আহমেদ মুগ্ধ-র কবিতা
ভার্নিয়ার স্কেলে চেতনা
১.
অন্য ঘরে যাও?ক্রমশ রোদ্দুর
সাইবেরীয় বরফে মানে বিয়োজন?
আগরবাতি দিয়ে পূর্ণিমা জ্বালো—
অথচ জানো কি আয়ু,চাঁদের?
ঈশ্বরী তুমি—আমরা দু’জনে
পুষেছি মহাকাল সমুদ্রের মতন–
মানুষের কাছে কেন তুমি যাও?
মানুষ যে মহাকালের ভগ্নাংশ মাত্র
তবু দেখো বহুকাল পেরিয়ে এখনো
বহু মৃত মানুষের গলা শুনছো
পৃথিবীর সাথে স্থাপনে সংযোগ—
ভাবছো ওরা মানুষ? মানুষ নয়,
মানুষ নয়।ওরা সময়ের স্থুল অঙ্গবিশেষ—
মেদহীন হবার বাসনা,কিশোরীর প্রতিভা
ওদের মাঝেও জাগে–বৃষ্টি ঝরার দামে
কে—কার—অস্তিত্ব বিকিয়ে দেবে?
তবে কেন যাও অন্য ঘরে?
এখানে আমি দাঁড়াই একা—
রাতের আকাশে মেঘ দেখলে তখন
আমি হয়ে যাই খুচরো পয়সার মতন;
সময়ের জাগে আহ্লাদ—কত মানুষ কিনে
আর আমাকে ধীরে ধীরে করে ব্যয়!
পঞ্জিকার দিন হয়ে যায় বায়বীয়
তখন যে আমায় পাড়ায় ঘুম
আমি তাকে করি ভয়–পাছে,
মৃত্যুকে জননীর মত মনে হয়।
মানুষের কাছে তুমি—কেন যাও
অথবা মানুষের কাছে গিয়ে,
এসেছিল যে ফিরে, তুমিই কে সে?
২.
আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের আত্মা,
যেখানে গেছি ডুবে,ডুবে দু-জনে—
সেখানে জলের বুদবুদ খুঁড়ে পাই
এখন শুশুক,দেখি কুমিরের মুখের উপর টেরাকোটা,সেখানেও সেলাই করে চোখ
ভাবি এখানেও কি আমরাই আঁকা?
মনুমেন্ট ডুবে গেছে—গেছে ডুবে প্লাবনে
আমরা শেখাই দু’জন দু’জনকে
কীভাবে পাশাপাশি স্থির,যাওয়া যায়,ডুবে—
আমরা তো ঘরেঃবৃষ্টির একেক ফোঁটায়;
জমিতে এসে,আমাদের ব্যাতীত,তারা শুকায়—
আমাদের ভবিতব্য উচ্ছিষ্ট হওয়ার ভেতর।
বহু তারার নিচে আছি দু’জন দাঁড়িয়ে—
দুই মূর্তি—এক হাত ফারাকে–
তবু মনে হয় এক নেই কোথাও আমরা পৃথিবীর;
এক হাতের,মাঝে মাঝে,গাঢ় দাগে এঁকে
নিজেকে
আমাকেই বেঁধেছো তুমি অথবা করেছো স্থির;
কিংবা হয়ে আছো আমারই সমষ্টি
তবু আমি পাই কি খুঁজে তোমায়—
ভার্নিয়ার স্কেল,নিতে চিনে,শিখিনি কখনো আমি।
৩.
দেখো,এখন মৃত্যু নেই হয়ে,
অবশ্যম্ভাবী—তাদের জন্য;
তবুও মানুষ পাহাড়ে উঠে—
তলিয়ে যায় সুগভীর খাদে,
ডুবে যেতে যেতে প্লাবনে
লজ্জা নিবারণের জামা খুঁজে।
মৃত্যু-স্বভাবী মানুষের কাছে
অবিরত কেন তুমি যাও?
৪.
জলের সময় জানে না নতুন ঢেউয়ের কুঁড়ি
সুষুপ্তিতে বাঁধা পড়ে গেছে ঢেউ–
কূলে থাকা নৌকা দরদাম করে জলের,
প্রতি রাতে কেনা রূপকথার বইয়ে
অপ্রাকৃত ফেরিওয়ালারা রূপালী জ্যোৎস্নায়
ভিন্ন ভিন্ন ছদ্মনামে ছুঁয়ে থাকে তোমার আঙুল
বিলম্বিত করো সময়ের দৈর্ঘ্য;
কোনো ফিরতি ট্রেন মেলে না–
আমি প্লাটফর্মের এক চিরায়ত সর্বনাম।
Related posts:
Posted in: November 2020, POETRY