অর্ণব সাহা-র কবিতা

শিরোনামহীন




১.

আমার রক্ত নেশাচ্ছন্ন,
তোমার হাতে দরদী সেলফোন
অলৌকিক উড়োজাহাজ
ধানচালের বস্তা ছুঁড়ে দেয়…

আমার ঘরে মানিপ্ল্যান্ট,
তোমার চোখে পাতাবাহার আঁকা:
স্বপ্নে আজ হামলে পড়ে
মানুষখেকো চিতাবাঘের দাঁত…

তোমার চুল “ঝরাপালক”
আমার ঠোঁটে আততায়ীর হাসি:
বর্ডারের কিশোরীগুলো
অল্প দামে হাতবদল হয়

“আলো বরং নেভানো থাক,
অন্ধকারে হুইস্কি ভালো লাগে”
মগজে ঘোরে “চাঁদনি বার”
মেছেতা-পরা  নর্তকীর গালে

ভিমরুলের আলতো চুমু
দুবাই থেকে অচেনা মোবাইল
বেজে উঠলে রুমালচোর
এক মিনিটে মর্গে চলে যাবে

মর্গে পচে ঠান্ডা লাশ
চিলেকোঠায় ইঁদুর ঘোরে-ফেরে!
জেলাসদরে, মহকুমায়,
সুদে খাটছে এন.জি.ও-র টাকা

টাকা মানেই দুনিয়াদারি
“খাসদখল”– হাজার ছেলেমেয়ে
ঘরে ফিরবে খালি হাতেই
ডাইনে-বাঁয়ে প্রোমোটারের থাবা…

থাবার নীচে ঘুমিয়ে আছি,
কড়ি-বরগা নিলামে বেচে দিয়ে
আমার ফুটো পকেট, তুমি
ব্যাগ হাতড়ে খুচরো গুনে রাখো!




২.

আলো অপার্থিব। এই নির্জন স্বর্গের উপকূল।
স্বাতীনক্ষত্রের জল চুঁইয়ে পড়ে  নগ্ন শরীরে
কারো ঘুম ভাঙে, কেউ অলক্ষে তারার ফিসফিস
টের পেয়েছিল বলে মৃত্যুপরোয়ানা ঘাড়ে নিয়ে
বোবা কয়েদির মতো যাবজ্জীবন ছুটে যায়…
যে শরীর পোড়া কয়লা, বহুদিন আগেই মৃত যারা,
কেউ তাদের দায় নেবে না, কাঠের ঘোড়ার
                                            সওয়ারেরা
আসলে পুতুল, তারা নিয়তিকে মানতে চায়নি বলে
ঈশ্বর নেমে আসেন কুকুরের জিভের লালায়
দূরবিন টের পায় বোকা মানুষের চোখে জল…

হাইরাইজ বেড়ে ওঠে। এ রতিশহর চেটে খায়
তার হৃৎপিন্ড আর রক্তনীল যন্ত্রাংশগুলো!





লাল পাথর, সাদা পাথর, শত্রুঘেরা বাড়ি!
ইতস্তত ভূতের লাফ চকখড়ির দাগে
যে আসে আর যে যায়, তারা দুজন লোক,
                                            আলাদা…
তাদের রেশ মুছে যাবার আগে

লোহার গেট বন্ধ হয়, হায়না ডেকে ওঠে
অন্ধকার ছায়াছবিতে ১৬ মি.মি-র রিল
দারোয়ানের দেহাতি বউ রুটি গরম করে
রাত্রি বাড়ে, বিষের রং নীল

নীল রঙের হাভেলি, তার কাঠামো চুরমার
হাড়ের ভিতর বাতাস ঢোকে, বাঁশিতে
                                      সুর তোলে
ভয়ের কোনও শব্দজ্ঞান, বর্ণপরিচয়
হয় না, তাই বাতিল, ভাঙা পেন্ডুলাম দোলে

তার ছায়ায় ঘড়ির কাঁটাও দ্রুত ছুটতে চায়
চিলেকোঠার তক্ষকেরা ফাঁকা আওয়াজ করে
ইস্পাতের শরীরে কোনও সাড়াশব্দ নেই
দুটো মানুষ ঘুমোতে যায় আলাদা দুটো ঘরে!




৪.

এই পথ না ফুরোক। এ সরণী অন্তহীন হোক
এ রাস্তা ধূসর হোক রাধিকা আপ্তের শিরোনামে
ট্যাক্সি রাইডের ফাঁকে কিছু না-বলা কথাও থাক
আমার ক্লান্ত আঁখিপল্লবে তোমার ছোঁয়া লেগে
শান্ত বিস্ফোরণ হোক। আর কোনো পিছুটান নেই
আমি কালো নরকের দরজায় খিল দিয়ে এসেছি
দেখি, স্থিরচিত্র থেকে ঝরে যায় অদৃশ্য জোনাকি
জীবনের প্রতিটা বাঁকে ম্যাজিক অপেক্ষায় থাকে !
আর কোনো দূরের গ্রহে স্বাতী নক্ষত্রের জল ঝরে :
নিয়ম না-মেনে রোজ ইতিহাস গর্ভবতী হয়…

আমিও অচরিতার্থ জাদুর অবৈধ সন্তান
মুহূর্ত চুরমার করে তোমার দু’হাত ধরতে চাই…




৫.

ট্যাক্সিতে হারানো ফাইল
দস্তাবেজ, স্মৃতির দলিল

আচমকা লোপাট হয়ে যাওয়া
মগজের বন্দি পাখিগুলো

সৌন্দর্যের শিরা-উপশিরা

শরীর এখনও ক্ষুধাতুর
দুপুরের অস্থির বর্ণালি

দেওয়ালে অস্থির ছায়া কাঁপে
হাড়-মাংস, মৃত শিশুদের

কুলপিবরফের ঠেলাগাড়ি
টিউবরেলে শশব্যস্ত লোক

যেকোনও হত্যার চেয়ে দামি
ঝরণাকলমের নিষ্ঠুরতা

হুমড়ি খেয়ে পড়বে কবিতায়

ব্যর্থ, সন্ত্রস্ত দিন যায়…

Facebook Comments

Leave a Reply