অভিজ্ঞান সেনগুপ্ত-র কবিতা

আমি জানি, কে জেসিকাকে মেরেছে….



              
অপরাধীকে সিংহাসনে বসিয়েছি আমি
এখন সে আমাকেই গিলে খাবে
ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করবে
হাড় মাংস খেতে খেতে
ছুঁড়ে দেবে অগ্নিবৃত্তে
ঝালসানো শরীরে বড়ো সুখ খেলা করে
আমিই তো হাতে ধরিয়েছি উদ্ধত তরল
চোখে ঢেলেছি আদিম লালসা
মগজে পোরা ক্ষমতাকঠিন উল্লাস হুংকার
প্রশ্নহীন আনুগত্য আর বেপরোয়া যৌবন
হাত ধরে টানছে লোভ, লিঙ্গের নাছোড় নতিকোনে
বিদ্ধ শারীরিক জ্যামিতিগুলো টানটান, টসটসে
নৈরাজ্য নিয়ম যখন, আমার ঘরের দরজায় রক্তবীজ
প্রবেশের অপেক্ষায় –
রাত গভীর হলেই,
এসো হেডিসের পোষ্য
এসো।
আগুন ধরিয়েছি ।
ছুঁড়ে দাও …

অন্ধকারে
মেয়েটি চিৎকার করে উঠল।
আমি মোমবাতির মায়াময় আলোয়
সবে মুখে পুরেছি সুস্বাদু মাংস,
যোনিমুখ, সুডৌল স্তনযুগল, ত্রিভুজ নিরাপত্তা –
মাদক কণ্ঠে তুমি গাইছ,
আজ না ছোড়েঙ্গে, বস হামজোলি
খেলেঙ্গে আজ হোলি ….

আমি জানি, কে জেসিকাকে মেরেছে –
কিন্তু, বলব না হে …।




কার্ণিভাল




একটা পাত্রে সাতরঙ মেখে রেখে
তুমি রামধনু তৈরী করতে বললে
আমি প্রথম ঝোঁকেই গুলেভুলে যাওয়া মন্ডটা থেকে
একটা একটা করে খুঁজে নিলাম সাতরঙ ইচ্ছাফুল
যেন, আলাদা আলাদা প্রেক্ষিত চেনাবে শিকড়ের সুত্র –
এলোমেলো আঙ্গুল তুলে আনবে ফোঁটাফোঁটা নীলরঙ, সুখ
ছেঁড়াছেঁড়া। অবিশ্বাসী
অনভ্যস্ত বামহস্তের অনিবার্যতায় এরপর আকাশী আয়োজন –
মেঘলা কাশবন আর অশ্রুকালীন জলশব্দে অমল কিশোর
চেয়ে এনেছে একছুট শরৎ, শিউলি গন্ধে অভিমানি যৌবন
                                                                   রংঢং, বাঁদরছাপ
আমার সময়জুড়ে কেবলই নির্লজ্জ হানাদারি, বৈভব বাসনা
ঘরভোলা পাখি, তার বেগুনি শরীর, কমলা ঠোঁট, গলায় পরিযায়ী সুর
কতকটা লড়তে থাকা, ছিঁড়তে থাকা হতবুদ্ধি জীবন
এসব বেখেয়ালী কথকতার গভীর সবুজে
                                                     সূর্য ওঠে, অস্ত যায় …
রাতচরা মানুষটি ক্লান্ত গুটিগুটি
সন্তর্পনে ছেঁকে আনে হলদেটে চিঠিখানি
ওখানেই কুলুঙ্গিজুড়ে সলজ্জ যাপন, স্ত্রীসঙ্গ, সন্তানসুখ
ওখানেই দুধেভাতে মিলেমিশে থাকে আলোরং ভুল
ওখানেই দেমাগী মাঠমন টুপুরটাপুর …
কখনও সখনও বাঘ আসে চুপিসারে, কিংবা বাঘিনী
হানা দেয় নিশ্চিন্ত বসতে
রক্তরঙে নিমজ্জ দুই বাহু, ওষ্ঠ
                                     লালচে শরীর
মুঠোভরা বসন্তে এগারোর কিশোরী
খালিপেটে
লবনচোখে
হাঁটাহাঁটি – ঘুমপাড়ানীর দেশে
হিমানী আপনার কবিতা পড়তে ভালবাসত শক্তিদা, জানেন…

রেড রোড জুড়ে পাখিরা আজ গান গাইবে, নাচবে
আজ উৎসব বশ্যতা
পরিক্রমন শেষ করে তোমার সামনে নতজানু
                                                          হে, মহামহিম
তুমি হিসাব চাইলে, নাও
এক এক করে সাজিয়ে রেখেছি বেনিয়াসহকলা
রামধনুমাখানো স্মৃতিপথ
বারুদ ঝলসানো মাংসপেশী, লিভার, কিডনি, মস্তিস্ক
                                                                   ছড়ানো ছিটানো
শহরতলি, দ্রোহের এপিটাফ –
ক্যানভাস জূড়ে অসংখ্য কাক, উড়ছে … বসছে
পেড়িয়ে যাচ্ছে নদী, দারুবন … ভাগার
পেড়িয়ে যাক্ শষ্যমাঠ, জলজ পরবাস
এ জন্ম, সে জন্ম
ভানুমতি আর দোবরু পান্না

কী আঁকবে তুমি?
ক্যানভাস জূড়ে শুধুই সাদা কালো সহবাস
আজ হরতাল … আজ চাকা বনধ্ …

Facebook Comments

Leave a Reply