জ্যোতি পোদ্দার-এর কবিতা
কলাপাড়া নতুন বাজার
অক্টোবর
অক্টোবরের এই সময় অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আলাদা।
অতসী ফুলের গন্ধ মাখা একেকটি অক্টোবর
আমি আমার ওয়ারড্রোবে তুলি রাখি।
ঊষের ঝাপটায় যেটি ভেজা ভেজা সেটি একটু গরমে সেঁকে
পাটে পাটে ভাজ করে সাজিয়ে রাখি টালি করে।
অক্টোবরের সাথে তোমার বৈরতা আমার অজানা নয়।
যে কোন কর্তনে রক্তরক্ষন বেশি
মুখরতা বেশি নিরবতা বেশি শত্রুতা বেশি
দেরাজে ঝুলিয়ে থাকা চাবির গোছার মতো
মনে ঝুলে থাকে একগোছা খচখচ।
বড়নখা ফুল
চঞ্চল আকাশ কালচে বিলের জলে অচেনা অচেনা লাগে।
আমি তখন আকাশ দেখতে ভয় পাই।
কালো জলপোকা বিলের কালচে জলে
কিলবিল কিলবিল করতে করতে যখন ডুব সাঁতারে
আরেকটু দূরে গিয়ে মুখ তোলে কুচুরি পানার ভেতর থেকে
তখন বুঝি সময় গড়িয়েছে ঢের।
কুর্শা বিলে বড়নখা ফুল আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে
শুকিয়ে গেছে— মনমরা মুখ নিয়ে কালোজলে
মৃতমুখ নিয়ে আস্তে আস্তে ডুবে যায় ডুবে যায়
বড়নখার যৈবতি মন।
কুর্শার শীতল জল
ইচ্ছে হলো কুর্শা বিলে নামি।
ইচ্ছে হলো বৃত্ত ভাঙি
বৃত্ত আঁকি।
কে কবে বৃত্ত না ভেঙে বৃত্ত একেঁছে জগতে?
ইচ্ছে হলো সাদা হলুদ শাপলা কুড়িয়ে কুড়িয়ে
নরম সবুজ ডাঁটা চুষে চুষে পান করি কুর্শার শীতল জল।
বিলের জলের মাদক স্বভাব আমি জানি।
যে করেছে পান আকণ্ঠ বিলের ভারি জল
সে পেয়েছে সহজিয়া জলজ জীবন।
কোন ঘাট তার ঘাট নয়— সকল ঘাটেই ভিড়ে তার নাও।
সন্ধান
ছোট প্যাকেটের মতো ছিমছাম কলাপাড়া নতুন বাজার।
এখানে চা ও স্টার জলসা পাওয়া যায়।
এখানেও যে কোন মুখ ফেয়ার এণ্ড লাভলি মুখ
চা দেখতে দেখতে
স্টার জলসা খেতে খেতে হেসে উঠছে বিউটিফুল বাংলাদেশ।
এখানেও একগুচ্ছ চেঁচামেচির ভেতর তোমাকে খুঁজলাম।
পোড়ামন
পদ্মবিলে রোদের তাপে পুড়ছে আমার শরীর
আর তুমি কিনা বুকের ভেতর থেকে
বের করে আনলে পোড়া মন?
কোন জলে এবার নিভাবো আমি
কাঠপোড়া কয়লার মতো পোড়া মন?
চিতাকাঠ চিতাভষ্ম জলে ভাসতে ভাসতে
কোনো জলের সোঁতায় খুঁজে পায় নিজস্ব ঠিকানা।
চরমপন্থি
উজ্জ্বল সবুজ পদ্মপাতা তপ্তরোদে পুড়ে পুড়ে খাক
হলেও তার পিপাসা মিটে না।
গলাবুক জলে তবু ভাসে আর ভাসে
আর ভাসতে ভাসতে ভাসমান বৈতরনি।
যদি পারো উপচিয়ে দিও।
একটু শব্দটা আমার একদম পছন্দ না।
কোন কিছুতেই হোক সে আগুন অথবা শীতল জল
একটু একটু আমার ভাল্লাগে না।
বাউন্ডুলে
বাউণ্ডুলে শব্দ উচ্চারিত হলেই তোমার
হাসির ঠমক দেখে বুঝি —
শব্দটির প্রতি তোমার পক্ষপাত চোখে পড়ার মতো।
অন্যের ঠোঁটের বাঁক অথবা তেছরা কথাবার্তা
তোমাকে উপেক্ষা করতে দেখেছি।
আহা! কী যে ভালো লাগল তখন।
অভিধান থেকে মুক্তি দিয়ে সেদিন থেকেই
পুলকিত শব্দটি আমার হল।
অথচ অবাককাণ্ড তুমি শব্দেবাঁচো বলে
শব্দের সশব্দে হেঁটে যাওয়া দেখোনি
ছুঁয়ে দেখোনি শব্দের সপ্রাণতা।
বাউণ্ডুলে শব্দকে ভেবেছো নিছক একটি শব্দ
ঘোড়ার পায়ের খুর লাগানো
শব্দ দেখনি বলে সেদিন থেকেই বিমর্ষ শব্দটির
নতুন মানে পেলাম সংসদ বাঙালা অভিধান থেকে।
পাখি জীবন
পাখি দেখা মানে ঠিক স্থীর কোন পাখি দেখা নয়।
দেখা মানে পাখির অদম্য গতির সাথে
উড়ন্ত ছায়াকে দেখা।
কুর্ছা বিলের আকাশে উন্তড় পাখি
আর বিলের গভীর জলে পাখির কম্পিত ছায়া নিয়ে
যে পাখি দেখা সেটিই পাখির সমগ্রজীবন।
অংশত জীবন জীবনের প্রোমো—-
এইটুকু ফ্রেমবন্দি করে বাঁধিয়ে রেখেছে ফোটোগ্রাফার।
ও ফোটোগ্রাফার দেখো দেখো আকাশের
রেম্পে ওড়ে ওড়ে শঙ্খচিল উড়ে গেল দৃশ্যের ওপাশে
চিহ্নের আড়াল।
তাকে ফ্রেমে আনো দেখি তার গার্হস্ত জীবন
দেখি তার দাম্পত্য জীবন।
Posted in: November 2020, POETRY
1 thought on “জ্যোতি পোদ্দার-এর কবিতা” Leave a comment ›