অর্ক মন্ডল-র কবিতা
তিনটি কবিতা
১.
কভু এমন শুনেছি আমি একটি বালক
তার মৃত মুনিয়ার ক্ষোভ বুকে নিয়ে
জঙ্গলে জঙ্গলে একাকী ঘুরছে
এমন শুনেছি সে ঝুটমুট
সারাদিন কাটিয়েছে পাখির মেলায়
মুনিয়ার ডাক ধীরে ধীরে আর্দ্র
করে ফেলে তার সমবেত ঘুমের জগৎ
একটি মুনিয়ার লোভে বালকত্ব
ঝরে যায় পালকের মতো আর
আগত যৌবনের যে সঞ্চারী বিস্মৃতির ঝোঁক
তাকে পায়, তাতে প্রথমেই সে ভুলতে
শুরু করে তার মুনিয়ার কথা, প্রথাগত উদার
চেষ্টায় মুনিয়া পাখিটি ক্রমে হারতে হারতে
শুধু জনৈক জ্বালা..উড়ছে…রৌদ্রে পুড়ছে
বিবিধ রক্ত শুধু ধুয়েই চলেছে
ঝড়-ঝঞ্ঝায় থুপড়ে পড়ছে যথাতথা
প্রকাশ্যে আসেনি তবু বালকের প্রতি তার
কুসুমিত মরনের দায়।
২.
অধিক দেখায় দেখা নষ্ট হয়ে যায়। অধিক দেখার পাকে শতছিন্ন হচ্ছে চামড়া। অধিক শোনায় ঝরে যায় শোনার আয়াস। লুকিয়ে থাকার কোনো জায়গা নেই। সমস্তই সমস্তের এতই সম্মুখ যে, যে, আলোর ভেতরে আর আলো থাকছে না, যে, আলোর ভেতরে আর যদি না ঢুকি, আলোর রেখা আর যদি না দেখি, যে, কোন অন্ধকারে মাথা ডুবিয়ে অপরূপ শ্রান্তি চাই, জানি না কোন পিচ্ছিল অন্ধকারে স্নায়ুর জটিল পাক ক্রমশ খুলবে, বিবর্জিত প্রতীমার আঁচলের মতো চুলের মতো, বুকের সন্নিধানে কিশোরের নিশ্বাসের মতো উষ্ণ অন্ধকারের উম উম ধ্বনির একমুখি স্বপ্নময় স্বপ্নময় সম্ভাবনায় যদি থির হতে চাই, যদি চাই, যদি সে আমাকে টেনে নেয় আর আমি না ফিরি।
৩.
অনেকের মতো
হারাবার দোষ আছে আমারো
ছাতা ঘড়ি চাবি বা চশমা….
শ্রাবনের মেঘ আসে যায়
আর আমি গুনগুন করি
মনে পড়া কোনো এক গান
রোজ কিছু পথ চলি
বস্তুত একই পথ, আর
সামান্য কিছু কাজ সারি
দুপুরে ঘুম না এলে
বিকেলের চা-য়ে রাখি প্রাণ
শুখা কাঠ জড়ো করে
রাত্তিরে আগুন জ্বালাই
আগুন ফুরিয়ে গেলে
গুগুল ইমেজে দেখি
মরুভূমির চাঁদ
মেঘ নামে পাহাড়ে ভাঁজে
নির্জন সরোবরে
শিশিরের স্তুপ ঝরে পড়ে।
আমি কিছু হারাই না।
যা কিছু হারাই আবার
তা জমা হয় আমার
এক আত্মীয়ের কাছে যাকে
আমি সঠিক চিনি না। যার সাথে
কোনো এক সমাবেশে কখনো
আমার সাক্ষাৎ হয়েছিলো।
লঘু প্রসঙ্গে কিছু কথা হয়েছিলো।
আমি যা কিছু হারাই
সমস্ত জমা হয় ওরই কাছে।
ওর দেরাজ পূর্ণ হতে থাকে।
Posted in: November 2020, POETRY