রামকিশোর ভট্টাচার্য-এর কবিতা

শ্বাসকষ্টের কবিতা

শ্বাসনালীর মধ্যে জমে আছে সমঝোতার গোপন হিসেব। জিভ টানলেই রহস্য সব বেরিয়ে আসবে অবতার রূপে। তারাই কখন যুদ্ধবিমান হয়ে যাবে… ছররার শিল্প হয়ে শোভা পাবে প্রতিশ্রুতির মৌতাতে। আজকাল মৌতাতের ধ্রুবক পরিবর্তিত হয়। থলথলে সন্ধেবেলা অসংখ্য গুঞ্জন হয়ে উল্টে পাল্টে দেয় রাজকীয় প্রেমকাহিনীদের। প্রেম আমাদের শিরদাঁড়া বাঁকানো বিলাসখানি। পাহাড়ের দু’পাশে দংশনের নতুন আখ্যান…

জিভ কাটা মুখ। উগরে দিচ্ছে ঘৃণার গন্ধ। কাটা জিভ শানে ঘষে ঘষে অস্ত্র হয়ে যাচ্ছে। এবার কয়েক কেলভিন তাপমাত্রায় ছুটে যাবে ওরাল রে। অহঙ্কার দেখাবে অস্ত্রের বোধন। অহঙ্কার আমাদের স্বাধীনতা। মনোহর প্রতিশ্রুতি। শিরদাঁড়ার আঁট বিনুনির ভিতর ভয়ঙ্কর লড়াই। রোদ চুষে খেতে খেতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। চুম্বনের ভিতর তৈরি হবে গামা রশ্মি। এখন ঘরময় বৃশ্চিকসরণির কারুকাজ। কাটা কন্ঠনালীর ভিতর থেকে বেদের সূক্ত আর হিলিয়াম বেরিয়ে এসে ভরিয়ে দিচ্ছে বিশ্বাসের কাহিনী। খুচরো পয়সার বিশ্বাস…

শ্লোক বাজছে। শ্বাসকষ্টের সব কারন মহাকর্ষীয় সুর হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রান্তের দিকে। এসময় ঘনশ্যাম কত মুড়কির কাজ দেখাবে বলে অপেক্ষায় থাকো। কেন্দ্রচ্যুত বন্ধুরা সংকোচন থামাতে দরজির শিল্পকর্ম নিয়ে আলোচনা করে। সামান্য শিশিরটিও শুদ্ধ নয় ভেবে দিনরাত ভিজে থাকা স্তবে। ব্রহ্মকাল বাঁশি বাজায়… আমার ধর্মবিশ্বাস বিস্ফোরণের কারন নিয়ে থাই চাপড়াতে চাপড়াতে ঘুরে যায় উপবৃত্তাকারে, আপলোড সামলায় খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে…

ব্যথাহরণের গান গাইতে গাইতে কখন যেন কারনটাই ভুলে যাই। নির্বিবাদী রাস্তাদের পাশে অভিধান খুলে বসে থাকা হিলহিলে সময় আমাকে দেখে মুচকি হাসে, কচি কচি তান আর ঈর্ষা-মেহফিল সাজানো হয় ইনবক্সের কোলে, ক্যাতক্যাতে সান্ত্বনারা লেগে থাকে দিনগত স্বরলিপির গায়ে, একটু অন্ধকার নামলে ব্যথারা আসে। দরদাম করে। নীরবতার আশেপাশে মণিজ্বেলে খুঁজে নেয় বিতর্কিত জীবাশ্মগুলি…

রূপজগৎ। যানবাহন হীন। তবু পারাপার করছে সম্পর্ক নদী। স্বপ্নে কত বিলাস। অবসর ডাকছে। নষ্টামির গান বেজে উঠলেই প্রশ্ন উড়ছে বশ্যতা নিয়ে। চিচিং ফাঁক অনাগ্রহ। হাপুস-হুপুস আশায় হৃদপিন্ডের ভিতর থেকে হ্যা হ্যা উঠে আসছে আয়ু। তবু শান্তি নেই। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকছে মাথার ভিতরে এফোঁড় ওফোঁর হয়ে যাওয়া ক্ষিদে প্রসঙ্গ। দুর্গন্ধ উঁকি দিচ্ছে তার ভিতরে। আজকাল ছায়াদের গায়েও দুর্গন্ধ থাকে। দূর থেকে বোঝা যায় প্রস্তাব নাকি প্রস্তাবকের ছায়া। আজ সেই বান্ধবী সেতারটিকে ডাকি যার কোনো কার্বন নেই, যে প্রতিদিন রূপের জগৎটি স্পষ্ট করে দেবে…

অবশেষে তুমি বিন্দু হয়ে গেলে। তবু গ্লানির গন্ধ ঘাই মারছে উপবৃত্তাকারে। ধর্ম হাত বোলাচ্ছে তালে বেতালে। আর ওই কয়েক প্রস্থ বর্ণালী গড়িয়ে নামলেই রমঝম বেজে উঠবে যাবতীয় ঠিকানা সহ রূপকথা। জিভ ছিঁড়লেই কবেকার কাবাবের গন্ধ। কন্ঠনালীর ভিতর ঢেলে দেওয়া হবে ঈর্ষার রকমারি কৌশল। কয়েক পাঁইট কৌশলের ভেতরে ভোর… রাত্রি… জেদ… নানা পতাকার রঙ। তবু যদি স্বপ্ন মাথা তোলে? যদি লয়া এসে ঝলক দেখায়? দুলবে জ্যা… দুলবে মিতি… মনীষা বদলে যাবে কচুরিপানায়। রকতারায়… একতারায় বাজবে বিন্দু বিন্দু ক্ষতগান।

দাসঋতু… লালায় ভিজে যেতে যেতে ঘাই মেরে এগিয়ে চলাই রেওয়াজ। তাপ লাগে কাঙালের গায়ে।বুক পকেটে কৃতজ্ঞতা নিয়ে বিবর্তন শুয়ে থাকে আন্তরিক ঘাসে। গতি নেই, বিধি নেই, প্রোপাগান্ডা বাতাসে উড়ে যায় রাজচিহ্নের রম্যগান। লীলাময় পা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। পদের পরিবর্তন দেখে ছ্যা ছ্যা করে নিসর্গ। মোচড় মারে ন্যায়ের দুর্গন্ধ। তবু লম্বা জিভ ভাদরের কুঞ্জবনে বাহু তুলে ইয়াম ইয়াম প্রস্তাব ওড়ায়। একেই প্রথাসিদ্ধ ভেবে দোলে পেন্ডুলাম। ছায়ায় ছায়ায় খরস্রোতা দুধ… রক্ত… অশ্রুজল। স্বপ্ন ভাসে… জ্যান্ত হয়ে উঠবেই মৃত সব প্রতিবাদ টপ্পার আড়ালে…

Facebook Comments

Leave a Reply