তন্ময় কুমার মন্ডল-র কবিতা

[বৌদ্ধ দর্শন ও তথাগত বুদ্ধ মনোজগতে তোলপাড় তুলেছিল। ২০১৭-র মাঝামাঝি লিখতে শুরু করি। কী যেন পেয়ে বসেছিল আমাকে! প্রলাপে আচ্ছন্ন, নাকি কবিতার চিরন্তন অপরূপ! জানিনা। শুধু জানি আবিস্কারের এক রাস্তা। নাম অপরূপ প্রলাপ!
এই পর্বের লেখালিখির পাঁচটি সিরিজের সূত্রপাত ‘অহম পুরুষ’ দিয়ে। আজ তা থেকে তিনটি লেখা থাকলো ‘অপরজন’ এর পাতায়।]

অহম পুরুষ

তথাগতের সঙ্গে কথা বলার পর, আত্মহত্যা বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এত রঙের অসামঞ্জস্য কীভাবে মৃতদেহ হয় সে বিষয়ে নীরব থেকে তাকিয়েছিলেন শুধু। ঘাম আর ছায়ার কাছে অনুগত ছিলেন, খিদে আর হাড়ের কাছে আনন্দমগ্ন ছিলাম আমি।

আমাকে নদীর দিকে যেতে বলা হল, এত ভেতরে, ফাঁকা আমার ভেতরে খেলা করতে বাধ্য হয়, আমি উড়ে যাই, আমি শান্ত এক বিকেলের কাছে ফিরে আসি, আমার টুকরো নিয়ে কুকুরের জিভ দেখি

“সাঁকো ছিঁড়ে ফ্যালো”…চমকে তাকাই।
“এই সমুদ্রের নিচে তুমি কেবল চিন্তাভাবনা দিয়ে তৈরী করো জগৎ, চিন্তাভাবনা দিয়ে ভেঙে ফ্যালো – এর বাইরে কিছু নও… তোমার শূন্যতা ওড়ে।
শব্দ বলে কিছু নেই, তুমি তার ভেতর শুয়ে থাকো। বলো গাছ, পাতা ঝরে যায়। এই বর্ণনাহীন ফলন্ত গাছ আর শেকড় খুঁজে বেড়াও… দ্যাখো দূরে নদী বলে কিছু নেই”

একটি নৌকা আর হাওয়া উঠেছে খুব, তথাগতের পাশে তথাগতের ছায়া – ধ্যানমগ্ন; যেন তথাগত বলে কিছু নেই, যেন আত্মহত্যাহীন আদিগন্ত ফুঁ

তথাগত বাসস্ট্যান্ড অব্দি হেঁটে এলেন। এখানে কোনো বোধিবৃক্ষ নেই, আলমারি ঝুলে আছে শুধু। আমরা স্বীকারের কোনো চুক্তি পত্র আনিনি, নৌকো নিয়ে কথা হচ্ছিল। তীরন্দাজ এক শিকারীর হত্যা নিয়ে আমরা অট্টহাস্য করছিলাম।

এই জগৎকে উষ্ণ করার ক্ষমতা তথাগতের ছিলনা অথবা তৃষ্ণা বললে যা যা মনে হয় তার বাইরের খেলাগুলি জল বলে চিহ্নিত হয়।

এও এক অভ্যাস, দুজনে মুখোমুখি বিশ্রাম নিচ্ছি। দূর থেকে মনে হতে পারে হত্যা পরবর্তী আমরা আয়না থেকে একই দূরত্বে শান্তি আলোচনা আর তুষারপাতের পক্ষ নিচ্ছি। দুজনেই ছায়া, সব উষ্ণতা ফিরে গেলে শেকলের গন্ধ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হেঁটে যাই। কোনো নদী নেই, গাছ নেই, অস্বীকার অথবা নিবেদন বলেও কিছু হয়না। সিদ্ধান্তের পর যে রাস্তা জেগে থাকে, তার সম্ভাবনাময় লাফের গর্তে আমি আর তথাগত বসে এসব ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা করি।

ক্রমাগত দরজা খুলে তথাগত এলেন। আমি চেয়েছিলাম এভাবেই হোক – জলপড়ার শব্দে নড়ুক স্থানের কিনার; বেঁকে থাকা তথাগতের নৌকো, আমি তাকে গোলাকার আঁকি

এক সূক্ষ্ম ফুটো দিয়ে এইসব পরিচালনা করি, দেখি পিঁপড়ের পা নিয়ে পিঁপড়ে ফিরে যাচ্ছে। তার ছায়ায় ক্লান্ত তথাগত ফণা নামিয়ে বললেন – এরপর আর কী করতে হবে, বিকারের দেবতা?

কান্নার কাছে আমি আনত। দৃশ্য থেকে আলোহীন অনুভব করি।

আমার অবস্থান নিয়ে তথাগতের ষড়যন্ত্রে আমি ওর সঙ্গী ছিলাম। কীভাবে যেতে হবে তার বিভ্রম তৈরী করেছিলাম আমি, ক্রমাগত ক্ষীণ ও পরবর্তী-স্থূল ত্রিমাত্রিক সেই ছায়ায় আমি বলে কেউ নেই, ক্রমাগত আমির মৃত্যু ও জন্ম।

একটি চারাগাছ রচনা করার পর, বলেছিলাম এই হল বোধিবৃক্ষ। তথাগত কোনো বিরোধ করেননি। কেবল একটি ছায়াকে ক্রমাগত গাছ হতে দিয়েছিলেন।

Facebook Comments

Leave a Reply