অত্রি ভট্টাচার্য্য-এর কবিতা

পুজো সনেটগুচ্ছ: পঞ্চমী

আমাকে ঠেকিয়ে রাখে পাহাড়ানা, বিদেহী মৌমাছি
যাহোক কিছুর মত পৃথিবীর পাশা উলটে যায়
একা থেকে এতদূর শব্দধন্য মহাজনপদে
একটি মেয়েপুতুল অগুনতি মানুষ নাচায়!
আমাদের খেলাবাটি ভর্তি ছল, শরীরে আকুতি
এইসব ঘাঁটতে ঘাঁটতে অবধার বাজুক বারোটা
মুহূর্ত তারা গোনে, তারাদের নেমে আসা গোনে
মোহের সলতে বেয়ে আসময় মদ ফোঁটা ফোঁটা।

আমাকে পূজার ঘরে বন্ধ করে শিকল তোলে যে
তার দুই হাতে আমি মণিবন্ধ ছিঁড়ে রাখি হাত
তারপর চলে যাই; কত রক্ত ফিরেও দেখি না
শ্রীপঞ্চমী খান খান; লক্ষ্মী ঘট হোমকুণ্ডে কাত
আজ এ মৃতের দিনে সম্ভোগের ফুল ছোঁড়া মানা
পুজোর অশেষ ঋণে ম’ ম’ করে মাটির বেদানা।

পুজো সনেটগুচ্ছ: ষষ্ঠী

আটের বোধন এসে বসে আছে ভিতর বাড়িতে
এ অশান্তির জেরে আঠারোর চুলে পড়ে টান
অলৌকিক ফিল্ম রোল গুটিয়ে গুটিয়ে আনা চোখ
যত্রতত্র বজ্রপাত চোখের নিমেষে ম্রিয়মাণ
আজ থেকে ফাঁদ পাতা শুরু হল, দিগম্বরী ফাঁদ
জল ফাঁসে, মাটি ফাঁসে, বালুচরি ফেঁসে ফেঁসে যায়
বাবার কবর খুড়ে মুক্তি খায় পাপী যে প্রহ্লাদ
তার অনিয়ত খড়ি শ্লেষ আঁকে আশ্বিনের গায়ে।

আটের বোধন মানে রোজ রোজ বিকেলে বেরনো
শতাব্দীর তিনকোণা ভিড়ের ভিতরে হিরণ্ময়
চৈ হাঁসেও নিশ্চয়ই অপূর্ণত শখ থাকে কোন,
আলোটি ছুঁলেই সব পতঙ্গকে খসে পড়তে হয় !
চক্ষুদান শেষ তবু মানুষের মিথ্যে আনাগোনা।
আমি তো আপাদ ভেজা, এ পুজোয় কোথাও যাবো না।

পুজো সনেটগুচ্ছ: সপ্তমী

তীরপূর্ণীর মত হাওয়া করে আসে মেঘালয়,
এখন এখানে সারাবছরের যত জমা ছুটি
একটি একটি ক’রে ফেলে দিই তুঙ্গভদ্র জলে
ফাঁকি দিতে এতদূর তুমি-আমি, কোশা কুশি দু’টি।
আলোকিত বাংলোয়, পিছনের ঘন জংগলে,
প্রাকৃত কিশোরী মুখ টল টল ক’রে সলজ্জায় ,
কত শব্দ দুরাচার, কত গায়ে জামা নেই বলে,
অযুত দুঃখের মৌ পাহাড়িয়া বনপথে ধায়।

বুকের নিকটে এক বহুদূর নগর প্রাঙ্গনে
নিখুঁত ছন্দের ছুতো দিয়ে কবি বেঁধেছে তূণীর
নামমাত্র কলাবৌ, দাম মাত্র দিয়ে তাকে কিনে
মাটির মূর্তি করে রেখে দিতে মণ্ডপ অধীর।
সপ্তমী, আশ্বিন, সন্ধ্যাকাশে মেঘ ভর ক’রে,
দুর্গার চোখের জল রক্ত হয় অক্ষরে অক্ষরে।

Facebook Comments

Leave a Reply