সম্পাদকীয়

পাতাঝরা শীতের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছে ভোররাতে আমার নামে চুঁইয়ে নামছে শিশির, ওই কিসের যেন শব্দ হল হিজল গাছের কাছে, আরে মাঠ ঘাটে কাশফুলের ওপর কুয়াশা শুয়ে আছে যেন। কিন্তু এই শহুরে,আধা শহুরে যাপনের পাকস্থলীর ভেতর এখন অবকাশ বড় কম। ব্যস্ততা, অসুখ আর জীবনের ভয়, এবং জীবিকা হারানোর বিবমিষা ঠেসে ধরেছে আমাদের। এর মধ্যে কবিতা? নেই। কবিতা উৎসব? থাকার কথাই নয়।

সেটা আমরাও ভেবেছিলাম। তবু সবকিছুর পর কিছু একটা থেকে যায় যেন, সে আমাদের তাড়িত করে, সে আমাদের নিহিত করে অসীমের দিকে। অনন্তের যাত্রা থেমে থাকে না। আমাদের অস্তিত্বকে এড়াতে পারিনা আমরা। ওই যে বললাম পাতাঝরা শীতের দিকে হাঁটছি পায়ে পায়ে। পেরচ্ছি হেমন্তের রোদগুলি, সকালের শিশির পড়ে ভারি হয়ে থাকা মাকড়সার জালগুলি। যদিও এখনো সতত অবারিত পায়ে বাইরে বেরিয়ে পড়া যাচ্ছে না তবু এই মানস যাত্রা কি আমরা এড়িয়ে যেতে পারছি? না। নিস্তব্ধ সন্ধ্যে, অতল দুপুর যেন কথা বলে যাচ্ছে। মিশে যাওয়া হাওয়ার সাথে, ডালে বসে থাকা মাছরাঙাটির সাথে আর বেপথু মনটির সাথে অবিরল। তাই বারবার তারই দোরগোড়ায় ভিক্ষু শ্রমণের মতো এসে দাঁড়িয়ে পড়ছি। কবিতা বাড়ি আছো নাকি?

তার দরজায় করাঘাত করতে আমরা একা চাইনা, চাই সবাই মিলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়তে তার ড্রয়িংরুমে। সমস্বরে ছুঁয়ে দেখতে চাই কবিতার স্বরলিপি। নিঃশ্বাসে নিতে চাই সেই ঘ্রাণ…শব্দের, অক্ষরের, ভাবনার, প্রতিভাবনার, সমভাবনার ঘ্রাণ নিতে চাই, বন্ধুর ঘ্রাণ নিতে চাই, আপনাদের প্রত্যেকের  ঘ্রাণ চাই আমরা,

কবি ও পাঠক, অনুরাগী ও সমালোচক। সবাইকে চাই আমাদের এই কবিতার দালানবাড়িতে, কবিতার এই মাঠে ময়দানে…আসুন সবাই আরো বেঁধে বেঁধে থাকি। এই অসময়ে আসুন নিজেদের ভরিয়ে তুলি কবিতার বিস্ময়ে, আনন্দে আর কবিতারই ছন্দবদ্ধতায়। আসুন আরো কাছাকাছি থাকি, কবিতায় থাকি,কবিতার উৎসবে যোগ দি প্রত্যেকে !!!

অপরজন

অক্টোবর, ২০২০

Facebook Comments

Leave a Reply