রাক্ষসখোক্কস সম্বাদ : অবিরত বিলাবল

সারথী তার মহারথী কে বলছে
বাণ চালাও,

পাঁচে পঞ্চবাণ…
মারণ মোহন স্তম্ভণ বশীকরণ উচাটন, ধীরে ধীরে, ভাতে মারো নীতি তো চলেই আসছে, এবার এলো ছাতি ঠুকে মন মোহিত করো মানে ভোলাও, জয় শ্রী…, ভারতমাতাক্কি! তারপর এটা ওটা করে বমকে দাও, চমকে দাও-চমকে দাও দাও দাও দাও, নোটবন্দী, কালোধনে লক, ব্যস পাব্লিক বাঁই বাঁই বশীভূত, রিপাব্লিক টিভি চালু, মন্দিরফন্দির কিম্বা এনার্সিফেনার্সি, লাগাও উচাটন, মন উড়ান, মেরা সনাতন ভারত মহান, কর ব্যাটা কান ধরে ওঠবোস, পেয়ারে দেসোয়াসিও হাঁকা ময়ূরমোহন কে খিস্তি? না না মনমোহন সিং এর কথা বলছি না, আর এসব সিন্থেসিস কতটা রাক্ষুসে জানি না কিন্তু সারথীটি যুদ্ধের আগেভাগেই মহারথীকে আল্গা র‍্যাগ দিয়ে নিয়েছিলো নিজের ত্রাহি ত্রাহি দাঁত দেখিয়ে, মহারথী যাদের ফক্কা করবার পিনিকে কান্নাকাটি জুড়েছিলো তাদের ডেডবডি সারথীর দাঁতে ঝুলছে মানে সে এক মহাত্রাস মহাকাল নির্মম চিত্রনাট্য, গ্রাফিক ইন্টারপ্রিটেশন, রেজ ইন্ডিউস করার জন্য, আর ইনডিফারেন্স ইনজেক্ট করার জন্য, হু আর হা… এবার কে রাক্ষস? আর কে রাম? বাম কে নিয়ে এখানে কোনো কাজ নেই! বামের কথা পরে। আগে কে রাক্ষস! নানান বিদঘুটে সাধনা টাধনা হয়, নট, নটি, অপ্সরা, যক্ষ, রক্ষ, পিশাচ ইত্যাদি। রক্ষসাধনায় যারা সিদ্ধ তারাই রাক্ষস, এদের মধ্যে কেউ কেউ রাজারাক্ষস ও হয়। আদিম রেসিস্ট জম্বুদ্বীপে সম্ভবতঃ উত্তরে হিমালয়, কারাকোরাম, হিন্দুকুশ ইত্যাদি ছিলো স্বর্গ রিজিয়ন, সেসব উঁচু উঁচু পাহাড়ের হিমবাহ গলে নেমে আসা নদীর পলিতে গঠিত সমতলের অববাহিকা মর্ত্য আর সাউথের সিঙারার মতো দিকটা পাতাল, পাতালের নীচে আবার লঙ্কা, কী মুশকিল!

না মুশকিল না, পাতাল আর পাতালের নীচে অ্যাবওরিজিনাল অধিকারের লড়াই চালিয়ে যাওয়া জনবৈচিত্র কে রাক্ষস অসুর ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে সত্যের লড়াই-এ ভিলেন করা হয়ে গেছে। সত্য মানে জলজমিনের দাবী। ভিলেন কে কিচ্ছু দেবার ব্যাপার নেই, ফোট শালা! ব্যোম ব্যোম, শিবের গাজন দিলাম যাহ্! অমৃত দেবতাদের। এহেন দেবতাদের রিপ্রেজেনটেটিভ হলো ধনুর্ধারী রাম, এই রাম দেখিয়ে এখন বিধর্মী রাক্ষস আর অধর্মী বাম তাড়ানোর লীলায় হেবি হেবি লোকেরা নেমে পড়েছে। রিপাব্লিক টিভিতে লাইভ লাইভ ঝালাপালা চলছে আর গাজন দিয়ে মাজন মারার কলে জুকার্বার্গকেও সামিল করে ফেলেছে পেয়ারে ময়ূরজী ও তার পেয়ারে সাথীও, আর পায় কে, কে পায়! তবে একযুগে ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রতিভূ ছিলো এক মহারাক্ষস। তখন সেই রাক্ষস এর রমরমা, রামের কপালে বনবাস, সেই সেরা ব্রাহ্মণ, সর্বশাস্ত্রে দিকপাল, রাম নাকি ব্রহ্মহত্যার পাপের জন্যে প্রায়শ্চিত্ত করেছিলো।

রাবণ রাবণ। জয় ভীম!

এই রামরাজ্যে আমাদের কি হবে? আমরা তো রামভক্ত নই সবাই? কিন্তু এসব বলেকয়ে লাভ নেই। হেব্বি হেব্বি লোকেরা রামমন্দির নিয়ে আমোদ করছে, মন্দির ওহি বনেগা আউর রাম কো, কি? দাঁতুন? আরে গ্রামের দিকে দেখেছি রোজা শেষ করে লোকে নিমকাঠি দিয়ে দাঁত মাজে কিন্তু একজনই দাঁত মাজে না, তার দাঁতে আধিভৌতিক রক্ত লেগে আছে, রক্তের কারবারি তার গোল গোল চোখ, বাচ্চাদের কানমলা দেয়। জল জঙ্গল রেল মানুষ সবই সে খেয়ে ফেলে আর খাইয়ে দেয় সারথী বাবাদের। মহারথীরূপে এসেছে একাদশ অবতার স্বয়ং শ্রী শ্রীল প্রভু, ময়ূরময়ূর খেলা, তার লক্ষকোটি চেলা, তার চপল চপল হাসি, পেয়ারে দেসবাঁসীও! বাঁশী বাজাবেন না, থালা বাজান, এই অবতারে থালাই একমাত্র অস্ত্র, বাজাতে তো হবেই, ঠনঠনাঠন কারণ চাল ডাল আলু পেঁয়াজ কদ্দিন আর বরাতে জুটবে কে জানে! থালা বাটি বাজানোই সম্বল। সে ডিটেনশন ক্যাম্পের বাইরেই থাকুন অথবা ভেতরে। থালা ঝুলিয়ে রাখুন ভালো করে। আর কঙ্কাল হতে হতে খেলা দেখুন। ফেসবুকে লিখে কিছু হবে না। রাক্ষসের বাড়িতে পেস্ট আছে, পেস্ট কন্ট্রোল আছে। রাক্ষসের আর ফোকলা খোক্কসের কঙ্কাল খুব ফেভারিট। এখন বামস্মরণ করা দরকার। শিক্ষিতপেটে ভাত জুটবে না। তাই এলিট বামেদের পলিটডান্ডাটিকে ভেঙে দুর্দম এজেন্ডার অবতারণা পূর্বক বাম ঐক্য বিনা গতি নেই। ধর্মের তাস যদ্দিন খেলা হবে তদ্দিন জাতির মুক্তি জাতিসংঘের দাবার বোরে হয়ে থাকবে। নোটবন্দী, জিএসটি ফন্দী, এনার্সিফেনার্সি, বেকারত্ব, পাবলিক সেক্টরের অবাধ লিবারালাইজেশন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় অনৈতিক রদবদল, অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় চুড়ান্ত ভাঙন, পেটে লাথি মারা কৃষিবিল, এরপরেও ফেসবুকে লিখতে লাগে? ভাবতে লাগে? বাম ছাড়া গতি কার কোথা, সে রাক্ষস বা তাকে দেখে খোক্কস দাঁত মাজুক না মাজুক! আব কি বার ট্রাম্প সরকার! হে অচলায়তন, আপনি আপনার দাঁত বাঁচান! বাঁচান! বাঁচান হে!

Facebook Comments

Leave a Reply