প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা

কল্পজল ও জল্পঢেউ, বে-আব্রু করি-না

ঘরে নিয়ে এলাম মানচিত্রের নীল নদী; জন্ম হল জনপদের।
ভালোলাগার স্রোতময় আতরদানি উলটে—নিরালা গ্রাম ও শহর।
পরস্পরের পরিপূরক। স্বচ্ছ কাচের নো-ম্যানস ল্যাণ্ড দিয়ে ঘেরা—
ঘুমন্ত মনের টিলা, নুভূতির ২৯০২৯, জড়োয়া-টেথিস, ঢেউ–স্বরলিপি, জলমুকুরঃ
মুহূর্মুহূ ফ্ল্যাশ, খুশির কম্প্রওষ্ঠে হৃষ্টি-লিপষ্টিক, বর্ণময় নৈশদাগ—ধকধকে
ছায়ার আগুনে সে তন্বী বিদ্যুল্লেখা, তার প্রগাঢ় রক্তিমতা, —উপস্‌,
ভারী অভাব বোধ করি একটি জেরক্সমেশিনের।

সুযোগ পেলেই আয়নার সামনে দাঁড়াতাম।প্রিন্টআউট পেতাম অবিকল।
১০২০ লেজার প্রিন্টার তখনও বাজারে আসেনি।

ঘুণ লেগেছিল শরীরে। একগুচ্ছ ছবি উঠল বুকের। ডাক্তার-বদ্যি, ওষুধ-টষুধ,
পরীক্ষা গাদাগুচ্ছের। রঞ্জনরশ্মির কৃপায়ঃ আছি বহাল তবিয়তে ।

ছবিসহ রঙিন ব্রোশিওরে ছাপা হয়েছে–
আয়নাই নাকি (পুনর্জন্মে) রঞ্জনরশ্মি-জেরক্স মেশিন-১০২০ প্রিন্টার অবতার

হিটলারের বাগান

‘আউসওয়িস্তের পর ,গীতিকবিতা লেখা ,নিছকই বর্বরতা’

ডাকনাম আপার ক্যাম্প। ওর্ফে, ক্যাম্প থ্রি। তীর্থযাত্রীর ভাষায়—স্বর্গধাম।

চারপাশে আড়াল, লতাপাতার পোশাকে ঘেরা সুসভ্য কাঁটাতার
‘লুক থ্রু’ গোছের নয়। বিবস্ত্রা হয়ে, আদিম নগ্ন হয়ে, শুঁড়িপথ দিয়ে
‘কিউ’-তে দাঁড়ায় মানুষ, দলে দলে, প্রবেশ করে বার-বি-কিউতে

বুনোশুয়োর, সম্বর, ছাগশিশু পুড়িয়ে খেত মেসোলিথিক পূর্ব-ইওরোপীয় পূর্বপুরুষ
৬০০০ বছর পূর্বে। সে তো কব্‌বে—পার করে এসেছি আমরা—পোস্টমর্ডানিস্ট।
আজ দীপাবলী। মাইকে বাজছে – ‘যেথা আছে শুধু ভালোবাসাবাসি…’

আদিমতম পদার্থ পৃথিবীর—গ্যাস ঃ ব্যবহারকারী আধুনিকতম আর্যমানুষ।
দৈর্ঘ্য ছাব্বিশ ফিট, প্রস্থ ১৩ ফিট চেম্বার। দু-দুটো দেয়াল। মাঝখানে পুরুষ্টু
মাটির আস্তরণ। টিনের চাদরে মোড়া মেঝে।কেঠো তক্তার দরজা । ফাঁক বোঁজাতে
যথেষ্ঠ রাবার ঠাসা । ব্যাধি—দু’হাজার বছর পুরানো ‘ধর্মীয়’ শত্রুতা।

ট্রেনপিছু প্যাসেঞ্জার গড়ে তিনহাজার। স্বর্গারোহণের দায়িত্বে মোটামুটি তিনশো কর্মী;
প্রথমদিকে লাগত ঘন্টাতিনেক—যন্ত্রের মানোন্নয়ন ঘটিয়ে প্রতি দেড়ঘন্টায় ‘প্রসেসড্‌’
প্রায় পনেরো হাজার,যদিও মেশিনের চূড়ান্ত ব্যবহারযোগ্য ক্ষমতা ছিল বাইশহাজার।

কবি লেখেন— ‘ডোন্ট ফরগেট, দি পোয়েট রিমেমবারস্‌’

Facebook Comments

Leave a Reply