শুভদীপ মৈত্র-র কবিতা

না

তাদের উদ্যত আঙুল বলে উঠল – না।
তাদের শরীর ব্যারিকেড হয়ে বলল – না।
মসমসে বুট আর লাঠির সামনে হিমালয় হয়ে দাঁড়িয়ে
তারা বাঁচিয়ে রাখতে চাইল আন্দোলনের টলটলে হ্রদ –
না লড়াই ছাড়ব না।
নাচো নাচো বলে যে লোকটা চলে গেছিল সে ফিরে এলে
দেখতে পেতো প্রীতিলতা কল্পনারা তৈরি,
গান্ধীবুড়ির সাথে প্রস্তুত হচ্ছে বীণা দাস,
অহল্যা মায়ের সঙ্গে ধনুকে তীর পরাবে তারা
অনাবিল ঘাসের দেশ আর নদী ভরা জল
মাথার ভিতর স্বপ্নের মতো নিয়ে
তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বুনে দিচ্ছে – দ্রোহ।
রক্তে ভেসে তারা গোলাপকে করেছে লাল
আজ নিশানের জন্য রঙের অভাব হবে না।
কাঁটাতারগুলো আজ সম্মান পেল কারণ
তারা ওই ফুলগুলো ছিঁড়ে বানিয়েছে মুকুট
শিকলগুলো গয়নার মতো বাজছে তাদের পায়ে হাতে
উর্দি আর কতো তোমার ওই লাঠির ঝুমঝুমি বাজাবে
তোমার বেয়োনেটে ঝাঁপিয়ে তারা এফোঁড় ওফোঁড় করে
দেখাবে বুকের ভিতর এখনো সাম্য, মৈত্রী আছে।

ঘাঁটি

এখানে ঘাঁটি অঞ্চল সব ইমারত হয়ে গেছে
এখানে বন্দুক লুকনো জলায় শপিং মলের ঝিকিমিকি –
নবারুণ বলে যান ফিসফিস করে,
তাই নতুন পাতারা আজ পদাতিক হল।
সে এক অদ্ভুত সবুজ কাঁপন, সহজিয়া সুরের তালে তালে
খোঁজে দেশের শিকর – বুলডোজার যত এগিয়ে আসে
চারিয়ে যায় তারা মাটির ভিতরে প্রত্যয়ে।
জলপাই অরণ্যের মতো তারা ফিরে আসবে একদিন,
যেসব কবিরা কলম বন্ধক রেখেছিল টাকার থলির কাছে
যেসব গায়ক, নাট্যকার, অভিনেতা শরীর বেচেছিল
সোনাগাছির, হাড়কাটার থেকেও অন্ধকার গলিতে
তোমাদের সম্মিলিত ‘না’এর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হবে
ফোড়ে ও পাচারচক্রের ধ্বসারোগ নিরাময় পাবে একদিন
সমস্ত না-য়েরা এসে সীমাহীন আকাশে বসত বানাবে।

অভিযান

এমনাবস্থায় আকাশব্যাপী নক্ষত্রেরা আমায় ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাইল
ছাদের উপর মেঝে আঁকড়ে আমি – যেন দেশে, যেন সেই গণ্ডি,
অরক্ষিত সীমান্ত।
হানাদারের ঝকঝকে চোখ, সার্চলাইট, যূথের গান
আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। একটা মশারির নিভৃতির মধ্যে
দেখছি ধেয়ে আসছে বন্যার জল হুহু করে।
তোমায় দেখিনি কতদিন, কতদিন তোমার গলার স্বর শুনিনি
এই চরাচর, সুবিশাল আকাশের গারদ – তার চেয়ে ভয়াবহ
জেলখানা এ পৃথিবীতে তৈরি করেছি তাই উন্মত্ত আঁকিয়ে
কেটে ফেলে কান, নিষ্পাপ সুরস্রষ্টার দরজায় টোকা মারে মৃত্যুসংগীত।
তবু সৃষ্টি এক গেরিলা যুদ্ধ।
তাই বিদ্রোহী আর কবি রাত জাগে।
নক্ষত্র ও উর্দিধারীরা একদিন মরে গিয়ে শ্বেত বামনের মতো
মুখ ভেঙাবে। অজস্র ভীতিপ্রদ রাতের আকাশ তাই
উজ্জ্বল নীলে আর সূর্যের রঙে রাঙানো যায়
এই বিশ্বাসে চিঠি লিখি তোমাকে সারারাত পাতার পর পাতা।

Facebook Comments

Leave a Reply