অনিকেশ দাশগুপ্ত-র কবিতা
যাত্রী
স্নেহকাতর মাথা
ঝুঁকে থাকতে চায়
পরিণত দশ হাত এগিয়ে আসে বরাভয় দিতে ,
মুখনিঃসৃত এক
লৌকিক জাল ছড়িয়ে রাখে
ধূসর কলমদানি ,
স্মৃতিকাতর মানচিত্রে অনুসরণ করি
সূর্যোদয়ের দিকে ঠিক কতবার
টানেল পেরোয় গতিশীল কোনো ট্রেন ;
জানলার খড়খড়ির
প্রাণবন্ত নীল উজ্জ্বলতা
জন্মমুহূর্ত থেকে গড়ে ওঠা রঙের
সাবেকি বৈচিত্র্যগুলি একে একে
নিশ্চিহ্ন ক’রে চলে ।
প্রয়াস
হাঁটতে হাঁটতে নো ফ্লাইং জোনে ঢুকে পড়ি
বহুক্ষণ ধ’রে শুকনো পাতার মর্মরে চমকে উঠছি
সপ্তম জন্মে আমাকে ঘিরে
স্নানরত রমণীদের তিল
যেন সূর্যের পকেট থেকে শেষ বিরোধটুকু
এবার নামানো যায় ;
পেছনে না তাকিয়ে রুদ্ধশ্বাস ছুট দিই
সবকিছুই বলতে হবে কাউকে , সময়ের মধ্যে
গোপন টিলার পাদদেশে নিখোঁজ হওয়ার চিহ্ন বাড়ে
ওই প্রশাখা,ওই অহঙ্কারের থাবা
করুণ অক্টেভে যেমন শেষবার
অচেতন অবস্থায় উঠোনের একপাশে দরজা ঠেলে চলেছি
কিছুক্ষণের জন্য ওখানে জড়িয়ে গেছিল সমস্ত চেষ্টা
অথচ খিলান পরবর্তী কোনো বারান্দা
কখনও স্পষ্ট হলো না,
আবছায়া আলো নিয়ে একটা হ্যারিকেন
খুব দুলে গেল দূরে দূরে
একা রাত্রি
ক্রমাগত কিছু পালক খ’সে যায়। খসিয়ে দিই।
প্রচ্ছায়ার মতো মাটির কাছে নেমে আসি
ফুল হয় ,বীজ হয় , পাপড়ি থেকে মাটির সাড় হয়
অমৃত ক্রোড় ধীরে ধীরে খুলে যায় ;
ওখানে রাত্রির শিশিরে, চিমটে দিয়ে তোলা চাঁদের কমলা রঙ,
পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে ব্রত রাখি যেন নাড়িচ্ছেদের গাঢ় নির্যাস
বয়ে যায় ভেতর-বাইরে একইরকম ঠান্ডা দাগে;
ঘুমের দরজা খুলে ফুঁসে ওঠা আগুনে যেমন
কর্মরত কোন পরিচারিকার বাঁচার আর্তি
বলরুমের আলোয় চক্রাকারে ঘোরে ।
রান্না
এই বেশ আলোছায়ার রান্নাঘর
আড়াল ক’রে ক’রে
অবশেষে সেই গোপন সংসারগুলোকে
পিষে মারতে হয় !
এখনও কী ছন্দে ছন্দে কাজ সারো ?
শব্দের পেছনে সত্যিই কোন আলো নেই
সূঁচ আছে সুতো আছে –
এফোঁড় ওফোঁড় ক’রে চলা সেলাইকল
ক্যাটওয়াকেই সমস্ত রাস্তা পার ক’রে এলাম
দ্যাখো, সকালের রান্না থেকে
এখনও কেমন ভাপ উঠছে
Posted in: November 2020, POETRY