মুদ্রারাক্ষস : তপোন দাশ
সূর্য স্পষ্ট শুনতে পেলো তার গা বেয়ে একটা রাস্তা বয়ে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি সে ভাঙা বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল। দরজার সামনে বড়ো বড়ো করে কিছু লেখা রয়েছে। সে দেখলো লেখা গুলো নিজেরাই ঘুরতে ঘুরতে একটা ছবি তৈরি করছে। ছবিটায় একটা মেয়ের শরীরের উপর গরুর মুখ বসানো। তার গলায় লাগানো একটা সময়। স্তন গুলো উপচে পড়ছে ওই রাস্তায়। নাভি থেকে বেরিয়ে আসছে চুমুক প্রবাহ। সূর্য তার যৌনাঙ্গে হাত দিতেই মেয়েটা গলে গেল দরজার এক কোনে।
আশ্চর্য! সে অনেকক্ষণ ধরে কলিং বেলটা বাজানোর পর বুঝতে পারলো তার কাছেই চাবি রয়েছে। তালা খোলার ওপারে বন্ধ করা আছে বাথরুমটা। ভিতরে তৈরি হচ্ছে একটা কুয়ো ভরার শব্দ। দাঁত দিয়ে স্তন বড়ো করছে কিছু নকল কামড়। প্রায় তিন মিনিট পর অগোছালো চুল গুলো এসে দরজাটা খুলে দেয়। তারা একরকম সাবলীল হওয়ার চেষ্টা করছিল। সত্যিই কি তাহলে শ্রাবণীর ইচ্ছামৃত্যু ঘটেছে? সে শীর্ণকায় বারান্দাটা বাইরে বের করে আনে। সহমতের গন্ধ গোটা ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রাবণী হাঁটলেই সে গরুর খুরের মতো কী একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছে। কথা বললে পাশবিক একটা স্বর বেড়িয়ে আসছে। শ্রাবণী চামড়ার নিচে নিজেকে লুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আয়নায় নিজের মুখের নিচে একতাল ঝুলে যাওয়া চামড়ায় সে হাত বোলাতে থাকে। ছেলেটা জানলা থেকে গাছ কাটার শব্দ গুলো কুড়িয়ে আনার পর সে ভাত বেড়ে নেয়। স্তনের উপর এতো সন্ত্রাস সে ঢেকে রাখতে পারে না। ছেলেটা ঈশ্বর। তার কাছে অনেক অর্থ আছে। সে মাংস রাঁধতে পারে। সে মদ দিয়ে তৈরি করতে পারে নতুন সব সমীকরণ। সূর্যের ঘরে সে ডিম ফোটাতে এসেছে। মাত্র কয়েক মাসেই সে মেয়েটার সমস্ত ফিকে রঙ মুছে দিয়েছে। সিঁড়ি কে সিঁড়ি দুর্বল হয়ে পড়ছে সূর্য। সে নিজের ঘরেই বন্দী। তাকে মৃত করে দেওয়ার পর শুরু হয় ঈশ্বরের ছোবল। তারপর সে শ্রাবণীর সমস্ত শরীর চুষে খেতে থাকে। মেয়েটি নিশ্চুপ পাল্টে যায়। সূর্য ঘুমিয়ে পড়ে নেমে যাওয়া খাদটায়। মেয়েটি শারীরিক ভাষায় অভিনয় করতে থাকে। তাপ দেওয়ার খেলা তার জিনে ছিল। তার জন্মে কোন রবিবার ছিল না। এতদিনের শেখা মনোবিদ্যা সে ভুলে গেছে। এখন তার শরীরে শুধুই রক্ত খাওয়ার লোভ। হিংস্র হয়ে উঠেছে ওদের আর্তনাদ। ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে ভুল করেছে সূর্য। আর ঈশ্বরকে পেয়ে মেয়েটির অনবদমিত ইচ্ছে গুলো নড়ে ওঠে। কয়েক দিনের স্তনলাগানো উড়ান এসে থেমেছে বিছানায়। নেশাগ্রস্ত সূর্যকে সে পরিষেবার বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। জিভের শব্দে গেয়ে উঠেছে তার অন্তর্বাস।
সূর্য বুঝতে পারে অবৈধ ভাষা গুলো। কেন সে এতো দারোয়ানি করছে। তার গাণিতিক ভাবনা গুলো ধরতে পারার আগেই সে নিজের মুখে নতুন একটা মুখোশ পরে নেয়। অন্ধের চশমা লাগে না। মেয়েটিরও লাগেনি। সূর্যকে সে বলেছিল, শ্রাবণীর নাকি আলাদা একটা গল্প আছে,তার মাংস খাচ্ছে কেউ। আর শ্রাবণীকে বলেছিল, সে নাকি কথা বলার রহস্যটা নিয়ে চলে এসেছে। কতো বার জিভ বোলানোর পর শ্রাবণীর জিভের স্বাভাবিক স্বাদ বদলে গেছে! জিনের পরম্পরা ছাড়িয়ে দরজা খোলার শব্দ বয়ে যাচ্ছে চারপাশে। মেয়েটি তার একদিন বেড়িয়ে আসে। বেলুনের সমস্তটা সে আয়না হয়ে ভাবে। বারবার কুয়ো বদল করে ছেলেটা। বোমার পোশাক খুলে রেখেছে সে ঈশ্বর বলেই।
বাসন ধোয়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সূর্যের। সে তাকিয়ে দেখে একজন অনবরত জল বুনে যাচ্ছে নিজের মতো। তার মাথার দু’দিক থেকে দুটো বড়ো শিং আর দাঁত গুলো মাড়ি ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে। ক্রমশ হাতের আঙুল গুলো প্রসারিত হয়ে সে আয়নাবোধ ভেঙে দিতেই মৃত মানুষটার যৌনাঙ্গ ফুলে উঠলো। বেশ কয়েক মাস হলো শ্রাবণী মৃত। তার শরীর থেকে খসে গেছে যাবতীয় যাদুবিশ্বাস। এখন ঈশ্বর কেবল তার শরীরে চুঁয়ে পড়া বিকার গুলো সাজিয়ে রাখে। লালসা সহজে মরে না। যার কাছে মুদ্রা আছে সে রাক্ষস না নেক্রোফিলিক তা নিয়ে কোন দিন বিচলিত দেখায়নি শ্রাবণীকে। তার শরীরের সমস্ত রকম রস পান করানোর জন্য একটা পৈশাচিক জীবনের প্রয়োজন ছিল। সূর্যকে লুকিয়ে সে এতোদিনে নিজস্ব অবয়ব বদলে নিয়েছে। শরীরে সেলাই করে নিয়েছে আরও একটা শরীর। নিজের গন্ধ নিজে পেতে ঘুমিয়ে পড়তো সে। মৃত মানুষের বুকের উপর পূর্ব হয়না। একটার পর একটা জিভ বদল করতে করতে তার ঋতুর গঠন ছাড়িয়ে তৈরি হয়েছে কফিনের রাস্তাঘাট। তার প্রসব থেকে বেরিয়ে এসেছে পোষা সাঁতার গুলো। মুদ্রার লোভে সে ঈশ্বরকে দিয়েছে সেই সেলাই দূরত্ব। মানুষ কি এম্নি এম্নিই নেক্রোফিলিক হয়ে ওঠে? তাদের রাক্ষস চেতনার পরিবর্তন গুলো কি কেউ ধরতে পারে না! সে ঈশ্বর কি শুধু মৃত মানুষদেরই রস সংগ্রহ করে? সে যে বন্ধুত্ব করেছিল শুধু ওই মৃত মানুষটাকে খাবে বলেই! সূর্য বুঝতে পেরেছিল সেই দিনই। যেদিন তাকে চূড়ান্ত মদ খাইয়ে সে হত্যা করার নামে শ্রাবণীর বিনোদন গুলো শোনাতে থাকে। মৃত মানুষের ভিতর কোন সুস্থতা থাকে না। সে তখন শরীর থেকে বেড়িয়ে যাওয়া এক শ্রাবণী। সূর্য নেক্রোফিলিয়া গুলো পড়তে থাকে। শ্রাবণীর আগেও সে ঈশ্বর কিছু মৃত শরীরের সাথে সহবাস করেছে। কখনও কবর থেকে তুলে এনেছে নিজের বিছানায়। প্রতিটা মেয়েকে সে আগে তার বাস্তবিক চেতনাবোধ থেকে বিছিন্ন করে দেয়। মানসিক বিকৃতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ঈশ্বর কাউকে ছুঁয়েও দেখে না। ভিক্টর আর্ডিসন নামের একজন মানুষ ফ্রান্সের একটি কবরস্থানে কবর খোঁড়ার কাজ করতো, তার সাথে ঈশ্বরের অদ্ভুত মিল খুঁজে পাচ্ছে সূর্য। ভিক্টর আর্ডিসন কফিন থেকে শতাধিক মৃত মহিলাদের বের করে এনে তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে। এমনকি সেই সব মৃতদেহ গুলোর সঙ্গে সে গল্প করার চেষ্টাও করতো। এতো মৃতদেহের মধ্যে সে অবশ্য ঈশ্বরের মতো একটা মৃতদেহকে নিজের স্ত্রী হিসেবে সব সময় নিজের কাছেই রাখতো। ভিক্টর আর্ডিসন সম্পর্কে আর তেমন বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাকে নিয়ে নেটফ্লিক্সের একটা সিরিজ বোধহয় তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু মনোবিদদের মতে ঈশ্বরের মতো মানুষেরা পৈশাচিকই। এরা রেগুলার নেক্রোফিলিয়ায় আসক্ত। ২০১০সালে ফিলিপাইনের একটি কবরস্থান থেকে বেশ কিছু তরুণীর মৃতদেহ চুরি হওয়ার পর জানা যায় যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সেখানকার কিছু নেক্রোফিলিক এবং সেই সমস্ত মৃতদেহ গুলোর সাথে তাদের যৌন সম্পর্ক করার চিহ্নও মিলেছে।
শ্রাবণী কি নিজেই নিজেকে হত্যা করতে দিয়েছিল? মুদ্রার লালসা তাকে পৈশাচিক করেছে। ঈশ্বর তার সমস্ত সত্ত্বা দখল করে নিয়েছিল। সূর্য ক্রমশ শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে দেখে সে ফুরিয়ে যাওয়া লিখে নেয়। ঈশ্বরের সাথে সে দু’দিন বেরিয়েই বুঝেছিল যে সেই পারে তার পৈশাচিক খিদে মেটাতে। তার অবৈধ জন্মের কাহিনি সে নতুন করে দেখতে চেয়েছিল আবার। আয়নার সামনে সে তার বড়ো হতে থাকা দাঁত গুলো নিয়ে অহংকারী হয়ে ওঠে ক্রমশ। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ স্টিফেন হাকার’কে পড়ার পর সূর্য এই নেক্রোফিলিয়া সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যায়। একটা সময় প্রত্নবিদরা বিভিন্ন মমির ছবি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখেন,নারীদের মমি গুলো খুব বিকৃত অবস্থায় রয়েছে। পরে সেই সূত্র ধরে জানা যায় মিশরীয়দের শবাসক্তির কথা। তাছাড়াও ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের বিবরণ থেকে জানা যায়, সেই সময় প্রাচীন মিশরের অভিজাত শ্রেণির নারীরা মারা গেলে তাদের মৃতদেহ কয়েক দিন ধরে রেখে দেওয়ার পর মমি করা হতো, যাতে মমি করার পর ওই রেখে দেওয়া পচা মৃতদেহের সঙ্গে কেউ যেন যৌন সম্পর্ক না করতে পারে। ঈশ্বর প্রথমে প্রতিটি মেয়েকে তার অর্থনৈতিক ক্ষমতা বা মুদ্রার লালসা দেখায়। তারপর তাদের নিজের গাড়িতে চড়িয়ে স্তনের উপর একটা নিজস্ব গন্ধের আস্তরণ ছড়িয়ে দেয়। মৃতদেহটা তখন তার আপেক্ষিক ভাবনা থেকে সরে গিয়ে হাসপাতালের কামিজ গুলো খুলে নেয়।
শ্রাবণী তার রক্তমাখা দাঁত গুলো আয়নার সামনে বড়ো করে নেয়। মানুষের মতো সে আর কোন দিন ট্রুথব্রাশ ব্যবহার করবে না। এমন ধারালো দাঁতের জন্য মৃতদেহ গুলোর কাছে নিজের পৈশাচিক পরিচয়ও গোপন রাখতে হয়েছে তাকে।
Posted in: September 2020 - Cover Story, STORY