কবিতার যাত্রায় কবি কবিতা ও পাঠক নিয়ে : চিত্তরঞ্জন হীরা
কবি সমর রায়চৌধুরী সম্ভবত সত্তরের কবি হবেন। তিনি একটি “কবিতার ইশতেহার” রচনা করেছিলেন ২০০২-২০০৮ সালের মধ্যে। সেখানে এই সময়কালের কবি ও কবিতা সম্পর্কে তাঁর ভাবনার ২০৭ দফা নির্দেশিকার মতো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। এই ভাবনাগুলির মধ্যে ভাবনার প্রচুর রসদ রয়েছে। যেমন ধরা যাক –
৫. দৃষ্টিহীনদের মতো করে দেখতে হয়, শুনতে হয় বধিরদের মতো করে, মাথা দিয়ে।
১০. কবি ও কবিতার মধ্যে চলতে থাকে সর্বব্যাপী এবং মর্মঘাতী এক যুদ্ধ, যা সর্বদাই অব্যাহত ও অমীমাংসিত থেকে যায়।
১৩. কবিতা একরকম সাংকেতিক ভাষা– যে ভাষাতে কবিতার রচয়িতা ও পাঠক এক দার্শনিক সঙ্গমে লিপ্ত হন।
আপাতত এই পর্যন্ত এসে আমরা কবি কবিতা ও পাঠকের অবস্থান সম্পর্কে একটা ভাবনার সূত্র পেলাম। একথা সকলেই মেনে না নিলেও আমরা কমবেশি এরকমই ভেবে থাকি। তবে কবিতার পাঠক নিয়ে মাঝে মাঝেই একটা ভাবনা আমার মধ্যে কাজ করে যে, আচ্ছা আমি নিজে কি একজন সত্যিকারের পাঠক ! কবির সঙ্গে আমি যে পাঠক তার কি সেভাবে কোনও দার্শনিক লিপ্ততা ঘটে ! কতটুকু নত হতে পারি আমি !
দার্শনিক লিপ্ততার প্রশ্নে অনেকের ভেতরে বিরোধ দানা বাঁধতে পারে। আমার উদ্দেশ্য সে ব্যাখ্যা বা বিতর্কের মধ্যে যাওয়া নয়, একজন পাঠক হিসাবে কবিতার কাছে পৌঁছনোর রাস্তার কথা বলতে পারি। স্বাভাবিক সত্তা দিয়ে একটি কবিতার কাছে পৌঁছনো যায় না এই কারণে কবি সমর রায়চৌধুরী দৃষ্টিহীন এবং বধিরদের কথা উল্লেখ করে মস্তিষ্ক ব্যবহারের কথা বলেছেন। স্বাভাবিক সত্তার বাইরে দাঁড়িয়ে এই কারণেই বিষয়টা দেখতে হবে, এই সংসারে সাধারণ মানুষ কবিতার কাছে কতটুকু নিজের আনন্দ খুঁজতে বসেন ! মেনে নিতেই হবে কবিতা এমন একটি মাধ্যম যেখানে জোর করে কারও অনুপ্রবেশ ঘটানো সম্ভব নয়। কবি এবং কবিতার পাঠক – দুজনেই কথাজাতক। আত্মার মিলন ছাড়া ভাবের উন্মেষ সম্ভব নয়। এখানেই কবি সমর রায়চৌধুরীর ‘দার্শনিক সঙ্গমে লিপ্ত’ হওয়ার কথাটা সমর্থন পেয়ে যায়।
বারবার ‘কবিতার পাঠক’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে এই কারণে, পাঠক নানারকম হতে পারেন কিন্তু কবিতার পাঠক ওই বিশেষ মনোজগতে অবস্থান করেন বলেই তিনি ভিন্ন। এখন কথা হলো আমাদের ওই মনোজগতটা কীভাবে গড়ে ওঠে ! অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় আমাদের পাঠ ও বোঝার দিকটা পূর্ব-নির্ধারিত কোনও তত্ত্ব বা ধারার নির্দেশেই গড়ে ওঠে। এই বুঝতে শেখাটাও তাই একটা প্রতিষ্ঠানের মতো। বিরোধিতা করতে করতে একটা প্রতিষ্ঠান ভেঙে আরেকটা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। যেমন ঐতিহ্যকে নস্যাৎ করতে করতে যা গড়ে ওঠে সেও একদিন ঐতিহ্য।
এখন কথা হলো পাঠক কী বুঝতে চেয়েছেন এটি একটি দিক, কবি কী বলতে চেয়েছেন সেটি আরেকটি দিক। এই দুটি দিক এক বিন্দুতে না মিললেও আমি-পাঠক কী বুঝতে চাইছি তা নির্ভর করছে আমি কীভাবে দেখতে শিখলাম তার উপর। একটি কবিতা এখান থেকেও নানা পাঠকের মধ্যে নানাভাবে পৌঁছাতে পারে।
পাঠক হিসাবে আমি একটি কবিতার কাছে কী প্রত্যাশা করি ! –মনের খোরাক ? –সেটা কি ? –আনন্দ ! –সুখ ! আসলে হয়তো তেমন কিছু নয়। হতে পারে আমার অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্যের অভিজ্ঞতা কতটা হুবহু মিললো বা তার কতটা কাছাকাছি গেল বা যা আমি ভাবিনি তার বাইরে নতুন এমন কিছু যা মুহূর্তে মস্তিষ্কে একটা আলোড়ন তুললো। আলোড়নটা আনন্দ হতে পারে। পাঠক যদি নিজে কবি হন তাহলে পাঠের পর তাঁর নিজের একটি কবিতাকে পেয়ে যাওয়ার উৎসারণও হতে পারে। এভাবেই।
পাঠ অনেকরকম হয়। পাঠের পর অনুভূতিও বিভিন্ন রকম। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি কবিতার কথা মনে পড়লো এই প্রসঙ্গে, তিনি একসময় দেখেছিলেন –
ভুবনেশ্বরী যখন শরীর থেকে
একে একে তার রূপের অলঙ্কার
খুলে ফেলে…
সে সময়ে আমি একলা দাঁড়িয়ে জলে
দেখি ভেসে যায় সৌরজগৎ, যায়
স্বর্গ মর্ত পাতাল নিরুদ্দেশে…
কী আশ্চর্য না ! কবি বীরেন্দ্র সম্পর্কে প্রাথমিক যে ধারণা বা পূর্বনির্ধারিত যে পাঠ তার উপর একটা আঘাত এসে কিন্তু পড়লো। প্রথমেই মনে হতে এরকম কবিতাও তিনি লিখেছিলেন ! ফলে এই অপ্রত্যাশিত পেয়ে যাওয়াটুকু আমাদের যেমন আহ্লাদিত করতে পারে তেমনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোরও সুযোগ করে দেয় যে, কোনও কবিকেই নির্দিষ্ট কোনও ফ্রেমে বেঁধে ফেলা যায় না। আসলে আমরা পাঠকরা পূর্বাপর পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যখন একটা নতুন পথের সন্ধান করবো, তখনই এই পাওয়াগুলো আমাদের ভেতরে নতুন নতুন আলোড়নের পথ তৈরি করবে। বলা যায় দ্বান্দ্বিক প্রতিফলন ঘটাবে। কারণ এই দ্বন্দ্ব ছাড়া নতুন বাস্তবের উন্মেষ বোধহয় সম্ভব নয়।
যেমন আরেকটি কবিতার কথা মনে পড়ছে –
আগুন রঙ-বসনে ভূষিত ফাঁসুড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা খাচ্ছে ;
গোপন-নিরাসক্ত-লোভীরা চাইছে না নামুক তন্দ্রালসা
তবু নামে।
(নারায়ণ মুখোপাধ্যায়)
এখানেও কবিতাটি পাঠের পর আমাদের পূর্বনির্ধারিত পাঠের ফ্রেমটি কিছুটা হলেও ভেঙে যায়। কবি এবং কবিতা, ব্যক্তি এবং বস্তু, দুটি সত্তাই চেনা গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে এসেছে। এই নির্মাণের মধ্যে পুরে দেওয়া হয়েছে সেই কাঠামো এবং গূঢ় সংবেদনা যা পাঠকের প্রচলিত পাঠ-অভ্যাসের বাইরে। এবার নিজস্ব বোধ ও অনুরণন দিয়েই উদ্ধার করতে হবে। অমোঘ সেই নির্দেশটুকু শুধু সংকেতের মতো ঘুরে ঘুরে বাজতে থাকে।
আমরা আসলে কবিতার ভেতর-কাঠামো এবং মনোজগৎ নিয়ে একটু ভাবতে বসেছিলাম। বাইরের কাঠামো নিয়ে অনেক অনেক কথা হয়েছে, হচ্ছে এবং আরও হবে। সময়ের আশ্চর্য প্রভাব ভেতরে ও বাইরে সমানভাবে পড়ে। কবিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ভাষা ও প্রকরণে বদলে যায়। কিন্তু কীভাবে বদলায় – এটা একটা লক্ষ্য করার বিষয়। কবিও ভাববেন, পাঠকও ভাববেন। কোনও ব্যক্তিই সমাজের ঊর্ধ্বে নন। ফলে পাল্টে যাওয়া সময় ও সময়ের সমস্ত প্রবণতা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-বিষাদ, ক্রোধ-অভিমান-ব্যর্থতা সবই আমাদের জীবনে সমান ক্রিয়া করবে এবং তাড়িত করবে। কবি শুধু তাকে প্রকাশের রাস্তাটি খোঁজেন। এই প্রকাশের সঙ্গে রয়েছে প্রথমত স্বকীয় বা স্বতন্ত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা। জীবন দেখার চোখই একজন কবিকে আলাদা হতে পথ দেখায়।
কবিতার একটা মনস্তাত্ত্বিক লগ্নতা রয়েছে, সেখানে কবির মন, দার্শনিকচেতনা, সামাজিক মূল্যবোধ সব বিভিন্ন স্তরে স্তরে শব্দের মধ্যে প্রোথিত হয়। কবির শব্দ সময়ের তাড়না নিয়ে প্রকাশের আশ্রয় খোঁজে। আশ্রয়টি ভাষা ও অবয়ব মিলেই গঠিত হয়। কোনও কবি যখন দেখছেন মেঘের হ্যাঙার আঁকড়ে ধরে বৃষ্টি ঝুলে থাকতে পারে বা কেউ শুনে ফেললেন এক ফোন থেকে আরেক ফোনের মধ্যে সমস্ত কথার সঙ্গে নীরবতাটুকুও। এই দেখা বা শোনা তো স্বাভাবিক পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের ঘটনা নয়। এর সঙ্গে চেতনতরঙ্গে ভেসে উঠছে আরও আরও যে ঘটনাপ্রবাহ, তার মিলিত সম্ভাবনা এই সব দেখা ও শোনাকে সংঘটিত করে। আমরা দেখছি একজন কবি অনুভব করছেন –
বড় ভারী হয়ে আছে শূন্যতার ভার
ঘরময় জাঁকিয়ে বসেছে
জানলার শার্সিতে তার ধ্বনির ঝলক ভেসে ওঠে
(বিজয় মাখাল)
এই যে শূন্যতার ভার অনুভূত হলো, তার ধ্বনির ঝলক ভেসে উঠলো, এসব হলো কবির জগৎ। যে জগৎ কল্পনার হলেও কবির বাস্তব। এই কাল্পনিক বাস্তবতার মধ্যে যে রহস্য রয়েছে, যে অমীমাংসিত বিস্ময় রয়েছে, একে সরল সমীকরণে ব্যাখ্যা করা যায় না। কবিতার নিহিতে যে জীবন তাকে খুলবো বলেই খোলা যায় না, বাজাবো বললেও বেজে উঠবে না, আগে চাবিটি চাই। তারপরও দেখা যাবে শুধু এক রহস্যের দ্বার উন্মুক্ত হলো, ভেতরে প্রবেশ সম্ভব হলো, তারপর তাকে পেরিয়ে আরেক রহস্যের বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়াতে হলো।
সময় প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে চলেছে। জীবন পাল্টে যাচ্ছে সময়ের সেই অভিঘাত নিয়ে। ফলে জীবনকে দেখাটাও পাল্টে যেতে থাকে। সময়ের ভেতরের পর্যায়ক্রমিক আলোড়নগুলো আরও আরও নতুন রহস্য সৃষ্টি করে। সেইসব রহস্য উন্মোচিত হতে হতে যেখানে এসে দাঁড়ায়, তখন কারও ভাষা এমনই হতে পারে –
জানি কনুই অব্দি চাঁদ উঠবে আভায় ডোবায়
ছুটি গুনছো পদ্মপাতা
আঙুলে বোনা এটাই মহুয়াগ্রাম
জ্যোৎস্নার কড়া নাড়া…
(যাদব দত্ত)
এভাবে শব্দ অনির্দিষ্ট যাত্রায় নতুন সময়ের ভাষাকে চিহ্নিত করে। আত্মসন্ধানের পথ বেয়ে এভাবেই একজন কবি নিজের শব্দবিশ্ব গড়ে তুলতে চান। আপাত সংযোগহীনতার মধ্যে সংযোগ, আপাত দৃশ্যহীনতার মধ্যে বহু বহু দৃশ্য। তাকে জুড়তে জুড়তে বেজে-বাজিয়ে একটা উন্মোচন। কবির বোধের গাছটি তার শেকড় কতদূর চারিয়ে দিয়েছে তাকে উদ্ধার করতে বারবার ওই সৃষ্টির সামনে এসে দাঁড়াতে হয়। কবির যেমন একটা নতুনের খোঁজ থাকে পাঠকেরও সেই খোঁজটা ভীষণ জরুরি। এই খোঁজের পাড়ে বসে দেখা নদীটার ডুব ডুব সাতকাহন চলেছে সভ্যতা নিয়ে, সংস্কৃতি নিয়ে। বয়ে চলেছে বদলে যাওয়া জীবনের ভাষা, ব্যক্তির ভাষা। ভাষাই বলে দেয় –
বাইরে কিছু শূন্যস্থান নেমেছে। টুসকি দিয়ে যত গ্রীষ্ম ফেললে চৈত্রে,
ইন্টারনেট থেকে তাকে দাও এক গ্লাস শরবতের প্রতিফলন। দাও –
রঙ তোলা কুরুশ কাঁটায় এক অভিমানী মোটর সাইকেল।
(ধীমান চক্রবর্তী)
চলমানতার বৈচিত্র্যে আমরা লক্ষ্য করতে পারছি কবিতায় শব্দের মধ্যে নৈঃশব্দ্যের খেলা কীভাবে নতুন ব্যঞ্জনা পেয়ে যাচ্ছে। পেয়ে যাই অস্থিরতার মধ্যে আশ্চর্য নীরবতাকে। শূন্যের মধ্যে নিশূন্য, উত্তাপের মধ্যে নিরুত্তাপের এক একটি রঙ, তার প্রতিফলন, তার ফলিত রশ্মি আর গতির সঞ্চার। গতিময় এই বিশ্বে সবকিছুই দ্বান্দ্বিক। তো এখানে একটি বেদুইন ফুল কোথায় ফুটতে পারে বা তার বীজ উড়ে এসে কোথায় বসবে, সে রহস্যও দ্বান্দ্বিক। অনিশ্চিত কান্না ও কাজলের প্রতিবিম্বে যে মুখটি বসে আছে তাকে সহজে ধরা যায় না, কিন্তু তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা বৃথা। কারণ কবির বাস্তব কবিই রচনা করেন, আমাদের শুধু তাকে খুঁজে নিতে হয়।
এ বিশ্বের সমস্ত কিছু যেমন দ্বান্দ্বিক, ওই দ্বান্দ্বিকতার রহস্যই আলো-অন্ধকারকে ধরে রাখে। আমরা কেউ যখন আলোর সন্ধান পাই, একই সঙ্গে অন্য কেউ অন্ধকারের উৎসের দিকে হেঁটে যেতে চাইছেন। বহুরৈখিক আলো আর বহুরৈখিক অন্ধকার মিলে সময়চেতনা। সময়কে বুঝতে হবে চিন্তার সূক্ষ্মতা ও কল্পনার প্রাবল্য দিয়ে। সময়চেতনার সঙ্গে যখন ভাষাচেতনার মেলবন্ধন ঘটে তখনই, যান একজন কবি চলমানতাকে ধরতে পারেন। যা থাকে জাগতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে। কবি বলছেন –
সঞ্চারশীল গুণ ছাড়া আবার কবিতা হয় নাকি ? কবিতাদের পুরো শরীরটাই প্রায়
ডাক্তারের খপ্পরে। অবশিষ্ট ও অযোগ্য সামান্য যা আমাদের কাজে লাগে তড়িৎদল
হিসেবে এবং আমাদের মনকে চালাতে থাকে, তাই কবিতা। ভাবনাই কবিতা।
(বারীন ঘোষাল)
এক গিনিপিগ জীবন। ভেতরে কাটাছেঁড়া হচ্ছে। একজন কবি সেখান থেকেই পেয়ে যাচ্ছেন তাঁর কবিতাভাবনার কবিতাটি। আমরা ভাষাচেতনার কথা বলছিলাম, তা হলো এমন এক ভাষাযাপন বা শাব্দিক মূল্যবোধ যা ভাষার মধ্যবর্তী চেতনাকে সম্প্রসারিত করে। ছমছমে তার পায়ের চিহ্ন এসে পড়ে সাদাপাতায়। ভাবনার রিল খুলে যায়।
বুদ্ধদেব বসু একটি চমৎকার কথা বলেছিলেন –”ভীড়ের হৃদয় পরিবর্তিত হওয়া দরকার।” তো আমাদের বসতে হবে এই ভীড়ের ছোঁয়া বাঁচিয়ে। একজন পাঠককেও বুঝে নিতে হবে এই স্পর্শহীন স্পর্শের উত্তাপ। এই বোঝাটাই হলো উন্মোচন। কবিতার উন্মোচন। কবিতাকে নিয়ে ভাবনার ভাষাও তার রূপান্তরিত বিষয়ের মতো উপযুক্ত বাতাবরণ খুঁজছে। তাকে ধরতে হবে তো। কবিতার মধ্যে একটি শব্দ অন্য একটি শব্দকে আহ্বান করছে। তা অপ্রত্যাশিত হলেও অনিবার্য। যা আসে জীবনের পারিপার্শ্বিকতা থেকেই। যেমন –
অভাবের উপমায় হাঙরের প্রতিধ্বনি দেখে
আরো কঠিন হয়ে ওঠে তরবারি
সূর্যাস্তের পত্রবাহক অন্ধকার যাত্রাপথে যেতে যেতে দেখে
সদ্য কাটামুণ্ডু থেকে রাতের হরফগুলো ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়
(শান্তিময় মুখোপাধ্যায়)
বলা হচ্ছে পাঠকের চাহিদা পূরণ করার কোনও দায় নেই কবির। কবিতার মাধ্যমে একটা শিল্প সৃষ্টি করা হয়। এই শিল্পের মধ্যে যেমন পুরে দেওয়া থাকে সময়ের নানা অস্থিরতা, তেমনি এই শিল্পকে বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করা হয় সামাজিক উদ্দেশ্য নিয়েও। কিন্তু একজন কবি তাঁর কলমকে কীভাবে ব্যবহার করবেন সেটি তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। তবে কবি চেতনবিশ্বে ঘটে যাওয়া আলোড়নগুলো যেভাবে ধরেন, পাঠককেও তার সঙ্গী হতে হয় একজন যথার্থ সহযাত্রী হয়ে। অনালোকিত আলোর জন্যে একটু অপেক্ষা চাই। আমরা একটু একটু করে এগিয়ে যেতে চাই সম্ভাবনার পথ ধরে। যে ইতিহাস রচনা হচ্ছে গোপনে গোপনে তার দিকে।
Posted in: October 2020 - Cover Story, PROSE