উমারানী আখড়া : ফাল্গুনী ঘোষ
খড়ের দোচালার নড়বড়ে খুঁটিটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে উমা বলে ওঠে—
“তোর নামটা সার্থক করতেই হবে কিন্তু জয়ী…”
জয়ী মাথা নীচু করে ঘাড় নাড়ে, যাতে অস্পষ্ট রয়ে যায় হ্যাঁ বা না-এর দৃঢ়তা। রাজ্যস্তরে জিতে আসা জয়ী। উমারানী আখড়ার রায়বেঁশে দলের উজ্জ্বল দলনেত্রী।
দিন পনের আগেই রাজ্যস্তরের রায়বেঁশে নৃত্য প্রতিযোগিতায় আখড়ার মেয়েগুলো হইচই ফেলে দিয়েছে রীতিমতো। প্রত্যন্ত গ্রামের অখ্যাত মহিলাদলের কৌশল তাক লাগিয়ে দিয়েছে তামাম দুনিয়ায়। খবরের কাগজ টিভি চ্যানেলগুলো রীতিমতো হামলে পড়ে হানা দিয়েছে অজ গাঁয়ে। আখড়ার ফুটো টিনের চালে চাঁদের বাঁধ ভেঙেছে।
এসবই স্বপ্ন মনে হয় উমার। উমারানী আখড়ার একমাত্র সত্ত্বাধিকারী। তার বহু পরিশ্রম, লাঞ্ছনা- গঞ্জনার ফসল এই আখড়া। গ্রামের একটেরেতে টিকে থাকা উমারানী আখড়া মুরুব্বি, মোড়লদের কাছে অবজ্ঞা আর উষ্মার কেননা গ্রামের মেয়েদের মেয়ে হয়ে থাকতে না দেওয়ার মূলে ঐ আখড়া। নাক মুখ কুঁচকে তারা বলে, ‘যত্ত মেয়ে মদ্দানি’। পারলে আখড়াসহ মালকিনকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গ্রাম ঘরে শান্তি নিয়ে আসে তারা। উমা জানে এ নিয়ে গোপন বৈঠকও কম হয়নি। কিন্তু আখড়ার নাম যশের দৌলত আর উমার সরকারী স্কুলে কনট্র্যাকচুয়াল কাজের ঘেরাটোপ টপকে সেসব গোপন বৈঠক ফলপ্রসূ হয়ে ওঠে নি আজ অব্ধি।
“দিদি, এবার বাড়ি যাই গো। নাহলে বাপট্যো খুব রাগ দেখাবে।“
জয়ীর কাকুতি উমাকে ঝিরঝিরে বসন্ত গোধূলিতে ফিরিয়ে আনে। এ যন্ত্রণা ইদানীং এসে জুটেছে। মেয়েটা যত বড় হচ্ছে বাড়ির বিধিনিষেধ কড়া ফাঁসের মতো চেপে বসছে মেয়েটার গলায়। কেমন যেন গুটিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। অথচ বাড়িতে কি লড়াই, ঝগড়া করেই না আখড়ায় ঢোকা। জয়ীকে দেখেই উমা নিজের চূড়ান্ত যন্ত্রণার দিনগুলো ভুলে থাকে। তাই শিষ্যকে ছেড়ে দিতে মন চায় না গুরুর। মেয়েটা তার গুরুকে ভালোওবাসে আবার শাসনও করে।
“অমন তাকিয়ে কি দেখছ দিদি? আজ এখানে আর থেকো নাকো! রাত্রে খেয়ে নিও গো ঠিক সময়ে!”
##
দলের বাকি মেয়েগুলো আগেই চলে গেছে। কিন্তু জয়ী দলনেত্রী হওয়ার কারণে তাকে আলাদা কিছু তাৎক্ষণিক কৌশল শিখিয়ে রাখে উমা। উমার চলে যাওয়ার রেশ টেনে কুঁকড়ে থাকা পদধ্বনিরা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। চারপাশে সন্ধে নামার সাথে সাথে, উমা তার সাম্রাজ্যের টুকিটাকি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঘরের এককোণে দু তিনটি কম্বল জড়ো করা। আরেক দিকের কোণে প্লাস্টিকের জলের বালতির উপর রাখা আরও সস্তা প্লাস্টিকের পুঁটলি। পুঁটলিতে আপতকালীন ব্যবস্থায় মুড়ি চিঁড়ে চাল, সাথে কটা গুড়ের বাতাসা। পাশে তোলা উনুনে চাট্টি ফুটিয়ে নেওয়ারও ব্যবস্থা। মাথায় টিনের চাল হলেও আখড়ার ইট, চুন, সুড়কির শরীরের বাঁধুনি এখনও ভেঙে পড়েনি। ঘরের সামনে দুটো নড়বড়ে খড়ের চালের খুঁটিতে টাঙানো ট্যারাবাঁকা পোস্টার –
উমারানি আখড়া। প্রোপ্রিয়েটরঃ ব্রতচারী শিক্ষক উমারানি।
হ্যাঁ, উমারানিই লেখে সে। কারণ পদবীর সূত্র ধরে রায় বাড়িতে যেদিন তার পায়ের ধূলো পড়ে, সেদিন সে বাড়িতে ঝাঁট জলের বহর বেড়ে যায়! এসব নিয়ে দীর্ঘশ্বাস আর পড়ে না মালতীর। শেষ বিকেলের ম্লান চাঁদের টুকরো ঠোঁটের কোণে সাজানো থাকে। বাড়ি নামক বস্তু উমার থাকলেও ভরসা বা আশ্রয় কোনোটাই নেই। স্কুলে ব্রতচারী শিক্ষিকা হিসেবে বছরের ছমাস নমাস শুধু হাজিরা দেওয়া আর নামসাক্ষী মাইনে নিয়ে মাসের শেষে আনন্দে থাকা। এছাড়া চাট্টি ভাতে ভাত ফুটিয়ে নাহয় একগাল মুড়ি ফেলেই পেটের জ্বালা মনের জ্বালার কাছে হার মানে। তারও যে বাড়ি আছে তা সে ভুলেই থাকতে চায়। বাড়িমুখো সহজে হয় না। যেদিন তার একতলার চিলেকোঠার ছোট্ট গোছালো ঘর তাকে প্রাণপণে ডাকে সেদিন সে ডাক ফেরাতে পারে না নিজের কাছেই।
জয়ী যাই বলুক, আজ রাতটুকু আর সে যাবে না। এখানেই কাটিয়ে দেবে।
২
ইয়া আ আ আ আ আ ……… বলে হাঁক ছেড়ে রম্বস আকৃতির মাপে পা ফাঁক করে ঘাড় ঝুঁকিয়ে মুখের কাছে হাত নিয়ে এসে একমুখ হাওয়ার সামনে আঙুলগুলো নাচানো। তারপর দু পায়ের উপর ভর দিয়ে শক্তপোক্ত শরীর শূন্যে ভাসিয়ে দিক পরিবর্তন। সাথে এক ছন্দের বোল,
“জাউর গিজা গিজ ঘিনি তা
তা তা তা গিজা ঘিন গিজা ঘিন
তা কুড় তা কুড় …… কুড় কুড় কুড়……”
এ রাস্তা পেরোলে উমার চোখ অবাধ্যতা করে সে ছন্দের বোলে। নির্লজ্জ স্নায়ু তাকে ঠেলে নিয়ে যায় স্কুলঘরের পাশের ফাঁকা মাঠে, চোখ পাতে ছিটেবেড়ার ফোঁকরে। উত্তাল ছন্দের বোল প্রবল স্রোতের মতো টেনে নিয়ে যায় তাকে। কি পেটানো পুরুষালী চেহারা লোকগুলোর। সঙ্গীদের ঠাট্টা, চাপা হাসি উমার ক্ষুব্ধ নিঃশ্বাস তার ইচ্ছাদের আরও দৃঢ় করে বাঁধে। সেসব হাসির লহর ছুঁচের মতো ফোটে গায়ে। ক্ষোভে ঘুরপাক খায় উমার চোখের মণি,
“আমি ওদের কসরত দেখলেই তোদের রগড় আর মস্করা! এদিকে রাস্তার বখাটেগুলোকে দেখে তোরা যে গা আউলাস তার বেলা!”
রোমিও গোছের প্রেম উমার না পসন্দ। পথে ঘাটে বিপদ এসে চাপলে এরাই আগে পিঠটান দেয়। তার মন তাই সঙ্গীদের পছন্দ দেখে মুখ বেঁকিয়ে হাসে। বিপরীতে উমার ভরসার চোখে ভেসে ওঠে, হাত, পা পেশির শিরা ফুলে ওঠা পুরুষালী দাপট। আহা, দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রাণে আরাম আসে। ওরকম দাপট মনের মধ্যে থাকলে জমাট পুরুষালির ভিত গড়ে ওঠে।
##
এভাবেই দিন মাস বছরের পাকেচক্রে উমার মত বালিকার দল কিশোরী হয়ে ওঠে কোনো এক অখ্যাত গাঁয়ে গঞ্জে, কেউ তার খবর রাখে না। শুধু হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় নিন্দে মন্দের দল। উমাকে প্রায়ই দেখা যেতে থাকে গ্রাম্য পুরুষালী ব্রতচারী আখড়ার আরেঠারে। কানাঘুষো হতে না হতেই একদিনের ঝকঝকে সকাল সোচ্চারে ঘোষণা করে রায়েদের উমা না কি ব্রতচারী আখড়ার যদু রায়বেঁশের সাথে পালিয়েছে। গ্রামেঘরে এরকম ঘটলে যা হয়, উমার পরিবার গ্রাম্য অকথা কুকথার বর্ষণে ভিজে চুপচুপে ফ্যাকাশে প্রাণহীন হয়ে একপাশে নেতিয়ে থাকে দীর্ঘদিন।
এরপর উমা যেমন নিঃসাড়ে গিয়েছিল ততোধিক নিঃসাড়ে শীতরাতের চাদর মুড়ি দিয়ে ফেরে। কিন্তু যদু রায়বেঁশে ফেরে না। শহরের চাকচিক্য তাকে গ্রাস করে না কি সে শহরের চাকচিক্য গিলে নেয় গ্রোগ্রাসে, উত্তরের খাতায় সে প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত। ফলত; রায়বাড়ির লাঞ্চনা গঞ্জনা মেখে চিলেকোঠায় উমা তার একানে সংসার পাতে। সাথে জীবন তাকে উপহার দেয় অনুভূতিহীন, কান্নাহীন একরোখা জেদ। যদু রায়বেঁশে ছিল উমার গুরু। গুরুর অধীত বিদ্যার দাপটে মাজাভাঙা আখড়া যৌবন ফিরে পেল। দেওয়ালের গায়ে বড় বড় হরফে লেখা হলো— ‘উমারানী আখড়া। এখানে যত্নসহকারে স্বল্পমূল্যে মেয়েদের ব্রতচারী শেখান হয়।‘ নিরন্তর টিকে থাকার দৌড়ে আখড়ায় এসে জুটল জয়ী, জলি, টুলু, নীলার মতো উজ্জ্বল আশ্বাসেরা।
সে আশ্বাস ঘিরে উমারানীর আখড়া ও তার দিনরাত হাঁটি হাঁটি পায়ে পায়ে বাল্যকাল পেরিয়ে গেল। উমার কান্নাহীন, অনুভূতিহীন একরোখা জেদের গাছে আশার কুঁড়ি ধরল, স্বপ্ন যার অন্য নাম। স্বপ্নের কাছে দুয়ো পাওয়া উমা এখন আবার স্বপ্ন দেখে। তেমনই ফুরফুরে লাল, নীল স্বপ্নিল স্বপ্ন। শুধু স্বপ্নের কেন্দ্রীয় চরিত্ররা বদলে গিয়ে হয়ে ওঠে জয়ী, জলি, টুলু, নীলা।
সেকারণেই জয়ীকে চোখছাড়া করতে ভয় পায় উমা। ফিরে দেখা স্বপ্ন আবার ভেঙে দিতে পারবে না সে। কিন্তু উঠতি বয়সের মেয়েকে কি বিশ্বাস! তাছাড়া কদিন যেন একটু অন্যমনস্কও লাগছে মেয়েটাকে।
৩
দিন তিনেক ধরে জয়ীর দেখা নেই। কাজের চাপে উমা খোঁজ নিতেও পারেনি, শুধু দূর্ভাবনাকে সাথী করে সময়ের কাঁটা এগিয়ে গেছে। তারপর এই আজকের দুপুর। কিন্তু দুপুরের ডগমগ খুশি জ্বালা ধরাচ্ছে উমার চোখে। গলার নলি থেকে ফুসফুস অবধি শুকিয়ে কাঠ তার। গত রাতে প্রকৃতির ফুঁসে ওঠা রোষের মুখে উমারানী আখড়ার দোচালাটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এলোমেলো সে ঝড়ের দাপট আখড়ার সাথে উমাকে ভেঙেচুরে একাকার করে দিয়েছে। সকাল থেকেই তাই উমার মনে এক কি যেন চাপা অস্বস্তি। এতদিন কত ঝড় বাদলা গেল, আখড়ার চালার টিন, খড় উড়ে গেছে কিন্তু এভাবে কোন এক অদৃশ্য হাহাকার বুকে থাবা বসায় নি।
ঠিক এর সাথেই নজরে এসেছে গাঁয়ে গঞ্জের সবেধন নীলমণি রাস্তায় মানুষজনের একটু বেশিই আনাগোনা। খোঁজ খবরে শাখা প্রশাখা মেলেছ আরও নির্মম এক সত্য যার অভিমুখ নিহিত সেদিনের সন্ধেয় জয়ীর বিয়ের অনুষ্ঠানে। প্রিয় ছাত্রীর এ বিশ্বাসঘাতকতায় বাকরুদ্ধ উমার মাথা ঝিমঝিম করছে এখন। আজ তাকে নিজের চিলেকোঠায় যেতেই হবে।
ডগমগে বসন্ত দুপুর তখন লাজসোহাগী সন্ধের গায়ে ভর করেছে। এ নেশাধরানো সন্ধেয় জয়ীর নাকি হঠাৎ করেই বিয়ে। পাশের গ্রামের এক ছেলের সাথে মন দেওয়া নেওয়ার পালা চলছিল না জানি কবে থেকেই। পাড়া ঘরের মেয়ে হলেও নিজের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা উমা এসবের কিছুই খবর রাখেনি। না কি খবর লুকানো ছিল গ্রাম ঘরের মানুষজনের থেকে! মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে উমার।
অনেকবছর আগে এইরকমই এক অনবুঝ গোধূলি সেজে উঠেছিল ফুল, মালা, সিঁদুর, চন্দন, লাল উড়নিতে। আত্মীয় স্বজনের মঙ্গল শঙ্খ অবশ্য ছিল না, তাতে মনের অশান্তি থাকলেও সুখ এক ছটাক কমেনি। তারপর একে একে রঙিন পালক খসিয়ে খসিয়ে স্বপ্নেরা হয়ে উঠল ধূসর ফ্যাকাশে বর্তমান। কারণ অতীত উমার থেকে দূরে সরে ছিল আর ভবিষ্যৎকে সে হাতের মুঠোয় ধরতে পারেনি।
জয়ীর বাড়ি থেকে ক্ষীণ শাঁখ আর উলুধ্বনির আওয়াজে চটকা ভাঙে তার। চোখ বেয়ে আগুনের স্রোত নামছে ততক্ষণে। তেতো ঢোঁক গিলে সে মনে মনে বলে, ‘তুই তো সেদিনের মেয়ে! যা তোকে মাফ করেই দিলাম। ‘
##
দেখতে দেখতে সূর্য আর চাঁদ আরও এক চক্কর কাটে আকাশে। ইতিমধ্যেই উমার মন আবার অনেক যুগ আগের মতোই । যেন অনুভূতিহীন, কান্নাহীন মৃত মানুষের ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে নড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে একটি শরীরের কলকব্জা। মুখ দেখে মন বুঝে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। কি যেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা মানবিক শিরা উপশিরার পথ বেঁধে দিয়েছে। চোখের মণিতে শুধু একরোখা জেদী সাপটা হিসিয়ে উঠছে থেকে থেকে।
আর নয়, মাথা নাড়ে উমা। এবার সে তার একানে চিলেকোঠার চোরকুঠুরিতে চিরদিনের মত সমস্ত স্বপ্ন, আশা, পাওয়া না পাওয়া গুলোকে বন্দী করে রাখবে। শুধু একটাই কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়ে গেছে।। ফিরে যেতে হবে আরেকবার আখড়ায়। গুঁড়িয়ে দিতে হবে শেষতম স্বপ্নপচিহ্নও।
ফলত; পরদিন সকাল হতে না হতেই উমাকে দেখা যায় তার আখড়ার দোর গোড়ায়। পরম মমতায় টিনের ট্যারাবাঁকা ঝিমিয়ে যাওয়া পোস্টারে নিজের নামের গায়ে হাত বোলায় সে। যে খুঁটিতে টাঙানো ছিল সে খুঁটিটাই তো উপড়ে গেছে। দুহাতে মুখ ঢাকে উমা। কড়কড় করে ওঠে চোখ! এরকম হওয়ার তো কথা নয়! চোখের জল শুকিয়ে গেছে কবেই! তাহলে কিসের এত অসহ্য কড়কড়ানি।
যত চোখ রগড়াচ্ছে যেন দৃষ্টি আরও স্বচ্ছ্ব হয়ে উঠছে…… এই তো সেই বেণীদোলানো কিশোরী উমা উঁকি দিয়ে গেলো…… মুখে একঝলক টাটকা বাতাসের হাসি…… ছিটেবেড়ার ফোঁকরে কৌতূহলী চোখ দেখছে শরীরি কসরত… ভেসে আসছে বোল… জাউর গিজা গিজ ঘিনি তা…… তারপর এক লাল চেলীর বিকেল……লাল নীল স্বপ্নের রঙ বদল…… ধূসর হয়ে যাওয়া স্বপ্নেরা আবার হাত ধরে …… সার বেঁধে কচি কচি নাম আসে সাথে… জয়ী… জলি…… আর তারপর কালো মেঘের ঝড় সব লন্ডভন্ড করে দেয়…
ঝিম ধরে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ উন্মত্তের মত ভাঙাচোরা ঘর থেকে একটা ভাঙা লাঠি জুটিয়ে ভাঙা চালের উপর ক্রমাগত পেটাতে থাকে উমা…… আরও ভেঙে যাক… কিচ্ছুটি থাকার দরকার নেই…… অসহ্য গতির ঘূর্ণিপাকে গোঁ গোঁ করে টিনের পোস্টারটিকে দোমড়াতে শুরু করে সে…
কিন্তু ঈশ্বর বোধহয় অন্য কোনো গল্প লিখছিলেন তখন। তাই ঠিক সেই মুহুর্তে টকটকে সিদুঁর পরিহিত জয়ী এসে দাঁড়ায়।
“ বিশ্বাস করো দিদি, বাবা আমার বিয়ে দিয়ে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলো… তাই তো এ নাটকটুকু করতে হলো……”
এভাবে কিছুতেই সব ভেঙে যেতে পারে না ! তার দিদিকে জাপটে ধরে নিরস্ত করে। প্রশ্নে প্রশ্নে অস্থির করে তোলে,
“…আজ বিকেলে প্র্যাকটিস হবে তো! জাতীয় স্তরে প্রতিযোগিতার মাত্র কয়েকদিন বাকি যে! “
দুরন্ত ঝড় বাঁকবদল করে যেন। ঝকঝকে বসন্ত সকালে একপশলা ঝোড়ো বৃষ্টি স্নিগ্ধতায় নাইয়ে দেয় উমারানী আখড়াকে। স্বপ্নরা গুঞ্জন তোলে, স্বপ্ন বোনে আবারও…।
Posted in: September 2020, STORY