বিশ্বরূপ বিশ্বাস-র কবিতা
[“সুরার মালিক বানপ্রস্থ নয়” বিশ্বরূপের বহু অপ্রকাশিত কবিতাগ্রন্থের মধ্যে একটি। এই অপ্রকাশিত বইখানিতে ১০৮টি কবিতা সংরক্ষিত করা হ’য়েছে। বইটি কবে কোথা থেকে প্রকাশিত হবে সেটা এখনও স্থির হয় নি। তবে বইটির-ই ক্রমিক সংখ্যা অনুযায়ী নীচের সাতটি কবিতা প্রকাশ করা হ’লো]
সুরার মালিক বানপ্রস্থ নয়
৫০.
মাটিতে পয়দা ব’লে-ই মাটিকে ভালোবাসি
এবার একটা মিশরীয় হাইভসে্ স্প্যানিশ ইঙ্গিত শিখলাম তরুচ্ছায়ে
এবার লিখলাম ইন্সটিংকচুয়্যাল করো হে ইন্সটিংকচুয়্যাল করো
একটি জীবন পরিদর্শনের আগে অনেক জীবনী
বড়োসড়ো এই মাটিতে-ই সেই মাটিতে-ই
সত্রাসে কল্মষ-কলমি কাটে নিগূঢ়তা দরবার মিনতির জয়ত্রীর
আঁতুড়ঘরের চাইতে লিরিসিজম দৃশ্যের মিশ্রণে জানিও
একবিন্দু মদ এক ঈষাণীঝড়ে ছোটোখাটো ভাবে
অভাবনীয় ভাবে পানিও
মতবিরোধ চিরকাল ছিলো চিরকাল থাকবেও মানুষের মতবিরোধ
মাটির থেকে-ই বিহঙ্গ অযাচিত অভাবে হাঁকবে কুঁখছেড়ে কাঁদবে
মিসট্রানস্লেটে আঁকা ছবির পোলিশ-ভাষার নদনদী সমুদ্র পাহাড়
আর ঈশপের হৃৎপিন্ডের অনন্ত মোবাইল
ধরিত্রীর এখানে-ই সমাদরণীয়।।
২৭.
আমার বন্ধু প্রতাপ দীর্ঘ সতেরো বছর ধ’রে গান লিখছে
সুরলুন্ঠনকারী এখন ওকে ব’লতে পারি
কৃষ্ণ শ্যামা রাধা বানডাকে রবারের উজিরে
আমি তার কতটুকু বুঝি-রে ভবেশের স্বরীশ্বরে
আমার বন্ধু প্রতাপ দীর্ঘ সতেরো বছর ভাটিয়ালি গান লেখে
আমি তার কতটুকু জানি-রে শশীতূর্যের বামাদলে
অবশ্য ভবঘুরে পুঁছে নে মা ঘুরেদাঁড়া তারা শ্যামা
নদীর কিনারে রেখে সাঁই হলুদের চোখ রাঙ্গা কাপালিক
ফসলের কোষ থেকে ঝর্নার শবাসনা আপনমনা
আনমনা শুধু খাঁটি বান্দাটির মন জনম জনম
ও যখন মুছে সবুজ ধানের মজ্জার চুপথাকা চালটি
তখন প্রতাপের দোকানের পরাগে স্নায়ু-ডালটির সংসার
সবাই কি পারে দুনিয়ার পরিবারে পবিত্র থাকতে চিরদিন
মানুষের সব স্বপ্ন তবু মানুষের আঁখিতে রঙিন আত্মার
যেন মোক্ষফলের কৈলাসের শিষের পুনঃকবিল
যেন জ্বরজারি ছিঁড়ে ফকিরটি ফিরে ফেরে শালিকের ভাষায়
মানুষের আশাতে-ই চর্চিত হয় মানুষের সংগীতের কীর্তন
পালন খোঁটার তাগিদে যেমন বাউল লিখেছে স্বয়ং লালন
শুক্লপক্ষের মাল্লারে চাঁদের বণিক জুড়ে স্বজনীর সেলাই
নলিনীর শমনে অনুক্ষণ অমনি কামিনী ত্বরা যামিনী
সকল বসন্তের বদনের গোড়ালি মাধবের রঙ্গ সাজাই
গানের যাচাই আমি দানের পরাণে ক’রি রঘুনন্দনে
বাতাসসম্ভবে পৃথিবীর মহান্ত মহান্বয়ের মহাপাটেশ্বরী
আমার সখা রাজনের গোকুলে শ্যামসুন্দর-শ্রীহরি।।
৩৯.
দুর্বিষহ বন্যার বিপন্ন জলের মধ্যে
শুয়ে আছি বিষন্ন মহারাজা আমি
এটা ২০২০ সাল
প্রথমে আমফানে ধ্বংসগ্রস্ত হ’লাম
তারপর বাড়িতে জল
আর মহাপৃথিবীতে মহামারী
বৃষ্টির সাগরের বেপরোয়া জল ডেসাল্টরি
শ্বাসকষ্ট থেকে খুঁটিনাটির নির্লিপ্ত ধান গান পরাণ
প্রাণ কী পায় এখন অভিভূত ঘুমের চূড়ান্ত স্বপ্নছক
আত্মা কী যায় এখন গ্ল্যাডের মৃগয়ায় তালাবন্ধ হ’তে
গরহজম শরীরের বিবেচনা মানে না হার্টের
কোনো নারী নেই কোনো রমণী নেই আমার
কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই
কোনো প্রেমিকাও নেই আমার
নদীর মোহাবিষ্ট গ্রন্থিঘটিত আঠায়
আমার জীবনের ডিম পাখির মতন
ভেঙে যায় হিমবাহের অজানা মল্লে
ছোঁয়াচে গ্ল্যানজ থেকে
শঙ্কুকৃতির তরী ইত্যাদির আকরিকে
টাকাকড়ি কিছু এবার বাঁচানো গ্যালো না সংসারের
মানুষ সহজে মরে এই দুনিয়ার সংসারে
মানুষ সরলে মরে অতিপৃথিবীর সংসারে
হিউমাস আর হিউমার নির্দোষিতা রাখার লকার
জাজ্বল্যমানভাবে ওষুধের অভাবে
হয় এলিফ্যান্টাইয়্যাসিস রোগ দুর্ভোগ
গাত্রাচ্ছাদক পিপের নিশ্চিন্তে বসন্তের নৌকা
এ সব আর শেলের ষড়চক্রে
হেসিয়্যানদের ভালোলাগার কথা নয়
পৃথিবীর কোথায় আর বলো ভালোলাগার কথা হয়
পৃথিবীর কোথায় বলো আর ভালোবাসার কথা হয়
মুহূর্তের মৃত্যুপঞ্জিকা লেখে কী হার্স্টোরির লিখা
বিষগাছের সব ফল আমার জীবনের সফল খালবিল
বোধাতীত বাঁশের বীণাযন্ত্রে বাজে কী গীটার
এই বিরাট সূর্যের রোদ্দুর ওঠে আর
ওই বিশাল বন্যার প্লাবনে ডুবে যায় ঘর আমার
হারকিউলিসের মতন প্রাপ্তেও অপ্রাপ্ত ইন্ধনের স্বাধিকার।।
৯৪.
ঐ দ্যাখো টানের হেঁচড়ার আচমকা প’ড়ে যাওয়া
প্রতীয়মানরূপে অর্গানের শাদাকালো ম্যানহোলটি
ঐ দ্যাখো বার্নারের জালির কাপড়ে একটুকরো সেলসম্যান
কিভাবে প্রবেশের পরটিকে পরোপকারী পরিকল্পনা দ্যায়
দেওয়া আর নেওয়া বহুমুখিতার দ্বারা আচরণের শরীর
ওদের কোনো কার্যসিদ্ধির খেদোন্মত্ততা নেই
ওদের নেই কোনো কোত্থাও রিনিউ করা নদনদী
ঐ দ্যাখো জার্মানির পুনর্জন্মে অস্ট্রিয়ার কৃষ্ণমৃত্তিকা।।
৯৫.
মন্দিরের পাশে একটা মসজিদ উঠেছে
ওখানে মুসলিমরা পুজো দিতে যায়
পার্বণও হয়
মসজিদের পাশে একটা মন্দির হ’য়েছে
ওখানে হিন্দুরা নামাজ প’ড়তে যায়
ঈদও হয়।।
৬৬.
চারিদিকে পঞ্চায়েত আর মাঝদরিয়া
চারিদিকে লেক্সিক্যাল আর
সমন্বিত যষ্টিমধু
ধ্বংসের মাঝে ভালোবাসা সংগ্রহ করে
নিরোর বেহালা বাজানো এর-ই মধ্যে
জাঁকালোভাবে
এর-ই মধ্যে হারামজাদা পৃথিবী
এবার অন্ততঃ বিয়ে কর তুই।।
৮৭.
সূর্যের থেকে আলোর লাশ ছাড়িয়ে ফেলি আমি
রোদের কিছুটা কাছে বাঘ একজন সামঞ্জস্য প্রাণী
অন্ধকারের তিমিরের হরিণী যেরকম প্রাণী
কিন্তু বা অ-প্রাণীর অনুলোম-পোড়া মড়িঘর
এখানে আমোদ দাওনি অগণন খারাপও কওনি
আহ্লাদসূচক দিনের মৌচাকে গির্জার ফ্লাস্ক সর্বোচ্চ
ম্যাক্সিমাম ঝরনা বিশেষ সেরকম
ইনকন্সিকোয়েনশিয়্যাল
যেরকম বুদ্ধির বীজে অক্ষত সান্ত্বনা আর দেবো না
বিশ্বাস উৎপাদন মানুষ করে পাথর নয়
এই অপরিণত হেতুর ম্যাট্রিসাইডে
সূর্যের থেকে আলোর ছাল গুছিয়ে রেখেছি আমি।।
Posted in: POETRY, September 2020