আনিস আহমেদ-র কবিতা

যখন কোনো অভিমান এসে আর দরজা খোলে না

১.

দীর্ঘ স্মৃতির ভিতর এই যে আমি তোমাকে লক্ষ্য করি, ডিজার্ভ করি না তো কখনো…তবু, এই চেনা অবসেশনের মধ্যে তোমার মিহিন উপস্থিতি দীর্ঘস্থিতির দিকে যায়, যা আরো বড় ক’রে দেখাতে গিয়ে কেন যে আমি শুধু চোখের গড়ন নিয়ে-ই ভেবে গেলাম…যেন চোখের পলক ফেলে যেকোনো মুহুর্তকে হত্যা করা যায়…শুধু এই দৃশ্য থেকে ছিটকে আসা রক্ত, যা দর্শকের চোখকে লাল করে দিতে পারে…গোটা খুনের পরেও অনুতপ্তহীন, ঠান্ডা ও শীতল ওই বরফের হাত যা রক্তের চিহ্নগুলো সরিয়ে ফেলতে গিয়ে বেসিনে এসে থমকে পড়ছে এখন…তার বাড়ি ফেরার খবরে কোনো অভিমান এসে আর দরজা খোলে না…ভয় সেটাই, যা নিজের এই ক্রমমান হত্যাকে অনেক আগেই দেখে ফ্যালে গোপনে…যা অস্পষ্ট, স্মৃতির বাইরে গিয়ে ও তুমুল অবসেশনের ভিতর ভেঙে টুকরো ছড়িয়ে যাওয়া মুখ, যা কোনো ফ্রেমে-ই আর আটকানো যায় না—- যখন পাখির ঠোঁটের চেয়ে লম্বা হয়ে ওঠে পাখীর গানের গলা এবং ধাক্কা লাগে বনে…বাক্যের ভিতরে অভিমান গুঁজে দিতে গিয়ে এই অশেষ দ্বিধা আমার, খুনের ভিতর দিয়ে আঙুল শেষপর্যন্ত আনন্দসর্বস্ব হয়ে ওঠে…

২.

দেয়ালের হুক থেকে ঝুলে আছে কালো পলিথিন, তার পিছনে দুলছে তার সমান আকারের শ্যাডো… এ সংকেত আমার বোঝার নয়, বোঝার নয় টেবিলে রাখা আধভর্তি জলের বোতল…শুধু মগজের অন্ধকার জায়গাগুলোর ভিতর এই অস্থির তাড়না ও তার নিরবিচ্ছিন্ন পিপাসা আমাকে আরো আরো বিছানাসম্পৃক্ত করে দেয়…স্বপ্নের ভিতর আমার চোখ আটকে যায়, দেখি, জলের সমস্ত জটিলতা ফাক করে জঙ্গল থেকে ছুটে আসা একটা বুনোর পাখির ডাক ভেসে যাচ্ছে…আমার সমস্ত জীবন ওই ডাকের কাছে ঋনী হয়ে পড়ছে…অক্ষরের ভিতর অন্ধকারগুলো খুঁচিয়ে তুলে যতবার ঐ ডাক ভরে দিতে চেয়েছি, রক্তশূন্য হয়ে পড়েছে আমার আঙুল, ঘড়ির কাঁটাগুলোকে বন্ধ করে দিয়ে গিয়ে যে আগে-ই সময়পৃষ্ট হয়ে গিয়েছিল…একটা ডাকের মানে তবে সময়চ্ছিন্ন ঘুড়ি হতে পারে কিন্তু তার লাটাই ঘড়ির কাঁটাতেই বাঁধা…ঐ চিরচেনা জীবনের ফাঁকে ভেঙে পড়ছে আকাশ তার গোলাকার দেওয়াল নিয়ে,তার অন্তিম নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে আমার ভিতর…

৩.

চাকার গতির কাছে হেরে যাচ্ছে বাড়ি ফেরাগুলো…বিকেল তখনো আধো জাগরূক হয়ে তেষ্টাকে পানীয় দিচ্ছে পিপাসার…এই দৃশ্যে সূর্য লাল হয়ে উঠছে তার সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে, শুধু একা বাড়িফেরাগুলো পিঁছলে পড়ছে রাস্তায়, আর বাড়ির ধারণাগুলো প’ড়ে প’ড়ে মার খাচ্ছে পথে…চাকা যত এগোয়, বাড়ির চাবিও চোখের থেকে দূরে সরে যায়, যেন বাড়ি ফেরার উপায় ভুলিয়ে দেওয়ার জেদ নিয়ে চালু চাকার এই ঘূর্ণন প্রক্রিয়া…এই একটা ভ্রম যা আমাকে কোনোদিন বাড়ি ফিরতে দেয় না…রাস্তার দু’পাশে বিক্রি হতে থাকে রঙ বেরঙের বেলুন ঘুরছে হকারির হাতে, যা ভ্রমকে একটা স্বপ্নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এখন…স্বপ্নে আমি ঐ বেলুনগুলো পৃথিবীর সমস্ত আলপিনের থেকে দূরে সরিয়ে রাখি…যেন স্বপ্ন ফুরনোর আগে বেলুনে যথেষ্ট হাওয়া থেকে যায়, আর বাড়ি না ফেরার এই পথ আরো দীর্ঘ হতে থাকে…

Facebook Comments

Posted in: POETRY, September 2020

Tagged as: , ,

Leave a Reply