স্মরণ : অভিষেক মুখোপাধ্যায়

অভিষেক মুখোপাধ্যায় (জন্ম – ১৯৮৩) চলে গেল সপ্তমীর রাতে। এবং, সে, বস্তুতঃ, ভীষণভাবেই রয়ে গেল অনেক অনেককিছুতে, ওতপ্রোতভাবে। সাম্যের, সমানাধিকারের স্বপ্ন দেখা প্রতিবাদী, লাজুক, উজ্জ্বল, মেধাবী, সংবেদনশীল, যুক্তিবাদী মানুষটি অ্যাকাডেমিক পড়াশুনো ও গবেষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাফল্য অর্জন করেছিল দেশ ও বিদেশের একাধিক নামজাদা প্রতিষ্ঠান থেকে। অর্জন করেছিল বহু বিচিত্র মানুষের অনস্বীকার্য চিরভালবাসাও। পর্যটন ছিল ওর মস্তবড় নেশা। পাশাপাশি, অসম্ভব পড়ুয়া অভিষেকের লেখালেখির ব্যাপ্তিও বিস্তৃত। লেখালেখির শুরু ২০০৩ নাগাদ। ওর কবিতা ও গদ্য বিভিন্ন হার্ড কপি ও অনলাইন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত। ‘Q-এর কমলা জুতো’, ‘ভ্রমণকাহিনি’, ‘নিরুদ্দেশ সম্পর্কে কয়েকটি ঘোষণা’, ‘চরিতচচ্চড়ি’… নভেলা / বড়গদ্য লিখেছে অনেকগুলো। তবে, মনে হয়, ওর অ্যাকাডেমিক, রাজনৈতিক, মানবাধিকার কর্মী, ভ্রমণপিপাসু (এবং, অবশ্যই গদ্যলিখিয়ে) ইত্যাদি পরিচয়গুলোর পাশাপাশি কবি পরিচয়টা অনেকের কাছেই তেমন পরিস্ফুট নয়। ইদানীং একেবারেই লিখতে চাইত না কবিতা। অনেক অনুরোধেও লেখেনি। পরিচিত প্রিয়জনেরা হয়তো অনেকেই ওর কবিতা পড়েননি। ওর বিভিন্নরকমের লেখাপত্র সব একজায়গায় জড়ো করে একটা বই হওয়া উচিত। হবেও নিশ্চয়ই। আমরা অপেক্ষা করব…

এখানে অভিষেকের কিছু কবিতা একজায়গায় রাখা হল… আপনারা ওর কবিতা পড়ুন। উল্লেখ করা থাক, এই কবিতাগুলি বৈখরী ভাষ্য, বাক এবং জার্নি নাইন্টিজ পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।

অভিষেক মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা

গ্রীষ্মকাল, সুদেষ্ণা এবং অন্যান্য

টের পাওয়া গেল; গ্রীষ্মের আদল বদলে যাচ্ছে
ঘড়ির ঝলকে পড়ে আছে তুষারের অকটেভ
ঘুলঘুলি ফুটে উঠলো
কবেকার ঘামের পুনর্জন্ম হল
নূপুর; ঘাঘরার পোর্সিলিন ঝরনায়

যতিচিহ্নগুলো সামান্য ঝুঁকে হয়ে গেল ঝিনুক

রাস্তা দিয়ে তুমি ফিরে গেলে
গোলাপি বাসের আলো
কেয়ার গায়ে কথা বলা ওড়নার ঠাণ্ডা দাগ

= = = = = = =

মালকোষ

ছাদের পাশ থেকে ফোয়ারা উবে যাচ্ছে,

তোমার কোলের রঙিন-অর্গ্যান-রেওয়াজ
ফোটে বেডকভারের গায়ে
ফুটে ওঠে আলো কি সবুজ আশ্রয়ের ফাঁকে ফাঁকে?

মাফলারের গায়ে শীত লেগে আছে
চিঠি তার আর্শি খুললো মালকোষে

ওগো, ছলকে পড়া রোদের কোয়া
তার ছলকে, এ.সি. বাসের রঙে
আলোকিত হয়ে যেও,
তার গভীরে এঁকে রেখো ডানাময় রেডিওপরাগ,

তোমাদের বুকের গোপনে গোপনে

যেন সে মালকোষে ভিজে গেছে
যেন সে ছুঁয়ে ফেলেছে কুয়াশার অরবিট।

= = = = = = =

রোদ্দুর

সাদা আকাশ একটা দুটো চৌচিরে ভরে আছে
কফির মায়া খুঁজে বেড়ায় রোশনিকেদার
জীবিকাধ্বনির প্রজন্মহীনতা নদীর আদলে
নদী ফেলে
ফকিরসুরভিত মুসকানে
আমি আর আমার মতো নেই…

ধরা যাক বাঁধগুলো বুঝলো না
অমলনিসর্গের নাম
তবু এইখানে চিলেকোঠা বহমানতায়
চিমনিচোখের রসদ জাগে

যে আলবিদায় ফিরে ফিরে আসে
তাকে আমরা রোদ্দুরও বলতে পারি

= = = = = = =

একটা স্বাভাবিক ঘটনা

তারপর সেই তুলতুলে বলটাকে আলতো করে ছেড়ে দেওয়া হলো বহুতল ছাদের ওপর থেকে।

ইতোমধ্যে তোমার স্নানঘরে জল গরম হয়ে গেছে। তুমি ভুলেই গেছ সেই অনিবার্য সমাধিফলকগুলোর খবর।

কলঘরে ঢুকে যখন তুমি জলযানের স্বপ্ন দেখছো, তখনই চতুর্দিকে ছিটকে গেল রঙ আর সামান্য সাধারণ রক্ত…

এরপরও অনেকে বলে হেয়ারড্রায়ারের খারাপ হওয়ার শোকে তুমি কিছুক্ষণ অসুখী ছিলে

= = = = = = =

সিটি অফ এঞ্জেলস-১

তখন থেকে তো স্টপ হয়ে আছে ফুল
পাপড়িদের জোড়সে সরালো নিঝুম
এসব না ভেবেই

এই কি তাহলে পিস্তল?
তবে তার তল কোথায়?
গুমসুদা গুমসুদা ধ্বনিগুণ বেরলো সাংচুয়ারি চুঁইয়ে

ফ্লোরায় ভরে যাওয়া সংসারের কাফিলা
তাতে ব্লু মিলিয়ে মিশিয়ে
অনেক করে মহল্লা হল
সেখানে লোক এল
পাখি এল
বসতি বানালো

রঙ খসে পড়ল আস্কারা থেকে

যেখানে ছায়া পেতে পায়রারা বসে
তাস খেলে
লজেন্স খায়
আর ফুলেদের মারার আগে লাইন বলে ডাকে

= = = = = = =

সিটি অফ এঞ্জেলস-২

জিংগল বাজবে টিউনে
টেকনিকগুলো বার্বি হবে
পেন্সিলবক্সকে ভ্যালি বলে ডেকে ফেলবে ছোটরা

সংসার গুটোতে গুটোতে ঘর
সেখানকার উপচোনো রোদ্দুরে
শীতের বাচ্চা দৌড়ে গিয়ে ছুঁয়ে ফেললো সোয়েটারকে

আপেল আপেল ডাকছে নরম কামড়
তাদের পাঁচিল থেকে কালকাজি
জিরোতে জিরোতে ঠেকলো মনসুনে এসে

বউ-এর সঙ্গে বাড়ি ফিরছি আমি
চুল বাঁধার পরিপাটি শেখার ছলে
সূর্য ডিঙিয়ে পশ্চিমি হয়ে উঠছে আমাদের পোষাক

Facebook Comments

1 thought on “স্মরণ : অভিষেক মুখোপাধ্যায় Leave a comment

Leave a Reply