত্যাকাশে শুরু হয় কংক্রিটজ্ম আন্দোলন যার পুরোধা ছিলেন সাও পাওলোর “Noigandres” গ্রুপের তিন কবি হ্যারোল্দো দে ক্যাম্পো, আগাস্ত দে ক্যাম্পো ও দেসিও পিগ্নাতারি। “Noigandres” শব্দটির উৎসসন্ধানে মার্কিন সাহিত্যের স্কলার ও সমালোচক মারজোরি পারলফ তাঁর গদ্য “Writing as Re-Writing: Concrete Poetry as Arrière-Garde” [১১]-তে আগাস্তর অ্যান্থোলজি Anthologie despoesia [১২] থেকে একটি জনপ্রিয় গল্প উত্থাপন করেছেন─ “Noigandres” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন ফরাসি কবি আর্নাট ড্যানিয়েল। আগাস্ত দে ক্যাম্পো বলেছিলেন “Noigandres” শব্দটি এজরা পাউন্ডের সেই Canto-XX থেকে গৃহিত, যেখানে কবি ফ্রায়বুর্গের অধ্যাপক ও প্রভেন্স ভাষাবিদ এমিল লেভিকে জিজ্ঞেস করেন “Noigandres” শব্দটির অর্থ কী। তিনি ছ মাস ধরে উত্তর খুঁজেও কুলকিনারা করতে পারেননি, তাঁর উজ্জ্বল স্বীকারোক্তি─ ’Noigandres, NOIgandres!/ You know for seex mons of my life/ Effery night when I go to bett, I say to myself:/ Noigandres, eh noigandres, Now what the DEFFIL can that mean!” ফোনেটিক উচ্চারণে এই চমকপ্রদ স্বীকারোক্তির পরেও লেভিই প্রস্তাব দেন শব্দটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে─ enoi (ennui: অবসাদ) এবং gandres(gandir: প্রতিহত বা অপসারিত করা)। ফ্রান্সের প্রাচীন গীতিকবিদের কাছে শব্দটি ফুলের গন্ধ হিসেবেও উচ্চারিত হতো অবসাদ দূর করতে।
রেজিস বনভিসিনো নিজেকে “a signic reporter” [১৩] হিসেবে চিহ্নিত করেন যেখানে কংক্রিটিজমের শিকড়─ ভাষার কেন্দ্রে অবস্থান করা সেই চিহ্নক-চিহ্ন-চিহ্নন(signifier-sign-signified)এর সম্পর্ক সূত্র। শব্দ বস্তুরই প্রতীক, কিন্তু বস্তু কারো প্রতীক নয়, সে নিজেতেই সম্পূর্ণ। প্রতিটি শব্দই বস্তু বা ভাবের প্রতীক আর প্রতীক হিসেবে শব্দ সেই বস্তু বা ভাবকে refer করে। তাই প্রতীকটি শব্দের অর্থ নয়। চিহ্ন ও অর্থ এক নয়। কবি তাই প্রতীক শব্দকে টুকরো করে চিহ্নক-চিহ্ন-চিহ্নন রূপে তাদের সম্পর্কগুলো আবিষ্কার করেন এবং শব্দের উৎসে থাকা ধ্বনিটিকে চিহিত করেন। প্রতীকবাদীদের মতো কংক্রিটবাদীরাও কবিতাকে সরাসরি তুলে ধরার পক্ষপাতী ছিলেন। একটি রচনার সংগঠিত কাঠামো ভাষার গঠন প্রণালীর নিয়ম মেনে চলে আর এই রচনা কবির নিজস্ব ভূমিজ সংস্কৃতির (localism) সঙ্গে সম্পর্কিত। যেকোনো সংগঠিত কাঠামোই উপাদান নিয়ে গঠিত। অক্ষর, শব্দ, ব্যাকরণের নিয়মে সংগঠিত কাঠামোটি সম্পূর্ণ হলে তবেই রচনাংশের অর্থ নিরূপণ সম্ভব। বনভিসিনো বিশ্বাস করেন “a poem don’t live beyond its words, its dark and backward suns”─ লিখছেন তাঁর কবিতা “Prose”-এ। আধুনিক ভাষাতত্ত্বে structuralism এর জনক সুইজারল্যান্ডের দার্শনিক ফারদিনাঁ দ্য স্যসুরের মতে ভাষার মৌখিক ঐতিহ্য লেখনের (writing) সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। উচ্চারণের(speech)এই স্বাধীনতা ভাষার বিশুদ্ধ বিজ্ঞানকে সম্ভব করে তোলে। স্যসুর কথিত চিহ্নের এই স্বাধীনতা অর্থাৎ চিহ্নক(signifier) ও চিহ্ননের(signified) মধ্যে যে কোনো অপরিহার্য সম্পর্ক নেই, নির্মাণের সেই শ্রেণিবিন্যাসের তীব্র বিরোধিতা করেই শুরু হয়েছিল post-structuralism, যার প্রসারিত ভাবনার প্রতিফলন বনভিসিনোর কবিতায়─ উত্তর-সংগঠনবাদের পুরোধা সেই জ্যাক দেরিদার অবিনির্মাণ তত্ত্ব─ “An opposition of metaphysical concepts (speech/writing, presence/absence, etc.) is never the face-to-face of two terms, but a hierarchy and an order of subordination. Deconstruction cannot limit itself or proceed immediately to neutralisation: it must, by means of a double gesture, a double science, a double writing, practise an overturning of the classical opposition, and a general displacement of the system.” [১৪] সমাজের বিকৃতি আর বিনাশের মধ্যে বসে নৈরাশ্যের প্রতিক্রিয়ায় কবির নিরন্তর আত্মপরিক্রমা। তাই এক “signic reporter” হিসেবে বনভিসিনো চিহ্নক ও চিহ্নিতের সাধারণ সংযুক্তিকে অস্বীকার করেন এবং অবিনির্মাণ পদ্ধতিতে রচনাকে কেন্দ্রচ্যুত বা decentring ক’রে তার ভেতর ও বাইরের সীমা ভেঙে দেন; যৌক্তিক অসামঞ্জস্যগুলোকে চিহ্নিত করে সৃষ্টি করে্ন এক অন্তরঙ্গ ও সৃজনশীল পাঠ, যা রচনার ঘোষিত, প্রতিষ্ঠিত উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দেয়। বনভিসিনোর কবিতার প্রসেস হ’ল “a strategy of immanent shock”, যেমন বলেছিলেন ব্রাজিলের প্রখ্যাত সমালোচক অ্যালসির পেকোরা বনভিসিনোর Estado Crítico বইটির মুখবন্ধে। বনভিসিনোর কবিতায় এই ট্রমাটিক আঘাত─ সমাজের দৈনন্দিনতার চাপ মানবিক মূল্যবোধকে প্রশ্ন করে; তাঁর রিয়েলাইজেশন চেতনার সীমাবদ্ধতা আবিষ্কার করে তাকে ভেঙে ফ্যালে এবং সাবজেক্টিভ অবজেক্টিভের দ্বন্দ্ব থেকে তৈরি করে এক নেগেটিভ ডায়ালেক্টিক্স, চার্লস বার্ন্সটাইনের ভাষায়─ “imaginable reality: imaginable in consequence of being real. Imaginable yet ungraspable. Imaginable yet apparently out of images’ reach. Imaginable because we have no choice but to imagine, no matter how resistant our imaginations may be to the task. Imagined, in other words, through the not that Adorno called negative dialectics.” [১৫]
কংক্রিটবাদ : যা ঘটে গ্যাছে তা অতীত, অপরিবর্তনীয়, তারই হবহু প্রদর্শন; কোনো ইন্টারপ্রিটেশন নয়, কোনো মন্তব্য নয়, সিদ্ধান্ত নয়, দার্শনিক আলোকপাত নয় বরং “only this, nothing more” এডগার অ্যালান পো-র মন্ত্র। অ্যাঁভা-গার্দের পূনর্নবীকরণ সংকল্পেই একদিন শুরু হয়েছিল কংক্রিট কবিতা আন্দোলন যার ইস্তাহার ছিল ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ও আর্কিটেক্ট কেনেথ ফ্র্যাম্পটনের arrière-gardism –এর সঙ্গে সমান্তরাল─ “Architecture can only be sustained today as a critical practice if it assumes an arrière-garde position… one which distances itself equally from the Enlightenment myth of progress…only a arrière-garde has the capacity to cultivate a resistance” কংক্রিট কবিতা ফরাসি শব্দ Avant(front) শব্দটি arrière (behind)দিয়ে প্রতিস্থাপিত করলেও প্রকৃতপক্ষে তা অ্যাঁভা-গার্দের প্রতিশব্দ নয়, বরং পরিপূরক যেমন বলছেন পারলফ─ “The concept of the avant-garde is inconceivable without its opposite…. in other words, an avant-garde movement is no longer a novelty, it is the role of the arrière-garde to complete its mission” [১৭] আবহমানের মূলধারা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুতি নয়, বরং বাঁকবদল, যা আবহমান কালের রীতি। বিশ্বের সমস্ত কবিতাই এভাবে মূলধারা থেকে বিভাজিত হয় সময় ও সমাজের প্রেক্ষাপটে, পরিবর্তনের রং লাগে ভাষার গায়ে, শব্দের রূপে; ঘটে কবিতাধারার মুক্তি। সেই মুক্তির সন্ধানেই বনভিসিনোর কবিতাযাত্রা। একদিন প্রচলিত ধারার বন্ধনমুক্তির কথা বলেছিল যে কংক্রিট কবিতা আন্দোলন সেই-ই আবার কালের ধারায় কবিতার পায়ে বেড়ি পরালো নিজস্ব নিয়মের নিগড়ে, যেমন বলছেন মেক্সিকোর লেখক, সমালোচক ও অনুবাদক ওডিলে সিস্নেরো─ “The concrete attempt at liberating poetry from its former strictures by radical change, eventually degenerated into an exclusionary movement, dictating what poetry “should be” and delineating often rigid rules for the production of poetic texts.”[১৮] তো শুরু হল Neoconcretism এবং পরবর্তীতে Tropicalism─ বনভিসিনো যার সংজ্ঞা দিচ্ছেন একটি সাক্ষাৎকারে─ “Tropicalismo, a Brazilian approach combining traditional samba with a variety of Caribbean, US, and European styles, political enough to get most of its practitioners exiled by the military dictatorship”[১৯] কালের ধারায় সেই নিও-কংক্রিটিজম ও ট্রপিক্যালিজম হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানের অনুশাসন বা ক্যানন, যেখানে কবিতা এক শূন্যগর্ভ অভিব্যক্তি। নিরন্তর পরিবর্তনে বিশ্বাসী বনভিসিনো তাই কোনো গ্রুপের পতাকার আশ্রয়মুগ্ধ হয়ে থাকতে নারাজ বরং ব্যক্তিগত পরীক্ষানিরীক্ষার পথে নিরন্তর সৃজনশীলতায় তাঁর অভিযাত্রা।
বনভিসিনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “My Eden is the Russian cubo-futurism of 1917, when a revolution in art and politics were happening at the same time.”[২০] cubo-futurism ফরাসি কিউবিজম ও ইতালীয় ফিউচারিজম থেকে উত্তরণকল্পে ভিস্যুয়াল আর্টের আঙিনায় গড়ে ওঠা এক স্বতন্ত্র রুশী শৈলী, যেখানে এই দুই আন্দোলনের মেলবন্ধন, যার পুরোধা ছিলেন ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি, ভ্লাদিমির খেলনিকভের মতো কবি ও লেখকেরা─ কবিতার ফর্ম ও ভাষার পরীক্ষানিরীক্ষার সেই আঁতুরঘর, যেখানে কবির ব্যক্তিসত্তা চেতনার সঞ্চারমান পদধ্বনি ও আবিষ্কারের সামঞ্জস্যবিধানে জন্ম দেয় বহনক্ষম এক নতুন ভাষার। কবিতার নির্মাণ বা গঠনতন্ত্র ভাষারই গঠনতন্ত্র। ভাষার বাহন তার শব্দ। অথচ শব্দের কোনো একক অর্থ নেই। সমস্ত শব্দই বহুস্তরীয় ও ডাইনামিক এবং অসংখ্য অর্থের সম্ভাবনায় পূর্ণ। পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্যের পরিবর্তে কবিতার প্রসেস বনভিসিনোর কাছে অনেক বেশি মূল্যবান। কবিতার সেই পদ্ধতি বা process এক dynamic movement যা কখনই সম্পূর্ণতা অর্জন করে না। কারণ তার কোনো চূড়ান্ত গন্তব্য নেই; most perfect রচনা বলে কিছু নেই, বরং সমস্ত রচনাই এমারসনীয় “more correct” এর দিকে রওনা দেয়; “আরও নিখুঁতের” খোঁজে এক অস্থায়ী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়, কোনও গন্তব্যে পৌঁছানোর দায় নেই তার। বনভিসিনোর নব্য-বাস্তববাদ নব নব রূপে, সত্য থেকে সত্যতর মতবিশ্বাসের দিকে অগ্রগতির কথা বলে, নাহলে dialectic বা দ্বান্দ্বিকতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। পরম সত্য বলে কিছু নেই। আছে শুধু ‘তর’ হয়ে যাওয়া। তর=√তৃ+অন(on)─ তারী থাকে যাতে, অর্থাৎ তর সেই আবর্ত্তমানতার কথা বলে, যার কোনো শেষ নেই, সতত গতিশীল। কোনো স্পেস বা পরিসরের স্থির অবজেক্টে ক্রমাগত বিবর্তনে কিউবের কৌণিকতায় বদলে ফ্যালে তার রং ও রেখা। বস্তুর বাস্তবতা কালচক্রে নিহিত। প্রাচীন ভারতীয় ঋষি উচ্চারণ করেছিলেন, ওঁ তৎসৎ ─ তৎ-ই সত্য, বস্তুর অভ্যন্তরস্থ চলমান সত্তা বা সত্তার সূক্ষ্ম রূপ যা দৃশ্য নয়, অথচ সক্রিয় ও উপলব্ধ, যার বহিরঙ্গটি সাময়িক রূপ মাত্র। বস্তুর ভিতরের সেই সত্তা─ সেই তৎ─ প্রাচীন ভারতীয় ভাষায় ‘পুরুষ’─ ইংরিজিতে content─ যে সত্তা অধ্যায় থেকে অধ্যায়ে, বস্তু থেকে বস্তুতে উত্তীর্ণ হয়, নিজের স্বভাব ক্রমান্বয়ে বদলায়, রূপ থেকে রূপে, দেহ থেকে দেহে উত্তীর্ণ হয়ে যায়। ফলত বিমূর্ততা ছাড়া বস্তুকে চিহ্নিত করার কোনো উপায় নেই। কোনো দৃশ্য বা ঘটনার বাস্তবতার অস্তিত্ব কবির নৈতিক ধারণা, সামাজিক ধর্ম, রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রচলিত ভাষার ওপর নির্ভরশীল। সেই প্রচলিত ভাষাকে পেরিয়ে প্রতিমুহূর্তের বহির্মুখী জীবন থেকে সংগৃহিত মূর্ত অভিজ্ঞতার বিমূর্ত রূপায়ণ করেন বনভিসিনো। কবি জানেন reality নকল করা যায় না। তাই চোখের দর্শন পেরিয়ে, বাস্তবতার কালচক্র পেরিয়ে কবির চেতনায় প্রতিফলিত বাস্তবতা সৃষ্টি করে hyperreality. বনভিসিনোর কবিতায় নিরন্তর বিপ্লব, অবিরাম অনন্ত চলনের পথে নতুন থেকে নতুনতর যাত্রার কথা বলে যেখানে প্রতিধ্বনিত হয় নির্মাণবাদী রুশী কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কির সেই বিপ্লবের আহ্বান─ “March, march out to the fore! Away with speech-making lousy! Quieter, orators! you have the floor, Comrade Mauser (name of a pistol) too long we’ve lived by the laws Adam and Eve left. Run down old History’s horse! Left! Left! Left!”[২১] কঠিন বাস্তব পৃথিবীর আশা ও নিরাশা, আলো ও অন্ধকারের টানাপোড়েনে বিপন্ন কবি দুঃখিত হন। মানুষের দিকে নিজের দিকে চেয়ে উত্তর খোঁজেন আপন কাব্যজগতের মনোভূমিতে। বাস্তবের নিরন্তর অনিশ্চয়তা ও বৈপরিত্যের মুখোমুখি বনভিসিনো তাঁর প্রিয় কবি লোরকার মতোই আবিষ্কার করেন বাস্তবের বিভ্রমগুলো─ What’s real/ is the reflection./ Nothing here but one heart/ and one wind./ Don’t cry! It’s all the same to be up close or/ far away./ Nature is/ the eternal Narcissus.”[২২] লোরকার সেই হৃদয়ের প্রতিধ্বনি শোনা যায় বনভিসিনোর কাব্যগ্রন্থ Regis Hotel-এ যেখানে নিজেকে বলছেন─ “a concretist who didn’t know what to do with his heart.”[২৪] আধুনিক ব্রাজিলের বুর্জোয়া নন্দনতত্ত্ব উপেক্ষা ক’রে বনভিসিনো হাতে তুলে নেন সেই নব্য-বাস্তববাদ─ যেখানে শোনা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালির সেই neorealistic সিনেমার সুর, যার পুরোধা ছিলেন সিনেমা পরিচালক ফেদেরিকো ফেলিনি, রেবার্তো রোসেলিনি ও মাইকেলাঞ্জেলো অ্যান্টোনিও। ব্রাজিলের দৈনন্দিন জীবনের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিমানুষের দুঃখদুর্দশা ও তার আত্মিক সংকটের সাক্ষী বনভিসিনোর নব্য-বাস্তববাদ─ প্রশ্ন করে মেগাশহর সাও পাওলোর বুর্জোয়া জীবনচর্চার শূন্যগর্ভ অস্তিত্বকে; খোঁজ করে মানুষের সেই সার্বিক মুক্তি, যেখানে বনভিসিনোর দর্শন একই সঙ্গে personal এবং impersonal─ ভারতের ব্রহ্মবাদী দর্শন─ একপ্রান্তের স্বগুণ বলে ‘আমি আছি’ আর অন্যপ্রান্তের নির্গুণ বলে ‘আমি নেই’─ “The strange superpositions of quantum theory…simultaneous ‘occurring’ and ‘not occurring’”[২৫]─ সেই ব্রহ্ম, অন্তরে যিনি অন্তরতম, বাইরে সুদূরতম, যার সত্যে আমরা সত্য, আনন্দে আমরা ব্যক্ত।
অনুবাদ : রেজিস বনভিসিনোর Beyond the Wall কাব্যগ্রন্থটি দ্বিভাষিক। তাঁর পর্তুগিজ ভাষার কবিতার সাথে আছে ইংরেজি অনুবাদ─ করেছেন চার্লস বার্ন্সটাইন, অডিলে সিস্নেরো এবং থেরিস বাচাঁদ। এখানে চার্লস বার্ন্সটাইনের ইংরেজি অনুবাদ করা পাঁচটি কবিতার বাংলা অনুবাদ করা হল। “Definitions of Brazil” কবিতাটি বনভিসিনো ও চার্লস বার্ন্সটাইনের কোলাবরেশনে ইংরেজি ভাষায় লেখা, কোনো পর্তুগিজ সংস্করণ নেই।
ব্রাজিলের সংজ্ঞা (Definitions of Brazil)
ব্রাজিলের অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার অশ্রুতে
ব্রাজিল সেই সাপে ভরা জঙ্গল যারা কেক খায়
ব্রাজিল লেবাননি, পর্তুগিজ, জাপানি, গুয়ারানি, তুপি, ইংরেজি ভাষায় কথা বলে
ব্রাজিল এক মাতাল মধ্যস্বরলোপি ভেজাল মিশ্রণ
ব্রাজিলের নিজের সঙ্গে কোনও আন্তঃসম্পর্ক নেই কারণ তার কেবল নিজের সঙ্গেই সম্পর্ক
ব্রাজিল তোমার তপ্ত মাথায় শীতল হাত রাখে
ব্রাজিলে সেই ইন্ডিয়ানরা উপনিবেশ তৈরি করেছিল যারা পর্তুগিজকে স্থানীয় করে তোলে
ব্রাজিলের টলস্টয় এখন ফ্যাভেলার কৌশল অবলম্বন করছে
ব্রাজিল তাল ও মন্ত্রের এক দেশ
ব্রাজিল এক মডেলের মডেল
ব্রাজিলের জাদু কাঁকন এখন মহাদেশের কণ্ঠহার : সেন্ট পলের থেকেও সাও পাওলো বেশি ইউরোপীয়, জেনিভার থেকেও ব্রাসিলিয়া বেশি আমলাতান্ত্রিক, বোকার থেকেও রিও বেশি লোভনীয়
“ব্রাজিলে তারা প্রচুর কফি পেয়েছে”
ব্রাজিলে কোকিল গায় “ম্যাকাও, ম্যাকাও, ম্যাকাও”
ব্রাজিল বেওয়ারিশ ঈশ্বর ও রণচণ্ডীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি
ব্রাজিলের কুলগুরু তার স্বপ্ন, ঠিক যেমন তার শয়তান
ব্রাজিল এক ক্যারিয়োকা, পোলকা নয়
ব্রাজিল হ’ল কারমেন মিরান্ডার টুটিফ্রুটি টুপি, ক্যায়টানো ভেলোসোর আবহাওয়াপোযোগী ট্রপিক্যালিজমো, চার্টের ওপর বেবেল গিলবার্তোর নম্বর।
ব্রাজিল হ’ল এলিস আর টম “ওয়াটার অফ মার্চ” আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আর স্পা
ব্রাজিল হ’ল ফেইজোয়াদা মাথায় ক্যাইপিরিন্হা (টুপি মাথায় ক্যাপিরা)
ব্রাজিল হ’ল কাসাভা বা টেপিওকার দেশ, যাকে তুমি বলো ইউকা, বা ম্যান্ডিওকা বা আইপিম বা মুগো বা ম্যাকাক্সেইরা বা সিঙ্গকং বা তুগি বা বালিংহয়ে বা ম্যানিওক
ব্রাজিল হ’ল বেইমান, বিশ্বাসঘাতক শব্দদুটো খোদাই করা PCC[২৬]-র কালো মুখোশ
ব্রাজিল মানে ১৮৬ লক্ষ গল্প, ১৮৬০০০ কবিতা, কিন্তু সংজ্ঞা শুধু এই
আপনার শেয়ার রাখুন ব্রাজিলে, বন্ধক রাখুন চীনে নাকি তার উল্টো?
ব্রাজিল অ্যামাজনের কল্পনাজাত
পেলে যদি একটাও শব্দ না লিখেই ব্রাজিলের সম্মানিত কবি হন, তবে রোনালদো গ্যাচো ব্যালে রাসে পা না রেখেই নিজিনস্কি
ব্রাজিল উদীয়মান নয়, গুণিতমান
ব্রাজিলের সরকারি ধর্ম কেবল সাম্বা নয়, মাকুম্বা ও আমব্যাণ্ডা, তারেন্টেলা ও চুরাস্কো
ক্যান্ডোম্ব্লে হ’ল বিশ্ব দর্শনের ব্রাজিলউড
ব্রাজিল হ’ল ডলোরেস ডেল রিও-র সঙ্গে ফ্লাইং ডাউন টু রিওর ফ্রেড ও জিনজার
উচ্ছল আবরণের নীচে ব্রাজিল হিংস্র, ঘৃণ্য বিষধর এক সাপ, বেগুনিবর্ণ বেহালা বাজায়।
ব্রাজিলের যা কিছু সমস্তই একটা সুযোগের জন্য, দামের জন্য, একটা টুকরোর জন্য, নাচের জন্য, লড়াইয়ের জন্য, একটা রাতের জন্য; জ্যায়চিনহ ব্রাসিলিয়েরো জন্মগতভাবে মুক্ত কিন্তু সর্বত্র শৃঙ্খলিত
ব্রাজিলের মুখ তার হৃদয় খুলে দেখায় না এমনকি যখন তারা অভিন্ন
ব্রাজিলের তারকা বব হসকিন্স, জোনাথন প্রায়েস ও রবার্ট ডেনিরো
ব্রাজিলকে লিখেছিলেন তেরি গিলিয়াম ও টম স্টপার্ড
ব্রাজিল কংক্রিট ও সিংক্রেটিক
ব্রাজিল দুর্ভেদ্য ও ক্ষমাশীল
ব্রাজিল স্বজাতিভোজী ও উৎসবমত্ত
ব্রাজিল হ’ল বোসা নোভা তালে বাজা বারোক বার্কারোল
ব্রাজিলের লুলা কিছুটা পাগল হলেও লুসির মতো পাগল নয়
ইপানেমা সমুদ্র সৈকতে যখন সন্ধ্যা নামে রাতের গভীরে, তখন তুমি শুনতে পাবে অর্ফিয়ুস ইউরিডাইসের জন্য গান গাইছে; সে গান “ব্রাজিল” এলিজি
ব্রাজিলে মুদ্রার মহিমাই একমাত্র বাস্তব
——-
গদ্য (Prose)
একটা কবিতা সংগীতের মতো বিকোয় না, পেইন্টিংয়ের মতো বিকোয় না, যেমন গান পারে, কেউ একপয়সাও দেয় না, একটা অভিশাপ, কবিতা তার শব্দের বাইরে বাস করে না, তার অন্ধকার ও পিছিয়ে পড়া সূর্যগুলো গদ্যের মতো বিকোয় না, যেন শুধুমাত্র তারা কোনও গল্প বা কবিতার উপহাসের প্রতিধ্বনি ছিল, তাকে বিক্রি করা যায় না আবর্জনার মতো, বাগানের আমগাছের চাঙ্গড়ের মতো (বা বাগানের হোসপাইপের টুকরোর মতো), পোড়া তেলের ভাঁটির মতো, এমনকি আবর্জনার স্তূপ বা শ্যাওলা জমা নর্দমার কালো জিভের ওপর বসে গাইতে থাকা সোনারঙের ফিঞ্চ পাখিও যা পারে, বিক্রি করা যায় না একটা গ্র্যাফিত্তি যেমন বিকোয়, একটা ফটোগ্রাফ বা ভিডিও বা কোনো আর্ট ফিল্ম যেমন বিকোয়, বিক্রি করা যায় না যেমন একটা সংবাদপত্র বা তাস বিকোয়। আমি, আমি শব্দের প্লেগে ঘেরা মূল্যহীন জিনিসের একজন বাজে ব্যবসায়ী।
——
উল্কি (Tattoo)
ফ্ল্যাভিয়া, উল্কিময় এই বিশ্ব থেকে নিজেকে বাঁচাও
তুমি বাছাই করার কিছু সুযোগ পেয়েছ:
ক্লিওপেট্রার চোখ, চোখের পল্লব ও মাসকারা
ঘড়িতে আটকে থাকা পাখি
গাছ, এখনও আছে কিছু বাকি
কিছু শব্দ: “প্লাস্টিকের ফুল আবাস থেকে বহুদূর”
পান্ডার ষষ্ঠ আঙুল
ঘাতক বাদুর প্রজাতির এক দ্রোণ
রোদের ভেতর লুকিয়ে পড়ে সূর্য
কালো মাছি, ভারি বুক, ধারালো অ্যান্টেনা
ফণার ভেতর একটা মাথা
পদ্মফুল
বুড়ো লোক হস্তমৈথুনে
এস্তোনিয়ায় সমাধিলাভের আগে
মুষ্টিযোদ্ধার পেশী গড়িমসি করছে
রোনদোনিয়ার এক অ্যাকুন্তসু ইন্ডিয়ান
——
নীল টাইল (Blue tile)
আমার বাবা ও আমার মা
মৃত
কেউ নেই
কেউ কেউ
যুগল
নীরবতা
নিরবচ্ছিন্ন
খাঁজকাটা খোলামকুচি
এখন সেইসব জড়ো করে
আবার আমি
যোগ দিই
——
অসম্ভব ছবি (Image Impossible)
দেয়ালে সারিবদ্ধ
ইঁদুরের মতো আটক
ফ্যাভেলার দরজায়
লক্ষ্য অনুশীলন
মাথায় গুলি
নীরবতা, একটা গর্জন
সঙ্গীরা
সুযোগ নিল
টিকে যাওয়া মানুষটি
বুলেটবিদ্ধ ঘাড়
ডোরাকাটা পাখি
একমাত্র সাক্ষী
∙
গাড়ি টানেল পেরোয়
পীতাভ, নীল, বাদামী
সরু ফুটপাত
এক ভিখারি
নর্দমায়
ঝড়তিপড়তি আর ছেঁড়া ফালি
দেয়ালে
মাথা ঘুরিয়ে দেয়
বাঁদিকের বাড়িটায়
কণ্টকশয্যা
বিদীর্ণ
আয়নায় অদৃশ্য
∙
খোলা জানলা
সারি সারি পোশাক
ভেজা সকাল, শীতল
দেয়ালে গ্র্যাফিত্তি
এক্সোস্টের চড়া গন্ধ
আবর্জনার গাড়ি
পথ জুড়ে
জাদুঘর ঘোষণা করে প্রদর্শনী
ভিখারিরা জড়িয়ে ধরছে
তাদের জবরদখল জমিতে
আলো সবুজ হয়
গাড়ি চলতে থাকে
——-
কবি পরিচিতি :
ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরের বাসিন্দা পর্তুগিজ কবি, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক রেজিস বনভিসিনো নিরন্তর সৃজনশীলতায় বিশ্বাসী। জন্ম ১৯৫৫ সালে। সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির Law School থেকে ১৯৭৮ সালে আইনবিদ্যার স্নাতক। সাইকোঅ্যানালিস্ট ডারলি মেনকোনি তাঁর ঘরনি এবং দুই সন্তান ব্রুণা মেনকনি বনভিসিনো(১৯৯২-২০১৮) ও ফেলিপ মেনকনি বনভিসিনো (২০১০) এবং প্রথম বিবাহিত জীবনের দুই সন্তান জোয়াও রড্রিগ দে কোস্টা বনভিসিনো (১৯৭৯) ও মার্সেলো ফ্লোরেস রড্রিগ দে কোস্টা বনভিসিনো (১৯৮৭)। ১৯৭৫ সালে তাঁর লেখালেখির শুরু সাও পাওলোর জার্নাল দো এরেনা সংবাদপত্রে এবং ওই সময় থেকে সাও পাওলোর বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্রিকায় কলাম লেখাও শুরু করেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ[২৭] ১১টি, যার মধ্যে বহুল আলোচিত গ্রন্থগুলি Página órfã (São Paulo: Martins Fontes, 2007); Ossos de borboleta (São Paulo: Editora 34, 1996); 33 poemas (São Paulo: Iluminuras, 1990); Más companhias (São Paulo: Editora Olavobrás, 1987); Remorso do cosmos: de ter vindo ao sol (Cotia, São Paulo: Ateliê Editorial, 2003); Primeiro tempo: reunindo os livros Sósia da cópia, Régis Hotel e Bicho papel (São Paulo: Editora Perspectiva, 1995); Num zoológico de letras (São Paulo: Maltese, 1994, Children’s book)। তাঁর কবিতা সংকলন Até Agora (Editora Imprensa Oficial, 2010)। তাঁর গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে যেমন ইয়াও ফেঞ্জ অনূদিত Sky-Eclipse: Selected Poems (Los Angeles, Green Integer, 2000) এবং Blue Tile (Hong Kong, The Chinese University of Press, 2011)। বনভিসিনো অনুবাদ করেছেন বিভিন্ন কবির কবিতা যেমন আর্জেন্টিনার কবি অলিভেরিও গিরোন্দো, ফরাসি কবি জুলে লাফরগু, মার্কিন কবি রবার্ট ক্রিলি এবং চার্লস বার্ন্সটাইন। সম্পাদনা করেছেন কবিতা অ্যান্থোলজি Nothing the Sun Could Not Explain (Los Angeles, Sun & Moon Press, 1997)। পাওলো লেমিনিস্কির সঙ্গে তাঁর চিঠিপত্র সংকলিত হয় ১৯৯১ সালে, যার মুখবন্ধ লেখেন ব্রাজিলের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ক্যায়টানো ভেলোসো। ২০০০ সালে রেজিস বনভিসিনো সহ-পরিচালক চার্লস বার্ন্সটাইনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন Sibila: Revista de Poesia e Cultura(a poetry and culture review)। ২০০১ সাল থেকে ১১টি প্রিন্ট সংখ্যা প্রকাশের পর ২০০৭ সাল থেকে Sibila ইলেকট্রনিক ওয়েবসাইট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
[১] http://www.regisbonvicino.com.br/
[২] Beyond the Wall: New Selected Poems by Régis Bonvicino, Green Integer, København & Los Angeles, 2016. http://www.greeninteger.com/book.cfm?-Bonvicino-Beyond-the-Wall-&BookID=302
[৩] Criticality and Vertigo: An Interview with Régis Bonvicino. Source: http://sibila.com.br/english/criticality-and-vertigo-an-interview-with-regis-bonvicino/11478
[৪] Estado Crítico by Régis Bonvicino (Editora Hedra, 2013)
[৫] “Definition of Brazil” is a poem included in the book Beyond the Wall by Regis Bonvicino
[৬] Indian-ভারতীয় নয়, ব্রাজিলের আদিবাসী। indigenous শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত। ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ কাবরাউ পরিচালিত পর্তুগিজ নৌবহর বর্তমানের ব্রাজিলে এসে পৌঁছো্লে, তারা ভুল করে ভেবেছিল ভারতে এসে পৌঁছেছে। তারপর ওই শব্দের নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার আজও অব্যাহত। আমেরিকায় এখন Indian শব্দটি indigenous এর সমার্থক।
[৭] Commentaries-March 2017, Regis Bonvicino, ‘Beyond the Wall:Selected Poems’ by Charles Bernstein; source:https://jacket2.org/commentaries/archive/201703?Page=5
[৮] T. S. Eliot, Selected Essays, 3rd ed, London, 1951
[৯] “No one is out of the woods yet, least of all the poet” an essay by Alcir Pécora in response to the album libretto– Deus devolve o revólver (God gives back the gun) by Régis Bonvicino. 16 poems read by Bonvicino, the soprano Caroline de Comi, and the North-American poet Charles Bernstein, Audio engineering and production design by Rodrigo Dário─ https://deliriorecords.bandcamp.com/album/deus-devolve-o-rev-lver
[১০] Postmodernism by Ihab Hassan, included in New Literary History, Vol. 3, No. 1, Modernism and Postmodernism: Inquiries, Reflections, and Speculations (Autumn, 1971), p.5-30, The Johns Hopkins University Press
[১১] See website of Marjorie Perloff─ marjorieperloff.blog.
Source: http://www.lehman.cuny.edu/ciberletras/v17/perloff.htm
[১২] Anthologie despoesia by Augusto de Campos, French translation (Romainville: Al Dante, 2002)
[১৩] The poetry of Régis Bonvicino: one poet’s way out of the concrete jungle by Odile Cisneros; Source: http://regisbonvicino.com.br/catrel.asp?c=14&t=27
[১৪] Margins of Philosophy, trans. Bass, Chicago: University of Chicago Press, 1982
[১৫] Bernstein Charles. 2016. Pitch of Poetry. Chicago: University of Chicago Press.
[১৬] An essay “Towards a Critical Regionalism: Six Points for an Architecture of Resistance” by Kenneth Frampton, source: https://www.modernindenver.com/wp-content/uploads/2015/08/ Frampton.pdf
[১৭] See Ref-8
[১৮] “The Poetry of Régis Bonvicino: One Poet’s Way Out of the Concrete Jungle” by Odile Cisneros, source: http://regisbonvicino.com.br/catrel.asp?c=14&t=27
[১৯] “The Sung Word” by Regis Bonvicino and Odile Cisneros. They interviewed Caetano Veloso, a Brazilian singer, song writer and political activist, in 1979. The interview was first published in 1980 in Código, a review edited by Erthos Albino de Souza in Salvador (Bahia), a publication that today is a collector’s item. (https://jacket2.org/interviews/sung-word)
[২০] http://regisbonvicino.com.br/novo/category/entrevistas/entrevistadopor/
[২১] “Left March (For Sailors)” by Vladimir Mayakovsky, (1918)
[২২] লোরকার কবিতা “Sesame” ─ Moments of Song থেকে। কবিতাটি ২০০০ সালে Green Integer থেকে প্রকাশিত জেরম রোদেনবার্গের লোরকা অনুবাদ Suites-এর অন্তর্গত।
[২৩] Régis Hotel (São Paulo: Edições Groove, 1978).
[২৪] See ref-11
[২৫] Penrose Roger. 1994. Shadows of the Mind. Oxford: Oxford University Press.
[২৬] PCC- Primeiro Comando da Capital (First Command of the Capital) is, according to a 2012 Brazilian Government report, the largest Brazilian criminal organization, with a membership of almost 20,000 members, 6,000 of whom are in prison.
[২৭] http://www.regisbonvicino.com.br/cat.asp?c=32
Posted in: November 2020, TRANSLATION