রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা

দ্বারন্দা লিপি

আমার একটা খেয়াল আছে। সে বাজাবে। খেয়ালেরও একটা আমি আছি। সে বাজবে।
তা তুমি করছোটা কী? নিজের ভেতর সুড়ঙ্গ খুঁড়ছো আর সরু গোল হয়ে নেমে যাচ্ছো। কেউ ওঠে নি। চা ফোটে নি। দাঁত বুরুশটা পর্যন্ত আনো নি। তুমি কে গা? তুমি কী গো? দেখছো উচ্ছিষ্ট মদে কাঠকয়লার গুঁড়ো উড়ে এসে পড়েছে। একটা ঢাকুনি লাগে গো। আর একটা চালুনি। বুঝলে?

কীভাবে দেখলে গো পাতার ভেতর পাতা। তারও ভেতর, ভেতরের পাতা। কেমন ভাবে খুললে। আর দেখালে। তোমার চোখ উড়ে গেলো। তোমার ঠোঁট। তোমার বুক ভেসে গেলো। তোমার যোনি।
তোমার হাত ও পা নিয়ে বসে আছি। তোমার কাটা আঙুল। শীত ও মাধবী।

চলো চলো। এখন। এখনি। জল জঙ্গল সব একা হয়ে যাচ্ছে। হাটবারে হাট বসছে কিনা জানা নেই। পসরা যে ফেলে গেছে, তার কোন মানা নেই। চলো কুড়োই আর জড়ো করি। জড়ো করি আর কুড়োই। আর সব ফেলে রেখে আসি। তোমাকে তোমার আর আমাকে আমার করে।

আচ্ছা, তুমি কি অপেক্ষা করো হাঁড়িতে ঘাম লেগে থাকা পর্যন্ত। পাখির আহার করো না আহারে পাখি। তুমি কি কোমলতম নিষ্ঠুর অথবা নিষ্ঠুরতম কোমল। তুমি কি পালক ওড়াও তোমার গোপনে একা। তুমি কি ঘাতক ও ঊরুর ওপর কাপড় তোলা কসাই। তুমি কি রূপ থেকে অরূপ থেকে অপরূপ ছাড়িয়ে নাও। ডালে ডালে জারিয়ে দাও। তুমি কি চাইছো বলো তো, আমি চারকোল নিয়ে বসি। একটা মিথ তৈরি করি। অন্য যে কোন একটা মৃত মিথ। আর তারপর তোমার কানপাশে জড়াই।

তোমাকে পেছনে রাখি। দৃশ্যের জন্ম ও মৃত্যুর পেছনে। শ্রাব্যেরও। তুমি কোথাও নেই এটা মেনে নিতে সংশয়। তুমি সর্বত্র এটা জেনে নিতে ভয়। আমাকে আরো দুপাত্র দাও। মোহ মেশাও। আমাকে ঋণী’ করে রাখো তো। তোমার স্বাদে গন্ধে স্পর্শের ভাঁজে ভাঁজে।

উল্লাস। উল্লাস।
এই আগুন পুড়ে যাচ্ছে। নিজেকে নিজে খাচ্ছে মাত্র। গিলে খাচ্ছে। আর তার সুধা পান করছি আমি। তুমি।
বাকি সব বেখেয়াল। কষ্ট কল্প সব।
দেখো এই রেফারড স্পেস। এই রেফারড টাইম। এই ডায়ালগস, কম্পোসড। এই সাইলেন্স, দ্যাট ইভেন কম্পোসড টু।
আমরা ঈশ্বর ঈশ্বরী। পর্দা নেমে আসার আগে এসো একে অপরের কাছে নত হই কিছু।

ভোর

তোমার আগে যে পাখিটি উঠেছে
তার আগে যে পোকাটি
সারা রাত জাল বুনেছে

সকাল

ছোটো পাতাটির কাছে
আরো ছোটো হতে হয়
ফুলের ভেতর
আরো কোন পিউপা ফুটে থাকে
দেখি বলে
চোখ ধুয়ে নিতে হয়

দুপুর

খাবার ঘর খুলে যা
সিম সিম
যেসব শালপাতায় অন্ন বোনা আছে
শ্রম বোনা আছে
গ্রাস তুলে নেওয়ার আগে
এক নিঃশব্দ প্রণাম
তোমাকেও

বিকেল

ভেতরের জঙ্গল আজ বাইরে এনেছি
দেখো গাছে গাছে ছবি ঝুলিয়েছি
অযুত নিযুত ছবি
এ দৃশ্য জন্ম অতীত
এ দৃশ্য মৃত্যু অতীত

সাঁঝ

কে ডাকছে
গ্লাসের ভেতর থেকে জল
জলের ভেতর থেকে নুড়ি
আমি মেঘ কুড়োচ্ছি
আমার সন্তান সন্ততিও

রাত

আগুনের পাশে রাঙা হয়ে উঠছো তুমি
পুড়ে যাচ্ছে পাখি
আহুতি দিচ্ছি মদ

আগামীকাল

আমি
গুমখুন হয়ে আছি

Facebook Comments

Leave a Reply