সোমতীর্থ নন্দী-র কবিতা

বিশ্বাসবনের_লেখা ১

শিয়রে, এক অকল্পনীয় চাঁদ আমায় শিশু করে রাখে। সাধ হয় বনদুর্গার কাছে যাই। আদর করি তার পেশীতে, নাভিতে। বিপন্ন এসব ইচ্ছে যখন বয়ে যায়, কোন কোন দিকে যায়। শীতের জামার মত চেপে বসে অবধারিত সব কারণ। হে বিষাদ, আনন্দে ঠেলার হে পূজ্য আয়নাসাগর, তোমাকে প্রণাম। আলো হয়, পরবর্তী আঁধার হয় তীব্রতর। সুরেলা জীবন তোমার সেই বীচে। আমি চলে আসি বহুদূর। কারণজামাটি ছেড়ে রাখি, মনেহল নদী তীরে বাসা বাঁধি। ট্যুরিস্ট এসেছে আজ বহু, মনেহল নদী তীরে পিকনিক খাবে, ভাবে, কারণের ইঁট দিয়ে বাসা বেঁধে রবে। প্রগতির ঢল আসে, স্রোত ভরে ভেসে আসে বিজ্ঞাপনের জল। কারণের নকল ছায়ায় বসে দুঃখ সাজাই। আখর গাঁথিয়া তুলি এই ভবে। মাগো, রোশনাই যেন আজ প্রিয়তম দূর থেকে আসে।

বিশ্বাসবনের_লেখা ২

নিদ্রা ভরে গেঁথে তুলছি পশুদের, বিশ্বাসবনে তারা বাসা বেঁধেছিলো। দগ্ধ হরিণ সম লিবাস তোমার, পান্ডুরতমা, যেন সুমিষ্ট আখ। চোখ ভরে রাখি নাইকুন্ডুলির শাঁখে। অনিবার্য্য প্রগতির মতো সমস্ত ফিরে আসা তোমার, বোকে করে রাখতে রাখতে এ পাহাড়ের ঘর ভরে গেছিলো। এ পাহাড় বনে ঢাকা ছিল। মনেহল নদী বয়ে যেত, ইছেমতী পাখি কত বাসা বেঁধেছিলো। বিশ্বাসবন আজ আবার সবুজপানা মাটিটি পেয়েছে বলে, মৃদু তাপে নাচে। চিতাশাবকের ছাই জুড়ে, দগ্ধ হরিণবালিকার গলায় জেগে ওঠে গ্যালাক্সির পর গ্যালাক্সি। এ পাহাড় ও পাহাড় পার করে, বহুদূরে শূন্যকে দেখা যায়। চোখধাঁধানো আঁধারপোখরি থেকে মনেহল নদী বের হয় সেথা, ও পাহাড়ে ঝরণা ওড়ায়, এ পাহাড়ে বয়, পাহাড়তলীতে বসে ট্যুরিস্ট সকলে।

বিশ্বাসবনের_লেখা ৩

আলোর বন্যাদেশে মেঘরূপ কথা, কানে ভেসে আসে। পাশটিতে তুমি থাকো। এই একা না হাঁটার অভ্যেস আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, যেন শীতের পরেই একটা বিষণ্ণতাকাল আসবে। কথায় ভেসে আমাদের ভেলা নামে, প্রাচীন সে বিশ্বাসবনে। ফুলেফলে ঢেকে আছে। সিঁড়িগাছে ভরে আছে পার। ঝড়ের শব্দে যেন প্রাণ নেচে ওঠে, আলোজল, আলোমাটি, ভোমরাটি খুশি হয়। শ্বাসরোধ করে ভাবি এইসব স্মৃতি। খাঁ খাঁ মত মনেহল নদী বয়ে চলে। বাসা পোড়া ইছেমতী পাখি, ডেকে যায়, গণদেবতার রবে।

বিশ্বাসবনের_লেখা ৪

রাস্তার প্রতিটি মাইলফলকে বাসনার দূরত্ব লেখা আছে। বড়রাস্তার সেই পাশ দিয়ে কত যে গলির ঘুঁজি, কত যে শব্দ ফুটে থাকে। ধারেতে ব্যাকুলগাছ, ফুলে ঢাকা ঈশ্বরীদানা। তোমার মোহনবাঁশি যেন থামেনা আর। শিরোপারা মাথাচাড়া দেয়। তুমি হও আদিম ভাষার মত সাবলীল, আকাশের মত রঙবাজ। শীতকালীন প্রতিশ্রুতি ভেঙে এবার দেখেনি, ভোমরাটি কোন পানে ওড়ে। ওইযে দূরটি দেখা যায়, যায়না, বাড়ি ছিলো ওইখানে। এদিকে, জারুলতরণী বাঁধা ঘাট। শিস দেওয়া প্রাণীদের ঝোপ, বুনোআঁশ গাছ। কালোরা, হয়ে থাকতো রাস্তার মতো শিরদাঁড়াহীন। এখন সেসব নেই, দিন কেটে তুলে আনি প্রিয়তম স্মৃতি। ঘোরলাগা বিপ্লবধ্বনি। চক্ষু চাইয়া দেখি, দেখে যাই। ভস্মবাগান।

বিশ্বাসবনের_লেখা ৫

এমন বাহারি দেশে মাঠে ঘাটে ব্রণ ফুটে থাকে। শিয়র জুড়ে থাকে প্রেমের বাক্যালাপ। ইনেভিটেবল স্মৃতি। পড়ন্ত খেলার সেই স্মৃতি দেওয়ালগুলিকে আরো মায়াবিনী করেছে। ছুটি নেবার মত এই হাজতবাস কত দূর দূর দেশে নিয়ে এলো। গেয়ে ওঠার দিন, সাড়া দেবার দৃঢ় অঙ্গীকার পার করে বিয়োগান্তক বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে আকাশ বাতাস মাটি। ভবঘুরে মনেহল নদী তার পাশে বসে, বলে, “দূয়ার খোলো গো ষ্যাম, ভেতোরে আশীয়া দেই জল, বীস্বাশবণে ফেড় গাছেরা বারূক”। আল জুড়ে মেঘ ফুটে ওঠে, ধুয়ে যায় কারণের ছায়া, জামাজোড়া আকাশী সিঁদুর। কাজলনয়না স্রোতে টের পাই, দূর সে আঁধারদিঘী, রোদ পেলো আজ।

Facebook Comments

1 thought on “সোমতীর্থ নন্দী-র কবিতা Leave a comment

  1. অনেকদিন পর তোমার কবিতা পড়বার সুযোগ হলো সোমতীর্থদা। ‘কারণজামাটি’র মতন দু’একটা শব্দ ঠিকঠাকভাবে বোধে কুলোয়নি আমার কিন্তু তার বাইরে বাকিটা দুর্দান্ত। খুব ভালো লেগেছে। পরবর্তী লেখার জন্যে অপেক্ষায়।

Leave a Reply