দীপ শেখর চক্রবর্তী-র কবিতা

নক্ষত্র,আজও যদি অস্বীকার করো আমাকে

কে প্রবেশ করেছে আগুনে?
নাও,তোমার হাতের পাতায়
এই রেখে দিলাম আমার দুর্বল আয়ু
আঘাত, তোমাকে সমর্পন করি
তোমাকে নমি
তাও তো এখনো বলিনি,তোমাকে
আরো জলে ঠেলে দেবো বলে বুকের ভেতরে
যত্ন করে রেখেছি ঝাউবন-সমুদ্রতট-বালি
তাও তো এখনো বলিনি
তোমাকে,এই তোমাকেই খুঁজে পাবো বলে
কত রাত আমি আকাশে আকাশে উড়িয়েছি
ঘরপোড়া ছাই,তার মাঝে দুয়েকটি আগুনের
ফুলকি কি থাকা অপরাধ হবে?নক্ষত্রচিতা কে জ্বালায়?
আর তুমি দোতলার বারান্দা থেকে ফেলে দিলে
তোমার তেইশ চব্বিশ বছর বয়স,ছিঃ
ওভাবে কেউ ফেলে?হাত ফস্কে পড়ে ভেঙে গেলো
এখন আজীবন আমি কুড়িয়ে যাই তোমার
ঐ বয়স,ঐ প্রেম,আঘাত তোমাকে সমর্পন করি
এই কুড়োনো জন্ম
এখন সরো, কুড়োতে দাও,আঃ,সরো
সামান্য এই কুড়িয়ে পাওয়া অবহেলা দিয়ে এক একটা কবিজন্ম ঠিক কেটে যায়।

কিশোরী জানো
গভীর অরণ্যের দিকে যেতে যেতে একদিন
আগুনের তীর উড়ে এলো আমার ডানার দিকে
আর বললে বিশ্বাস করবে না
একমুঠো ছাই হয়ে পড়ে গেলাম নদীর ধারেতে
কিছু কিছু বাতাসে উড়ে গেছে প্রতিবার
অস্বীকার করবো না
আর এই একমুঠো ছাই কুড়িয়ে পেলো একটা মুঠো
সে রাধা নয়,সে শকুন্তলা নয়,সে
কোন অপ্সরা নয়,এই তোমারই মতো একটি মেয়ে
স্নান করতে এসে খুঁজে পেলো আমাকে
(মেয়েরা যেভাবে খুঁজে পায়),আর কিশোরী
কি বলি তোমাকে দিনরাত ধূপের গন্ধ সহযোগে
পুজো,কি পুজো,দিল প্রসাদরূপে শরীর
দিল অঞ্জলি রূপে মন,আর আমিও কি দেবজন্ম
পেয়ে কম মজেছিলাম?আমিও কি ভুলে গেছিলাম
দিতে আশীর্বাদ?অথচ যখুনি সে বর চাইলো
আমি বুকের ভেতর থেকে আগুন বার করে নিয়ে
আসতে গিয়ে দেখি সমস্ত ফুরুৎ।অমনি দেবতার আসন
থেকে সে ফেলে দিল আমাকে কলতলায় আর মেজে
ফেললো ঘটি বাটি,দুচ্ছাই আমাকে দিয়েই।
কিশোরী জানো,তোমার কাছে আমিও তেমনই ঠাকুর
হতে পারতাম,অথচ বড় ভয় লাগে যদি প্রসাদের পর
যদি অঞ্জলি দেওয়ার পর বর চাইবার বেলা বুকের
ভেতর থেকে অসামান্য প্রেম বার করে নিয়ে আসতে
গিয়ে দেখি – আগুনের তীর,সেই যে উড়ে এলো আর-আর-আর
মুহূর্তে তোমার সমস্ত কৈশোর পুড়ে ছাই?

নক্ষত্র দেখো,তোমার দূরে ঠেলার মাঝে
ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছে দুটো হাতের
পরোয়াহীন ঝাঁপ
ভয় পেয়ো না নক্ষত্র,আমি আর অন্ধ নই
আমি এমনকি আগুনের ভেতর থেকে
একে একে সরিয়ে রেখেছি মৃত্যুদিন,ক্ষত
নক্ষত্র, এসো পলাতক
এসো,এই প্রেমজল,সামান্য দিনের সঞ্চয়
পদ্মপাতা,আকন্ঠ পান করো,মগ্ন হও
যৌনবেদনাহীন এক আকাশের নীলে
দেখো কিভাবে ছড়িয়ে দিয়েছি সমস্ত
অসমাপ্ত ঘুম আমার,অক্ষরবিহীন হাহাকার
নক্ষত্র,তোমার কোল থেকে একবার একটি গ্রীষ্ম
নেমে এসে আমাকে উন্মাদ করে গেছিল
আর তোমার বৃন্ত থেকে একটি শ্রাবণের দিন এসে
আমার কণ্ঠ করে দিয়ে গেলো সরোবর
নক্ষত্র,সেখানে কত পরিযায়ী পাখি,একেকদিন
শিকারের সুস্বাদু লাল মাংস,তবু-তবু-তবু
এক সমুদ্র জীবনের শূন্যতার মাঝে বেহায়ার মতো
এগিয়ে দিয়েছি হাত,নক্ষত্র,মনে পরে
শ্রাবণের যাদবপুর থেকে গোলপার্ক?
মনে পরে মঙ্গল থেকে শনি,বাস ছুটে যায়,আর
অসভ্য কন্ডাক্টার নামিয়ে দিল জানলা,অথচ ততক্ষণে
মধুরসে ভরে গেছে মুখ,শাদা চাদর সরিয়ে তুমি নেমে গেলে বিছানা থেকে
নক্ষত্র,এই হাতের ভেতরে সেই মধুরস নিয়ে আমি
ভেসে উঠলাম একের পর এক পুকুরে আর ছেলেমেয়েরা
নতুন প্রজাতির এক মাছ পেয়েছে বলে কি লাফালাফি
অথচ আমিই আমাকে কিনে নিয়েছিলাম তাদের খপ্পর থেকে
একদিন,আমিই কেটে কেটে বড় বাজারে বিক্রি করেছিলাম
এমনকি ওই যে আঁশ, তাও ফেলা যায়নি
নক্ষত্র,এখন এই শরীরের ভেতর প্লাবন আসে না
সরকারি বাঁধ এবং রাতের বেলা কোন উন্মাদ বসে জোনাকিদের পাহারা দিয়েছে
নক্ষত্র,আজ বিরহের মাঝে ধীরে ধীরে বেজে ওঠে বাঁশি
নক্ষত্র,আজ সমুদ্রের মাঝে ধীরে ধীরে নেচে ওঠে ঢেউ
নক্ষত্র,আজ অসাড়ের মাঝে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে স্পর্শ
নক্ষত্র,আজ আগুনের মাঝে ধীরে ধীরে জেগে ওঠে আলো
নক্ষত্র,দেখো তোমার দূরে ঠেলার মাঝে ধীরে ধীরে
প্রবেশ করেছে পরোয়াহীন ঝাঁপ
ভয় নেই, এখন আমিও দূরত্ব জানি,অর্ধেক মৃত্যু,অর্ধেক জীবনের কথা লিখি
ভয় নেই, আমি নিজেকেও এখন লিখতে পারিনা একেকদিন
তুমি নির্ভার হও,তুমি চুপিচুপি একদিন রাতের আকাশ থেকে নামো,দরজায় তিনবার সাংকেতিক টোকা দাও
আমি সমস্ত জয় পরাজয় জলের দামে বিক্রয় করেছি রাত্রির স্তব্ধতার কাছে
তুমি খাবে বলে আমি দেখি কিছু ভাত নিয়ে আসি
আমার সমস্ত হাত জুড়ে এখন মেয়েদের ঘেঁটে ফেলা কলঙ্ক
আমার সমস্ত হাত জুড়ে এখন বিষ – বিষ – বিষ
তবু নক্ষত্র,ভালোবাসাহীন এই আয়ু পুড়িয়ে ফেলার চেয়ে ভালো
এই বিষ হাতে এক গরস ভাত তুলে দেওয়া ওই মধুমুখে
হা করো নক্ষত্র,হা করো
হা করো,খুলে দাও
নে,হা কর…

Facebook Comments

Leave a Reply