ইষ্টি-র কবিতা

পিপাসা

মেঘ ঘনিয়ে এলে ডেকে দিও
সঙ্কেত না পেলে ও ঘরটা বড্ড অন্ধকার
ইচ্ছেগুলো উলটপালট হয়ে যেতে পারে
জানালা একটু খোলা থাকে যেন

পাখিটা মুখ ডুবিয়ে জল খাবে
বৃষ্টির ফোঁটা তার ভীষণ প্রিয়
ইচ্ছেমতো মাখে কুলকুচি করে
সোজা থাকতে থাকতে নুইয়ে যেতে দেখা যায়

সাজঘরে লাজ

পরিবর্তনশীল কলায় ছবি আঁকে মন। কতগুলো মেঘ ঘুরঘুর করে। আকাশে দেখা দেয় সমুদ্র পাহাড় নারী। লাল নীল কালো সাদা রাস্তা।
আজ শেষ বিকেলে ঘোড়া ছুটিয়ে এল এক রাজকুমার। তারপর ঘন অন্ধকার। গর্জন তর্জমা সেরে ঝরে পড়ল বৃষ্টি।
গাছ ভিজতে থাকল।
প্রকৃতি সাজতে লাগল। সুজলা সুফলা মেজাজ।
কুলকুল শব্দে এগিয়ে চলল নদী।
কিছু মাটি কাদা হল কিছু কাদা ধুয়ে গেল। তারপর বৃষ্টি থামল।
তখন আকাশ পরিষ্কার। চাঁদ খিলখিল করে।
নারী ঘুমে ক্লান্ত।

এসব দেখতে দেখতে একদিন পাহাড় দেশে যাই।রোপওয়ে, উলুং নদীর মাথায় চড়ে মনোকামনা। দৃষ্টির নাগালে একটি উঁচু মাথা। অন্নপূর্ণা মেখে আছে সাদা বরফ। এক ব্রাহ্মণ টিক পরিয়ে দিলেন। আতপচাল হলুদ আর ফেকাসে সিঁদুর। দুটো পয়সা দিলাম। অজানা ভক্তি ছুঁয়ে গেল। চারিদিকে শীতল আমেজ। মন ছুটে গেল দিগন্তে। এক বৃদ্ধা নেপালী পাহাড় বেয়ে উঠেছেন। পিঠে বাঁধা গোল ঝুড়ি। ঝুড়িতে কিছু কাঠ। তিনটে বাচ্চা পাহাড়ি ফুল নিয়ে খেলা করে। আমার দিকে তাকিয়ে অল্প হাসি উপহার দিল। টিকিটের মেয়াদ তখন শেষ। সময় মনে করিয়ে দিল ঘরে ফেরার তাড়া। এসব আসতে আসতে কেমন ভাবে মিলিয়ে গেল।

একদিন আকাশ দেখি
একদিন দেখি এক নারী
একদিন সন্তান কান্না করে
সবাই নিজের মতো সাজতে থাকে

কখনো মনে হয় এ সকল সাম্রাজ্যের রাজা আমি
কখনো শুনি বৃষ্টির শব্দ
কখনো মাপি সন্তানের উচ্চতা
ইচ্ছে করে রাজকুমার সাজি কিন্তু ঘোড়া আর মানতে পারে না………

যাঁতাকল

সুখ এলে দেখে নিও ফানুস উড়াব আকাশে
উৎসব ঘটাব উঠান জুড়ে
কত কাল থেকে জ্বলছি
সংসার অতিষ্ঠ, হাড় মাংস ছাই হয়ে গেছে

যৌবন অস্তাচলে, স্তব্ধ প্রেম
ব্যক্তিগত ইচ্ছের মুখ আগলে দাঁড়িয়ে আছে বউ
হিসাব চায় ছেলে
কী করেছি, কী করা উচিৎ ছিল

চেষ্টা জারি আছে
নীরবে দেখি, বলি না কিছু আর
সুখ এলে দেখে যেও ফানুস উড়বে আকাশে
উৎসব চলবে উঠোন জুড়ে

বিবিধ চলন

কোন এক সমুদ্র শহরে দাঁড়িয়ে থাকা সময়। কালো রাস্তায় ব্যস্ততা ঠেলে আনমনে দিন। ধাই কিড়িকিড়ি। একটু সুখের খোঁজে নৌকায় চড়ে বসা। হ্রদ আগলে দোলা দেয় অভিমানী ঢেউ। দুলতে থাকে নৌকো মাঝি আর একটা আমি। ডলফিন সেন্টার পেরিয়ে বামদিকে একটা দ্বীপ। জমাট বাঁধা পলি সাম্রাজ্য। গুটিকয় গাছ দাঁড়িয়ে আছে। পাখি কাঠবিড়ালি গিরগিটি লাফালাফি করে। নোঙর আটকে আমায় নামিয়ে দিল। এখানে আধুনিক সভ্যতা নেয়। নিরঙ্কুশ প্রকৃতি অবিরাম খেলা করে।

একদিকে সমুদ্রের চোখ রাঙানি। অন্যদিকে জীবনের গান। ব্যাগ থেকে চিড়ে প্যাকেট বের করে চিবাতে থাকি। দূরে একটি জাহাজ চলছে। মাথার উপর অনেকটা আকাশ। মাঝেমধ্যে দুরন্ত ঢেউ শিকড় বালিতে আছাড় খাচ্ছে।

তখন আমি হাত উঁচু করে নেশায় বিভোর। কত কিছু মনে পড়ে যায়। সমুদ্রের কাছে আছি মনে লহর আছে প্রেম দোলা দিয়ে যায়। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে অনেক কিছু হাতছাড়া হয়। অঙ্ক কষে মন। জীবনের হিসাব অন্যরকম। যখন যা আসে সুযোগ বুঝে ভোগ করতে না পারলে আপসোস। ব্যথা দানা বাঁধে।

প্রেম আর ফিরে আসে না। কত কিছু ভাবছি তাঁকে নিয়ে। এসব বোঝানোর উপায় নেই। জানানোর পথ নেই। কত স্বপ্ন কল্পনা জমা হচ্ছে। বোঝা হয়ে আছে একরাশ ইচ্ছে। আর কোনদিন বলতে পারব না, মন তাঁকে নিয়ে কতটা পথ হেঁটেছে। আমি তো এখন আর কিছু চাইনি। একদিন ভাবনা উজাড় করে মেলে দিয়েছি। যোগফলে তাঁর অসন্তোষ ছিল। বিয়োগ হয়েছে বেলা।

খুব ইচ্ছে করে তাঁর ভাবনা জানতে শুনতে। নিরুপায় আমি। হতাশা ঘিরে ধরে। চোখে জল এল। একবার শেষ চেষ্টা করেছিলাম। ধমক দিয়ে বলেছিল অতীতকে ডেকো না বিপর্যয় নামবে।

দেখতে দেখতে বিকেল নেমে এল। নোঙর লাগিয়ে মাঝি দিল ঘরে ফেরার ডাক। তখন মন খারাপ। আকাশ সমুদ্র আর দ্বীপকে ভালো করে দেখা হয়নি। বিদায় লগ্নে ম্লানমুখ। নৌকায় দোল খেতে খেতে ভাবি এ কী হল! কেমন করে পেরিয়ে গেল দিন। আনন্দ খুঁজতে এসে অতীত ঘিরে ধরল। বর্তমান ইশারা করে বলে লুটেপুটে খেলে না হে। সময় চলে গেল……

শ্রীবৃদ্ধি

গাছ কথা বলে
পাখি কথা বলে
গাছ আর পাখির ভীষণ ভাব
প্রকৃতির বুকে আড়িপাতে কান

ফুল মধু মেখে শুয়ে থাকে
প্রজাপতি আসে
মধু মুখে সুখ স্খলন হয়
ডানা দুলিয়ে আনন্দ করে

গজিয়ে ওঠে ফল
পাখি ফল খায়
ফলে বীজ আছে
জৈবিক ক্রিয়াবলে বীজ খোঁজে স্ফুরণ

রস তোপ দাগে হাওয়া দোলা দেয় উত্তাপ আলগা করে
বীজ মুখ খোলে লগ ছাড়ে কচি পাতা দেখা যায়
পাখি গাছকে বিশ্বাস করে ডাল পাতায় আঁতুড় গড়ে
গাছ পাখিকে প্রশ্রয় দেয়, গাছ ফলপ্রসূ হয়

Facebook Comments

Leave a Reply