অনিকেশ দাশগুপ্ত-র কবিতা

রাতজাগা গল্প

বাইরের দরজায় কেউ তালা ঝুলিয়ে শেষ হাসিটুকু রাখবে
এই প্রত্যাশায় আলো নিভিয়ে সিঁড়ি বেয়ে
উঠে আসা দোতলার ঘরে…
জানলায় লোহার গ্রিলে কা’র টর্চের ঝলক –
বিদায় চাইছে কেউ ?
কাঁধে হাত রেখে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ানো বুনো একটা রং
এমন নিরাপদ দূরত্বে হাতের গন্ধ ধুয়ে ফেলতে ফেলতে
‘দখল’ শব্দের খুব কাছেই ঘোরাফেরা আমাদের
অথচ সম্ভাষণ, আহ্লাদ ও একটানা দৌড়ের দিকে ফিরে দেখেছ
হই হল্লা ছাড়া বৈদ্যুতিন আর কোথাও কিছু ছিল না ।
ঘন রাতকুয়াশা ছিঁড়ে জটিল কাঁধগুলো একবার চিনে নেওয়া
যেন সমস্ত ব্যক্তিগত একঘেয়ে জড়ত্ব নিয়ে প্রিয়তম কেউ
নীচু সবুজ মাঠে মেতে ছিল ।

ঘুম জড়ানো ভারী শরীর এখন
সেতুর আয়না সাধারণত এড়িয়ে যায়..

ভাষাহীন রাত্রি

স্বগতোক্তির শহরে মুখে আলো পড়ে
আর খিলখিল হেসে ওঠেন চন্দ্রাহত তপস্বী

ট্যাভার্নের ভেতর সার্ডিন মাছের গন্ধে
থাবা লুকিয়ে আরেকজন ভাষাবিদ গোনাগুনতি
সিঁড়ি ও পিপের বীজাণুগুলিকে চিনে নিচ্ছিল

সান্ত্রীর সামনে আলো নিভিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিশপ
খাদের ওইপারে একইরকম অর্বুদ আর ওয়্যারলেস শহর
যেখানে কাঠের বেঞ্চে প্রেমিক- প্রেমিকা শীতার্ত
করমর্দন সেরে নিচ্ছে স্পর্শময় অনুজ্জ্বল
বাতিস্তম্ভের তলায় –
দূর প্রবাস থেকে ভেসে আসা অন্তহীন বাগ্মিতায়
যা আরো গাঢ় ও অপ্রশমনীয়

অ্যামেচার

দুজন অভিনেতা অভিনেত্রী
দুজন প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরের মুখোমুখি
একটি সংক্ষিপ্ত নাটক মঞ্চস্থ হবে
চিত্রনাট্যটি শেষ হচ্ছে এভাবে :
তারা চুম্বনরত

পর্দা সরে যাচ্ছে
পর্দা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে
শেষ দৃশ্যটির মঞ্চ পরিচালনা নেই
শেষ দৃশ্যটি ইম্প্রম্পটু
অভিনেতাদ্বয়ই তাদের দর্শক
সুতরাং করতালি একটু আধটু
নিজেদের উদ্দেশ্যেই একে অপরের

দৃশ্যটি মঞ্চস্থ হল :
দুই প্রেমিক প্রেমিকা
একে অপরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ
অভিব্যক্তি মুছে যাচ্ছে এভাবে
অভিব্যক্তিমূলক কোন পেশী আর অবশিষ্ট নেই
এবং একে অপরের জন্য ছিল না কোথাও
চূড়ান্ত কোন করতালি

( Slow Curtain by John Wheelwright অবলম্বনে)

Facebook Comments

Leave a Reply