ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী-র কবিতা

কবিতার নাম কার্বন

(১)

দূরে খুঁজি সেই কবিতা, প্রিয় মানুষ জুড়ে
ফিরে পাই তারে সেই জরায়ুর আঁখরে ।
স্মৃতি হীন ক্লান্তি হীন এমন একটি জন্ম,
মানুষে বাড়ে সে কবিতা, কার্বন প্রজন্ম ।
ভালোবাসার অবিলতায় হাত বাড়ায় যে উচ্ছিষ্ট গাছ
তার সাথে আজ নিও মিথকল্পে এক মাথা আকাশ।

তৃষ্ণার্ত ঘুমিয়ে পড়ে নিয়ে অখিলের কাজ
কার্বন হয়ে জেগে থাকে আকাশে রাক্ষস, খোক্কস চাঁদ।

(২)

এইটুকু কার্বন আমার স্নেহবিষ, অস্তিত্বহীন স্নিগ্ধতা –
বিষ বৃক্ষ অপর নাম, হাতে জেগে থাকা নির্বাণ উল্কা।
আক্ষরিক অর্থেই প্রজন্ম হীন আজকের এই আকাশ
আর তার দূর স্মৃতি পৃথিবী জোড়া এক অবিকল দীর্ঘশ্বাস।
এখন কিছু নেই, নেই সেই খামার বাড়ি, অমৃতের ঘর
শুরু হোক কার্বন জন্ম কবিতার, অথ মৃত চরাচর।

চেয়ে থাকে যে কল্পিত রাগ, ক্ষমা প্রার্থী পৃথিবীর দিকে-
সঙ্গে নিও, বুঝিয়ে বল, এ এক প্রমিথিউস জীবন, সুখেরও আগে।

(৩)

অন্ধকারে যে স্বপ্ন দাঁড়িয়ে থাকে
সে নিজেও চেনেনা তাকে।
হে অলীক রৌদ্র কণা, তোমার নিয়ত আশ্বাস
স্নিগ্ধ করে, সান্দ্র করে, ব্যাথার বিরলতম প্রকাশ।
পরাজিত মানুষ- এক কার্বন কবিতা, পরাধীন আলাপ
নিজস্ব চিতা জ্বালিয়ে ওঠে, দ্রাবিত অনুতাপ।

আজ ভুলে গেছি পৃথিবীর শীতলতম বিশ্বাস,
অন্ধ হয় স্নেহ বীজ, জেগে থাকে কার্বন প্রতিভাস ।

(৪)

যে মেঘ নেমে এসেছে আজ নিজস্ব ইথারে
সে জানে কে নিয়ত জাগে এই মনোলীন শহরে ।
শহর ছেড়ে গ্রামে গেলে অপর দীর্ঘশ্বাস,
মিথ ভ্রমে জেগে আছে রাত্রি, নিধুয়া আকাশ।
বাতি গুলো সব নিভে যাবে, আর যাবে প্রমিথিউস খোয়াব
দু হাতে আলোকবর্ষ ছড়িয়ে দেবে গাছের পাতায় আন্দোলিত চাঁদ।

স্নেহ হীন, রতি হীন, একলা পরে খরাজ মাঠ
পাশ কেটে ট্রেন যায়, যায় কার্বন সংলাপ।

(৫)

পৃথিবীর গভীরে যে সমস্ত চোরাবালি, তাদেরও আক্ষেপে
ধুমাভ হচ্ছে সূর্যের দিন, ভোর হচ্ছে সন্তাপে।
হে নভ, দূর সংকেতে জেনে নিও সেই তারা দের বিলুপ্তির ইতিহাস
কেন আকাশে বাতাসে পরিখা জ্বলে? জ্বলে রিক্ত চন্দ্রাভাষ?
রৌদ্র ক্লান্ত হয় চার্বাক স্মৃতি, খনিজ ইচ্ছায়
আলোকবর্ষ পেরিয়ে যায় দিন, এক একটি কবিতায়।

এমন কবিতায় জন্ম হোক আজকের কার্বন
তার এপার ওপার নিয়ে জুড়ে দিও অমৃতের মন।

Facebook Comments

Leave a Reply