বিশ্বরূপ বিশ্বাস-র কবিতা

১.

রাতের বেলা মহাকাশ দ্যাখো আর
দিনের বেলা হরদম কবিতা লেখো
কবিতার চাইতে আজ ক’বির গেরিলাযুদ্ধ
এখানে ওখানে সেখানে বেশী বেশী তবু

আমি জানি আমি বিদেশী হ’লে
আমি জানি আমি বিদেশে জন্মালে
আমি নোবেল পুরস্কার পেতাম
বাঙ্গালীর পশ্চাৎদৃষ্টি এখনো গ্যালো না
গ্রামের হিন্দুরা এখনো কমালো না ইসলামিক বিদ্বেষ
জীবদেহের কথা ভেবে আমার কান্না পায় প্রচণ্ড
বীজক্ষেতের অন্তরায় গেঁয়ো খেতমজুর
তন্তু-সংক্রান্ত সুবিশাল দীনদুনিয়ার মালিক ও হুজুর

পদাতিক শিশুর বালকসুলভ ইনফ্লিক্টে
মাটির প্রত্যয়বহুল ধানচাষ বহুকাল
সাহায্যের অনুমতি নিতে গেলে অনুর্বর অনুমানে
ঊষরতায় পৃথিবীর সূর্য আটকায় পাহাড়ে পাথরে
অল্পপরে-ই অসহায় অধীনস্থ জীবনকে আর
সাহায্য করা চলে না চলে না

এই পৃথিবী-ই আলোর পরিক্রমণ আতুরালয় অথচ
হয়রানি না হয় চাঁদের বন্ধ্যাত্ব টুটে গেলে জ্যোৎস্নার
এ গৃহে মানুষ জন্মায় ও ঘরে মানুষ মরে
রুগ্নাবাস বক্তিয়ারে ছাড়ে লংজিভিটিও ছাড়ে
একটুকরো আরশির কাচনিয়ন্ত্রণে চোখ কুঁড়ে
জীবন লম্বালম্বি অভাবে স্বভাবত-স্বভাবে
মারাত্মক-ই ভবঘুরে

এ মহাপৃথিবীতে ক্ষণস্থায়ী কথাবার্তায়
চুপচাপ থাকে যে মহারাজাও হয় সে।।

২.

সম্ভবত মায়ের শেষ সৎকারে যাচ্ছি। চিরদিনের জন্য পৃথিবীর প্রথম দুনিয়া মুছে যাচ্ছে আমার। আজিকার তাণ্ডবনৃত্যে টিয়া পাখিদের কথা অনুবাদ হবে মানুষের শোকের ভাষান্তরে ভ্রমণ। খোদাই করা লাশের আনন্দ নিশীথ ঝাঁকের অন্ধকার। লোভী আত্মার কষ্ট ঘুঘুর মতন ডাকে ব’লে পুনমুর্দ্রণ ঘটে ঘটনার আত্মার অদৃশ্য প্রবাসীতে। জীবনে জন্মের মরণ প্রকাশিতে নদীকণাজলে সংখ্যার কাগজে আয়ুর পুড়ে যাওয়া বইগুলো। হাড়ের ধুলো মাখতে মাখতে চায়ের কাপ জলজ্যান্ত সমাধি। বাবা মারা গেলে বসন্তসকালে আমি মুক্তিবাদী ব্যোমপথে। আমার জনয়িতার মাঝখানে অলৌকিক মাতৃত্বের হাঁক আলোয় সৌন্দর্য সামিল করে। মা ম’রে শুয়ে থাকলে ঘরে এই দেশ মরা ম’নে হয়। এই বাড়িও মরা ম’নে হয়। এই মানানসই জনম ম’নে হয় বেমানান।

ঠাণ্ডায় নিষাদ সামনে এলে বুঝবো তারে একটা সমুদ্র মৎস্যগন্ধাকন্যে। খুঁজবো তারে বাড়ি বাড়ি অতিরিক্ত সক্ষম সর্ষে। শুরুর পড়ন্ত কোকিলে স্বর্গের গান আঁতকে গাওয়া হয় সবাইমিলে। আস্তেসুস্থে কুড়িয়ে খাওয়া শিল্পকলার নাম কবিতাচর্চা। হজম না হ’লে গ্রহ চাঁদের জ্যোৎস্নাও বদহজম হবে সমস্ত আনন্দের আড্ডায়। এই সিংহীর অকারণ শৌভিক কতরকম ফুর্তিবাজে সপ্তাহের গোল্লায় যাওয়া বাঁশি। তোর অহমিকা তোর দৃষ্টিকোণে সমুদ্যত পিপাসা শোনে হিংস্র সংগীতের। তোর জাদুঘর কবচের মুচড়ে যাওয়া বৃষ্টিতে মর্ত্যলোকের চুলখোলা সূর্য। মুখ তাই কাছাকাছি খুন হ’য়ে আসে। বুক তাই স্টাইলের বিনিময়ে বিস্ময়ে সন্ন্যাসীর শিরোপা। তোকে ফোন করা মানে মৃত্যুকে আহ্বান করা। তোকে ফুলগাছে ধরা মানে লৌকিকতাবশত উপহাসে সমর্পণ। একাকী মরণ।

অদ্ভুত গ্রাহক যখন নিঃশব্দে পাঠক হয় লঘু ঘাসের মসৃণ অক্ষরে তখন তোমার নাম হয় কবি। তা ছাড়া ঢেউয়ের ভিজে জিভে দাঁড়ালে কেউ তোমার নয়। সিন্ধুতটে মূর্তি আর মুক্তি একটি আশ্চর্য পদশব্দমাত্র। তার ইতিহাস নেই। তার কাব্যনাট্য নেই। অসীম ফলের মতন যৌবনের ঘ্রাণ ঘিরে ধ’রে রাখে আমাদের। ঈর্ষাও থাকে ঝর্নার ঘুমন্ত স্রোতে সাম্প্রতিক। কে এই কুমারীর সর্বশরীরকে লুটে নিতে ঠিকঠাক ঠিক তা প্রাসাদও জানে না। নুন যদি চেনো তুমি তাহলে সিগারেটের ছাইও চিনতে পারবে। না পারলে স্বেদ কস্তুরীশিহরিত জেদ যেন ক’মে না আসে দেহের। সমস্ত শয়তান-ই কাফের নারীর বিস্মৃত মেঘের উপচ্ছায়ায়। সংবাদপত্রের থুথু উৎসর্গ ক’রে পোশাক যেন নায়ক হয় এই সোনার মহাশূন্যে। একবার আকাশের তারা গুনে ফেলতে পারলে মুখের আলজিভ অমর হ’য়ে যায়।

হাসির বিনাশে কান্নাকাটির আওয়াজ আমি নিম্নস্বরে শুনতে পেয়েছি। অপবিত্র ধানের রং কভু হলুদ উত্থানে অভিমান ক’রবে। দশটা জলপট্টির কেটলি মৃতদেহকে জ্বালিয়ে জগৎ করে উদ্ধার। শ্লথ মাটি রক্তের মধ্যে সত্য তোশকের গরম আগুন। বিশ্বাসের বালির উপর আর্টের প্রক্রিয়া সচল। বল একবার মধ্যরাতে অষ্টপ্রহরের ভালোবাসা বল। যমজ মৃত্যুর কাঁটায় মাংস লেগেছে লোহার। সীমানা ছাড়ায়ে চিরঅলীক আজকাল সঠিক ভাসানে ফেরে না। আমি ম’রে গেলে আমার চাকরিও ম’রে যাবে। আমি ম’রে গেলে আমার গাড়িও ম’রে যায়। নখের শেষ বিন্দুমাত্রা পর্যন্ত আমাদের জীবনের চোরাবাজার। সেখানে আবহমান শ্লোক লিখতে হয় সশস্ত্র ভাবে ঐতিহাসিকে টিকে থাকার জন্য। সুইসাইড নোট আগের থেকে লিখে রাখার জন্য আমি আত্মহত্যা ক’রতে পারলাম না শেষমেষ।।

Facebook Comments

Leave a Reply