শুভ আঢ্য-র কবিতা
ইটস অল অ্যাবাউট গেম
১০.
“বেল বাজলে বুঝবেন, শবদেহ সৎকার সমাপ্ত হয়েছে।” এমন বেল টানা বেজে চলেছে অথচ শবদেহগুলিকে দেখা যাচ্ছে না, কুয়াশায়। অথচ দুটি ঘরের বাইরে অগুন্তি শবদেহ। শববাহকেরা বিজ্ঞাপন দেখছে। যীশুর ছবির সামনে ইজের পরা এক মহিলা তাকিয়ে আছে মৃতদেহগুলোর দিকে। সে জানে না বিস্ময় কোথায় থাকে। খবরে বলা হয়েছে, বিপ্লব রেডবুক পড়ে যেদিন ফিরে আসবে, সেদিন শবগুলোও সিদ্ধান্ত নেবে উঠে বসার। তাদের ঘর সামলে, সন্তান সন্ততি সামলে, যে ঘটনাগুলো ঘটেনি, তা ঘটাবার পর আবার নিভে যাবে তারা। বেলটির লাগোয়া কুকুরের শহর। তারা অপেক্ষা করছে কখন তাদের দিকে মাংসের টুকরোটা ছুঁড়ে দেওয়া হবে! যদিও তারা দেখতে পাচ্ছে মাংসের গন্ধ, ঘ্রাণ পাচ্ছে ঢিবির। বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছে মজবুত কাঠের কফিন, তার মালিক বা মালকিনের পরনে বিবাহের পোশাক। কারও বা মাথার কাছে প্রিয় রিস্টলেট বা রিস্টওয়াচ। স্থির, নির্ভরশীলতায় তারা বিশ্বাস অর্জন করেছে যে কফিনটি আদপেই মজবুত। শববাহকেরা বেলটিকে টানা বেজে যেতে শুনছে। তারা বুঝতে পারছে ইজের পরা মহিলাটিকে এবার জানিয়ে দেবার সময় যে সৎকার সমাপ্ত হয়েছে। যখন বিজ্ঞাপনের শেষে আবার ঘটনার পুনরাবৃত্তির অপেক্ষা করছে যীশুর ছবির সামনে দাঁড়ানো মহিলাটি।
১১.
ঝাউপাতা ছাড়া ঘরগুলোকে ভাবা যাচ্ছে না। এক্স ও ওয়াই দু’ঘরেই যথাযথ সমুদ্রোচ্ছাসের ইকো হচ্ছে। ঘরগুলোতে মৃতদেহ ঠাসা, মোটিভে ভর্তি সেখানকার বাতাস, তবু কিভাবে ইকো হচ্ছে তা জানতে পারা যাচ্ছে না। ভেড়াগুলোকে খুব দূরে পাড়ে দেখা যাচ্ছে, খুন হওয়ার আগে মানুষগুলোর চারপাশে দেখে জেনে নিচ্ছে মানুষ এরকম দেখতে হয়, যারা পশমখোর। নিজেদের শৈত্য নিজেরা আটকাতে পারে না। অথচ দুই আততায়ীর মাথার ভেতরেই এক প্রবল শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সেখানকার তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ১০ ডিগ্রি। সেখানে কোনো ঝাউপাতা নেই। এক্স ঘরের অপরাধীর ভেতর জ্বলে উঠছে জন্মদিনের মেয়েগুলো, তাদের দাঁত নেকড়ের মতো ক্রঢ়। এসবের সাথে সিনেমার সম্পর্ক নেই। কোনো সিনেমাতেই এমন দৃশ্য দেখানো যেতে পারে না বলে দেখানো হচ্ছে ওয়াই ঘরে চলা সিনেমাটিতে। টেলিফোন বেজে উঠছে বাইরে। অপরাধীরা নতুন কোনো গলার প্রগলভতা পেতে চাইলেই, তা কেটে যাচ্ছে। মেয়েগুলোর ভেতর কোনো প্রগলভতা নেই, কারণ তাদের জন্মদিনে কোনো ঘরের অপরাধীই ছুরিটি তোলেনি, তবে মোমবাতিগুলি নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১২.
ওয়াই ঘরের ভেতর একটা ডিমলাইট জ্বলছে। টমেটো রঙের আলোয় লাল হয়ে যাচ্ছে অপরাধীটি। শেষ যখন খুনের আগে ওয়াইন গ্লাস তুলেছিল সে তখন তার ঊরুর ওপর এমন অনেক টমেটো গড়িয়ে যেতে সে দেখেছিল। এখন রেডিওতে জানানো হচ্ছে এবছর টমেটোর ফলন ভালো না। রেডিওতে আরও অনেক খবরের কথা বলছে। কোনো এক অপরাধের তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে বলে জানাচ্ছে। মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে আছে থপথপে মহিলারা। তাদের স্তনের ভেতর লুকানো রয়েছে এক একটা ডিমলাইট। তাদের স্তন টমেটোর মতো। ওয়াই ঘরে বয়ে চলেছে লাল তরল। কেউ একে রক্ত বলে ভুল যাতে না করে, তাই বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দেওয়া হচ্ছে সেখানকার রুহাফজার বোতলগুলোয়। এখানে কোনো ভেড়া নেই। ভেড়ার ছবিগুলো গোলাপি হয়ে গেছে, আর তাদের পিঠের টমেটো রঙের দাগগুলোও ফেড হয়ে গেছে পুরোনো অপরাধের মতো। ডিমলাইটের ফিলামেন্ট কি রঙের তা নিয়ে বাইরে আলোচনা চরম। মোটা মহিলাগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে স্বীকারোক্তিগুলো ফুটে উঠছে বয়ানের জাবদা খাতায়, টমেটোর মতোই।
Posted in: October 2020 - Cover Story, POETRY